গবেষণা বলছে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে ব্রোকলি সহ শাকসবজির উপর নির্ভর করুন

 উত্তরাপথঃ এডিথ কোওয়ান ইউনিভার্সিটির একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রোকলি এবং কালে জাতীয় (সবুজ পাতাযুক্ত সবজি যেমন বাঁধাকপি) শাকসবজি রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সহ হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাহায্য করতে পারে। এই সবজি, যা ক্রুসিফেরাস সবজি নামে পরিচিত, গাজর এবং আলুর মতো মূল শাকসবজির তুলনায় রক্তচাপ কমাতে বেশি কার্যকর।

গবেষকরা দেখেছেন যে প্রতিদিন ক্রুসিফেরাস বা সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি খেলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে রক্তচাপ কমাতে পারে। এই সবজিতে এমন যৌগ রয়েছে যা রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।তাই খাদ্যতালিকায় ব্রোকলি, বাঁধাকপি এবং ব্রাসেলস স্প্রাউটের মতো ক্রুসিফেরাস সবজি যোগ করলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে বলে ধারনা বিজ্ঞানীদের।

এই গবেষণাটি ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলেছিল এবং অংশগ্রহণকারীরা যারা ক্রুসিফেরাস শাকসবজি খেয়েছিল তাদের রক্তচাপ ২.৫ mmHg হ্রাস পেয়েছিল যারা মূল শাকসবজি খেয়েছিল তাদের তুলনায়। রক্তচাপের এই হ্রাস হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ৫ শতাংশ কমাতে পারে।আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনার খাদ্যতালিকায় আরো ক্রুসিফেরাস শাকসবজি যোগ করে রক্তচাপ কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে।

ব্রোকলি, বাঁধাকপি, কালে এবং ফুলকপি সহ ক্রুসিফেরাস শাকসবজি, গাজর, আলু এবং কুমড়ার মতো মূল শাকসবজির তুলনায় উচ্চ রক্তচাপ সহ মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের রক্তচাপ কমাতে বেশি কার্যকর বলে দেখানো হয়েছে। এই সমীক্ষায়, যারা প্রতিদিন ক্রুসিফেরাস শাকসবজির চারটি করে ধরন খেয়েছিল তাদের রক্তচাপ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল যারা একই পরিমাণ মূল শাকসবজি খেয়েছিল তাদের তুলনায়।

ইসিইউ-এর একজন পিএইচডি ছাত্র মিসেস এমা কনোলি ব্যাখ্যা করেছেন যে এই সবজিতে গ্লুকোসিনোলেটস নামক বিশেষ যৌগ রয়েছে, যা প্রাণীদের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে বলে দেখা গেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত মানুষের মধ্যে তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।ক্রুসিফেরাস শাকসবজিতে নাইট্রেট এবং ভিটামিন কে এর মতো অন্যান্য সহায়ক পুষ্টিও রয়েছে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। মিসেস কনোলি উল্লেখ করেছেন যে উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ, বিশেষ করে মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে। এই ঝুঁকি কমাতে সাধারণত বেশি শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে, এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্রুসিফেরাস শাকসবজি অন্যান্য ধরনের শাকসবজির তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তবে অনেকেই এই সবজি পর্যাপ্ত পরিমাণে খান না।

ইসিইউ থেকে ডাঃ লরেন ব্লেকেনহর্স্ট উল্লেখ করেছেন যে অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ১৫ জনের মধ্যে ১ জনেরও কম প্রাপ্তবয়স্ক নির্ধারিত মাত্রায় শাকসবজি খান এক্ষেত্রে ক্রুসিফেরাস শাকসবজির ব্যবহার বিশেষভাবে কম। তিনি রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করার জন্য এই সবজি বেশি করে খেতে উৎসাহিত করেন। আদর্শভাবে, এই সবজিগুলি তাদের স্বাস্থ্য উপকারিতা বজায় রাখতে সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন খাওয়া উচিত।

হার্ট ফাউন্ডেশন এই ফলাফলগুলিকে স্বাগত জানিয়েছে। হার্ট হেলথের ম্যানেজার কিম ল্যাং বলেন, ফলাফল উত্তেজনাপূর্ণ এবং হৃদরোগের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খেতে উৎসাহিত করা উচিত । তারা খাবারে ব্রোকলি এবং কলির মতো ক্রুসিফেরাস সবজি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সূত্রঃ Cruciferous vegetables lower blood pressure in adults with mildly elevated blood pressure in a randomized, controlled, crossover trial: the VEgetableS for vaScular hEaLth (VESSEL) study” by Emma L. Connolly, Alex H. Liu, Simone Radavelli-Bagatini, Armaghan Shafaei, Mary C. Boyce, Lisa G. Wood, Lyn McCahon, Henrietta Koch, Marc Sim, Caroline R. Hill, Benjamin H. Parmenter, Nicola P. Bondonno, Amanda Devine, Kevin D. Croft, Richard Mithen, Seng Khee Gan, Carl J. Schultz, Richard J. Woodman, Catherine P. Bondonno, Joshua R. Lewis, Jonathan M. Hodgson and Lauren C. Blekkenhorst, 2 September 2024, BMC Medicine.
DOI: 10.1186/s12916-024-03577-8

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বিক্রম সারাভাই: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার একজন দূরদর্শী পথিকৃৎ

উত্তরাপথঃ ডঃ বিক্রম সারাভাই ছিলেন ভারতের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী। তিনি একজন বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, শিল্পপতি এবং স্বপ্নদর্শীর ভূমিকা সমন্বিত, ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জনক হিসাবে বিখ্যাত।তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় ভারত মহাকাশ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) এর প্রতিষ্ঠা ছিল তার অন্যতম সেরা সাফল্য। তিনি রাশিয়ান স্পুটনিক উৎক্ষেপণের পর ভারতের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য মহাকাশ কর্মসূচির গুরুত্ব সম্পর্কে সরকারকে সফলভাবে বোঝান।এরপর ডঃ হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা, যিনি ভারতের পারমাণবিক বিজ্ঞান কর্মসূচির জনক হিসাবে পরিচিত, ভারতে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনে ডঃ সারাভাইকে সমর্থন করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

গ্লোবাল ওয়ার্মিং রিপোর্ট: ২০২৩ বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে উদ্বেগজনক প্রতিবেদন

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্ব যখন বিশ্ব উষ্ণায়নের কেন্দ্র করে শুরু হওয়া জলবায়ু সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেই সময়, ২০২৩ বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে একটি উদ্বেগজনক প্রতিবেদন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ৮ আগস্ট যে পরিসংখ্যান আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন,তাতে আগামী দিনের ভয়াবহ পরিণতির জন্য বিশ্ববাসীকে সতর্কবাণী শুনিয়েছেন।এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্বে তাপ তরঙ্গ এবং দাবানলের জন্য ২০১৯ সালের জুলাই মাসটিকে চিহ্নিত করা হত । কিন্তু এবছর জুলাই মাসের তাপমাত্রা গত ২০১৯ সালের থেকেও ০.৩৩ সেন্টিগ্রেড বেশি ছিল EU-এর কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর সামান্থা বার্গেস বলেছেন, "গত ১২০,০০০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণমূলক রেকর্ড এবং প্যালিওক্লাইমেট রেকর্ড এক সাথে সমন্বয় করে বিশ্লেষণ করলেও এত গরম ছিল না।" .....বিস্তারিত পড়ুন

শূন্য বর্জ্য নীতি গ্রহনে জাপান আজ বিশ্বগুরু

উত্তরাপথঃ পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ শহর জাপান । সম্প্রতি তার শূন্য বর্জ্য নীতি-এর কারণে খবরের শিরোনামে । Zero Waste বা শূন্য বর্জ্য হল- অযথা খরচকে ন্যূনতম রেখে উৎপাদিত আবর্জনা কমানোর প্রচেষ্টা। ১৯৯৬ সালে , অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী শহর ক্যানবেরা বিশ্বের প্রথম শূন্য-বর্জ্য শহরের শিরোপা অর্জন করে।এরপর Zero Waste ধারণাটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, উদাহরণস্বরূপ কানাডার টরন্টো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো নিজেদের শূন্য-বর্জ্য শহর হিসাবে ঘোষণা করে । পরিবেশ সচেতনতার ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৭০% পৌরসভা নিজেদের শূন্য-বর্জ্য পৌরসভা হিসাবে ঘোষণা করেছে।এদিকে ২০২২ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত, জাপানের পাঁচটি শহর নিজেদের শূন্য বর্জ্য শহর হিসেবে ঘোষণা করেছে।জাপানের তোকুশিমা প্রিফেকচারের কামিকাতসু টাউন প্রথম নিজেদের শূন্য বর্জ্য  শহর হিসেবে ঘোষণা করার পর, ধারণাটি পুরো জাপানে ছড়িয়ে পড়ে। .....বিস্তারিত পড়ুন

আবার জেগে উঠবে চন্দ্রযান-৩-এর বিক্রম ল্যান্ডার,আশাবাদী ISRO

উত্তরাপথঃ চন্দ্রযান-৩-এর বিক্রম ল্যান্ডার বর্তমানে চাঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্ধকার চাঁদে বিক্রম ল্যান্ডার দেখতে কেমন?  এটি জানতে চন্দ্রযান-২ অরবিটার পাঠানো হয়েছিল।চন্দ্রযান-২ অরবিটার বিক্রম ল্যান্ডারের একটি ছবি তোলেন।ISRO সেই ছবিটি প্রকাশ করেছে, যা রাতে চন্দ্রযান-3 ল্যান্ডার দেখায়।ISRO টুইট করে জানায় রোভার প্রজ্ঞানের পরে, এখন ল্যান্ডার বিক্রমও ঘুমিয়ে পড়েছে। ISRO প্রধান এস সোমনাথ এর আগে বলেছিলেন যে চন্দ্র মিশনের রোভার এবং ল্যান্ডার চান্দ্র রাতে নিষ্ক্রিয় করা হবে।  তারা ১৪ দিন পরে আবার সক্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে যখন সেখানে ভোর হবে। 23 আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ পৃষ্ঠে অবতরণের পরে, ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান উভয় ডিভাইস তাদের কাজ খুব ভাল .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top