খাদ্য রসিক স্বামী বিবেকানন্দ

প্রীতি গুপ্তাঃ মহান ভারতীয় দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক নেতা স্বামী বিবেকানন্দ শুধুমাত্র তার গভীর শিক্ষা এবং প্রজ্ঞার জন্যই পরিচিত ছিলেন না বরং জীবনের সহজ আনন্দের জন্যও তিনি পরিচিত ছিলেন। স্বামীজি যে জিনিসগুলি বিশেষভাবে পছন্দ করতেন তার মধ্যে একটি হল চা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এক কাপ চা একজনের মনের আন্নদকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং দুঃখ- দুর্দশার সময়েও মনে শান্তি দিতে পারে।

কথিত আছে যে, সন্ন্যাসী হওয়া ছাড়াও তার ব্যক্তিত্বে অনেক মজার বিষয় The Monk as a Man নামে একটি পুস্তকে শঙ্কর স্বামী বিবেকানন্দের জীবনের অনেক না জানা কথা লিখেছেন। সেখানে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের লেখাপড়া থেকে শুরু করে খাবারের প্রতি ভালোবাসা সবই আলোচনা করেছেন।এই বইয়ের ভিত্তিতে, আমরা আপনাকে তার সম্পর্কে কিছু অজানা মজার কথা বলছি।

বৃটিশ শাসন চলছে দেশে,দেশবাসী ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য লড়াই করছেন।এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে, আমাদের দেশের অনেকে চায়ের বিরোধিতা করেছিলেন কারণ এটি ব্রিটিশদের উপহার ছিল, তবে স্বামী বিবেকানন্দ সহ বাংলার অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, যারা চা খুব পছন্দ করতেন। স্বামীজি বিভিন্ন ধরনের চা পান করতে পছন্দ করতেন।সেই সময় তিনি বেলুড় মঠে প্রায়ই তার শিষ্য এবং অনুসারীদের সাথে গভীর আলোচনায় ব্যস্ত থাকার সময় এক কাপ চা উপভোগ করতেন।তবে স্বামী বিবেকানন্দ যে উপায়ে তার চা উপভোগ করতেন তার মধ্যে একটি হল মসলা চা।যা লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি এবং আদার মতো মশলার মিশ্রণে এই সুগন্ধি এবং স্বাদযুক্ত করে তৈরি করা হয়। এই মশলাগুলির সংমিশ্রণ শুধুমাত্র চায়ে একটি অনন্য স্বাদ যোগ করে না বরং অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতাও প্রদান করে।

স্বামী বিবেকানন্দের চায়ের প্রতি অনুরাগ কেবল একটি নৈমিত্তিক পছন্দ ছিল না। একদা বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দের সাথে কিছু আলোচনা করতে কলকাতায় আসেন লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক । স্বামীজি সেদিন বেলুর মঠে একটি ‘টি পার্টি’র আয়োজন করেছিলেন।সেখানে স্বামীজি লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলকে চা বানাতে অনুরোধ করেন। তারপর বাল গঙ্গাধর তিলক সেখানে উপস্থিত সকলের জন্য মুগলাই চা তৈরি করেন, যাতে লবঙ্গ, এলাচ, জাফরানের মতো মশলা ব্যবহার করা হয়।সেদিকের সেই চা চক্র পরবর্তী কালে ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে উঠেছিল।

বইতে উল্লেখ রয়েছে চা ছাড়াও, স্বামীজি তার খাবারে আইসক্রিমও পছন্দ করতেন, পাশাপাশি তিনি নিজেও ভাল রান্না করতেন। কিছু মসলা মিশিয়ে ভাজা আলু খেতে পছন্দ করতেন । ‘আহারে-আহারে বিবেকানন্দ’ বইতেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, শৈশবে নরেন্দ্রনাথ (স্বামী বিবেকানন্দের শৈশবের নাম) বাড়ির কাছে বিক্রি হওয়া ছোট রুটি এবং শাকসবজি খেতে পছন্দ করতেন। বিদেশ ভ্রমণের সময়, তিনি সেখানকার খাবারের দিকে মনোযোগ দিতেন এবং কখনও কখনও ভারতীয় খাবারের বিকল্পও খুঁজে পেতেন।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top