Bangladesh election: বাংলাদেশে সহিংসতামুক্ত (violence free) নির্বাচন দরকার

রবিনুর ইসলামঃ বাংলাদেশ(Bangladesh), একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং প্রাণবন্ত সংস্কৃতির দেশ, একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। যাইহোক বাংলাদেশ (Bangladesh) এখনও সহিংসতামুক্ত (violence free) নির্বাচন নিশ্চিত করতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা একটি সুস্থ গণতন্ত্রের টিকিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিটি দেশেরই চেষ্টা করা উচিত কীভাবে সুস্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্জিত উন্নয়নের সুফল ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমাজে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোগ করতে পারে। উন্নয়নের একটি অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করা উচিত কারণ সহিংসতা ও উন্নয়ন একসঙ্গে চলতে পারে না।সহিংসতার মাধ্যমে নির্বাচনে উঠে আসা সরকারের ক্ষেত্রে উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা থাকে  যা পরবর্তীতে সমাজে বৈষম্যের কারণ হতে পারে।

নির্বাচন যেকোনো গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে, যা নাগরিকদের তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ প্রদান করে। সহিংসতামুক্ত নির্বাচন বিভিন্ন কারণে অপরিহার্য:

১। নির্বাচনের সময় সহিংসতা (violence) নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে। এটি ভয় ও ভীতির এক পরিবেশ তৈরি করে, এবং ভোটারদেরকে সচেতন পছন্দ করতে বাধা দেয়।

২। সহিংসতা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিকৃত করতে পারে, যার ফলে অন্যায্য ফলাফল এবং অযোগ্য  প্রতিনিধিত্ব হতে পারে। যখন প্রার্থী এবং ভোটাররা সহিংসতার শিকার হয়, তখন এটি  ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের গণতান্ত্রিক নীতিকে বাধা দেয়।

৩। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা তৈরির জন্য সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকরা যখন শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রত্যক্ষ করে, তখন তাদের সিস্টেমের প্রতি আস্থা থাকার এবং ভবিষ্যতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

বাংলাদেশ (Bangladesh) তার গণতান্ত্রিক যাত্রায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, তবে এটি এখনও বাংলাদেশ নির্বাচনের সময় সহিংসতা (violence) সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলির সাথে লড়াই করছে। এই চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে রয়েছে:

১। রাজনৈতিক বিভাজন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায়ই নির্বাচনের সময় বৃদ্ধি পায়, যা বিভিন্ন দলের সমর্থকদের সহিংসতার দিকে পরিচালিত করে। এই মেরুকরণ সহিংসতার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করে।

২। নির্বাচন-সম্পর্কিত সহিংসতার অপরাধীরা প্রায়শই শাস্তিহীন হয়ে যায়, যা দায়মুক্তির সংস্কৃতির দিকে পরিচালিত করে। জবাবদিহিতার এই অভাব সহিংসতাকে আরও স্থায়ী করে এবং নাগরিকদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত করে।

৩। ভোট কেন্দ্রে অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভোটার এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দুর্বলতার পরিচয় দেয়। নির্বাচনের সময় সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সহিংসতামুক্ত (violence free) নির্বাচন নিশ্চিত করতে এবং বাংলাদেশে(Bangladesh) একটি সুস্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সমস্ত রাজনৈতিক দলের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরীঃ

১। সরকারের উচিত কঠোর আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করা যা বিশেষভাবে নির্বাচন-সম্পর্কিত সহিংসতা মোকাবেলা করার জন্য। এই আইনগুলি দলমত নির্বিশেষে সমস্ত অপরাধীদের জন্য দ্রুত এবং নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষা প্রদান করবে।

২। রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের মতপার্থক্যকে দূরে রেখে এবং সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পেতে গঠনমূলক সংলাপে জড়িত হওয়া উচিত, যাতে নির্বাচনের সময় সহিংসতার সম্ভাবনা কম করা যায়।

৩। সরকারকে ভোট কেন্দ্রে এবং প্রচার পর্বে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এটি ভোটার, প্রার্থী এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে  সাহায্য করবে।

৪। সহিংসতামুক্ত (violence free )নির্বাচনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সুশীল সমাজের সংগঠন, মিডিয়া এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। নাগরিকদের তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষিত করা তাদেরকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের ক্ষমতা দিতে পারে।

একটি সুস্থ গণতন্ত্রের দিকে বাংলাদেশের যাত্রা সহিংসতামুক্ত নির্বাচন পরিচালনার উপর নির্ভর করছে।সমস্ত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করে এবং প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়ন করে,বাংলাদেশ (Bangladesh) এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারে যা গণতন্ত্রের নীতিগুলিকে অক্ষুণ্ণ রাখবে এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আস্থা বৃদ্ধি করবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাংলাদেশ সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে  এবং একটি উজ্জ্বল গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করতে পারবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top