এনকাউন্টার

অসীম পাঠক

পশ্চিমবঙ্গ উড়িষ্যার সীমান্ত উপকূলে বেশ কিছুদিন ধরে ভারী বুটের আওয়াজ আর বারুদের গন্ধে উত্তাল অরন্যভূমি। পার্শবর্তী জনপদ যেনো আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা য় দিন কাটাচ্ছে । ম্যাডাম রাগিনী সরকার স্পেশাল পুলিশ ফোর্স নিয়ে মাওবাদী অভিযানে এসেছেন। ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জাঁদরেল আই পি এস অফিসার ম্যাডাম রাগিনী সরকার , বেপরোয়া । তিনদিন ননস্টপ অভিযানের পর ধরা পড়লো পালের গোদা পবনকুমার। ম্যাডাম রাগিনী ঠিক করলেন এনকাউন্টার এ অপরাধীদের মেরে ফেলে কেস ক্লোজ করে দেবেন।

সেইমতো সবাই কে শেষ করে পবনকুমার কে নিয়ে তার বিশেষ দেহরক্ষী জংগলে এলো, এ কাজ রাগিনী একাই করবেন । শাল মহুয়ার জংগলে মুখোমুখি রাগিনী এবং পবন। খাকি উর্দিতে স্মার্ট অফিসার রাগিনীর হাতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। আর এক দিকে দাড়ি গোঁফের জংগলে অভুক্ত মাওবাদী নেতা পবনকুমার। একি হঠাৎ বিড়বিড় করে পবন কুমার বলে ওঠে , পাহাড়ি ফুল– কার্শিয়াং এর ছিপছিপে সুন্দরী মেয়ে রাগিনী কে এই নামে একজনই ডাকতো , যে আজ ধূসর অতীত। কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের স্কলার রনজয় চক্রবর্তী – বুদ্ধিদীপ্ত চোখ নজরকাড়া রেজাল্ট।
রাগিনী র সাথে প্রেম তারপর বর্ষনমুখর এক সন্ধ্যায় নির্জন মেসবাড়িতে শরীরী মিলন। এর কয়েকদিন পর নিখোঁজ রনজয়, না কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি । শুরু হয়েছিলো রাগিনীর কষ্টের লড়াই । জীবন যুদ্ধ , কেননা তার গর্ভে ছিলো রনজয়ের সন্তান। একদিকে সমাজ একদিকে নীতি নৈতিকতা আর একদিকে রনজয়ের পালিয়ে যাওয়া। সবার সব ইচ্ছে কে ব্যর্থ করে আত্মীয় পরিজন ছেড়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছিলো রাগিনী । আজ সেই সন্তান সুকান্তের বয়স পনেরো বছর, সে বাবাকে চেনেনি।

নিজের চেষ্টায় কঠিন অধ্যবসায় আর একাগ্রতায় রাগিনী আজ আই পি এস।
কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার রাগিনী গর্জন করে ওঠে, স্টপ, প্লিজ স্টপ, পাহাড়ি ফুল মরে গেছে।রনজয় বলে আমি অপরাধী। আসলে সমাজ পরিবর্তনের জন্য বিপ্লবের পথ ই আমি বেছে নিয়েছিলাম – রাগিনী বলে স্যাটাপ , রক্ত নদীর ধারায় প্রান নিয়ে জন জীবন বিপর্যস্ত করে বিপ্লব হয় না । রনজয় ওরফে পবন কুমার ধীর স্থির শান্ত নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে , বুলেটে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় যে দেশে , যেখানে লক্ষ বেকার যেখানে খুন ধর্ষনে সমাজ কলুষিত , যেখানে মানি মাসল এর সুবিধাবাদী নোংরা রাজনীতি তে দেশ কলুষিত সেখানে এটাই যুদ্ধ জয়ের পথ। তবে তোমার কাছে আমি অপরাধী , হয়তো বা প্রশাসনের চোখে আমাদের মতো বিপ্লবীদের টেরিরিস্ট আখ্যায় ভূষিত করা হয়। কথা না বাড়িয়ে সুট মি , নাও সুট মি ম্যাডাম — আর কথা বাড়ায় না রাগিনী, কি লাভ অহেতুক তর্কে জড়িয়ে। যেখানে জীবন থেকে কেটে ফেলা হয়েছে অসমাপ্ত এক প্রেমের অধ্যায় , সেখানে আর বলার বা শোনার কিছুই নেই …… সব শেষ।

বিদ্বেষে ঘৃনায় ক্ষোভে দুঃখে গর্জন করে ওঠে রাগিনীর আগ্নেয়াস্ত্র ….. আগুনের ঝলকানিতে প্রচন্ড শব্দে কেঁপে ওঠে বনভূমি একটু পরেই সব শান্ত। ভেতরে ভেতরে কান্নায় ভেঙে পড়ে রাগিনী। এবার বাড়ি ফিরে সে নিশ্চিন্তে ছেলে সুকান্ত কে বলবে , তোর বাবা নিরুদ্দেশ নয় ,মৃত। কিন্তু বোধহয় কখনও বলতে পারবে না রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে তাকে এনকাউন্টারে মেরে ফেলেছে রাগিনী নিজে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top