সম্রাট নিরো থেকে ট্রাম্পঃএ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

প্রীতি গুপ্তাঃ এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি । প্রাচীনকালে, যখন রোম শহর আগুনে পুড়েছিল, তখন সম্রাট নিরো সঙ্গীত সাধনায় ব্যাস্ত ছিলেন বলে জানা যায়। এই গল্পটি এমন একজন নেতার প্রতিফলন ঘটায় যিনি তার জনগণের দুঃখ-কষ্ট থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন । আজকের দিনে আমরা আমেরিকায় একই রকম পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। ক্যালিফোর্নিয়ায় যখন দাবানল ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তখন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ব্যস্ত তার নিজের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানের চাকচিক্যের মধ্যে।

এখন পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বর্তমানে দুটি বড় অগ্নিকাণ্ড দমন করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রায় ৭,৮০০  দমকলকর্মী প্রতি ঘন্টায় ৬০ থেকে ৮০ মাইল বেগে ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০,০০০ মানুষকে অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  এছাড়াও ভয়াবহ দাবানলে প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। দাবানল দুঃখজনকভাবে প্রায় ২৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ।আগুনের কবলে মাত্র ৭ দিনে, ৩ লক্ষ ২১ হাজার একর এলাকা বিশিষ্ট লস অ্যাঞ্জেলেস নিজের চোখে ৪০ হাজার একর জমি ছাই হয়ে যেতে দেখেছে।এই আগুনে ২৫০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারের সম্পত্তি নষ্ট হয়ে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় ধোঁয়া বাতাসে ভরে গেছে, এবং  পরিবারগুলি সবকিছু পিছনে ফেলে অন্যত্র  স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে।

একদিকে যখন আমেরিকায় এই পরিস্থিতি সেই সংকটের মাঝে, দেশের নেতা তাদের নাগরিকদের কষ্ট উপেক্ষা করে তার শপথ উৎসবের মাধ্যমে উদযাপন করেছেন। নেতাদের এই অসংবেদনশীল আচরণ জনগণের মধ্যে নেতার নেতৃত্ব এবং দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনার জন্ম দেয়। প্রকৃত নেতৃত্বের অর্থ হল কঠিন সময়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকায় নেতাদের উচিত দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

এক সময় চাণক্য তার অর্থশাস্ত্রে বলেছিলেন প্রজাসুখ একমাত্র রাজধর্ম হওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের ভোটে নির্বাচিত রাজারা সুখে আছে সেটা বিনা প্রতিবাদে তাকিয়ে দেখাই প্রজাদের অর্থাৎ কোটি কোটি ভোটারদের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, বেশীরভাগ রাজনৈতিক নেতা নিজেদের যতটা জনদরদী হিসেবে দাবী করেন প্রচার মাধ্যমের সামনে , কিন্তু বাস্তবতা কখনও কখনও ভিন্ন হতে পারে। কিছু রাজনীতিবিদ সাধারণ মানুষের হয়ে কল্যাণের জন্য কাজ করার পরিবর্তে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ বা নির্বাচিত কয়েকজনের স্বার্থের দিকে বেশি মনোযোগ দেন।তাই আজকের নেতাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সকলের কল্যাণের জন্য অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করা।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top