ভারতের প্রথম ডিক্রেইওসরড (dicraeosaurid) ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার

ডিক্রেইওসরড ডাইনোসরের জীবাশ্ম ছবি – উত্তরাপথ

উত্তরাপথঃ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল দেশে প্রথম ডিক্রেইওসরড ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন। Dicraeosaurids হল লম্বা গলার ডাইনোসরদের একটি অনন্য দল যারা জুরাসিক যুগের শেষের দিকে পৃথিবীতে বিচরণ করত। এই তাৎপর্যপূর্ণ অনুসন্ধানটি বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক বাস্তুতন্ত্রের উপর আলোকপাত করে। রাজস্থানের থর মরুভূমিতে জয়সালমেরের কাছে আংশিক পৃষ্ঠীয় কশেরুকা হিসাবে চিহ্নিত জীবাশ্মটি পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান এই অঞ্চলটি, মেসোজোয়িক যুগে টেথিস মহাসাগর বরাবর একটি উপকূলরেখা বরাবর বিস্তৃত ছিল।  

প্রায় ১৬৭ মিলিয়ন বছর আগে, জীবাশ্মটি প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাসের একটি আকর্ষণীয় অংশ। গবেষণা দল দ্বারা, জীবাশ্মটির নাম থারোসরাস ইন্ডিকাস নাম করা হয়েছে, এটি শুধুমাত্র ভারতে পাওয়া প্রথম প্রাচীন ডিক্রেইওসরাইড প্রজাতির ডাইনোসর নয় ,বরং এটি সারা বিশ্বে পাওয়া প্রাচীনতম গোষ্ঠীর একটি।

এই ডিক্রেইওসরড প্রজাতির বৈশিষ্ট্য হল, লম্বাটে দেহ এবং ঘাড় স্পাইক দ্বারা সজ্জিত। এর লেজের প্রান্তটি একটি সামনের কশেরুকার পৃষ্ঠ দ্বারা চিহ্নিত যা একটি হৃদয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।সেই সময়ের ডাইনোসররা ছিল তৃণভোজী। তারা তাদের লম্বা ঘাড় ব্যবহার করে উচ্চতর গাছের ডাল থেকে পাতা খেত বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতে একটি ডিক্রেইওসোরিড ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার এটি প্রমান করে যে এই অনন্য প্রাণীটি এক সময় সারা বিশ্বে অবস্থান করত।  

ভারতে ডিক্রেওসোরিড জীবাশ্ম আবিষ্কারটি প্যালিওগ্রাফিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। জুরাসিক যুগের শেষের দিকে, ভারতীয় উপমহাদেশ সুপারমহাদেশ গন্ডোয়ানার অংশ ছিল। ভারতে dicraeosaurids উপস্থিতি  আমাদের আগের ডাইনোসরের বাসস্থান সম্পর্কে যে ধারণা ছিল তার চেয়ে অনেক বিস্তৃত স্থলভাগ জুরে ডাইনোসর বসবাস করত বলে ইঙ্গিত দেয়। সেই সাথে আমরা ডাইনোসরের বিশ্বব্যাপী উপস্থিতি এবং অভিযোজনযোগ্যতার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়।

জুরাসিক যুগের শেষের দিকে ডাইনোসরের বিবর্তন এবং বৈচিত্র্য সম্পর্কে ডিক্রেইওসরড ফসিল মূল্যবান সূত্র প্রদান করে। জীবাশ্মের কঙ্কালের গঠন এবং শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যগুলি অধ্যয়ন করে, জীবাশ্মবিদরা ডিক্রেওসোরিড এবং অন্যান্য ডাইনোসর গোষ্ঠীর মধ্যে বিবর্তনীয় সম্পর্কের ব্যাপারে মূল্যবান তথ্য পেতে অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে পারেন, তাদের বিবর্তনীয় ইতিহাস এবং বিভিন্ন পরিবেশে অভিযোজনের উপর আলোকপাত করতে পারেন।

ভারতের প্রথম ডিক্রেইওসরড ডাইনোসরের জীবাশ্মের আবিষ্কার দেশের জীবাশ্ম সংক্রান্ত আবিষ্কারের ক্রমবর্ধমান তালিকায় এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। ভারতের বৈচিত্র্যময় ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং জীবাশ্ম-সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি একসময় এই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাচীন জীবন গঠন সম্পর্কে তথ্যের ভান্ডার প্রদান করে। এই আবিষ্কার ভারতের প্যালিওন্টোলজিক্যাল ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও অধ্যয়নের গুরুত্বকে শক্তিশালী করে।

ভারতে dicraeosaurid জীবাশ্ম আবিষ্কারের এই একটি ঘটনা আরও গবেষণা ও অন্বেষণের পথ খুলে দিয়েছে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে এই আবিষ্কারটি নিছক সূচনা, যা এই এলাকায় আরও এই জাতীয় জীবাশ্ম পাওয়ার সম্ভাবনার দিক নির্দেশ করে।  জীবাশ্মবিদরা জীবাশ্মটির শারীরের গঠন, আচরণ এবং ডাইনোসর পরিবারের  সাথে গাছের মধ্যের সম্পর্ক নিয়ে গভীরভাবে বোঝার জন্য অধ্যয়ন চালিয়ে যাবেন।  উপরন্তু, এই অনুসন্ধান ভারতে আরও ব্যাপক খনন এবং প্যালিওন্টোলজিকাল সমীক্ষাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে, সম্ভাব্য আরও বেশি ডাইনোসরের অবশেষ খুঁজে বের করতে পারে এবং এই অঞ্চলের প্রাগৈতিহাসিক অতীত সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পারে।

