তৃতীয় পাতা


সম্পাদকীয়: ইরান আক্রমণে ইসরায়েলের আসল উদ্দেশ্য কী?
যুদ্ধ বিরতির পরও অব্যাহত ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ। রক্তাক্ত এই টানাপোড়েনে ইরানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮০০ জন, আর ইসরায়েলে অন্তত ১০০০ জন বলে খবর । এই সহিংসতা শুধু পশ্চিম এশিয়ার নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও কূটনীতির ভারসাম্যকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ইসরায়েলি সরকার যেভাবে পরপর ইরানের সামরিক ঘাঁটি, তেল ও গ্যাস ডিপো, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, তাতে একটাই প্রশ্ন সামনে এসেছে—এই হামলার আসল উদ্দেশ্য কি? সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, এটি একটি "প্রতিরোধমূলক" পদক্ষেপ। ইরান নাকি পারমাণবিক বোমা তৈরির মুখে, সেই হুমকি ঠেকাতেই এই আগাম পদক্ষেপ। কিন্তু এমন কোনও জরুরি প্রমাণ সামনে আসেনি যা এই ‘আত্মরক্ষার তাড়না’-কে বৈধতা দিতে পারে। জুন ১২ তারিখে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, যেখানে ইরানের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের প্রথমদিকের এনপিটি (NPT) লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল। কিন্তু সেই রিপোর্টে এমন কোনও নতুন তথ্য নেই যা ইসরায়েলের এই অতর্কিত হামলাকে ন্যায্যতা দিতে পারে। যা ঘটছে, তা বহুদিনের পরিকল্পনার ফল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের পক্ষে এককভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তবু কেন এই আক্রমণ? আসলে, এই আক্রমণের গন্তব্য ছিল আরও গভীরে। প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সর্বোচ্চ নেতা খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানির মত শীর্ষস্থানীয় নেতাদের টার্গেট করে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট—এটি ছিল গোটা ইরানি রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে এক কৌশলগত আঘাত। শামখানি গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলেন। তাঁর হত্যাকে অনেকে দেখছেন আলোচনার পথ বন্ধ করার এক চেষ্টারূপে। ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের একটি প্রিয় কৌশল—ব্যক্তিবিশেষকে সরিয়ে গোটা কাঠামো ভেঙে দেওয়া। এবারও সেই ছকেই এগোচ্ছে তারা। এটি কোনও পারমাণবিক কর্মসূচির ‘মাথা কাটা’র প্রচেষ্টা নয়, বরং এক জাতীয় শক্তির ভরকেন্দ্রকে দুর্বল করার পরিকল্পনা। আর একটি ইঙ্গিত আরও পরিষ্কার করে দিচ্ছে ইসরায়েলের অভিসন্ধি। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের জনগণের প্রতি—“অত্যাচারী শাসন থেকে নিজেকে মুক্ত করুন”। অর্থাৎ, তারা চায় ‘রেজিম চেঞ্জ’। .....বিস্তারিত পড়ুন


যুদ্ধের পরিবেশগত প্রভাবের এক বিস্তারিত বিশ্লেষণ
প্রীতি গুপ্তাঃ যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ শুধু মানুষকে নয়, প্রকৃতিকেও বিধ্বস্ত করে। পরিকাঠামো ধ্বংস, অস্ত্রের বিষাক্ত প্রভাব, বন উজাড় ও বন্যপ্রাণী নিধন—সব মিলিয়ে এটি পরিবেশের উপর ফেলে গভীর ছাপ, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে সীমানা পেরিয়ে, জলবায়ু পর্যন্ত। যুদ্ধের এই প্রভাব শুরু হয় অনেক আগে থেকে , যখন সামরিক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় নানা সম্পদ ব্যবহার হয়। বড় ধরনের সামরিক বাহিনী তৈরি ও বজায় রাখতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ দরকার। এর মধ্যে রয়েছে ধাতু, মূল্যবান খনিজ, জল, তেল ও খনিজ সম্পদ।এছাড়াও সামরিক প্রস্তুতি বলতে বোঝায় ট্রেনিং, যা করতে গেলে প্রচুর জ্বালানি ও সম্পদ ব্যবহৃত হয়। সামরিক যান, বিমান ও জাহাজ চালাতে সব ক্ষেত্রে দরকার জ্বালানী এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই শক্তি হয় বৈদ্যুতিক বা অপর্যাপ্ত জ্বালানী। বিশ্বজুড়ে সশস্ত্র বাহিনীর কার্বন ডাইऑক্সাইড নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে—বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন গ্লোবাল গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রায় ৫.৫% এর জন্য দায়ী এই সেনা বাহিনী। অতিরিক্ত, সামরিক কার্যক্রমের জন্য প্রচুর স্থল ও সমুদ্রের দরকার হয়। এই জায়গাগুলো প্রায়শই বাস্তুতন্ত্রের জন্য এবং জৈববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।সামরিক ট্রেনিং, অস্ত্রের ব্যবহার, বিমান ও যানবাহনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশে ব্যাপক ক্ষতি সৃষ্টি করে, মাটিতে দূষণ, শব্দ ও রাসায়নিক বিকিরণের মাধ্যমে। অবশ্যই, সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার সার্বিক দিক থেকে পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে। অনেক সময় অব্যবহৃত অস্ত্রের ডাম্পিং করে রাখা হয় বা আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অতীতের ইতিহাসে দেখা যায়, অপচয়রত অস্ত্র বা যুদ্ধঅস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রে ডাম্প করা হয়েছে, যা মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কারণ হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে নতুন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান যেমন PFAS বা নাইট্রোজেনযুক্ত বিষাক্ত উপকরণ সামরিক অবকাঠামো নির্মাণের কারণে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অপ্রত্যক্ষভাবে, বৃহৎ সামরিক ব্যয় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর । এই ব্যয় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বহু ধরনের হতে পারে—কিছু সংঘর্ষ কিছুদিনের হলেও খুব ধ্বংসাত্মক হয়, আবার কিছু যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলেও কম প্রভাব ফেলে। তবে অধিকতর শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষে পরিবেশের উপর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। .....বিস্তারিত পড়ুন


মুম্বাই চিড়িয়াখানায় পেঙ্গুইনের ছানার জন্ম: মারাঠি নামের দাবিতে বিজেপি!
উত্তরাপথঃ মুম্বই শহরের রাজনীতি এমনিতেই উত্তেজনাপূর্ণ। কিন্তু এবার রাজনীতির রং লাগল পেঙ্গুইনের গায়েও! শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি—এবার দাবি উঠেছে, মুম্বাইয়ের চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া পেঙ্গুইনের ছানাদের নাম রাখতে হবে মারাঠি ভাষায়। তাঁদের যুক্তি? এই ‘উড়ন্ত পাখি’ নাকি মহারাষ্ট্রের আদি বাসিন্দা! বিজেপি নেতা নীতিন বাঙ্কার তো রীতিমতো মিছিল করে জানিয়ে দিয়েছেন —“যখন বিদেশ থেকে পেঙ্গুইন আনা হয়েছিল বীরমাতা জিজাবাই ভোঁসলে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানায় (যাকে সবাই রানিবাগ বলে চেনে), তখন আমরা মেনে নিয়েছিলাম যে তাদের নাম ইংরেজিতে হবে। কিন্তু সদ্যজাত এই পেঙ্গুইন এখন তো মুম্বইতেই জন্মেছে! এই ছানারা একেবারে ঘরের, এদের নাম কি 'লুসি' বা 'চকো' হবে? মারাঠি নাম দিলে মন্দ কী?" মুম্বাই পৌরসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি কর্মীদের এই প্রতিবাদ দেখে মনে হতে পারে, এটা যেন পরিচয়ের রাজনীতির এক নতুন অধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বিএমসিকে (বৃহন্মুম্বই পৌর কর্পোরেশন) একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কানে তুলছে কে? "বাচ্চা পেঙ্গুইনের নাম ঠিক করতে এত গড়িমসি! যেন ইউনাইটেড নেশনের ভোট লাগবে!" — কটাক্ষ করেন তিনি। বিজেপি নেতা নীতিন বাঙ্কারের মতে, মারাঠি তো এখন ক্লাসিক্যাল ভাষা। তাহলে পেঙ্গুইনের নাম 'রোমিও' না হয়ে 'ভাউ' হতে দোষ কোথায়? প্রসঙ্গত এই নামকরণ যুদ্ধ কিন্তু শুধু মুম্বইতেই নয়, এর আগেও দেখা গেছে অন্য দেশে। চিলিতে, একবার স্থানীয়রা দাবি করেছিলেন, অ্যান্ডিজ পর্বতের পাশে জন্ম নেওয়া পেঙ্গুইনের নাম রাখা হোক 'পেপে' বা 'পেদ্রো'—একেবারে স্থানীয় স্টাইলে। জাপানে তো এক চিড়িয়াখানায় পান্ডার বাচ্চার নাম রাখার জন্য জনসাধারনের মধ্যে ভোটাভুটি হয়, এরপর জাপানি সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নাম রাখা হয়। এমনকি কানাডায় একবার প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে জন্মানো পেঙ্গুইনের নাম রাখা হয় 'ম্যাপল'—তাদের জাতীয় গাছের নামে! তাই ভাবুন, যদি বিদেশের পেঙ্গুইনেরাও 'দেশি' নামে পরিচিত হতে পারে, তাহলে মুম্বইয়ের আমাদের ঘরের পেঙ্গুইন ছানারা কেন পাবে না মারাঠি নাম? তবে এটা নিশ্চিত, পেঙ্গুইন ছানারা এ নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। হয়ত চিড়িয়াখানার কাঁচের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে—"নাম যাই হোক, মাছটা ঠিকমতো দিলেই হল!" .....বিস্তারিত পড়ুন


মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা হোক যুক্তিসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ
উত্তরাপথঃ মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড। তবে এই স্বাধীনতা যদি দায়িত্ববোধ ও যুক্তিসঙ্গত সীমারেখার বাইরে চলে যায়, তাহলে তা জাতীয় স্বার্থ ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই এই স্বাধীনতার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকা প্রয়োজন — তবে তা অবশ্যই যুক্তিপূর্ণ, ভারসাম্যপূর্ণ এবং আইনের সীমানার মধ্যে হতে হবে। সম্প্রতি হরিয়ানার আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের গ্রেফতার নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। যদিও ঠিক কী অপরাধের জন্য তাঁকে আটক করা হয়েছে, সেই বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য ছিল অস্পষ্ট। পরে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি দিলেও, তাদের পর্যবেক্ষণ ও শর্তগুলি বেশ কঠোর ছিল। আদালতের নির্দেশে অধ্যাপক মাহমুদাবাদকে তাঁর পাসপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে, নিষেধ করা হয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বা পাহালগাম হামলা নিয়ে কোনো পোস্ট করা থেকে। পাশাপাশি, আদালত তদন্ত বন্ধ করতে অস্বীকার করেছে এবং একটি বিশেষ তদন্তকারী কমিটি গঠন করেছে, যারা অধ্যাপকের পোস্টে ব্যবহৃত ভাষার ধারা ও মনোভাব বিশ্লেষণ করবে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি বড় প্রশ্ন উঠে আসে—মত প্রকাশের স্বাধীনতা কি আজ নিরাপদ? সাংবাদিকতা, একাডেমিক চর্চা ও সামাজিক মাধ্যমে নিজস্ব মত প্রকাশের জায়গা কি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে? এই প্রশ্নগুলো আমাদের সমাজ ও বিচার ব্যবস্থাকে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। সুপ্রিম কোর্ট পূর্বেও একাধিকবার বলে এসেছে, নিম্ন আদালত এবং সরকারি তদন্তকারী সংস্থাগুলো যেন গ্রেফতারের ক্ষমতা ব্যবহার করার সময় আরও বেশী সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই সতর্কবাণী অনেকসময় যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না। অবশ্যই, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই যুক্তিতে যদি নাগরিকের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়বে। রাষ্ট্র এবং নাগরিকের মধ্যে এই ভারসাম্য রক্ষা করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকার শুধু তার একক স্বাধীনতা নয়, বরং একটি মুক্ত সমাজের নিদর্শন। এই অধিকার রক্ষার দায় যেমন ব্যক্তির, তেমনই রাষ্ট্রেরও। কোনো মতামত যদি সত্যিই ঘৃণার ভাষা ব্যবহার করে, উসকানি দেয় বা হিংসা ছড়ায়—তাহলে তা আইনের আওতায় আনা একান্ত জরুরি। .....বিস্তারিত পড়ুন


ভারত কি বিজ্ঞান ভিত্তিক চিন্তাধারায় পিছিয়ে পড়ছে?
প্রীতি গুপ্তাঃ ভারত বহু প্রাচীনকাল থেকেই তাঁর জ্ঞান ও দর্শনের এক সমৃদ্ধ ভান্ডার বহন করে চলেছে—আর্যভট্ট থেকে শুরু করে সি.ভি. রামান পর্যন্ত। এক সময় যে ভারতবর্ষ সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে , আজ সেই ভারতবর্ষই বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা এবং সমালোচনামূলক অনুসন্ধানে ক্রমাগত অবনতির দিকে। এখন প্রশ্ন আমাদের সমাজ থেকে কি বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাধারা হারিয়ে যাচ্ছে? আজকের ভারতে যুক্তিবাদ, গবেষণা ও সমালোচনামূলক চিন্তার জায়গায় দেখা দিয়েছে বিশ্বাসভিত্তিক মতবাদ, ছদ্মবিজ্ঞান আর রাজনৈতিক প্রভাব। এর প্রভাব শুধু ক্লাসরুম বা গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ নয়—এর প্রভাব পড়ছে পুরো সমাজে, আমাদের শেখার পদ্ধতিতে এবং সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতায়। ২০২৩ সালে ভারত সরকার “ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (NRF)” চালু করল—উদ্দেশ্য গবেষণাকে উৎসাহ দেওয়া। কাগজপত্রের ঝামেলা কমানো, বেশি ফান্ড দেওয়া, বিজ্ঞানীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া— আপাতদৃষ্টিতে সরকারের সমস্ত উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু আসল প্রশ্ন হল বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে—যদি রাজনীতি বা মতাদর্শ তাদের নিয়ন্ত্রণ করে—তাহলে এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে? ভারতের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখনও চাপে রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই যোগ্যতার বদলে রাজনৈতিক আনুগত্য দেখে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। স্বাধীন গবেষণার জন্য তহবিল কমছে। এমনকি পাঠ্যসূচিতেও চাপ আসছে যেন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতকে সমর্থন করা হয়।সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো—ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক বিশ্বাসকে বিজ্ঞান হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রকে “আধুনিক বিজ্ঞান” বলে প্রমাণ করার প্রবণতা বাড়ছে। এতে বিশ্বাস আর প্রমাণের মধ্যে সীমারেখা ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এই করুন অবস্থা আজ শুধু ভারতের নয় , বিশ্বের অনেক দেশেরই একই অবস্থা। আমেরিকা, হাঙ্গেরি, তুরস্ক—সব জায়গাতেই একধরনের মতাদর্শিক নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা-গবেষণার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। V-Dem ইনস্টিটিউট বলছে, ভারত এখন "সম্পূর্ণভাবে সীমিত" একাডেমিক স্বাধীনতার দেশগুলোর মধ্যে পড়ে। গণতন্ত্রের জন্য এটা এক বড় সতর্ক সংকেত। ছদ্মবিজ্ঞান (pseudoscience)—অর্থাৎ এমন কিছু বিশ্বাস বা প্রথা যেগুলো বিজ্ঞান বলে চালানো হয় কিন্তু যার কোনো প্রমাণ নেই—এটা এখন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। কোভিড-১৯ এর সময় সরকারের AYUSH মন্ত্রক অনেক বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতি (আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি ইত্যাদি) প্রচার করেছিল যেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের সন্দেহ ছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন


সম্পাদকীয়-অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য
আমরা এমন এক সময়ে বাস করি যেখানে ইন্টারনেট এক অবিচ্ছেন্দ্য যোগাযোগের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। আজ আমাদের কাছে কয়েক ঘণ্টার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া ব্ল্যাকআউটের সময় বিদ্যুৎ না থাকার চেয়েও খারাপ মনে হয়। আজ, ইন্টারনেট সংযোগের গ্যাজেটগুলি ঘরে সর্বত্র রয়েছে , শিশুরা এখন বাইরে খেলার চেয়ে স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় ব্যয় করে। বিগত কয়েক বছরে ভারতের ইন্টারনেটের ব্যবহার অনেক বেড়েছে।এখন চীনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশ ভারত। একটি বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২৪ সালে আমাদের দেশে ৮৮৬ মিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে - যা জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি! ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মতো সরকারি কর্মসূচির সাথে সস্তা স্মার্টফোন এবং ডেটা প্ল্যানগুলি আরও বেশি লোককে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান, শিশুরা এই ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন ১৮ বছরের কম বয়সী এবং ভারতে, ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ১৫ শতাংশ । গড়ে, ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা প্রতিদিন প্রায় ৫.৫ ঘন্টা শুধুমাত্র মজা করার জন্য স্ক্রিনে ব্যয় করে, হোমওয়ার্ক বা স্কুলের অনলাইন পড়াশুনার সময় গণনা না করে । ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা আরও বেশি সময় ব্যয় করে - প্রতিদিন প্রায় ৮.৫ ঘন্টা। মহামারী চলাকালীন, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্ক্রিন টাইম ব্যায় করার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়েছে, যা দেখায় যে প্রযুক্তি তাদের জীবনে কতটা গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। পারিবারিক জীবনের উপর প্রভাব একসময়, বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের "টিভি বন্ধ করতে" বলতেন। এখন, আমরা চাইলেও ইন্টারনেট বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তি পারিবারিক রুটিন বদলে দিয়েছে। বই এবং কাগজ ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। যখন ইন্টারনেটের গতি কমে যায়, তখন ঘরে ছোট থেকে বড় সবাই উদ্বিগ্ন বা হতাশ হয়ে পড়ে। আমাদের অনেকেই অনেকটা অভ্যাস বসেই অনলাইনে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। এই অভ্যাস কাটিয়ে উঠা সকলের জন্য, বিশেষ করে শিশুদের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ। দুর্ভাগ্যবশত, স্ক্রিনের এই অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাবা-মা ব্যস্ত এবং বিভ্রান্ত থাকায়, শিশুরা বাইরে খেলতে কম সময় ব্যয় করছে এবং স্ক্রিনে আটকে বেশি সময় ব্যয় করছে। .....বিস্তারিত পড়ুন


# death of nature : প্রকৃতির মৃত্যু নিয়ে বিশেষজ্ঞদের জরুরী সতর্কবার্তা
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন শাখার বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে "প্রকৃতির মৃত্যু" বা (death of nature) হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা তুলে ধরেছেন। বিজ্ঞানীরা “death of nature” এই শব্দটির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আবাসস্থল ধ্বংসের মত ভবিষ্যতে আমরা যে গভীর পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছি তা তুলে ধরেছেন। এককথায় "প্রকৃতির মৃত্যু" বলতে বিশ্বজুড়ে বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং স্থিতিশীলতার উল্লেখযোগ্য অবনতিকে বোঝায়। এই মর্মান্তিক অবস্থার পেছনে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, বন উজাড় সহ বিভিন্ন শিল্প ও কৃষির মতো মানুষের বেশ কিছু কার্যকলাপ । প্রকৃতির উপর মানুষের এই অবৈজ্ঞানিক কাজকর্মের ফল ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরণ সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক চরম ঘটনা - যেমন আকস্মিক ঘূর্ণি ঝড় , খরা - সবই একটি অস্থিতিশীল জলবায়ুর লক্ষণ যা প্রজাতি এবং বাস্তুতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আমরা বর্তমানে পৃথিবীর ইতিহাসে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির ঘটনার দিকে এগিয়ে চলেছি । মানবিক কার্যকলাপ অসংখ্য প্রজাতিকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হচ্ছে এবং গ্রহের জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষতি কেবল বন্যপ্রাণীকেই প্রভাবিত করছেনা বরং খাদ্য নিরাপত্তা এবং মানব স্বাস্থ্যকেও বিভিন্ন সমস্যার মুখে ফেলছে। দূষণ, সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্যের আকারে হোক বা জলপথে রাসায়নিক পদার্থের প্রবাহের আকারে হোক, এটি প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের উপর বিপর্যয় ডেকে আনছে। বিষাক্ত পদার্থ জলজ জীবনকে ধ্বংস করে চলেছে ,সেইসাথে এটি অনেকাংশে পানীয় জলকে দূষিত করে চলেছে। দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে এটি সমগ্র খাদ্য শৃঙ্খলকে ব্যাহত করতে পারে। সেইসাথে কৃষি, নগর উন্নয়নের ফলে বনভূমি পরিষ্কার করার কারণে বন-যা প্রায়শই আমাদের গ্রহের ফুসফুস হিসাবে পরিচিত তা উদ্বেগজনক হারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই ধ্বংসের ফলে অসংখ্য প্রজাতির আবাসস্থল হ্রাস পাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পৃথিবীতে CO2 নির্গমনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। .....বিস্তারিত পড়ুন