পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার গম্ভীরা উৎসব। ছবি সৌজন্যে–মৈত্রেয়ী চৌধুরী
মৈত্রেয়ী চৌধুরীঃ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের একটি জেলা মালদা। আমের জন্য এই জেলাটি পরিচিতি লাভ করলেও এই জেলা আর ও একটি কারণে বিখ্যাত, তা হল গম্ভীরা । মালদার নিজস্ব লোকসংস্কৃতি।গম্ভীরা শব্দটি প্রকোষ্ট, গৃহ বা মন্দির অর্থের সঙ্গে আভিধানিক মিল থাকলেও এই অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত আকাশের নিচে বা কোথাও চাঁদোয়া বা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেন স্বয়ং দেবাদিদেব। এই উৎসবের তিনি ‘নানা’ নামে পরিচিত।
একজন শিবের সাজে থাকেন, আর দেবাদিদেবের চেলার মতো কিছু সংখ্যক সেই নানার ভক্ত হয়ে খোল, করতাল হাতে উনার সঙ্গী হন। বাস্তব জগতের এবং পারিপার্শ্বিক যা মা সমস্যা থাকে তা চেলার নানার কাছে অভিযোগ জানান, যেন নানা সেই অভিযোগ শুনে তার সমাধান করেন।শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই ভিড় করে জমায়েত হয়ে নানা ও তার সঙ্গীদের বার্তালাপ শুনে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করেন।গম্ভীরা এই উৎসব চারদিকে ধরে উদযাপন হয়। তবে কোথাও তিন দিনও হয়।
প্রথম দিন – জল ভরা।
এলাকার মূল সন্ন্যাসী বা মন্দিরের প্রধান ভক্ত গম্ভীরা শুরুর দিন একটি ঘট জলপূর্ণ করতেন।কারণ ঐ দিন একটি বৈঠক হতো, অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি বিষয়ে,এলাকার গণ্যমান্য সকলে সহমত পোষণ করলে, তাদের অনুমতি নিয়ে প্রধান ভক্ত সহ অন্যান্য লোকেরা নিকটবর্তী নদী, পুকুর বা বিল থেকে পেছনে পেছনে ঢাক- কাঁসা বাজাতে বাজাতে গিয়ে জল ভরে আনতেন।
দ্বিতীয় দিন- ছোট তামসা।
তামসা মানে মজা, আনন্দ, রঙ্গ রসিকতাপূর্ণ অনুষ্ঠান। গত শতাব্দীতে এই তামসা শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হতো।গৌরদাস কে লেখা একটি চিঠিতে মহাকবি মধুসূদন এর উল্লেখ করেছিলেন।এইদিনে শিব দুর্গার পূজা হয়। ছোট ছোট ছেলেদের বলে বালকভক্ত, তারা শ্রেণীবদ্ধ ভাবে একপায়ে দাঁড়িয়ে মূল ভক্তের সাথে সাথে শিব বন্দনায় রত হয়। গম্ভীরা মন্ডপে এই অনুষ্ঠান কার্য সম্পন্ন হয়।এই অনুষ্ঠানটি কিছু কিছু এলাকায় অন্যভাবে শিব বন্দনা অনুষ্ঠিত হয়।কাঁটার বিছানা করে উপবাসী ভক্তগণ তাতে গড়াগড়ি দেয়। মালদহের হবিবপুর থানার আইহো গ্রামের কবি সতীশ চন্দ্র গুপ্ত কাব্য রত্নাকরের নিকট থেকে ১৯৬৭ সালে কয়েকটি গান সংগ্রহ করেন। সেই গানগুলোর কিছু অংশ গম্ভীরা মন্ডপে গাওয়া হতো। মা ভোলা মহেশ্বরকে কেন্দ্র করে।
তৃতীয় দিন- বড় তামসা।
গম্ভীরার তৃতীয় দিনকে বলা হয় বড় তামসা।এই দিন দুপুরে হর গৌরীর পুজা।দ্বিপ্রহরে প্রথমে ভক্তদের হল শোভাযাত্রা, কালীঘাটের নীলপুজার গাজনের সন্ন্যাসীদের শোভাযাত্রার মতো।সব বয়সের পুরুষেরা এতে অংশগ্রহণ কারী।প্রত্যেক গম্ভীরা মন্ডপ থেকে ঢাকসহ ভক্তগণ বিচিত্র বেশভূষায় নৃত্য করতে করতে অগ্রসর হয়।গম্ভীরা গানের নানার অনুচরগণের সাথে সাথে ভূত, পেত্নী, বজীকর ও তার স্ত্রী, সাঁওতাল প্রভৃতি বেশ ধারণ করে এক মন্ডপ থেকে অন্য মন্ডপে যায়। ত্রিশূলাকৃতি ছোট দুটি বাণ বৃক্ষের দুদিকে বিদ্ধ করে তেলে ভেজানো কাপড়ে আগুন ধরিয়ে ধূপ ধূনা ছড়িয়ে দেয় তারা।এটিই এদিনের অনুষ্ঠানের সূচনা।
চতুর্থ দিন – আহারা,বোলবাই বা বোলাই —–
বড় তামসার পরদিন প্রত্যুষে মশাল নাচ হয়।সে নৃত্য ভয়ঙ্কর।খোলা চুল, বিরাট টিপ, সালঙ্কারা,বিকট বদনা বেশে নারী রূপে সজ্জিতা পুরুষেরা ধূপ ধূনচি সহ ঢাকের তালে নৃত্য করে পরিবেশকে ভয়াল করে তোলে।এই নাচের পর হর- পার্বতীর পুজা হয়।পুজারম্ভে হোম হয়।ব্রাহ্মণ ও কুমারী ভোজন ও হয় এই সময় । এই জন্য আহার থেকে আহারা কথাটি এসেছে। আর তারপর গ্রামের লোকজনের ভোজনে এই পুরো গম্ভীরা বিষয়ের সমাপ্তি ঘটে।
আরও পড়ুন
