

ড. জীবনকুমার সরকারঃ এই সময় যারা বাংলা কবিতার সংসারে একেবারেই নতুন কুঁড়ি হয়ে বিকশিত হতে শুরু করেছে, তাদের মধ্যে কবি সুকান্ত মণ্ডল অন্যতম। শহরতলি প্রকাশনী থেকে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে তার কবিতার প্রথম বই। নাম ‘ মন খারাপের কাকতাড়ুয়া’। দু ফর্মার বইয়ে মোট আঠাশটি কবিতা আছে। প্রতিটি কবিতাই বিষয় ও কাব্যভাষায় অনন্য। যেমন, ‘ক্ষত’ কবিতার চতুর্থ স্তবক লক্ষ করার করার মতো:” দু- হাঁটুর মাঝে মাথা রেখে শুধু স্বপ্নকে পড়েছে।/ সংসারের খোপে তাকিয়ে তার দু- চোখ পাখি হয়ে ওড়ে/ সমস্ত বিষাদ পুষে/ বাবা এখন মায়ের বিড়ি বাঁধা হাতে ভাত খায়।” এমন কাব্যবয়ান সুকান্তর পক্ষেই লেখা সম্ভব। কবিতার ভাষা মূলত ইশারার ভাষা। কবিতার সমস্ত শরীর জুড়ে থাকে ইশারার নানারকম বিভঙ্গ। দিন দিন সুকান্ত মণ্ডল কাব্যইশারা নির্মাণে পাঠককে উপহার দিয়ে চলেছেন নির্মেদ কবিতা। ‘ দুপুরনামা’ কবিতাটির প্রথম স্তবক এক্ষেত্রে লক্ষ করা যাক: ” শহরের গায়ে ঝলসে যাওয়া কয়েকটা ফোস্কা/ মুখভর্তি যন্ত্রণার নিয়ন নিয়ে জ্বলজ্বল করছে।/ প্রাচীন প্রাচীরে একটি ধূর্ত কাকের কা/ পরকীয়া ছাদে ব্রা-শুকোনো রোদ…/ জাফরি জানালায় মুখ আটকে আছে দুপুরের ঠাকুরপো।” কাব্যবয়ানে এমন করে শব্দ বিচ্ছুরণ করে কবি সুকান্ত মণ্ডল সকলকে উন্মাদ করে ছাড়ছেন। তিনি এমন করে বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা বিস্তার করে কবিতা লিখেছেন বলে, মনে হচ্ছে না সুকান্ত মণ্ডল আধুনিক বাংলা কবিতার আসরে নতুন। সুকান্ত মণ্ডলের আগের প্রজন্মের যারা কবি তারাও ঈর্ষা করবেন তার সদ্য প্রকাশিত বইয়ের এমন ধরনের কাব্যভাষায়: ” বৃষ্টির সাথে মায়ের সাতান্ন বছরের প্রেম।/ জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হলে/ বৃষ্টির সহবাসে ধান শীষও পোয়াতি হয়ে ওঠে,/ তখন নবান্নের কাক হয়ে উঠোনে আসে।/ মাকে আমি কখনও বোয়ার ভুঁই হতে দেখিনি/ অথচ আমার জন্মের আগে/ মা পাঁচবার ধানশীষ হয়ে নুয়েছে।/ আমিও শেষবারের ফসল সোনারতরী হয়ে আসি।” ইতিহাস ও সময়ের কূটাভাষকে কীভাবে কবিতায় রূপ দিতে হয়, তা সুকান্ত রপ্ত করেছে নিবিড় সোহাগে। ‘ভাত’ কবিতাটি তার সাক্ষ্য বহন করছে : ” রাত ক্রমশ ঘন হলে আমরা ঝিঁঝির জলসায় বসে পড়ি।/ আমাদের আত্মা তখন নবান্ন নাটকের কুত্তার মতো/ অপুষ্টি হাতের উপর কামড় বসায়,/ আমি তখন মধ্যরাতে প্রেমেন্দ্র মিত্রের/ ফ্যান কবিতার পাতা চেটে চেটে দেখছি।” কী অসাধারণ শব্দের বিন্যাস! যেনো মনে হয় ভোরের শিউলির ওপর শিশিরের সংসার। এই বইয়ের একটি ভালো জাতের প্রেমের কবিতা আছে। কবিতাটির নাম ‘সমস্ত প্রেম হাতে নিয়ে বলি’। কবিতাটির প্রথম স্তবক প্রণিধানযোগ্য : ” আমার সমস্ত প্রেম হাতে নিয়ে বলি,/ তোমার চোখের জল আমাকে/ নিবিড় মোহনার গোপনাঙ্গের দিকে নিয়ে যায়,/ তখন আমি আমার কবিতার শহর/ আর তোমাকেই ফেলে আসি…” প্রবহমন প্রেমের স্রোতে কবির এই বয়ান আমাদের মস্তিষ্কে লঘু পালকের মতো ঠোকর মারে। সুকান্ত মণ্ডলের এই ছোটো কবিতার বই বাংলা কবিতার আকাশে মাটি থেকে চন্দ্রাভিযানের মতো ।
আরও পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন