ভারতের ৫,৪৭,২৮৩ টি গ্রামকে খোলা স্থানে মলত্যাগ থেকে মুক্ত ঘোষণা করা হল

উত্তরাপথঃ বৃহস্পতিবার জলশক্তি মন্ত্রক জানিয়েছে যে সারা দেশে মোট ৫,৪৭,২৮৩ টি গ্রামকে খোলা স্থানে মলত্যাগ মুক্ত বা ODF প্লাস ঘোষণা করা হয়েছে। লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে, জলশক্তি প্রতিমন্ত্রী ভি সোমান্না বলেছেন যে বিহারের ৩০,২২৫টি গ্রামকে ODF প্লাস ঘোষণা করা হয়েছে।মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশও যথাক্রমে ৪৯,৭৪২ এবং ৯৩,৮৭২  ODF প্লাস গ্রাম নিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ODF প্লাস শ্রেণীবিভাগ ODF অবস্থার স্থায়িত্ব এবং কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়।

প্রসঙ্গত ২০১৪ সাল থেকে, ভারত সরকার, ইউনিসেফের সাথে অংশীদারিত্বে, উন্মুক্ত স্থান মলত্যাগ থেকে মুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত, ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৭০৬টি জেলা এবং ৬০৩,১৭৫টি গ্রামকে খোলা মলত্যাগ মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। (সূত্র: SBM ড্যাশবোর্ড)

ভারত সারা দেশে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ দূর করতে দ্রুত অগ্রগতি করেছে, যা জল, স্যানিটেশন এবং হাইজিন (WASH) উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। স্বচ্ছ ভারত মিশন (SBM) টয়লেটে প্রবেশ এবং ব্যবহার সংক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের আচরণ পরিবর্তন করতে কাজ করেছে। ২০১৪ সাল থেকে, প্রায় ৫০ কোটি মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ বন্ধ করেছে, যা ৫৫ কোটি থেকে কমে এখন ৫ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত স্বচ্ছ ভারত মিশন (SBM) (পরিচ্ছন্ন ভারত অভিযান) এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

শহর হোক বা গ্রামীণ এলাকায়, খোলামেলা মলত্যাগ চিরচারিতভাবে সবচেয়ে দরিদ্র নাগরিকদের মধ্যে প্রচলিত আছে, কারণ তাদের মধ্যে অনেকেই শৌচাগার নির্মাণের সামর্থ্য রাখে না, বা শৌচাগার ছাড়াই ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে। এমনকি যেখানে টয়লেট তৈরি করা হয়েছে, সেখানেও কিছু মানুষ খোলা স্থানে মলত্যাগ পছন্দ করে। এমনকি যদি একজন অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ব্যক্তি একটি টয়লেট তৈরি করতে সক্ষম হন, তবুও তারা অনেক্ষেত্রে টয়লেট ব্যবহার করে না বা অনেক ক্ষেত্রে তারা  মর্যাদা বা সুস্থতার জন্য একটি টয়লেটের গুরুত্ব বোঝেন না এবং এটিকে একটি সরকারি দায়িত্ব হিসেবে দেখেন। জনবহুল শহুরে এলাকায়, প্রায় সাত শতাংশ মানুষ এখনও খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে।

ভারত সরকার, UNICEF-এর মতো অংশীদারদের সহায়তায়, ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতকে ‘উন্মুক্ত মলত্যাগ মুক্ত’ করার জন্য একটি অভূতপূর্ব প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে। এই লক্ষ্য অর্জন এবং বিভিন্ন SDG-কে সমর্থন করার জন্য, সরকার ২০১৪ সালে স্বচ্ছ ভারত মিশন চালু করেছিল। প্রধান সরকারি অংশীদার হিসেবে, ইউনিসেফ ১৬টি রাজ্যের ১৯২টি জেলাকে জেলাভিত্তিক ODF পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং বাস্তবায়ন মডেল তৈরি করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে।এই জেলা-ভিত্তিক ODF পরিকল্পনাগুলি টয়লেট ব্যবহার, নিরাপদে জল সরবরাহ এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়া সহ টয়লেট ব্যবহারের জন্য আচরণ পরিবর্তনের বার্তাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রচার করা হয়।

এছাড়াও ইউনিসেফ স্বচ্ছ ভারত মিশন এবং পুষ্টি কর্মসূচীর মত যৌথ কর্মসূচি প্রচার করে, পুষ্টির উপর স্যানিটেশনের প্রভাব এবং স্যানিটেশনের উপর পুষ্টির প্রভাব স্পষ্ট করে জনগণের মধ্যে তুলে ধরে। অন্যদিকে ইউনিসেফ পর্যাপ্ত জল, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি সুবিধার চাহিদাকে উৎসাহিত করে এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো জীবন রক্ষাকারী অনুশীলনকে উৎসাহিত করে জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top