শ্যাম্পু, সাবান সহ কিছু সাধারণ পণ্য কি শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করে?

উত্তরাপথঃ এমরি বিশ্ববিদ্যালয় (Emory University), নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেক দৈনন্দিন জিনিসপত্রে পাওয়া থ্যালেটস (phthalates) নামক রাসায়নিকগুলি জন্মের আগে শিশুদের মস্তিষ্ক এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

থ্যালেটস (phthalates) কী?

থ্যালেটস হল প্লাস্টিককে নরম এবং আরও নমনীয় করতে ব্যবহৃত রাসায়নিক। আপনি এগুলি শ্যাম্পু, সাবান, ডিটারজেন্ট, খাবার এবং পানীয় ধারণকারী প্লাস্টিকের পাত্রে পেতে পারেন। এর আগের গবেষণায়  বলা হয়েছিল যে এই রাসায়নিকগুলি হরমোনের সাথে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং মা এবং তাদের শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।

গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?

নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত এই নতুন গবেষণাটি স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে গর্ভবতী মহিলারা যখন থ্যালেটসের সংস্পর্শে আসেন, তখন জন্মের পরপরই এটি তাদের শিশুদের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন করতে পারে। বিশেষ করে, এটি তাদের শরীর কীভাবে পুষ্টি প্রক্রিয়াজাত করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বিকাশ করে তা প্রভাবিত করতে পারে।

গবেষণার মূল তথ্য:

– যেসব মায়ের রক্তে থ্যালেটের মাত্রা বেশি, তাদের সন্তানদের মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা কম ছিল, যেমন টাইরোসিন এবং ট্রিপটোফ্যান।

– এই শিশুদের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, সতর্ক থাকা এবং মনোযোগের স্তরের সাথে সম্পর্কিত পরিবর্তনও দেখা গেছে।

– এর মানে হল যে যখন গর্ভবতী মহিলারা থ্যালেটের সংস্পর্শে আসেন, তখন এটি গর্ভাবস্থায় এবং পরে তাদের শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা কী বলেন?

গবেষণার অন্যতম প্রধান গবেষক ডঃ সুসান হফম্যান ব্যাখ্যা করেছেন, “আমরা প্রথমবারের মতো দেখিয়েছি যে একজন মায়ের থ্যালেটের সংস্পর্শে আসা তার শিশুর বিপাক এবং প্রাথমিক মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে। মানুষ প্রায়শই মনে করে যে প্লাসেন্টা শিশুকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক থেকে রক্ষা করে, কিন্তু আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে থ্যালেটগুলি প্লাসেন্টা অতিক্রম করে শিশুর কাছে পৌঁছাতে পারে, যা জন্মের আগে তাদের বিকাশকে প্রভাবিত করে।”

ডঃ ডোংহাই লিয়াং আরও বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি যে যখন গর্ভবতী মহিলারা এই রাসায়নিকগুলির সংস্পর্শে আসেন, তখন এটি কেবল তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্যের উপরই প্রভাব ফেলে না বরং তাদের শিশুর মস্তিষ্ক এবং আচরণের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এই রাসায়নিকগুলি জন্মের পরে শিশুর শরীরে থাকতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী বিকাশগত সমস্যা তৈরি করতে পারে।”

সংক্ষেপে, শ্যাম্পু এবং সাবানের মতো দৈনন্দিন পণ্যগুলিতে এমন রাসায়নিক থাকতে পারে যা জন্মের আগেই শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। মা এবং শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য সচেতন থাকা এবং নিরাপদ বিকল্পগুলি বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্রঃ “Impact of prenatal phthalate exposure on newborn metabolome and infant neurodevelopment” by Susan S. Hoffman, Ziyin Tang, Anne Dunlop, Patricia A. Brennan, Thompson Huynh, Stephanie M. Eick, Dana B. Barr, Blake Rushing, Susan L. McRitchie, Susan Sumner, Kaitlin R. Taibl, Youran Tan, Parinya Panuwet, Grace E. Lee, Jasmin Eatman, Elizabeth J. Corwin, P. Barry Ryan, Dean P. Jones and Donghai Liang, 2 April 2025, Nature Communications.
DOI: 10.1038/s41467-025-57273-z

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ইঞ্জিনিয়ারড ব্যাকটেরিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে

উত্তরাপথ: লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এবং ইউসি বার্কলে এর সহযোগিতামূলক গবেষণায় গবেষকরা একটি অভিনব ব্যাকটেরিয়া ইঞ্জিনিয়ারড করেছেন যা জ্বালানি, ওষুধ এবং রাসায়নিক উত্পাদনের সময় উত্পন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে ডিকার্বনাইজশন এর মাধ্যমে। সম্প্রতি Nature জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই আবিষ্কারটি । আর এটি "Carbene Transfer Chemistry in Biosynthesis" নামে পরিচিত । একটি অভিনব প্রতিক্রিয়ার সাথে প্রাকৃতিক এনজাইমেটিক বিক্রিয়াকে সংহত করতে ব্যাকটেরিয়াকে কাজে লাগায়। আর যা সাধারণত জীবাশ্ম .....বিস্তারিত পড়ুন

মানুষে মানুষে ঐক্য কীভাবে সম্ভব

দিলীপ গায়েন: হিন্দু,মুসলমান,ব্রাহ্মণ,তফসিলি।সকলেই মানুষ।কিন্তু এদের মধ্যে যে ব্যবধান তা হলো ধর্ম ও সাংস্কৃতিক। এই ব্যবধান মুছতে পারলে একাকার হওয়া সম্ভব। যারা বলছে আর্থিক সমতা প্রতিষ্ঠা হলে ব্যবধান মুছে যাবে, তাদের কথাটি বোধ হয় সঠিক নয়।তার প্রমাণ গরিব ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে আর্থিক ব্যবধান নেই। অথচ জাতিভেদ রয়ে গেছে। তেমনি কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত ধনী ও শিক্ষিত সমাজে আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও জাতিভেদ রয়ে গেছে। একমাত্র হাসপাতালে বা চিকিৎসা ব্যবস্থায় জাতিভেদ নেই।কারণ সেখানে তো প্রচলিত ধর্মজাত প্রভেদ বা পরিচয় নেই। আছে মেডিসিন, যা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। কারোর ধর্ম বা জাত দেখে প্রেসক্রিপশন হয় কি? এখানে মানুষের একমাত্র এবং শেষ পরিচয় সে মানুষ। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top