

উত্তরাপথঃ রহস্যময় পিরামিড নিয়ে অনেক কিংবদন্তি রয়েছে ।সাহুরার পিরামিড মিশরের উল্লেখযোগ্য পিরামিডগুলির মধ্যে একটি । এটি ৪,৪০০ বছর আগে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ২৬ থেকে ২৫ শতকের শেষের দিকে পঞ্চম রাজবংশের দ্বিতীয় মিশরীয় ফারাও সাহুরাকে সম্মান জানাতে নির্মিত হয়েছিল।বর্তমানে জুলিয়াস-ম্যাক্সিমিলিয়ানস-ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ার্জবার্গ (জেএমইউ) এর মিশরবিজ্ঞান বিভাগের মিশরবিজ্ঞানী ডক্টর মোহাম্মদ ইসমাইল খালেদের নেতৃত্বে মিশরীয় এবং জার্মান বিশেষজ্ঞদের দ্বারা একটি যৌথ প্রচেষ্টায়, সাহুরার পিরামিডের ভিতরে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করা হয়েছে। এই আবিষ্কারটি প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের বোঝার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে।
গবেষকদের দলটি তাদের অন্বেষণের সময় পিরামিডের মধ্যে থাকা বেশ কয়েকটি স্টোরেজ রুম আবিস্কার করেছে। এই নতুন আবিষ্কার সাহুরার পিরামিডের ডিজাইন সম্পর্কে নতুন তথ্য দিয়েছে।২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পঞ্চম রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা সাহুরা ছিলেন আবুসিরে শায়িত প্রথম রাজা।সাহুরার পিরামিডের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প, ২০১৯ সালে শুরু হয়েছিল এবং আমেরিকান রিসার্চ সেন্টার ইন ইজিপ্ট (ARCE) এর অ্যান্টিকুইটিজ এন্ডোমেন্ট ফান্ড (AEF) দ্বারা সমর্থিত, যার লক্ষ্য সাহুরার পিরামিডের অবকাঠামো রক্ষা করা।গবেষক দলের লক্ষ্য ছিল অভ্যন্তরীণ কক্ষগুলি পরিষ্কার করা, পিরামিডকে ভিতর থেকে স্থিতিশীল করা এবং আর যেন কোনও ক্ষতি না হয় তা রোধ করা।
পুনরুদ্ধারের কাজ চলাকালীন, দলটি পিরামিডের কাঠামোর মূল অংশটি আবিষ্কার করেছিল এবং সেই সাথে অ্যান্টেচেম্বারের ফ্লোর প্ল্যানটি উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছিল, যা সময়ের সাথে সাথে খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেইসাথে, ধ্বংস হওয়া দেয়ালগুলিকে নতুন ধরে রাখার দেয়াল দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। অ্যান্টেচেম্বারের পূর্ব প্রাচীরটি খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং শুধুমাত্র উত্তর-পূর্ব কোণ এবং পূর্ব প্রাচীরের প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার সেই সময় অবশিষ্ট ছিল।
এর আগে ১৮৩৬ সালে একটি খননের সময় জন পেরিং ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছিলেন একটি নিম্ন গিরিপথের চিহ্ন। সেই সময় এই পথটি ধ্বংসাবশেষ এবং আবর্জনা দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল এবং ক্ষয়ের কারণে এটি চলাচলের অযোগ্য ছিল। ব্রিটিশ ইজিপ্টোলজিস্ট সন্দেহ করেছিলেন যে এটি স্টোরেজ রুম হতে পারে। এরপর মিশরীয়-জার্মান দলের সন্ধান,প্রমাণ করে যে পেরিংয়ের অনুসন্ধানের সময় করা পর্যবেক্ষণগুলি সঠিক ছিল। গবেষকদের এই পর্বে এ পর্যন্ত আটটি স্টোররুম আবিষ্কৃত হয়েছে।যদিও এই কাঠামোর উত্তর ও দক্ষিণ অংশ বিশেষ করে ছাদ এবং মূল মেঝে খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবুও মূল দেয়ালের অবশিষ্টাংশ এবং মেঝের কিছু অংশ এখনও রয়েছে।
প্রতিটি স্টোরেজ রুমের ভেতরে করা যত্ন সহকারে ডকুমেন্টেশন প্রাচীন মিশরীয়দের দ্বারা নিযুক্ত নির্মাণ কৌশলগুলির গভীরতা বুঝতে সাহায্য করে।যেহেতু সাহুরার পিরামিড ফারাওদের সমাধিস্থল হিসাবে পরিচিত ছিল এবং এর মধ্যে পাওয়া অনুসন্ধানগুলি প্রাচীন মিশরীয়দের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং তাদের আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের এক অনন্য নজির প্রস্তুত করে।
ডক্টর মোহাম্মদ ইসমাইল খালেদের নেতৃত্বে মিশরীয় এবং জার্মান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যৌথ প্রচেষ্টা সাহুরার পিরামিডের সম্পর্কে অনেক অজানা অথ্য আবিষ্কার করেছে। গবেষকদের এই আবিষ্কারটি প্রাচীন মিশরীয় নির্মাণ কৌশল, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, শৈল্পিক অভিব্যক্তি এবং সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে এবং ভবিষ্যতের অন্বেষণ এবং গবেষণার পথ প্রশস্ত করে।এটি একটি প্রাচীন সভ্যতার রহস্য উদঘাটনের চলমান প্রচেষ্টা যা মানব ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।
আরও পড়ুন
ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে
উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন