চন্দ্র অভিযানের পর সূর্যের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে চলেছে  ISRO

উত্তরাপথঃ চন্দ্র অভিযানের পর সূর্যের সন্ধানে এই প্রথম বার বেরিয়ে পড়তে চলেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO। আগামী ২৬ আগস্ট ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) এর নেতৃত্বে আদিত্য-L1 মিশনের যাত্রা শুরু হবে। এই প্রথম কোনও দেশ আমাদের নিকটতম নক্ষত্র, সূর্যের রহস্য অন্বেষণ করার জন্য কোনো উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাতে চলেছে ।
প্রথমেই বলে রাখি চন্দ্র অভিযানের পর সূর্যের সন্ধানে শুরু হওয়া ভারতের এই মিশনের নাম দিয়েছে ISRO ADITYA-L1, যেহেতু সূর্যের অপর নাম ADITYA তাই এই উপগ্রহের নামও আদিত্য রাখা হয়েছে। এবারে আসি L1 এর ব্যাপারে. পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে মহাকাশে জায়গা গুলোকে অবস্থান অনুযায়ী বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে. যেমন L1, L2, L3, L4, L5. । এই উপগ্রহ যেহেতু L1 অবস্থানে পাঠানো হচ্ছে তাই এর নাম ADITYA-L1.

ADITYA-L1 মিশনের প্রাথমিক লক্ষ্য হল সূর্যের বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বাইরের স্তর সৌর করোনা অধ্যয়ন করা। সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার বিস্তৃত এই অঞ্চলটি সূর্যের দৃশ্যমান পৃষ্ঠের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে উত্তপ্ত। এই তাপমাত্রার পার্থক্যের পিছনের প্রক্রিয়া এবং করোনার গতিশীলতা, সৌর ঝড়, চুম্বকীয় ধর্ম এবং মহাকাশের আবহাওয়ার উপর তাদের প্রভাব বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) র মতে ADITYA-L1 মিশনের মূল উদ্দেশ্য হল সূর্যের উপরের বায়ুমণ্ডলীয় (ক্রোমোস্ফিয়ার এবং করোনা) গতিবিদ্যার অধ্যয়ন করা সেইসাথে করোনাল ভর ইজেকশন (CMEs) এবং সৌর শিখার গতিশীলতা তদন্ত করা। আদিত্য-এল 1-এর পর্যবেক্ষণগুলি বিজ্ঞানীদেরকে পৃথিবীতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য মূল্যবান তথ্য প্রদান করবে। যার দ্বারা বিজ্ঞানীরা আবহাওয়া সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী আরও ভালভাবে করতে সক্ষম হবে।

সেইসাথে ADITYA-L1 মিশনটি সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র এবং সৌর ক্রিয়াকলাপে এর ভূমিকা বোঝার উপরও ফোকাস করবে। চৌম্বক ক্ষেত্রের আচরণ অধ্যয়ন করে, গবেষকরা সূর্যের চৌম্বক চক্র, সূর্যের দাগ এবং সৌর অগ্নুৎপাতের সাথে তাদের সংযোগ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে ।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের জন্য উপগ্রহটি তার সঙ্গে একাধিক যন্ত্র বয়ে নিয়ে যাবে, এবং সেগুলোর সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ করবে। ADITYA-L1 উপগ্রহ টি যে সব যন্ত্র সঙ্গে করে নিয়ে যাবে তার মধ্যে একটি হলো ASPEX. অর্থাৎ ADITYA SOLAR WIND PARTICLE EXPERIMENT। এই ASPEX যন্ত্রের জন্য যে সমস্ত রেডিয়েশন সোর্সগুলো লেগেছিল সেগুলো তৈরিতে আমাদের রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার শালডিহা কলেজের প্রাক্তনী তারক নাথ নাগ সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তার প্রতিক্রিয়ায় উত্তরাপথকে জানান, ADITYA-L1 মিশনের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকতে পেরে তিনি গর্বিত।

তারক নাথ ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন । তিনি পুরুলিয়া জেলার মানবাজার গ্রামের মানবাজার রাধামাধব বিদ্যায়তন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে,শালডিহা কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক হন। তারপর IISER কলকাতা থেকে মাস্টার্স করে.এখন তিনি ভাবা অ্যাটমিক অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার মুম্বাই এ একজন বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত।

খবরটি শেয়ার করুণ

2 thoughts on “চন্দ্র অভিযানের পর সূর্যের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে চলেছে  ISRO”

  1. Dr Nimai Chandra Dey

    We are proud for our student,Tarak Nath Nag for his close attachment with the prestigious ISRO project.
    We hope, he will continue to contribute more for the scientific development of our beloved country.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top