পশ্চিমবঙ্গে 'দ্য কেরালা স্টোরি'সিনেমাটির ভাগ্য সুপ্রিম কোর্টের হাতে
উত্তরাপথ: 'দ্য কেরালা স্টোরি' সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হওয়ায় সিনেমাটির সিনেমার নির্মাতারা বাংলার নিষেধাজ্ঞাকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তাদের দাবী ছিল নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রতিদিন তাদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে । নির্মাতাদের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট আজ 'দ্য কেরালা স্টোরি' সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হওয়ার পিছনে যুক্তি জানতে চেয়েছে । প্রধান বিচারপতির একটি বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করেছে, যখন এটি কোনও সমস্যা ছাড়াই সারা দেশে চলছে।পশ্চিমবঙ্গের সিনেমাটি কেন নিষিদ্ধ করা উচিত? এটি একই রকম জনসংখ্যার সংমিশ্রণ রয়েছে এম .....বিস্তারিত পড়ুন
ChatGPT শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ ?
উত্তরাপথ: ChatGPT বর্তমানে একটি বহুল প্রচলিত শব্দ বিশেষকরে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। এবার আসা যাক ChatGPT নিয়ে ছাত্র সমাজের কেন এত আগ্রহ? ChatGPT হল একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial intelligence)। OpenAI এটিকে ২০২২ নভেম্বরে বাজারে আনে। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী তার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মুহূর্তে পেতে পারে এছাড়াও এই অ্যাপ ইমেল, প্রবন্ধ সেই সাথে কোড রচনার কাজেও সাহায্য করে। এবার আসাযাক ChatGPT র কাজ প্রসঙ্গে ধরুন আপনি রবীন্দ্রনাথের মত কবিতা লিখতে আগ্রহী অথচ আপনি কবি .....বিস্তারিত পড়ুন
মানুষে মানুষে ঐক্য কীভাবে সম্ভব
দিলীপ গায়েন: হিন্দু,মুসলমান,ব্রাহ্মণ,তফসিলি।সকলেই মানুষ।কিন্তু এদের মধ্যে যে ব্যবধান তা হলো ধর্ম ও সাংস্কৃতিক। এই ব্যবধান মুছতে পারলে একাকার হওয়া সম্ভব। যারা বলছে আর্থিক সমতা প্রতিষ্ঠা হলে ব্যবধান মুছে যাবে, তাদের কথাটি বোধ হয় সঠিক নয়।তার প্রমাণ গরিব ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে আর্থিক ব্যবধান নেই। অথচ জাতিভেদ রয়ে গেছে। তেমনি কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত ধনী ও শিক্ষিত সমাজে আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও জাতিভেদ রয়ে গেছে। একমাত্র হাসপাতালে বা চিকিৎসা ব্যবস্থায় জাতিভেদ নেই।কারণ সেখানে তো প্রচলিত ধর্মজাত প্রভেদ বা পরিচয় নেই। আছে মেডিসিন, যা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। কারোর ধর্ম বা জাত দেখে প্রেসক্রিপশন হয় কি? এখানে মানুষের একমাত্র এবং শেষ পরিচয় সে মানুষ। .....বিস্তারিত পড়ুন
টিউমার নির্মূল এর নতুন থেরাপিউটিক যা স্থায়ীভাবে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার দূর করে
উত্তরাপথ: একটি বহু-প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা দল একটি অভিনব ক্যান্সার থেরাপিউটিক তৈরি করেছে, অ্যান্টিবডি টুকরোগুলিকে আণবিকভাবে তৈরি করা ন্যানো পার্টিকেলগুলির সাথে একত্রিত করে, যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারে আক্রান্ত ইঁদুরের ক্যান্সারকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করে। "হিট অ্যান্ড রান" ড্রাগ ডেলিভারি সিস্টেম, কর্নেল প্রাইম ডটস (সি' ডটস) নামে পরিচিত, এটি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের জন্য একটি বহুমুখী এবং অভিযোজনযোগ্য চিকিত্সা হিসাবে সম্ভাব্যতা দেখায়, ন্যূনতম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং বিষাক্ততার সাথে। গবেষকদের একটি বহু-প্রাতিষ্ঠানিক দল আবিষ্কার করেছে যে একটি নতুন ক্যান্সার থেরাপিউটি .....বিস্তারিত পড়ুন