সম্পাদকীয়: ইরান আক্রমণে ইসরায়েলের আসল উদ্দেশ্য কী?

ছবি – এক্স হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।

যুদ্ধ বিরতির পরও অব্যাহত ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ। রক্তাক্ত এই টানাপোড়েনে ইরানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮০০ জন, আর ইসরায়েলে অন্তত ১০০০ জন বলে খবর । এই সহিংসতা শুধু পশ্চিম এশিয়ার নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও কূটনীতির ভারসাম্যকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

ইসরায়েলি সরকার যেভাবে পরপর ইরানের সামরিক ঘাঁটি, তেল ও গ্যাস ডিপো, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, তাতে একটাই প্রশ্ন সামনে এসেছে—এই হামলার আসল উদ্দেশ্য কি?

সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, এটি একটি “প্রতিরোধমূলক” পদক্ষেপ। ইরান নাকি পারমাণবিক বোমা তৈরির মুখে, সেই হুমকি ঠেকাতেই এই আগাম পদক্ষেপ। কিন্তু এমন কোনও জরুরি প্রমাণ সামনে আসেনি যা এই ‘আত্মরক্ষার তাড়না’-কে বৈধতা দিতে পারে।

জুন ১২ তারিখে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, যেখানে ইরানের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের প্রথমদিকের এনপিটি (NPT) লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল। কিন্তু সেই রিপোর্টে এমন কোনও নতুন তথ্য নেই যা ইসরায়েলের এই অতর্কিত হামলাকে ন্যায্যতা দিতে পারে।

যা ঘটছে, তা বহুদিনের পরিকল্পনার ফল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের পক্ষে এককভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তবু কেন এই আক্রমণ?

আসলে, এই আক্রমণের গন্তব্য ছিল আরও গভীরে। প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সর্বোচ্চ নেতা খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানির মত শীর্ষস্থানীয় নেতাদের টার্গেট করে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট—এটি ছিল গোটা ইরানি রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে এক কৌশলগত আঘাত। শামখানি গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলেন। তাঁর হত্যাকে অনেকে দেখছেন আলোচনার পথ বন্ধ করার এক চেষ্টারূপে।

ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের একটি প্রিয় কৌশল—ব্যক্তিবিশেষকে সরিয়ে গোটা কাঠামো ভেঙে দেওয়া। এবারও সেই ছকেই এগোচ্ছে তারা। এটি কোনও পারমাণবিক কর্মসূচির ‘মাথা কাটা’র প্রচেষ্টা নয়, বরং এক জাতীয় শক্তির ভরকেন্দ্রকে দুর্বল করার পরিকল্পনা।

আর একটি ইঙ্গিত আরও পরিষ্কার করে দিচ্ছে ইসরায়েলের অভিসন্ধি। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের জনগণের প্রতি—“অত্যাচারী শাসন থেকে নিজেকে মুক্ত করুন”। অর্থাৎ, তারা চায় ‘রেজিম চেঞ্জ’।

কিন্তু ইতিহাস বলে, কোনও জাতির উপর বাইরের শক্তি বোমা ফেললে, তারা নিজেদের শাসকের বিরুদ্ধে নয়—বরং ঐক্যবদ্ধ হয় জাতীয়তাবাদের পতাকা তলে।

ইরানের ভেতরে সরকারের প্রতি ক্ষোভ থাকলেও, একটি বিষয় সব পক্ষের মধ্যে এক—বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আপসহীন দেশপ্রেম।

এই হামলা এক গভীরতর দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ—যেখানে সামরিক শক্তির মাধ্যমে এক দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই আগুনে পুড়বে কে? শুধু ইরান-ইসরায়েল নয়—পুরো অঞ্চল, এমনকি বিশ্বশান্তিও আজ বিপন্ন।

সাম্প্রতিক যুদ্ধ একবার আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে—সহিংসতা কখনও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে না। আলোচনা, কূটনীতি আর সহমর্মিতাই আজকের বাস্তবতার শ্রেষ্ঠ অস্ত্র হওয়া উচিত

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top