ভারতের প্রথম ডিক্রেওসোরিড ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার জীবাশ্মবিদ্যার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।  এটি কেবল ডাইনোসরের বৈচিত্র্য এবং বিশ্বব্যাপী এর অবস্থান সম্পর্কে আমাদের বোঝার জন্যই নয়, ভারতের প্রাগৈতিহাসিক বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের ধারণাকেও স্পষ্ট করবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বিক্রম সারাভাই: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার একজন দূরদর্শী পথিকৃৎ

উত্তরাপথঃ ডঃ বিক্রম সারাভাই ছিলেন ভারতের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী। তিনি একজন বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, শিল্পপতি এবং স্বপ্নদর্শীর ভূমিকা সমন্বিত, ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জনক হিসাবে বিখ্যাত।তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় ভারত মহাকাশ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) এর প্রতিষ্ঠা ছিল তার অন্যতম সেরা সাফল্য। তিনি রাশিয়ান স্পুটনিক উৎক্ষেপণের পর ভারতের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য মহাকাশ কর্মসূচির গুরুত্ব সম্পর্কে সরকারকে সফলভাবে বোঝান।এরপর ডঃ হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা, যিনি ভারতের পারমাণবিক বিজ্ঞান কর্মসূচির জনক হিসাবে পরিচিত, ভারতে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনে ডঃ সারাভাইকে সমর্থন করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

ভোরের শুকতারা

অনসূয়া পাঠকঃ বাস ছাড়তে তখনো কিছুটা সময় বাকি ছিলো, আমি মা বাবার সাথে বাসের ভেতরে জানালার দিকের সিটটায় বসে আছি। এমন সময় দেখি আমাদের পাশের সিটে বসে একজন রবীন্দ্রনাথের সঞ্জয়িতা পড়ছেন, বইটাকে দেখে আমার চোখের সামনে একটা সোনালী ফ্রেমের চশমা পরা মুখ ভেসে উঠলো, চন্দন স্যারের মুখ। বছর পাঁচেক আগের কথা, আমার বাবা তখন জঙ্গলমহল মেদিনীপুরের আমলাশুলির পোষ্টমাষ্টার। দু কিমি দূরেই আমার পিসীমার বাড়ি। ওখানেই আমার হাইস্কুলে পড়াশোনা শুরু। আর যে স্যার আমার মননে সদা জাগরুক , বাংলা সাহিত্যের বটবৃক্ষ বলা যায় যাকে , আমার গল্প যাঁকে নিয়ে সেই চন্দন স্যারকে ওখানেই পাওয়া। ফর্সা গায়ের রঙ, মাথায় ক়াঁচা পাকা চুল , সরু গোঁফ চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা, .....বিস্তারিত পড়ুন

ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে বাংলাদেশে ইলিশের দাম, প্রভাব রাজ্যেও

উত্তরাপথঃ বাংলাদেশ ও ইলিশ এই দুটি নাম একে অপরের পরিপূরক মনে হলেও বাস্তব কিন্তু বলছে অন্য কথা। সূত্র মাধ্যমে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে  প্রকৃতির অপার দান হলেও শিকার থেকে শুরু করে বাজারজাত হওয়া পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধির কারণেই বাড়ছে বাংলাদেশে ইলিশের দাম। এর সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভের অঙ্ক যোগ হয়ে তা চলে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।পরিস্থিতি এমন যে গরিব তো দূর থাক মধ্যবিত্তের পাতেও এখন আর জুটছে না ইলিশ। বুধবার বরিশালের পাইকারি বাজারে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয় ৬০ হাজার টাকা মন দরে। ৪২ কেজিতে মন হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে প্রায় সাড়ে ১৪শ টাকা। খুচরা বাজারে গিয়ে যা বিক্রি হয় ১৬ থেকে ১৮শ টাকা। যে কারণে জাতীয় এই মাছ এখন শুধু বিত্তশালীদের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্ব মানবতার আলোয় যৌবনের পূজারী নজরুল

অসীম পাঠকঃ জীবনের প্রয়োজনে যুগের পরিবর্তন যেমন সত্য তেমনি যুগের প্রয়োজনে জীবনের আবির্ভাব অমোঘ। এই বাস্তব সত্যটিকে আরও গভীর ভাবে উপলব্ধি করার কাল এসেছে। তারই অভ্যাস অনুরণিত হচ্ছে দিকে দিকে। সর্বত্র আলোড়ন উঠেছে বিদ্রোহী কবির জীবন দর্শন নিয়ে , তাঁর আগুন ঝরা কবিতা নিয়ে। সর্বহারার কবি নজরুল ইসলাম। যারা বঞ্চিত অবহেলিত , নিপীড়ন আর শোষণের জ্বালা যাদের বুকে ধিকি ধিকি জ্বলে বুকেই জুড়িয়ে যাচ্ছিল দাহ, তাদের মূক বেদনার ভাষা দিয়েছিলেন নজরুল।পদদলিত পরাধীন জাতির বুকে স্বাধীনতার তৃষ্ণা জাগিয়েই তিনি শান্ত থাকেননি , দেশের সমাজের বুক থেকে মানুষে মানুষে বিভেদ ব্যাবধান দূর করবার ব্রত ও গ্রহন করেছিলেন। তিনিই প্রথম কবি যিনি সমাজের সমাজপতি দের ছলনার .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top