তৃতীয় পাতা


মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা হোক যুক্তিসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ
উত্তরাপথঃ মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড। তবে এই স্বাধীনতা যদি দায়িত্ববোধ ও যুক্তিসঙ্গত সীমারেখার বাইরে চলে যায়, তাহলে তা জাতীয় স্বার্থ ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই এই স্বাধীনতার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকা প্রয়োজন — তবে তা অবশ্যই যুক্তিপূর্ণ, ভারসাম্যপূর্ণ এবং আইনের সীমানার মধ্যে হতে হবে। সম্প্রতি হরিয়ানার আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের গ্রেফতার নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। যদিও ঠিক কী অপরাধের জন্য তাঁকে আটক করা হয়েছে, সেই বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য ছিল অস্পষ্ট। পরে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি দিলেও, তাদের পর্যবেক্ষণ ও শর্তগুলি বেশ কঠোর ছিল। আদালতের নির্দেশে অধ্যাপক মাহমুদাবাদকে তাঁর পাসপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে, নিষেধ করা হয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বা পাহালগাম হামলা নিয়ে কোনো পোস্ট করা থেকে। পাশাপাশি, আদালত তদন্ত বন্ধ করতে অস্বীকার করেছে এবং একটি বিশেষ তদন্তকারী কমিটি গঠন করেছে, যারা অধ্যাপকের পোস্টে ব্যবহৃত ভাষার ধারা ও মনোভাব বিশ্লেষণ করবে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি বড় প্রশ্ন উঠে আসে—মত প্রকাশের স্বাধীনতা কি আজ নিরাপদ? সাংবাদিকতা, একাডেমিক চর্চা ও সামাজিক মাধ্যমে নিজস্ব মত প্রকাশের জায়গা কি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে? এই প্রশ্নগুলো আমাদের সমাজ ও বিচার ব্যবস্থাকে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। সুপ্রিম কোর্ট পূর্বেও একাধিকবার বলে এসেছে, নিম্ন আদালত এবং সরকারি তদন্তকারী সংস্থাগুলো যেন গ্রেফতারের ক্ষমতা ব্যবহার করার সময় আরও বেশী সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই সতর্কবাণী অনেকসময় যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না। অবশ্যই, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই যুক্তিতে যদি নাগরিকের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়বে। রাষ্ট্র এবং নাগরিকের মধ্যে এই ভারসাম্য রক্ষা করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। .....বিস্তারিত পড়ুন


ভারত কি বিজ্ঞান ভিত্তিক চিন্তাধারায় পিছিয়ে পড়ছে?
প্রীতি গুপ্তাঃ ভারত বহু প্রাচীনকাল থেকেই তাঁর জ্ঞান ও দর্শনের এক সমৃদ্ধ ভান্ডার বহন করে চলেছে—আর্যভট্ট থেকে শুরু করে সি.ভি. রামান পর্যন্ত। এক সময় যে ভারতবর্ষ সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে , আজ সেই ভারতবর্ষই বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা এবং সমালোচনামূলক অনুসন্ধানে ক্রমাগত অবনতির দিকে। এখন প্রশ্ন আমাদের সমাজ থেকে কি বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাধারা হারিয়ে যাচ্ছে? আজকের ভারতে যুক্তিবাদ, গবেষণা ও সমালোচনামূলক চিন্তার জায়গায় দেখা দিয়েছে বিশ্বাসভিত্তিক মতবাদ, ছদ্মবিজ্ঞান আর রাজনৈতিক প্রভাব। এর প্রভাব শুধু ক্লাসরুম বা গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ নয়—এর প্রভাব পড়ছে পুরো সমাজে, আমাদের শেখার পদ্ধতিতে এবং সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতায়। ২০২৩ সালে ভারত সরকার “ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (NRF)” চালু করল—উদ্দেশ্য গবেষণাকে উৎসাহ দেওয়া। কাগজপত্রের ঝামেলা কমানো, বেশি ফান্ড দেওয়া, বিজ্ঞানীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া— আপাতদৃষ্টিতে সরকারের সমস্ত উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু আসল প্রশ্ন হল বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে—যদি রাজনীতি বা মতাদর্শ তাদের নিয়ন্ত্রণ করে—তাহলে এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে? ভারতের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখনও চাপে রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই যোগ্যতার বদলে রাজনৈতিক আনুগত্য দেখে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। স্বাধীন গবেষণার জন্য তহবিল কমছে। এমনকি পাঠ্যসূচিতেও চাপ আসছে যেন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতকে সমর্থন করা হয়।সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো—ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক বিশ্বাসকে বিজ্ঞান হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রকে “আধুনিক বিজ্ঞান” বলে প্রমাণ করার প্রবণতা বাড়ছে। এতে বিশ্বাস আর প্রমাণের মধ্যে সীমারেখা ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এই করুন অবস্থা আজ শুধু ভারতের নয় , বিশ্বের অনেক দেশেরই একই অবস্থা। আমেরিকা, হাঙ্গেরি, তুরস্ক—সব জায়গাতেই একধরনের মতাদর্শিক নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা-গবেষণার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। V-Dem ইনস্টিটিউট বলছে, ভারত এখন "সম্পূর্ণভাবে সীমিত" একাডেমিক স্বাধীনতার দেশগুলোর মধ্যে পড়ে। গণতন্ত্রের জন্য এটা এক বড় সতর্ক সংকেত। ছদ্মবিজ্ঞান (pseudoscience)—অর্থাৎ এমন কিছু বিশ্বাস বা প্রথা যেগুলো বিজ্ঞান বলে চালানো হয় কিন্তু যার কোনো প্রমাণ নেই—এটা এখন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। কোভিড-১৯ এর সময় সরকারের AYUSH মন্ত্রক অনেক বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতি (আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি ইত্যাদি) প্রচার করেছিল যেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের সন্দেহ ছিল। কেউ কেউ তো দাবি করেছিলেন গোমূত্র বা গোবর দিয়ে করোনা সারানো সম্ভব—কিন্তু এর পিছনে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছিল না। .....বিস্তারিত পড়ুন


সম্পাদকীয়-অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য
আমরা এমন এক সময়ে বাস করি যেখানে ইন্টারনেট এক অবিচ্ছেন্দ্য যোগাযোগের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। আজ আমাদের কাছে কয়েক ঘণ্টার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া ব্ল্যাকআউটের সময় বিদ্যুৎ না থাকার চেয়েও খারাপ মনে হয়। আজ, ইন্টারনেট সংযোগের গ্যাজেটগুলি ঘরে সর্বত্র রয়েছে , শিশুরা এখন বাইরে খেলার চেয়ে স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় ব্যয় করে। বিগত কয়েক বছরে ভারতের ইন্টারনেটের ব্যবহার অনেক বেড়েছে।এখন চীনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশ ভারত। একটি বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২৪ সালে আমাদের দেশে ৮৮৬ মিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে - যা জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি! ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মতো সরকারি কর্মসূচির সাথে সস্তা স্মার্টফোন এবং ডেটা প্ল্যানগুলি আরও বেশি লোককে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান, শিশুরা এই ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন ১৮ বছরের কম বয়সী এবং ভারতে, ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ১৫ শতাংশ । গড়ে, ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা প্রতিদিন প্রায় ৫.৫ ঘন্টা শুধুমাত্র মজা করার জন্য স্ক্রিনে ব্যয় করে, হোমওয়ার্ক বা স্কুলের অনলাইন পড়াশুনার সময় গণনা না করে । ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা আরও বেশি সময় ব্যয় করে - প্রতিদিন প্রায় ৮.৫ ঘন্টা। মহামারী চলাকালীন, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্ক্রিন টাইম ব্যায় করার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়েছে, যা দেখায় যে প্রযুক্তি তাদের জীবনে কতটা গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। পারিবারিক জীবনের উপর প্রভাব একসময়, বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের "টিভি বন্ধ করতে" বলতেন। এখন, আমরা চাইলেও ইন্টারনেট বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তি পারিবারিক রুটিন বদলে দিয়েছে। বই এবং কাগজ ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। যখন ইন্টারনেটের গতি কমে যায়, তখন ঘরে ছোট থেকে বড় সবাই উদ্বিগ্ন বা হতাশ হয়ে পড়ে। আমাদের অনেকেই অনেকটা অভ্যাস বসেই অনলাইনে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। এই অভ্যাস কাটিয়ে উঠা সকলের জন্য, বিশেষ করে শিশুদের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ। দুর্ভাগ্যবশত, স্ক্রিনের এই অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাবা-মা ব্যস্ত এবং বিভ্রান্ত থাকায়, শিশুরা বাইরে খেলতে কম সময় ব্যয় করছে এবং স্ক্রিনে আটকে বেশি সময় ব্যয় করছে। .....বিস্তারিত পড়ুন


# death of nature : প্রকৃতির মৃত্যু নিয়ে বিশেষজ্ঞদের জরুরী সতর্কবার্তা
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন শাখার বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে "প্রকৃতির মৃত্যু" বা (death of nature) হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা তুলে ধরেছেন। বিজ্ঞানীরা “death of nature” এই শব্দটির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আবাসস্থল ধ্বংসের মত ভবিষ্যতে আমরা যে গভীর পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছি তা তুলে ধরেছেন। এককথায় "প্রকৃতির মৃত্যু" বলতে বিশ্বজুড়ে বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং স্থিতিশীলতার উল্লেখযোগ্য অবনতিকে বোঝায়। এই মর্মান্তিক অবস্থার পেছনে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, বন উজাড় সহ বিভিন্ন শিল্প ও কৃষির মতো মানুষের বেশ কিছু কার্যকলাপ । প্রকৃতির উপর মানুষের এই অবৈজ্ঞানিক কাজকর্মের ফল ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরণ সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক চরম ঘটনা - যেমন আকস্মিক ঘূর্ণি ঝড় , খরা - সবই একটি অস্থিতিশীল জলবায়ুর লক্ষণ যা প্রজাতি এবং বাস্তুতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আমরা বর্তমানে পৃথিবীর ইতিহাসে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির ঘটনার দিকে এগিয়ে চলেছি । মানবিক কার্যকলাপ অসংখ্য প্রজাতিকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হচ্ছে এবং গ্রহের জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষতি কেবল বন্যপ্রাণীকেই প্রভাবিত করছেনা বরং খাদ্য নিরাপত্তা এবং মানব স্বাস্থ্যকেও বিভিন্ন সমস্যার মুখে ফেলছে। দূষণ, সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্যের আকারে হোক বা জলপথে রাসায়নিক পদার্থের প্রবাহের আকারে হোক, এটি প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের উপর বিপর্যয় ডেকে আনছে। বিষাক্ত পদার্থ জলজ জীবনকে ধ্বংস করে চলেছে ,সেইসাথে এটি অনেকাংশে পানীয় জলকে দূষিত করে চলেছে। দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে এটি সমগ্র খাদ্য শৃঙ্খলকে ব্যাহত করতে পারে। সেইসাথে কৃষি, নগর উন্নয়নের ফলে বনভূমি পরিষ্কার করার কারণে বন-যা প্রায়শই আমাদের গ্রহের ফুসফুস হিসাবে পরিচিত তা উদ্বেগজনক হারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই ধ্বংসের ফলে অসংখ্য প্রজাতির আবাসস্থল হ্রাস পাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পৃথিবীতে CO2 নির্গমনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। .....বিস্তারিত পড়ুন


সম্পাদকীয়: কোচিং সেন্টারে ১০০% সাফল্যের মিথ এবং বাস্তবতা
আজকাল, অনেক কোচিং ইনস্টিটিউট কঠিন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিপূর্ণ। তারা শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দেয় যে সেখানে যারা পড়াশোনা করবে তারা সবাই সফল হবে এবং তাদের পছন্দের চাকরি পাবে। কিন্তু সত্য হল, কোচিং সেন্টারগুলিতে সফলতার হার হাতেগোনা। আমাদের দেশে অসংখ্য কোচিং ইনস্টিটিউট আছে এবং প্রচুর শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তি হয়। তবে, উপলব্ধ চাকরির সংখ্যা সীমিত। এর অর্থ হল, একটি কোচিং সেন্টার যতই প্রতিশ্রুতি দিক না কেন, সবাইকে নির্বাচিত করা যাবে না। ১০০% সাফল্যের নিশ্চয়তা দেওয়া কেবল একটি বিজ্ঞাপনি চমক যার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারকে বিভ্রান্ত করা। বর্তমানে আমাদের দেশে কোচিং ইনস্টিটিউটগুলি আইআইটি-জেইই এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মতো পরীক্ষার প্রস্তুতির একটি বড় অংশ হয়ে উঠেছে। এই কারণে, কোচিং শিল্প এখন শিক্ষার একটি সুপরিচিত অংশ। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান আরও বেশি শিক্ষার্থীকে আকর্ষণ করার জন্য তাদের অর্জনগুলিকে অতিরঞ্জিত করে। তারা তাদের সুযোগ-সুবিধা, সাফল্যের গল্প এবং সম্পদ নিয়ে গর্ব করে, এমনকি এমন সাফল্য দাবি করে যা সত্য নয়। কখনও কখনও, তারা এমনও দেখায় যে অন্য কোথাও পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা তাদের কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করে সাফল্য অর্জন করেছে। এই মিথ্যা দাবিগুলি শিক্ষার্থীদের তাদের ক্লাসে যোগদানের জন্য বিভ্রান্ত করে। অনেকবার সরকার এবং আদালত এই সমস্যাটি তুলে ধরেছে। তারা বলেছে যে কিছু কোচিং সেন্টার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে। তা সত্ত্বেও, অনেক প্রতিষ্ঠান বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন এবং দাবি এখনও করে যাচ্ছে। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় গ্রাহক সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (CCPA) কোচিং ইনস্টিটিউটগুলিকে কঠোর সতর্কীকরণ জারি করেছে। তারা এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের বিজ্ঞাপনে সৎ থাকার নির্দেশ দিয়েছে, নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের করা যেকোনো দাবি স্পষ্ট, নির্ভুল এবং বিভ্রান্তিকর নয়। তারা তাদের ভর্তি এবং ফলাফল সম্পর্কে স্বচ্ছ তথ্য প্রদান করতেও বলেছে। কোচিং সেন্টারগুলির জন্য ১০০% সাফল্যের হারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এত বেশি শিক্ষার্থী এবং এত কম চাকরির সুযোগ থাকায় .....বিস্তারিত পড়ুন


সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্ম
প্রীতি গুপ্তাঃ সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক আমাদের এই সময়ের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলির মধ্যে একটি, বিশেষ করে ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে। ধর্মীয় বাগাড়ম্বরের আড়ালে সন্ত্রাসবাদের উত্থান, দেশের মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস এবং বিভাজনকে উৎসাহিত করেছে।বর্তমানে ধর্মের সাথে সন্ত্রাসবাদকে একত্রিত করা একটি বিপজ্জনক প্রচেষ্টা যা আমাদের দেশের বহুত্ববাদী নীতির পরিপন্থী। সন্ত্রাসবাদ, একটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড । ভয় এবং সহিংসতার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা। আইসিস, আল-কায়েদা,মত কিছু সংগঠন তাদের কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ধর্মীয় মতাদর্শকে ব্যবহার করে, তাদের অভিযোগগুলি প্রায়ই ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য বা আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিহিত থাকে।এদের কাছে ধর্ম একটি সুবিধাজনক আবরণ, বা নৃশংসতাকে বৈধতা দেওয়ার হাতিয়ার। ভারতে, লস্কর-ই-তৈয়বা দ্বারা পরিচালিত ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা, অথবা জৈশ-ই-মোহাম্মদের সাথে যুক্ত ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা বা সদ্য ঘটে যাওয়া পাহেলগাঁও এর মতো ঘটনাগুলি ধর্মীয় পরিভাষায় তৈরি করা হয়, কিন্তু আদর্শিক চরমপন্থা এবং-সীমান্ত এজেন্ডার মিশ্রণ দ্বারা পরিচালিত হয়। কোনও প্রধান ধর্ম - তা সে ইসলাম, হিন্দু , খ্রিস্ট বা অন্য কোনও ধর্ম- নিরপরাধদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অনুমোদন দেয় না,বরং ধর্মগ্রন্থগুলি করুণা, ন্যায়বিচার এবং সহাবস্থানের উপর জোর দেয়। তবুও, প্রান্তিক উপাদানগুলির দ্বারা নির্বাচিত ব্যাখ্যাগুলি এই শিক্ষাগুলিকে বিকৃত করে, "পবিত্র যুদ্ধ" বা "ঐশ্বরিক প্রতিশোধ" এর আখ্যান তৈরি করে। ভারতে, এই বিকৃতি কেবল একটি ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ ইসলামী সন্ত্রাসবাদের উপর কেন্দ্রীভূত হলেও, হিন্দু, শিখ বা অন্যান্য উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিও এর ব্যতিক্রম নয়। ১৯৮০-এর দশকের খালিস্তান আন্দোলন থেকে শুরু করে উগ্র হিন্দু সংগঠনগুলির দ্বারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিক্ষিপ্ত ঘটনা এর প্রমান। ভারতের ধর্মীয় বৈচিত্র্য তার শক্তি এবং চ্যালেঞ্জ উভয়ই। ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার এই দেশটিতে হিন্দু (৭৯.৮%), মুসলিম (১৪.২%), খ্রিস্টান (২.৩%), শিখ (১.৭%) এবং অন্যান্যরা বাস করে, যারা একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যের মধ্যে সহাবস্থান করে। ঐতিহাসিক ক্ষত - দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং কাশ্মীরের মতো চলমান বিরোধ - জাতিকে বিশেষভাবে এমন এক সমস্যায় ফেলেছে .....বিস্তারিত পড়ুন


দিল্লিতে নর্দমা পরিষ্কার করতে গিয়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যু: অবহেলা এবং বৈষম্যের এক বিশ্বব্যাপী সমস্যা
প্রীতি গুপ্তাঃ শুক্রবার দিল্লির নরেলাতে নর্দমা পরিষ্কার করার সময় শ্বাসরোধে দুই শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বের অনেক জায়গায় এখনও এটি একটি বড় সমস্যা। এই ধরনের ঘটনা রোধ করার লক্ষ্যে নিয়মকানুন থাকা সত্ত্বেও, সরকারি বিভাগগুলির সেগুলির সঠিক প্রয়োগ এবং গুরুত্বের অভাব বহু মানুষের জীবনহানির কারণ হচ্ছে। তাহলে কেন সুরক্ষা ব্যবস্থা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না ,যার ফলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। ভারতে, নর্দমা পরিষ্কার প্রায়শই ম্যানুয়ালি করা হয়, শ্রমিকরা যথাযথ সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই সীমিত স্থানে প্রবেশ করে। নর্দমায় বিষাক্ত গ্যাস, যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড, কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারাত্মক হতে পারে। নরেলাতে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে গিয়ে আরেকজন কর্মী অজ্ঞান হয়ে পড়েন, যা এই ধরনের কাজের বিপদকে তুলে ধরে। দুঃখের বিষয়, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রায়দিনই একই রকম দুর্ঘটনা ঘটে, অবহেলা এবং সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার অভাবে শ্রমিকরা প্রাণ হারান। বিশ্বব্যাপী তুলনা: অন্যান্য দেশ কীভাবে নর্দমা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করে আমাদের দেশে যখন এখনও হাতে নর্দমা পরিষ্কারের পদ্ধতি চালু রয়েছে তখন অনেক দেশ নিরাপদ এবং আরও উন্নত পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং জাপানের মতো উন্নত দেশগুলি নর্দমা পরিষ্কার করার জন্য রোবোটিক মেশিন এবং উচ্চ-চাপের জেট ব্যবহার করে, যা মানুষের প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা দূর করে। কঠোর শ্রম আইন এবং সুরক্ষা বিধি শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলিও যান্ত্রিক পরিষ্কার ব্যবস্থা শুরু করেছে, যদিও সেখানে সমস্ত ক্ষেত্রে প্রয়োগের ক্ষেত্রে তহবিলের কিছু সমস্যা রয়েছে। - অন্যদিকে ভারত, বাংলাদেশ এবং নাইজেরিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি এখনও নর্দমা পরিষ্কারের জন্য কায়িক শ্রমের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। এই দেশগুলিতে শ্রমিকরা একই রকম ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, খুব কম বা কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম বা আইনি সুরক্ষা নেই। .....বিস্তারিত পড়ুন