সম্পাদকীয়

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী হিংসার প্রেক্ষাপট

পশ্চিমবঙ্গের ছোট-বড় যে কোনও নির্বাচন মানেই রাজনৈতিক হিংসা । সদ্য অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েত নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয়।রাজনৈতিক হিংসা যাতে না হয় নির্বাচনে তার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার পরও হিংসা অব্যাহত থাকল, সারা রাজ্যজুরে ঘটল তেরোটি মৃত্যুর ঘটনা ।পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে  ঘট হিংসা রাজ্যের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহ নাগরিকদের ভোটাধিকার নিয়ে আমাদের সামনে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

আমাদের রাজ্যে চলতে থাকা রাজনৈতিক হিংসার পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ একাধিক কারণ থাকলেও বেকারত্ব সহ দুর্বল গ্রামীন অর্থনীতি এর প্রধান কারণ । দুর্বল গ্রামীন অর্থনীতির কারণে বেশীরভাগ গ্রামীন এলাকার মানুষদের অর্থনৈতিক উপার্জনের সুযোগ খুব কম। বিশেষত স্বল্প শিক্ষিত সেই সব মানুষদের যারা না পায় সরকারি চাকুরি না পারে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে, গ্রামীন অর্থনীতিতে বিশাল সংখ্যক মানুষ এই শ্রেনীর অন্তর্গত । এই শ্রেনীর মানুষেরা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে এবং তাদের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য বিকল্প কোনও অর্থ উপার্জনের রাস্তা না পেয়ে  কোন না কোন রাজনৈতিক দলের শরণাপন্ন হয়।

বেকার ছেলেদের এই হতাশা ও দারিদ্রকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনের সময় তাদের রাজনৈতিক হিংসায় প্ররোচিত করে । এটি খুব দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্যি যে আমাদের বেশীর ভাগ গ্রামে বিকল্প কোনও উপার্জনের ব্যবস্থা নেই । এখন গ্রামীন অর্থনীতির বেশীর ভাগটা নির্ভর করে পঞ্চায়েতের উপর। গ্রামের বেকার যুবকেরা ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনুগ্রহে অর্থ উপার্জনের জন্য  পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকে ।

রাজনৈতিক দল ও নেতারা নির্বাচনের সময় সমর্থন জোগাড় করতে এই নির্ভরতাকে কাজে লাগায়।এই নির্ভরতা থেকে পঞ্চায়েতের শাসন ক্ষমতা নিজেদের হাতে ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টা হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে স্থানীয় ক্ষমতশীল দল  তীব্র উত্তেজনা এবং হিংসায় জড়িয়ে পরে ।

এছাড়াও গ্রামের কিছু যারা বিগত পঞ্ছায়েতের উন্নয়ন ও শাসনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাদেরও একটা অংশ ক্ষমতাশীল দলের প্রতি তাদের বিরক্তি এবং হতাশা থেকে , নির্বাচনের সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলে যোগদান করে নির্বাচনী হিংসতার অনুকূল পরিবেশ তৈরী করছে ।

 দুর্বল গ্রাম অর্থনীতি থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলির মূল কারণগুলির সমাধান না করে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় হিংসতা প্রশমণের চেষ্টা এক অলীক কল্পনা মাত্র। গ্রামের বেকার যুবক- যুবতীদের  দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা করা উচিত যাতে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার উপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষও আমি

ড. জীবনকুমার সরকার: ৭ এপ্রিল ২০২৩ প্রয়াত হলেন যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষ। তাঁর প্রয়াণে দেশ ভারাক্রান্ত। যুক্তিবাদীরা চরম মর্মাহত। আমিও। তাঁর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়েছিলাম সে এক ইতিহাস। ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক পাস করে গাজোল হাইস্কুলে সবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। নতুন বইয়ের মধ্যে ডুবে আছি। আর নিয়মিত ক্লাস করছি। এইভাবে পুজোর ছুটি এসে যায়। পুজোর ছুটির আগের দিন অর্থাৎ যেদিন স্কুল হয়ে এক মাসের জন্য বন্ধ থাকবে স্কুল, সেইদিন আমি আর রাজেন লাইব্রেরীতে যাই। রাজেন আমার ছাত্রজীবনের সেরা বন্ধু। দুজনে কী বই নেবো, কী ধরনের বই নিয়ে .....বিস্তারিত পড়ুন

রাহুলের ভারতজোড় সাফল্য পেলেও, অভিষেক কি পারবে ?

উত্তরাপথ: রাহুল গান্ধীর ১৪৬ দিনের প্রায় ৩৮৫০ কিলোমিটার ভারতজোড় যাত্রার সাফল্য কংগ্রেস ঘরে তুলতেই তৃনমূলের নতুন উদ্যোগ জনসংযোগ যাত্রা।এই যাত্রায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৬০ দিনে ৩,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ " জনসংযোগ " করবেন। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা রাজ্যের সবচেয়ে দক্ষিণ প্রান্ত দক্ষিণ ২৪ পরগণার কাকদ্বীপে শেষ হবে। এই পুরো যাত্রায় অভিষেক মোট ২৫০টি সমাবেশে ভাষণ দেবেন। এখন প্রশ্ন তৃণমূল তথা অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে। কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধীর ভারতজোড় যাত্রার উদ্দেশ্য .....বিস্তারিত পড়ুন

৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল: হাইকোর্ট ও পর্ষদের টানাপড়েন অব্যাহত   

উত্তরাপথ: সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রাথমিকের ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে আর তাই নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির খেলা। বিচারপতির বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সময় এই শিক্ষকেরা অপ্রশিক্ষিত ছিলেন আর এই 'অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের' নিয়োগ করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে। এই পদ্ধতির ত্রুটির কারণে এই শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হল। .....বিস্তারিত পড়ুন

২০২৩ নির্বাচন কি সত্যি ২০২৪ এর সেমিফাইনাল ?

উত্তরাপথ: ২০২৩ নির্বাচন কি সত্যি ২০২৪ এর সেমিফাইনাল ? না  কি কংগ্রেসের কাছে আবার একটু - একটু  করে ঘুরে দাঁড়াবার প্রচেষ্টা এবং বিজেপির কাছে মোদী ম্যাজিক যে এখনও অব্যাহত সেটা প্রমান করা। বিজেপির এখন প্রচারের একমাত্র মুখ নরেন্দ্র মোদী। সদ্য সমাপ্ত কর্ণাটক নির্বাচনের পুরো প্রচার হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কেন্দ্র করে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা সহ মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোমাই নিজেও প্রধানমন্ত্রী মোদির নামে ভোট চাইলেন। তার  উপরে, প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজে .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top