ভোটার আইডি কি আর বিশ্বাসযোগ্য নয়? নাগরিকত্ব প্রমাণে বিতর্ক তুঙ্গে

ছবি – এক্স হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।

উত্তরাপথঃভারতীয় গণতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক কাঠামো, যার ভিত তৈরি হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর। আর এই ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্ত কমিশনের নিরপেক্ষতা ও কার্যপ্রণালী নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

বিতর্কের সূত্রপাতনির্বাচন কমিশন বলেছে, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আধার কার্ডভোটার আইডি যথেষ্ট নয়। অথচ, এই দুটোই এতদিন পরিচয়পত্র হিসেবে সর্বত্র গ্রহণযোগ্য ছিল। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা ছড়িয়েছে, এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে।

কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে –

১। ভোটার আইডি তো কমিশনের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়, তাহলে তা অবিশ্বস্ত কীভাবে?

২। আধার ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, গ্যাস কানেকশন বা সরকারি পরিষেবা মেলে না, তাহলে নাগরিকত্ব প্রমাণে তা বাদ কেন?

৩। বাসিন্দা শংসাপত্রের অবস্থা এমন, বিহারের মাসৌড়ি থেকে কুকুরের নামে সনদপত্র ইস্যুর খবর এসেছে। তাহলে কোনটা আসল প্রমাণ?

বিহারে কিছু মাস পরেই বিধানসভা নির্বাচন। এর আগে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন অভিযান শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিহারে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটার নথিপত্র জমা দেননি — কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে তারা হয়তো মৃত, স্থানান্তরিত, অথবা তালিকায় ভুলভাবে যুক্ত। কিন্তু বিরোধীরা বলছে, নির্বাচনের আগে এমন সংবেদনশীল পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছে।

নাগরিকত্ব প্রমাণে নতুন এই নিয়ম নিয়ে মামলা উঠেছে সুপ্রিম কোর্টে। আদালত বলেছে, যদি এই অভিযানে বড় সংখ্যায় ভোটারদের নাম কাটা হয়, তাহলে আদালতের হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী হবে। আদালতের পরামর্শ ছিল — আধার, ভোটার আইডি ও রেশন কার্ডকে প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হোক।

কমিশনের দাবি — আধার ও ভোটার আইডি শুধু পরিচয় প্রমাণ করে, নাগরিকত্ব নয়। কিন্তু এই যুক্তি অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। কারণ, যাঁরা প্রকৃত নাগরিক, কিন্তু কোনও কারণে নাগরিকত্বের আলাদা প্রমাণ দিতে অক্ষম — তাঁরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।কমিশনের মতে, দেশের ভোটার তালিকায় বহু জাল নাম রেজিস্টার্ড আছে, যা সংশোধনের প্রয়োজন।

 সমাধানের পথ

১। আধার, ভোটার আইডি, রেশন কার্ড ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য দলিল হিসেবে মেনে নেয়া উচিত।

২। জনমত স্বচ্ছ আলোচনার ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণ করা দরকার, যেন গণতন্ত্রে মানুষের আস্থা বজায় থাকে।

৩। কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে যে, একজনও যোগ্য নাগরিক যেন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত না হন।

একজন ভোটার যদি সঠিকভাবে ভোট দিতে না পারেন, তাহলে গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হয়ে যায়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, ভোটারদের বিশ্বাস অটুট রাখতে নীতি ও পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা, সরলতা ও ন্যায়বিচার বজায় রাখা।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top