শৈশবে বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের প্রভাব: সন্তানদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০% বেশি

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সব শিশুর শৈশবে তাদের বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে সেই সব শিশুরা পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন  স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, যার মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি  অন্যতম । টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের এসমে ফুলার-থমসনের নেতৃত্বে  PLOS One জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে বিবাহবিচ্ছিন্ন সেই সব বাবা-মা এর সন্তানদের মধ্যে তাদের পরবর্তী জীবনে স্ট্রোকের ঝুঁকি  অন্যদের থেকে  ৬০% বেশি।  

শৈশবকালীন আঘাত এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে যেসব প্রাপ্তবয়স্কদের বাবা-মা শৈশবে বিবাহবিচ্ছেদ করেছিলেন তাদের পরবর্তী জীবনে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি হতে পারে। প্রতি বছর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭৯৫,০০০ মানুষ স্ট্রোকের সম্মুখীন হন। আগের  গবেষণায় বিভিন্ন সামাজিক কারণ এবং নেতিবাচক শৈশব অভিজ্ঞতা স্ট্রোকের ঝুঁকির সাথে যুক্ত করা হলেও, এই গবেষণায় বিশেষভাবে সেইসব প্রাপ্তবয়স্কদের উপর পিতামাতার বিবাহবিচ্ছেদের প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে । গবেষকরা ২০২২ সালে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ১৩,২০৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের তথ্য পর্যালোচনা করেছেন।

স্ট্রোকের ঝুঁকি এবং পিতামাতার বিবাহবিচ্ছেদের তথ্য

ফলাফলগুলি দেখিয়েছে যে যাদের বাবা-মা ১৮ বছর বয়সের আগে বিবাহবিচ্ছেদ করেছিলেন তাদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা ৬১% বেশি ছিল যাদের বাবা-মা একসাথে ছিলেন তাদের তুলনায়। এই তথ্য পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই সত্য ছিল। গবেষণায় বিবাহবিচ্ছিন্ন সেই সব বাবা – মা এর সন্তানদের মধ্যে তাদের পরবর্তী জীবনে স্ট্রোক ছাড়াও ডায়াবেটিস এবং বিষণ্নতার মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা গেছে।

তবে, গবেষণায় পিতামাতার বিবাহবিচ্ছেদ কীভাবে উচ্চ স্ট্রোকের ঝুঁকির দিকে নিয়ে যেতে পারে তা অন্বেষণ করা হয়নি। সেইসাথে গবেষণার এই ফলাফল তরুণ প্রজন্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে, যারা আরও বহু সংখ্যক বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা দেখেছেন। গবেষণায় রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রার মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।তবে গবেষকদের বিশ্বাস যে তাদের অনুসন্ধানগুলি শৈশবে পিতামাতার বিবাহবিচ্ছেদ এবং পরবর্তী জীবনে স্ট্রোকের ঝুঁকির মধ্যে একটি যোগসূত্রের ইঙ্গিত দেয়।

সূত্রঃ “Parental divorce’s long shadow: Elevated stroke risk among older Americans” by Mary Kate Schilke, Philip Baiden and Esme Fuller-Thomson, 22 January 2025, PLOS ONE.
DOI: 10.1371/journal.pone.0316580

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top