সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে প্রকাশ কোল্ড ড্রিংক ভারতের প্রায় প্রতিটি ঘরে পৌঁছে গিয়েছে

উত্তরাপথঃ আপনিও কি গরমের হাত থেকে বাঁচতে ঠান্ডা পানীয় পান করতে পছন্দ করেন? সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২ বছরে আমাদের দেশে কোমল পানীয়ের ব্যবহার প্রায় ৫০% বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে কোল্ড ড্রিংক সেবনের বৃদ্ধি শুধুমাত্র শহরাঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এমনকি গ্রামীণ অঞ্চলে, যেখানে রেফ্রিজারেশনের উপায় আগে সীমিত ছিল, সেখানে ঠান্ডা পানীয়ের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন গ্রামীণ এলাকায় রেফ্রিজারেটরের ক্রমবর্ধমান প্রাপ্যতা এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার জন্য দায়ী। প্রতিবেদনে কোল্ড ড্রিংক সেবনের বৃদ্ধি মূলত ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত এবং নগরায়নের কারণে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। লোকেরা যখন শহরে চলে যায় এবং আধুনিক জীবনধারা গ্রহণ করে, তখন তারা তাদের তৃষ্ণা মেটাতে  সেই সাথে সস্তা পানীয় হিসেবে কোল্ড ড্রিংককে বেঁচে নিচ্ছে ।এর ফলে ঠান্ডা পানীয়ের বিক্রি বেড়েছে, বিশেষ করে অল্প বয়স্ক এবং শিশুদের মধ্যে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২ বছরে প্যাকেটজাত কোমল পানীয়ের ব্যবহার গড়ে ২৫০ মিলি বেড়েছে। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১,৮৪,০০০ জন মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে কোল্ড ড্রিংকস। কারণ কোল্ড ড্রিংকসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা মানুষকে ডায়াবেটিসের শিকার করে তুলছে।শুধুমাত্র ডায়াবেটিসের কারণে প্রতি বছর প্রায় ১,৩৩,০০০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে।

ঠান্ডা পানীয়তে যে পরিমাণ ফ্রুক্টোজ পাওয়া যায় তা লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।সেই সাথে এতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় কোল্ড ড্রিংক একজন ব্যক্তিকে ডায়াবেটিক রোগী করে তুলতে পারে।সেই সাথে কোল্ড ড্রিংক একজন ব্যক্তিকে মানসিক বিষণ্ণতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।ঠান্ডা পানীয়তে পাওয়া ফসফরিক অ্যাসিড আমাদের দাঁতের স্তরকে দুর্বল করে দেয়। সেই সাথে চিনির আধিক্যের কারণে ঠান্ডা পানীয় আপনাকে স্থূলতার শিকার করে তুলতে পারে।

 আজকের তরুণ প্রজন্মের খাদ্যাভ্যাস দেখেই তারা তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কতটা সচেতন তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। আজ যে কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁয় দেখবেন,আমাদের তরুণ প্রজন্ম পিৎজা ও বার্গারের সঙ্গে কোল্ড ড্রিঙ্কে চুমুক দিচ্ছে। আবার কিছু মানুষ আছে যারা খাবার খাওয়ার সাথে সাথে কোল্ড ড্রিংক না খেলে তাদের খাবার অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলে তারা মনে করেন। এটি যে কেবল আমাদের তরুণ প্রজন্মের সমস্যা তা নয় ,এটি আপনি একজন বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেও এই প্রবণতা  দেখতে পাবেন। এমতাবস্থায় প্রশ্ন জাগে পিজ্জা, বার্গার বা অন্য কোনো শক্ত খাবার খাওয়ার পর কোল্ড ড্রিংক পান করা  কি ঠিক ?

আয়ুর্বেদ অনুসারে, খাওয়ার পরপরই ঠান্ডা জল বা ঠান্ডা পানীয় খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, এতে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। পিৎজা, বার্গার এবং অন্যান্য কঠিন খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ঠান্ডা পানীয় পান করার ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য।পিজ্জার সাথে কোল্ড ড্রিংকগুলিকে বিশেষভাবে স্বাস্থ্যকর সংমিশ্রণ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। পিজ্জাতে সাধারণত ক্যালোরি, সোডিয়াম এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যখন কোল্ড ড্রিংকগুলিতে প্রায়ই চিনি বেশি থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে এই খাবার এবং পানীয় গ্রহণ করা ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

এবার প্রশ্ন হতে পারে এর স্বাস্থ্যকর বিকল্প কি? এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর পানীয় যেমন নারকেল জল, লেমনেড, বাটারমিল্ক এবং লস্যি ইত্যাদি খাওয়া উচিত। শীতলতার পাশাপাশি এটি আপনাকে অনেক স্বাস্থ্যও সুবিধা দেবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top