Intermittent fasting বা টানা উপবাসের মাধ্যমে ওজন কমানোর চেষ্টা মস্তিষ্কের কাজকর্মকে পরিবর্তন করতে পারে

উত্তরাপথঃ বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতিটি মানুষই নিজেকে ফিট রাখতে চান। তাই তারা তাদের নিজেদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান।এই কারণে তারা অনেক সময় টানা উপবাসের মাধ্যমে ওজন কমানোর চেষ্টা করেন । ফ্রন্টিয়ার্স ইন সেলুলার অ্যান্ড ইনফেকশন মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে যারা টানা উপবাস করেছিলেন তারা দুই মাসে গড়ে ৭.৫ কিলোগ্রাম ওজন কম করেছিলেন।সেই সাথে গবেষণায় আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে,যে বা যারা টানা উপবাসের (intermittent fasting )মাধ্যমে ওজন হ্রাস করার এই পদ্ধতি নিয়েছেন তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন ঘটেছে।

 বেইজিংয়ের হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দেখেছেন যে টানা উপবাসের (intermittent fasting )মাধ্যমে ওজন কমানোর পদ্ধতি উল্লেখযোগ্যভাবে  অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।তবে এই প্রক্রিয়ার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। গবেষকদের মতে কিছু কিছু অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার প্রাচুর্য বৃদ্ধি মনোযোগ, আবেগ এবং শেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

গবেষণায় Intermittent energy restriction (IER) ডায়েটে ২৫ জন চীনা পুরুষ এবং মহিলার মল নমুনা অধ্যয়ন করে ফলাফলগুলি অর্জন করা হয়েছিল।অংশগ্রহণকারীরা প্রথমে একটি ৩২-দিনের “উচ্চ-নিয়ন্ত্রিত উপবাসের পর্যায়” এর মধ্য দিয়েছিলেন, যেখানে তারা তাদের প্রয়োজন অনুসারে ডায়েটিশিয়ান-পরিকল্পিত খাবার খেয়েছিলেন। এটি অনুসরণ করে, অংশগ্রহণকারীরা ৩০ দিন অতিবাহিত করেছেন যাকে “নিম্ন-নিয়ন্ত্রিত উপবাস পর্ব” বলা হয়, যেখানে তাদের নিজেদের পছন্দের আরও কিছু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

অংশগ্রহণকারীরা যারা এই ডায়েটটি পুরোপুরি মেনে চলেছিলেন সেক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ৫০০ ক্যালোরি এবং পুরুষদের জন্য প্রতিদিন ৬০০ ক্যালোরি বরাদ্দ ছিল। শেষ পর্যন্ত, তাদের  প্রত্যেকের  শরীরে গড়ে ৭.৫ কেজি করে ওজন কম হয় এবং শরীরের চর্বি ও কোমরের পরিধি হ্রাস পায় বলে গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যান্য লক্ষণীয় প্রভাবগুলি হল রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল হ্রাসের পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যকলাপ এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে পরিবর্তন ঘটে।

 গবেষণায় আরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে IER স্থূলতা-সম্পর্কিত সমস্যা যেমন হাইপারটেনশন, হাইপারলিপিডেমিয়া এবং লিভারের কর্মহীনতা কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াতে এমন পরিবর্তন হয়েছে যা আমাদের ওজন কমানোর ইচ্ছা সহ কার্যনির্বাহী কার্যের উপর নেতিবাচক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আনতে পারে।সেক্ষেত্রে টাইপ 2 ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে মৃত্যুর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পর্যন্ত কথিত ঝুঁকির জন্য একটানা উপবাসের (intermittent fasting )বারবার সমালোচনা করা হয়েছে ।

টানা উপবাস (intermittent fasting) মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে যা আমাদের খাওয়ার আচরণ পরিবর্তন করতে পারে । তাই ওজন কমানোর সময় এবং পরে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপে যে পরিবর্তনগুলি পরিলক্ষিত হয় সেগুলি অত্যন্ত গতিশীল। একটি স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ওজন কমানোর প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top