

২০২৩ বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে উদ্বেগজনক প্রতিবেদন ছবি সৌজন্যে- উত্তরাপথ
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্ব যখন বিশ্ব উষ্ণায়নের কেন্দ্র করে শুরু হওয়া জলবায়ু সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেই সময়, ২০২৩ বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে একটি উদ্বেগজনক প্রতিবেদন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ৮ আগস্ট যে পরিসংখ্যান আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন,তাতে আগামী দিনের ভয়াবহ পরিণতির জন্য বিশ্ববাসীকে সতর্কবাণী শুনিয়েছেন।এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্বে তাপ তরঙ্গ এবং দাবানলের জন্য ২০১৯ সালের জুলাই মাসটিকে চিহ্নিত করা হত । কিন্তু এবছর জুলাই মাসের তাপমাত্রা গত ২০১৯ সালের থেকেও ০.৩৩ সেন্টিগ্রেড বেশি ছিল
EU-এর কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর সামান্থা বার্গেস বলেছেন, “গত ১২০,০০০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণমূলক রেকর্ড এবং প্যালিওক্লাইমেট রেকর্ড এক সাথে সমন্বয় করে বিশ্লেষণ করলেও এত গরম ছিল না।”
২০২৩-এর জুলাই মাসে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা অতীতের যে কোনও মাসের থেকে সর্বোচ্চ ছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে । রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের গড় তাপমাত্রার তুলনায় এ বছর জুলাই এর তাপমাত্রা প্রায় ১.৫ সেলসিয়াস বেশি ছিল ,আবার ১৯৯১- ২০২০ সালের গড়ের তুলনায় ০.৭২ সেন্টিগ্রেড বেশি উষ্ণ ছিল। এই দুঃখজনক মাইলফলক বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব কে আমাদের সামনে তুলে ধরে সেই সাথে অবিলম্বে পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
২০২৩ এর জুলাই বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে রেকর্ড-ব্রেকিং তাপমাত্রা প্রত্যক্ষ করেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা সংকটকে আরও তীব্র করেছে। জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্য ইঙ্গিত করে যে জুলাই ২০২৩ বৈশ্বিক উষ্ণতা এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা উষ্ণতম মাসগুলির মধ্যে রয়েছে। এই দুঃখজনক মাইলফলক বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্রমাগত বাড়তে থাকা সমস্যাকে এবং অবিলম্বে পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাকে আমাদের সামনে তুলে ধরে।
দিন দিন বাড়তে থাকা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব ২০২৩ সালের জুলাই মাসের বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ায় রেকর্ড বৃদ্ধির সাথে স্পষ্ট ছিল। তাপপ্রবাহ, খরা এবং দাবানল , যা মানব ও প্রাকৃতি উভয়কেই বিধ্বংসী পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনাগুলি শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্যই ঝুঁকি তৈরি করে না বরং কৃষি , জলসম্পদ এবং জীববৈচিত্র্যের সম্মুখীন হওয়া চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বরফ গলে গিয়েছে,যা সমুদ্রের জলের উচ্চতা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। মেরু অঞ্চলে বরফের চাপগুলি গলে যাওয়ার সুদূরপ্রসারী পরিণতি হিসাবে,আমাদের গ্রহের বাস্তুতন্ত্র ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে । বৈশ্বিক উষ্ণতাও সমুদ্রের অম্লকরণকে বাড়িয়ে দিচ্ছে যা সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রকেও প্রভাবতি করছে।
২০২৩ এর জুলাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং রিপোর্টের ফলাফলগুলি ব্যাপক এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার উপর জোর দিয়েছে ।পরিবেশে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সরকার, ব্যবসা এবং ব্যক্তিদের অবশ্যই ডিকার্বনাইজেশন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি গ্রহণ এবং টেকসই অনুশীলনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।সেই সাথে প্রযোজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা । জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সমস্ত দেশগুলিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলিকে প্রশমিত করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য গ্রহ নির্মাণ করা প্রধান লক্ষ্য।
আরও পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন