

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ ১৯৫০ সালে ভারতে প্রথম সংরক্ষণ চালু হওয়ার পর থেকে এটি একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়, বিশেষ করে তফসিলি জাতি (এসসি), তফসিলি উপজাতি (এসটি), এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) প্রতিনিধিত্ব এবং সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। এরপর বছরের পর বছর ধরে, সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে, কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছিলেন যে এটি সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্য একটি অংশের দাবি, এটি বর্ণ-ভিত্তিক বৈষম্যকে স্থায়ী করেছে।
সম্প্রতি কর্ণাটকে বেসরকারী সেক্টরে স্থানীয় লোকেদের সংরক্ষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় স্তরে আনন্দ প্রকাশ করা হলেও, এর বিরোধীতাও কম হচ্ছে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া X-এ একটি অফিসিয়াল বার্তা পোস্ট করেছিলেন। বার্তাটি খুব স্পষ্ট ছিল যে কর্ণাটকের সমস্ত সি এবং ডি গ্রেডের বেসরকারি চাকরিতে স্থানীয় লোকেরা ১০০ শতাংশ সংরক্ষণ পাবে। এই খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বিবৃতি “এক্স” থেকে সরিয়ে নেন। বর্তমানে কর্ণাটক সরকারের জারি করা সরকারী বিবৃতি অনুসারে, রাজ্যের বেসরকারী সংস্থাগুলিতে চাকরিতে স্থানীয় লোকদের সংরক্ষণ দেওয়া হবে তবে এই সংরক্ষণ অ-ব্যবস্থাপনা পদের জন্য ৭০ শতাংশ এবং ব্যবস্থাপনা স্তরের পদগুলির জন্য ৫০ শতাংশ৷ প্রসঙ্গত, কর্ণাটক একটি দ্রুত উদীয়মান রাজ্য এবং এখানে প্রচুর সংখ্যক আইটি কোম্পানি রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন রাজ্যের বিপুল সংখ্যক লোক কাজ করে। যখন এই সমস্ত সংস্থাগুলিতে রিজার্ভেশন প্রয়োগ করা হবে, তখন অবশ্যই কর্ণাটকের বাইরে থেকে আগত লোকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সেখানে অনেকটাই হ্রাস পাবে।
কর্ণাটকের এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় অর্থাৎ আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য উপযুক্ত মনে হতে পারে, কিন্তু প্রতিটি অপেক্ষাকৃত উন্নত রাজ্য যদি এই ধরনের সংরক্ষণের আশ্রয় নিতে শুরু করে, তবে সেই রাজ্যগুলির কী হবে যেগুলি পিছিয়ে আছে এবং যেখানে প্রয়োজন অনুসারে খুব কম চাকরির সুযোগ রয়েছে।আজ পশ্চিমবঙ্গ সহ উত্তরপূর্বের অনেক রাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে কর্ম সংস্থানের সুযোগ নেই। একটা বড় অংশের বেকার যুবক -যুবতীকে উপযুক্ত কাজের আসায় ভিন রাজ্যে যেতে হয়।এই প্রবণতা যে শুধুমাত্র অশিক্ষিত যুব সমাজের মধ্যে সীমাবন্ধ তা নয় ,আমাদের রাজ্যের শিক্ষিত বিশেষত উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা উপযুক্ত কাজের জন্য বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
খুব সম্প্রতি, কর্ণাটক রাজ্য এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করতে চলেছে বলে খবর । কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে ‘এটা আমাদের সরকারের আকাঙ্ক্ষা যে কন্নড় জমিতে যেন কোনও কন্নড়বাসী চাকরি থেকে বঞ্চিত না হয়, যাতে তারা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে। আমাদের সরকার কন্নড়পন্থী তবে এই বিলটি যদি আইনে পরিণত করা হয় তবে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে তার পর্যালোচনা হওয়া উচিত। স্থানীয় জনগণকে খুশি করার জন্য যদি এটি একটি আদর্শ বিল হয়, তবে ধীরে ধীরে প্রতিটি উন্নত রাজ্য আগামীতে এই পথে হাঁটতে পারে, সেক্ষেত্রে সেই সমস্ত রাজ্যগুলির জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হবে যেখানে বেসরকারি চাকরি কম। সরকারী পর্যায়ে, কিছু রাজ্য সময়ে সময়ে স্থানীয় জনগণকে খুশি করার চেষ্টা করেছে, তবে বেসরকারী খাতের সহায়তায় স্থানীয় জনগণকে খুশি করার এই প্রচেষ্টা সম্ভবত এই প্রথম। বিরোধিতা সত্ত্বেও, এটি প্রায় নিশ্চিত যে বৃহস্পতিবার কর্ণাটক বিধানসভায় এই নিয়োগ সংক্রান্ত বিল পেশ করা হবে।
আসলে বিষয়টি শুধু স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, ভাষা রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। কর্ণাটক সরকার রাজ্যে চাকরির জন্য কন্নড় জ্ঞান বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করছে। শোনাযাচ্ছে রাজ্যের অনেক উদ্যোক্তা এই পদক্ষেপে আপত্তি জানিয়েছেন, সেইসাথে এটিকে বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন এবং সেই সাথে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এটি ভবিষ্যতে প্রযুক্তি শিল্পের ক্ষতি করতে পারে।এর আগে, হরিয়ানা এবং অন্ধ্র প্রদেশের মতো রাজ্যগুলিও বেসরকারি খাতে স্থানীয়দের জন্য অনুরূপ সংরক্ষণ চালু করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এই প্রচেষ্টা , আইনি এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে হরিয়ানা এবং অন্ধ্র প্রদেশে আইন প্রয়োগ করা যায়নি।
আবার অনেকে এই সিদ্ধান্তকে ফ্যাসিবাদী ও অসাংবিধানিক বলছেন। বেসরকারি খাতের চাকরিতেও সরকারি কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, সেইসাথে এটি পরিষেবার মাণকেও প্রভাবিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে । প্রসঙ্গত সরকারি কর্মসংস্থানের অভাবে সরকার এই পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে বিরোধীদের বক্তব্য। প্রকৃতপক্ষে, আজ শুধু কর্ণাটকে নয়, দেশের সমস্ত রাজ্যে ব্যাপক স্তরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়োজন। এই প্রস্তাবিত বিল সাময়িক ভাবে আঞ্চলিক কর্ম সংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ বলে মনে হলেও আগামী দিনে বিভিন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে ব্যবধান বাড়বে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরও পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন