উত্তরাপথঃ প্রায়াত প্রখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী তথা “ভারতে সবুজ বিপ্লবের জনক” অধ্যাপক এমএস স্বামীনাথন (Prof. M.S. Swaminathan)। ভারত সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার অফিস জানায় গত ২৮ তারিখে এমএস স্বামীনাথন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।এম এস স্বামীনাথন রিসার্চ ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, প্রখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন।স্বামীনাথন তিন কন্যা রেখে গেছেন।
স্বামীনাথন ভারতের অর্থনৈতিক ও খাদ্য নিরাপত্তায় বিশেষত দেশে ধান ও গম চাষের উৎপাদন বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেছেন।তার এই উদ্যোগের কারণে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা অনেক সাহায্য পেয়েছেন।
এমএস স্বামীনাথন ৭ আগস্ট, ১৯২৫ সালে, তামিলনাড়ুর কুম্বাকোনামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মানকম্বু সাম্বাসিভান স্বামীনাথন ছোটবেলা থেকেই কৃষি বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তিনি ত্রিবান্দ্রমের মহারাজা কলেজে প্রাণিবিদ্যা এবং কৃষি বিষয়ে স্নাতক হন।এরপর, তিনি ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ জেনেটিক্স এবং সাইটোজেনেটিক্সে পিএইচডি করেন।
স্বামীনাথনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানগুলির মধ্যে একটি হল গম এবং ধানের উচ্চ-ফলনশীল জাত (HYVs) বিকাশ। রোগ-প্রতিরোধী স্ট্রেইনের সাথে ঐতিহ্যবাহী জাতের ক্রস-প্রজনন করে, তিনি সফলভাবে এমন জাত উদ্ভাবন করেছেন যাতে উচ্চ ফলনের সাথে কীটপতঙ্গ ও রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি থাকে।
স্বামীনাথন উন্নত সেচ ব্যবস্থা,সারের দক্ষ ব্যবহার এবং যান্ত্রিকীকরণ সহ আধুনিক কৃষি কৌশল গ্রহণের উপর জোর দেন। এই উদ্যোগগুলি কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং ফসলের ফলন বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে খাদ্য ঘাটতির একটি দেশের তালিকা থেকে তিনি আমাদের খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করেছিলেন।
অত্যধিক কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি স্বীকার করে, স্বামীনাথন সমন্বিত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা (IPM) গ্রহণের পক্ষে পরামর্শ দেন। আইপিএম ব্যবস্থায় কার্যকরভাবে কীটপতঙ্গ বিনাশ করার সাথে সাথে ক্ষতিকারক কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর সহ জৈবিক, সাংস্কৃতিক এবং রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সমন্বয় এর সাথে জড়িত।
স্বামীনাথন দীর্ঘমেয়াদি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কৃষি পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ক্ষমতায়নের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি ক্রেডিট, বাজার এবং প্রযুক্তিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ করানোর জন্য কাজ করেছিলেন, যা তাদের কৃষির উৎপাদনশীলতা এবং উপার্জন বাড়াতে সাহায্য করে।
স্বামীনাথন জিন ব্যাঙ্ক এবং বীজ সংরক্ষণ কৌশল প্রতিষ্ঠা করে ভারতের সমৃদ্ধ জেনেটিক সম্পদ সংরক্ষণের গুরুত্বের উপর জোর দেন। দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফসলের বৈচিত্র্য রক্ষা করা ছিল তার অন্যতম প্রচেষ্টা।
ভারতীয় কৃষিতে এমএস স্বামীনাথনের অবদান তাকে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য প্রশংসা ও স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। তিনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (ICAR) এর মহাপরিচালক এবং কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা বিভাগের সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতে ন্যাশনাল সিড কর্পোরেশন এবং ন্যাশনাল ডেইরি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও স্বামীনাথন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য, তিনি পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, এবং পদ্মবিভূষণ,সহ ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানের সব কয়েকটিতে ভূষিত হন।স্বামীনাথনকে ১৯৮৭ সালে প্রথম খাদ্য পুরস্কার দেওয়া হয়। স্বামীনাথনের কাজ পরবর্তী প্রজন্মের কৃষি বিজ্ঞানীদেরও অনুপ্রাণিত করে চলেছে ।
আরও পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন