উত্তরাপথ


ছবি সংগৃহীত
Uniform Civil Code (ইউসিসি) এ বারও ইউনিফর্ম হবে না। গত ৩রা জুলাই সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ ইঙ্গিত দেওয়া হয়। কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রবীণ বিজেপি নেতা সুশীল কুমার মোদি পরামর্শ দিয়েছেন যে উপজাতি সমাজ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এখন প্রশ্ন বিজেপি কেন অভিন্ন সিভিল কোডে আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করতে চায় না ?
এক্ষেত্রে বিজেপির এক দিল্লীর নেতার বক্তব্য , তফসিলি উপজাতিরা তাদের নিজস্ব নিয়ম-কানুন তৈরি করে এবং সেগুলি অনুসরণ করে। এই ধরনের লোকেরা সাধারণত বন এবং পাহাড়ে বাস করে।তাদের আদিমতা, ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা, সামাজিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা তাদের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী থেকে আলাদা করে।অর্থাৎ গোষ্ঠীগুলির সরকারী তালিকা যা সাধারণত মূলধারার সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন।তাই এই মানুষগুলোকে জোর করে Uniform Civil Code এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়।
দেশে ৭০৫টি উপজাতীয় সম্প্রদায় রয়েছে যারা দেশে এসটি হিসাবে তালিকাভুক্ত।২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, তাদের জনসংখ্যা ১০.৪৩ কোটির কাছাকাছি। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার ৮% এরও বেশি।
অন্যদিকে আদিবাসীরাও অভিন্ন সিভিল কোডের বিরোধিতা করছে। আদিবাসীদের বক্তব্য তাদের সমাজে এমন অনেক প্রথা রয়েছে, যেগুলো অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আওতায় এলে শেষ হয়ে যেতে পারে। যেমন একজন পুরুষ অনেক নারীকে বিয়ে করতে পারে বা তেমন একজন নারীও অনেক পুরুষকে বিয়ে করতে পারে না (Polygamy)। কিন্তু আদিবাসী সমাজে এখনও বহু বিবাহ প্রথার প্রচলন রয়েছে।
আসাম, বিহার এবং ওড়িশার কিছু উপজাতি উত্তরাধিকারের প্রথাগত আইন অনুসরণ করে। এই উপজাতির মধ্যে রয়েছে আসামের খাসিয়া এবং জৈন্তিয়া পাহাড়ের কুর্গ খ্রিস্টান, খাসিয়া এবং জায়েতেং। এর সাথে বিহার ও ওড়িশার মুন্ডা এবং ওরাওঁ উপজাতিরাও এই একই আইন অনুসরণ করে।
মেঘালয়ের কিছু উপজাতির মধ্যে, সম্পত্তি কেব্লমাত্র কনিষ্ঠ কন্যা উত্তরাধিকারসূত্রে পায়। গারো উপজাতির কোনো পুরুষ খাসি সম্প্রদায়ের কোনো মেয়েকে বিয়ে করলে তাকে ওই মেয়ের বাড়িতেই থাকতে হয়। কিছু নাগা উপজাতির নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার বা উপজাতির বাইরে বিয়ে করার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এটা সম্ভব যে Uniform Civil Code (UCC) তৈরি করার সময় এই সব সাংস্কৃতিক বৈচিত্রগুলিকে বিবেচনায় নেওয়া হবে না। এই কারণে, ২০১৬ সালেই রাষ্ট্রীয় আদিবাসী একতা পরিষদ তার রীতিনীতি এবং ধর্মীয় রীতিগুলিকে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে উপজাতীয় জনসংখ্যা অনেক বেশি। এই কারণেই শুধু আদিবাসী নয়, বিজেপির সহযোগীরাও উত্তর-পূর্বে ইউসিসির বিরোধিতা করছে।
মিজোরাম রাজ্যে ৯৪.৪% উপজাতি বাস করে। এই কারণেই মিজোরাম বিধানসভা এই বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ইউসিসির( Uniform Civil Code) বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস করে। এতে বলা হয়েছে, দেশের কোথাও অভিন্ন সিভিল কোড নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হলে আমরা তার বিরোধিতা করব।
মেঘালয়ে তিনটি প্রধান উপজাতি গোষ্ঠী রয়েছে যথাক্রমে খাসি, জৈন্তিয়া এবং গারো । এই উপজাতিদের বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, দত্তক গ্রহণ এবং উত্তরাধিকারের মতো আরও অনেক বিষয়ে তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র রীতিনীতি রয়েছে। এখানকার মানুষ ভয় পাচ্ছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার Uniform Civil Code আনলে তাদের প্রথা শেষ হয়ে যাবে।এই কারণেই ৩০ জুন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী এবং উত্তর-পূর্বে বিজেপির প্রধান সহযোগী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নেতা কনরাড সাংমা ইউসিসির বিরোধিতা করেছিলেন,এবং এটিকে ভারতের বাস্তব ধারণার বিপরীত বলে অভিহিত করেছিলেন। মেঘালয়ের আদিবাসী পরিষদের তিনজন প্রধান নির্বাহী সদস্যও ইউসিসির বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিকিম মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, যে ইউসিসি-তে একটি বিবৃতি জারি করার তারা এটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি বৈঠক করবে। অন্য রাজ্য যেমন অরুণাচল, মণিপুর এবং ত্রিপুরা ইউসিসি-তে খসড়া প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করছে।
অন্যান্য উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির থেকে ভিন্ন আসামের জনবিনয়াস।সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বহুবিবাহ নিষিদ্ধ আইন প্রণয়নের জন্য রাজ্য বিধানসভার আইনি কর্তৃত্ব পরীক্ষা করার জন্য একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৬০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বিজেপি কি শুধু বিরোধিতার কারণেই ইউসিসি আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করতে চায় না?
এখানে শুধু প্রতিবাদের বিষয় নয়। দেশের মোট৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৬২টি লোকসভা আসন আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধ্যুষিত। একই সময়ে ৪৭টি আসন ST শ্রেণীর জন্য সংরক্ষিত।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪৭টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। যেখানে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৮টি আসন।এই পরিস্থিতিতে, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে, আদিবাসীদের অভিন্ন দেওয়ানী কোডে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না বলেই আমাদের ধারনা।এ বছর গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে নির্বাচন,সেখানে আদিবাসী ভোটারদের ভোট অত্যন্ত নির্ণায়ক।
মধ্যপ্রদেশে ২৩০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৮৪ টিতে আদিবাসী ভোটাররা একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করে। বিজেপি ২০১৩ সালে এই আসনগুলির মধ্যে ৫৯টি জিতেছিল, যা ২০১৮ সালে ৩৪-এ নেমে এসেছে। একই অবস্থা ছত্তিশগড়, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রেও।
ছত্তিশগড়ের ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, বিজেপি ২৯ টি আসনের মধ্যে মাত্র ৪ টি আসন জিতেছিল যা STদের জন্য সংরক্ষিত। যেখানে কংগ্রেস জিতেছিল ২৫টি আসন।এই বছর অনুষ্ঠিত গুজরাট বিধানসভায়, বিজেপি এসটি ২৭টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ২৩টি আসন জিতেছে।
রাজস্থানে ST-এর জন্য ২৫ টি আসন সংরক্ষিত আছে। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এই আসনগুলির মধ্যে ৯টি জিতেছিল। এবং ২০১৩ সালে, এটি ১৮টি আসন জিতেছিল। এমন পরিস্থিতিতে তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়াতে চায় না বিজেপি।
আরও পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে
উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন