slider


মালবিকা ও অগ্নিমিত্র: কালিদাসের প্রথম নাটকের সাহিত্যিক বিশ্লেষণ

প্রীতি গুপ্তাঃ ভারতীয় সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকার কালিদাস, যাঁর রচনাগুলি কেবল ভারতেই নয়, আজও বিশ্বসাহিত্যে এক অমর স্থান অধিকার করে রয়েছে। মহাকবি কালিদাস একদিকে যেমন ছিলেন বিখ্যাত কবি, অন্যদিকে নাট্যকার ও দার্শনিক হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। কালিদাস তাঁর কাব্য ও নাটকগুলিতে সৌন্দর্য, আবেগ এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের জীবনের গভীর সম্পর্ক ইত্যাদি বিভিন্ন দিক নিয়ে অত্যন্ত পরিশীলিত শৈলীর মাধ্যমে আলোচনা করেছেন যা পাঠক ও দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। মহাকবি রচিত তিনটি নাটক —মালবিকাগ্নিমিত্রম্, অভিজ্ঞান শকুন্তলম্, এবং বিক্রমোর্বশীয়ম্—এর মধ্যে মালবিকাগ্নিমিত্রম্ হলো তাঁর প্রথম নাটক। এই নাটকটি কালিদাসের প্রাথমিক সাহিত্য সাধনার নিদর্শন হলেও এতে তাঁর ভবিষ্যৎ কাব্যিক গুণাবলি ও রসাশ্রয়ী নাট্যচেতনার শক্ত ভিত রচিত হয়েছে। আজ আমরা আলোচনা করব মালবিকা ও অগ্নিমিত্র নাটকের কাঠামো, চরিত্রচিত্রণ, ভাষা ও শৈলী নিয়ে, সেই সঙ্গে এর ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক প্রেক্ষাপট, যা এই নাটকটিকে কালিদাসের প্রথম নাট্যকর্ম হিসেবে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে। নাটকের পটভূমি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট “মালবিকা ও অগ্নিমিত্র” কালিদাসের প্রথম নাটক হিসেবে বিবেচিত হলেও এর রচনাকাল নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকে মনে করেন এটি গুপ্ত যুগে রচিত, যখন ভারতীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্য তার স্বর্ণযুগে পৌঁছেছিল। নাটকটির কাহিনী শুঙ্গ রাজবংশের রাজা অগ্নিমিত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, যিনি ঐতিহাসিকভাবে শুঙ্গ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা পুষ্যমিত্র শুঙ্গের পুত্র ছিলেন। নাটকটি ঐতিহাসিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে না, বরং এটি কালিদাসের কল্পনাশক্তি এবং নাটকীয় দক্ষতার একটি অপূর্ব সৃষ্টি। নাটকটির পটভূমি হল বিদিশার রাজপ্রাসাদ, যেখানে রাজা অগ্নিমিত্রের রাজকীয় জীবন এবং তাঁর প্রেমকাহিনী নাটকটির মূল বিষয়। এটি একটি প্রণয়কেন্দ্রিক নাটক, যেখানে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, রাজকীয় জীবনের জটিলতা এবং প্রেমের আবেগ মিলেমিশে একটি আকর্ষণীয় গল্প তৈরি হয়েছে। নাটকের সারাংশ “মালবিকা ও অগ্নিমিত্র” একটি পঞ্চাঙ্ক নাটক, যা রাজা অগ্নিমিত্র এবং মালবিকা নামে এক তরুণীর প্রেমকাহিনীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। মালবিকা একজন দাসী হিসেবে রাজপ্রাসাদে আগমন করে, কিন্তু তার প্রকৃত পরিচয় রহস্যময়। নাটকের শুরুতে আমরা দেখতে পাই যে অগ্নিমিত্র, যিনি ইতিমধ্যে দুই রানী ধারিণী এবং ইরাবতীর স্বামী, মালবিকার প্রতিও তিনি আকৃষ্ট হন। .....বিস্তারিত পড়ুন

চাঁদে কলোনি, ২৯ কোটি ক্ষুধার্ত ৫৩টি দেশ খাদ্য সংকটে: এটাই কি উন্নয়ন?

উত্তরাপথঃ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) সাম্প্রতিক ‘গ্লোবাল ফুড ক্রাইসিস’ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে যে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে, তা মানব সভ্যতার বিবেককে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। ২০২৪ সালে টানা ষষ্ঠ বছর বিশ্ব জুড়ে গভীর খাদ্য সংকট চলছে এবং শিশুদের অপুষ্টি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। অথচ এই সময়েই আমরা গর্বের সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নয়ন, অবকাঠামোর প্রসার এবং মহাকাশে কলোনি গড়ার দাবি করছি। প্রশ্ন উঠছে—এটাই কি সত্যিকারের উন্নয়নের মানদণ্ড? আজ আমরা এমন এক যুগে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে একদিকে স্পেস স্টেশন, রোবোটিক চাঁদযান ও AI-এর বিস্ময়কর উন্নয়নের গল্প শুনি, অন্যদিকে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে রাত কাটান। বিশ্ব যখন ‘উন্নয়ন’ শব্দের মহিমা প্রচারে ব্যস্ত, তখন মানবিক বিপর্যয়গুলোর দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখাও হয় না। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, ২০২৪ সালে বিশ্বের ৫৩টি দেশ বা অঞ্চলে প্রায় ২৯.৫ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছেন। ২০২৩ সালের তুলনায় এই সংখ্যা বেড়েছে ১.৩৭ কোটি। অর্থাৎ, পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, বরং সংকট আরও গভীর হয়েছে। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এই দুরবস্থার মূল কারণ। এসব কারণে ২০টি দেশে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ চরম ক্ষুধার্ত অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন। এসব অঞ্চলে মানবিক সহায়তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, খাদ্য সরবরাহও বাধাপ্রাস্ত হচ্ছে। এটি শুধু একটি ব্যর্থ রাজনৈতিক অবস্থানের দৃষ্টান্ত নয়, এটি মানবিক মূল্যবোধেরও মৃত্যু। খাদ্য সংকটের আরেক বড় কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ধস, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের কারণে ১৫টি দেশে প্রায় ৫.৯৪ কোটি মানুষ প্রায় অভুক্ত থাকতে বাধ্য হচ্ছে। পাশাপাশি, খরা ও বন্যা ১৮টি দেশে ৯.৬ কোটি মানুষকে খাদ্য সংকটে ফেলেছে। এরচেয়েও ভয়াবহ হলো, এই সংকটে আন্তর্জাতিক সাহায্যের হারও নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তার জন্য যেসব তহবিল বরাদ্দ করা হতো, তা এখন থমকে গেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার আগ্রহ কমছে, অন্যদিকে প্রচলিত বড় দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছাও প্রশ্নের মুখে।আজ ২১শ শতকে দাঁড়িয়ে ক্ষুধার ছবি—এ একটি সভ্যতার পরাজয়। .....বিস্তারিত পড়ুন

নিজের ঘরেই পরবাসী প্রবীণেরা — কেয়ার করবে কে?

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ ভারতের মতো পরিবারকেন্দ্রিক সমাজেও আজ প্রবীণদের প্রতি অবহেলা ও নিগ্রহের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি হরিয়ানার পঞ্চকুলার এক ঘটনা আরও একবার সমাজের এই নির্মম বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। সেখানে এক বৃদ্ধ দম্পতি তাঁদের পুত্র ও পুত্রবধূর সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করলেও, তাঁদের একঘরে করে রাখা হয়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় এবং এমনকি সম্পত্তি পুত্র ও পুত্রবধূর নামে করে দেওয়ার চাপও দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। ভারতীয় সমাজে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা, সেবা ও কর্তব্যের ঐতিহ্য বহু পুরনো। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই ঐতিহ্য গভীর সংকটে পড়েছে। যেসব সন্তানদের মানুষ করতে পিতা-মাতা তাঁদের জীবনের সমস্ত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই সন্তানরাই আজ অনেক সময় তাঁদের বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি অবহেলা ও নির্যাতনের পথ নিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে হরিয়ানা মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রবীণ দম্পতির পক্ষে রায় দিয়ে স্পষ্ট করেছে যে, ‘Maintenance and Welfare of Parents and Senior Citizens Act, 2007’ অনুযায়ী, সন্তানদের কাছ থেকে প্রবীণ পিতামাতা খরচ দাবি করার অধিকার রয়েছে। এছাড়া, যদি কেউ সম্পত্তি হস্তান্তর করেন এই শর্তে যে, তাঁকে দেখাশোনা করা হবে, এবং সেই শর্ত লঙ্ঘন হয়, তবে ধারা ২৩ অনুযায়ী সেই হস্তান্তর বাতিলযোগ্য। ধারা ২৪ অনুযায়ী, প্রবীণ ব্যক্তিকে ত্যাগ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যত আধুনিক হচ্ছে সমাজ, তত নিঃস্ব হচ্ছে মানবতা?একদিকে প্রযুক্তি ও জীবনযাত্রার মান যত উন্নত হয়েছে, ততই যেন কমেছে মানবিক মূল্যবোধ। আধুনিক জীবনের আরাম-আয়েশ পাওয়া সন্তানেরা তাঁদের বৃদ্ধ পিতামাতার ন্যূনতম যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেন না অনেক সময়। অথচ, এই মা-বাবারাই নিজেদের স্বপ্ন ত্যাগ করে সন্তানদের সুখী ভবিষ্যতের জন্য সব কিছু দিয়েছেন। আমাদের দেশে আজও পর্যাপ্ত সংখ্যক বৃদ্ধাশ্রম নেই। যে গুটিকয়েক আছে, সেগুলোর বেশিরভাগেই পরিকাঠামো ও মানবিক সংবেদনশীলতার অভাব আছে। ফলে পরিবারে উপেক্ষিত ও নিগৃহীত প্রবীণদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিণতির ব্যবস্থা নেই। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীরা যাঁরা বদলে দিয়েছেন আমাদের পৃথিবী

উত্তরাপথঃ বিজ্ঞান বদলে দিতে পারে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ—এই সত্যি বারবার প্রমাণ করেছেন কিছু অসাধারণ মানুষ, যাঁদের আবিষ্কার ও চিন্তাধারা আমাদের জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারনাটাই বদলে দিয়েছেন। এই অসাধারণ মানুষগুলো পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তারা তাদের কাজ  দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা  প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার এবং বিশ্বকে বদলে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। তাদের জ্ঞানের অদম্য সাধনা মানবজাতিকে এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে, যা একসময় অকল্পনীয় ছিল।এই সব অসাধারণ মানুষদের মধ্যে অন্যতম হলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। আজ আমরা তাঁর জীবনের গল্প এবং বিজ্ঞান জগতে তাঁর অসামান্য অবদান নিয়ে কথা বলব। আলবার্ট আইনস্টাইন শুধু একজন বৈজ্ঞানিক প্রতিভা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় এবং কৌতূহলী ব্যক্তিত্ব। তাঁর বিখ্যাত সূত্র *E = mc²* এবং আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বিজ্ঞানের ভিতকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। তিনিই দেখিয়েছেন, কিভাবে সময় ও স্থানের ধারণা একে অপরের সাথে জড়িত। আইনস্টাইনের জন্ম ১৮৭৯ সালে, জার্মানির উলম শহরে। ছোটবেলায় কেউ ভাবতেও পারেনি, এই ছেলেটিই একদিন বিজ্ঞানের রূপ বদলে দেবে। অনেকেই বলেন যে তিনি অঙ্কে নাকি একবার ফেল করেছিলেন, যা একেবারেই সত্য নয়। বরং ছোটবেলা থেকেই তাঁর আগ্রহ ছিল আলো, চৌম্বকত্ব ও মহাকাশের রহস্যে। ১৯০৫ সালে তিনি সুইস পেটেন্ট অফিসে কেরানি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই বছরটি ‘*আইনস্টাইনের অলৌকিক বছর’ নামে পরিচিত। তিনি এক বছরে চারটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যার মধ্যে ছিল বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিখ্যাত সূত্র **E = mc²*, যা বলে, ভর (mass) ও শক্তি (energy) একে অপরের রূপান্তর।এই তত্ত্বগুলোর সাহায্যে আজকের নিউক্লিয়ার শক্তি, জিপিএস প্রযুক্তি এবং আধুনিক মহাকাশবিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি হয়েছে।১৯১৬ সালে তিনি সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি প্রস্তাব করেন যে ভর স্থান এবং সময়ের কাঠামোকে বিকৃত করে। ১৯২১ সালে আইনস্টাইন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, তবে এটি সাধারণ আপেক্ষিকতার জন্য নয়, বরং আলোকবৈদ্যুতিক প্রভাব আবিষ্কারের জন্য .....বিস্তারিত পড়ুন

এই ৩ ভুলেই হাড় হয় দুর্বল!

উত্তরাপথঃ আমাদের দেহের গঠন ও কাজকর্মে হাড়ের ভূমিকা অপরিসীম। হাড় শুধু শরীরকে আকার দেয় না, মস্তিষ্ককে করোটি দিয়ে এবং হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসকে পাঁজর দিয়ে রক্ষা করে। এর পাশাপাশি, হাড়ের মধ্যে থাকা মজ্জায় রক্তকণিকা তৈরি হয় এবং হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সংরক্ষিত থাকে। তবুও, হাড়ের যত্ন আমরা প্রায়ই অবহেলা করি। অস্থি ও জয়েন্ট বিশেষজ্ঞ ডঃ রাজু ব্যানার্জির মতে , হাড় দুর্বল হওয়ার প্রধান তিনটি কারণ হলো – ১. অপুষ্টি ২. দৈহিক পরিশ্রমের অভাব ৩. অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এই কারণগুলো হাড়ের ক্ষতি করে এবং কীভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ১. অপুষ্টি (Nutritional Deficiencies) হাড় মজবুত রাখতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উপাদান দুটির ঘাটতিতে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অস্টিওপোরোসিস ও সহজেই ভাঙার মতো সমস্যা দেখা দেয়। ভারসাম্যহীন খাদ্যাভ্যাসই এই ঘাটতির মূল কারণ। সমাধান: প্রতিদিন দুধ, দই, পনির, মাছ, ডিম এবং সবুজ শাকসবজি খান সকালের রোদে (সকাল ৮টা–১০টার মধ্যে) অন্তত ২০ মিনিট সময় কাটান প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন ২. দৈহিক পরিশ্রমের অভাব (Lack of Physical Activity) সক্রিয় জীবনধারাই হাড়কে সবল রাখে। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ব্যায়ামের অভাব কিংবা অলস জীবনধারা হাড়ের কোষকে দুর্বল করে এবং হাড় ক্ষয়ের গতি বাড়িয়ে দেয়। সমাধান: রোজ ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো বা হালকা ব্যায়াম করুন যাদের বসে কাজ করতে হয়, প্রতি ঘন্টায় অন্তত ৫ মিনিট উঠে হাঁটুন যোগব্যায়াম বা ভারোত্তোলনের মতো ওজন বহনকারী ব্যায়াম হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে .....বিস্তারিত পড়ুন

“ দিনে প্রকৃতপক্ষে কত পা-হাঁটা উচিত ?” – সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে লেখা

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্মার্টফোন ও ওয়্যারেবল ডিভাইসে স্টেপ কাউন্টিং জনপ্রিয় হলেও, প্রশ্ন থেকে যায়: প্রাত্যহিক কতগুলো ধাপ হাঁটা প্রকৃতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন? এই প্রবন্ধে সমসাময়িক গবেষণা ও বিশ্লেষণগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ১. ১০,০০০ ধাপ: একটি ভুল ধারনা – ১৯৬০-এর দশকে জাপানে পণ্যের প্রচারের  উদ্দেশ্যে ১০,০০০ ধাপ নির্ধারণ করা হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় (Financial Times, New York Post)। – সংস্করণ-ভিত্তিক গবেষণা দেখায়, ৭,০০০ ধাপেই গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যের সুবিধা পাওয়া যায়, এবং ১০,০০০ এর উপরে গিয়ে লাভের হার কম হয় (The Times of India, The Guardian)। ২. স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ধাপের সংখ্যা সামগ্রিক মৃত্যুহার প্রায় ৪৭% কমে যায়, হৃদরোগ ঝুঁকি ২৫% কমে, ক্যান্সার ৩৭%, ডায়াবেটিস ১৪%, মস্তিষ্কের রোগ (ডিমেনশিয়া) ৩৮%, বিষণ্নতা ২২%, পড়ে গিয়ে আহত হওয়া ঝুঁকি ২৮% কমে (New York Post, The Guardian)। মাত্র ২,০০০–৪,০০০ ধাপ দিনে হাঁটলেও মৃত্যুহার ও হৃদরোগের ঝুঁকি নিম্ন পর্যায়ে আসে; গবেষণায় দেখা গেছে ২,০০০ ধাপ হাঁটলেও কিছুটা লাভ হয় (New York Post, The Times of India, Harvard Health)। – ধাপ বাড়ানোর হারও গুরুত্বপূর্ণ: প্রতি ১,০০০ ধাপ বাড়লে মোট মৃত্যুহার প্রায় ১৫% কমে যায়, এবং প্রতি ৫০০ ধাপ বাড়লে হৃদরোগ ঝুঁকি ৭% কমে যায় (Harvard Health)। ৩. বয়সভিত্তিক ধাপ গাইডলাইন – ৬০ বছর বা তার বেশি বয়স: ৬,০০০–৮,০০০ ধাপ/দিনে স্বাস্থ্যের সুবিধা পাওয়া যায়; এই পরিমাণেই মৃত্যু ও হৃদরোগ ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় (PMC, Reddit)। – ৭,০০০ ধাপ/দিন হলে: .....বিস্তারিত পড়ুন

# বাংলার রথযাত্রা

প্রীতি গুপ্তাঃ বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, শ্যামপুর। সবুজ ধানখেত আর নদীর কোল ঘেঁষে এই গ্রাম যেন এক টুকরো স্বর্গ। বছরের বেশিরভাগ সময় এখানে শান্তি আর সরলতার রাজত্ব। কিন্তু আষাঢ় মাস এলেই শ্যামপুরের মানুষের মনে এক অন্যরকম উৎসাহ জাগে। কারণ, এ সময় এখানে পালিত হয় জগন্নাথের রথযাত্রা। এই উৎসব শুধু একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এ যেন গ্রামের প্রাণের মেলা, একতার উৎসব। গ্রামের মাঝখানে রয়েছে এক প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির। মন্দিরের চারপাশে বিশাল আমবাগান আর একটা পুকুর, যার জলে সারা বছর পদ্মফুল ফোটে। মন্দিরের পুরোহিত, গোপাল দাস, বয়সে প্রৌঢ় হলেও তাঁর উৎসাহে যেন কোনও কমতি নেই। তিনি বলেন, “জগন্নাথ আমাদের সকলের। তিনি গ্রামের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বাস করেন। রথযাত্রার এই সময় আমাদের একসঙ্গে আনন্দ করার এক সুযোগ।” এবারের রথযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল এক মাস আগে। গ্রামের যুবকরা মিলে রথ তৈরির কাজে লেগে পড়েছিল। কাঠের গাড়ি, রঙিন কাপড় আর ফুলের মালায় সাজানো রথ যেন এক স্বপ্নের ছোঁয়া। রথের চাকা তৈরি করেছিলেন গ্রামের বুড়ো কাঠমিস্ত্রি রামধন। তিনি বলেন, “আমার বাবা, তার বাবা—সবাই এই রথের চাকা বানিয়েছেন। এই কাজে আমার প্রাণ আটকে আছে।” গ্রামের মেয়েরা রথের জন্য ফুলের মালা গাঁথছিল। তারা গান গাইছিল, হাসছিল, আর একে অপরের সঙ্গে গল্প করছিল। মাঝে মাঝে তাদের হাসির শব্দে পাখিরা উড়ে যাচ্ছিল। ছোট্ট মেয়ে রাধা, যার বয়স মাত্র দশ, তার হাতে তৈরি একটা ছোট্ট মালা দেখে সবাই মুগ্ধ। রাধা লাজুক হেসে বলল, “আমার মালাটা জগন্নাথের গলায় পরাব। তিনি আমার দিদির অসুখ সারিয়ে দেবেন।” রথযাত্রার দিন ভোর থেকেই গ্রামের মানুষ ব্যস্ত। মন্দিরে ভক্তদের ভিড়, ধূপের গন্ধ, শঙ্খধ্বনি আর মন্ত্রোচ্চারণে চারদিক মুখরিত। গ্রামের প্রতিটি ঘর থেকে মানুষ এসে জড়ো হয়েছিল। কেউ পুজোর থালা হাতে, কেউ ফুলের ঝুড়ি নিয়ে, আর কেউ শুধু হৃদয় ভরা ভক্তি নিয়ে। দুপুরের দিকে রথযাত্রা শুরু হল। জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রার মূর্তি রথে বসানো হল। গ্রামের যুবকরা দড়ি টানতে শুরু করল। তাদের মুখে হাসি, কপালে ঘাম। বুড়ো রামধন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, তার চোখে গর্বের চমক। গ্রামের মেয়েরা রথের পাশে পাশে হাঁটছিল, হাতে ফুল ছড়াচ্ছিল। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দৌড়ে রথের পিছু পিছু যাচ্ছিল, তাদের হাসির শব্দ যেন সব দুঃখ ভুলিয়ে দিচ্ছিল। রথ যখন গ্রামের মাঝখানে এসে পৌঁছল, তখন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। গ্রামের কুখ্যাত মানুষ, যদু, যে কখনও কারও সঙ্গে ভালো করে কথা বলত না, সে হঠাৎ রথের দড়ি ধরে টানতে শুরু করল। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। যদুর চোখে জল, মুখে এক অদ্ভুত শান্তি। পরে সে বলল, “জগন্নাথ আমাকে ডাকছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

12 3 4 5 6 7 8
Scroll to Top