সম্পাদকীয়: কোচিং সেন্টারে ১০০% সাফল্যের মিথ এবং বাস্তবতা

আজকাল, অনেক কোচিং ইনস্টিটিউট কঠিন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিপূর্ণ। তারা শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দেয় যে সেখানে যারা পড়াশোনা করবে তারা সবাই সফল হবে এবং তাদের পছন্দের চাকরি পাবে। কিন্তু সত্য হল, কোচিং সেন্টারগুলিতে সফলতার হার হাতেগোনা।

আমাদের দেশে অসংখ্য কোচিং ইনস্টিটিউট আছে এবং প্রচুর শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তি হয়। তবে, উপলব্ধ চাকরির সংখ্যা সীমিত। এর অর্থ হল, একটি কোচিং সেন্টার যতই প্রতিশ্রুতি দিক না কেন, সবাইকে নির্বাচিত করা  যাবে  না। ১০০% সাফল্যের নিশ্চয়তা দেওয়া কেবল একটি বিজ্ঞাপনি চমক যার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারকে বিভ্রান্ত করা।

বর্তমানে আমাদের দেশে কোচিং ইনস্টিটিউটগুলি আইআইটি-জেইই এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মতো পরীক্ষার প্রস্তুতির একটি বড় অংশ হয়ে উঠেছে। এই কারণে, কোচিং শিল্প এখন শিক্ষার একটি সুপরিচিত অংশ। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান আরও বেশি শিক্ষার্থীকে আকর্ষণ করার জন্য তাদের অর্জনগুলিকে অতিরঞ্জিত করে। তারা তাদের সুযোগ-সুবিধা, সাফল্যের গল্প এবং সম্পদ নিয়ে গর্ব করে, এমনকি এমন সাফল্য দাবি করে যা সত্য নয়। কখনও কখনও, তারা এমনও দেখায় যে অন্য কোথাও পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা তাদের কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করে সাফল্য অর্জন করেছে। এই মিথ্যা দাবিগুলি শিক্ষার্থীদের তাদের ক্লাসে যোগদানের জন্য বিভ্রান্ত করে।

অনেকবার সরকার এবং আদালত এই সমস্যাটি তুলে ধরেছে। তারা বলেছে যে কিছু কোচিং সেন্টার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে। তা সত্ত্বেও, অনেক প্রতিষ্ঠান বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন এবং দাবি এখনও করে যাচ্ছে। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় গ্রাহক সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (CCPA) কোচিং ইনস্টিটিউটগুলিকে কঠোর সতর্কীকরণ জারি করেছে। তারা এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের বিজ্ঞাপনে সৎ থাকার নির্দেশ দিয়েছে, নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের করা যেকোনো দাবি স্পষ্ট, নির্ভুল এবং বিভ্রান্তিকর নয়। তারা তাদের ভর্তি এবং ফলাফল সম্পর্কে স্বচ্ছ তথ্য প্রদান করতেও বলেছে।

কোচিং সেন্টারগুলির জন্য ১০০% সাফল্যের হারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এত বেশি শিক্ষার্থী এবং এত কম চাকরির সুযোগ থাকায়, এটি সম্ভব নয়। IIT-JEE-এর মতো পরীক্ষার পরে, কিছু কোচিং ইনস্টিটিউট সাফল্যের গল্প প্রদর্শন করে, তবে প্রায়শই এগুলি অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা দাবি করা হয়। কখনও কখনও, তারা আরও সফল দেখানোর জন্য এবং আরও বেশি শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করার জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নামও অপব্যবহার করে।

মূল বিষয় হল সততা। কোচিং ইনস্টিটিউটগুলির নিশ্চিত সাফল্যের বিষয়ে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত নয়। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং মিথ্যা দাবি বিশ্বাস করা উচিত নয়। নিশ্চিত সাফল্যের প্রতিশ্রুতি কেবল আরও অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবহৃত একটি কৌশল। অনেক শিক্ষার্থী এই ধরনের প্রতিশ্রুতিতে তাদের আশা এবং অর্থ বিনিয়োগ করে এবং শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়।

পরিশেষে, কোচিং সেন্টারগুলির জন্য সত্যবাদী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের আরও সচেতন হওয়া উচিত এবং বোঝা উচিত যে কোনও প্রতিষ্ঠান সাফল্যের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। কঠোর পরিশ্রম এবং সততা সাফল্যের আসল চাবিকাঠি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নয়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top