সত্যই কি ২৫ ডিসেম্বর যিশু খৃষ্টে জন্মদিন (Date of the birth of Jesus)? কি বলছে ইতিহাস ?

খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দী থেকে লোকেরা বিশ্বাস করে যে চার্চ অফ দ্য নেটিভিটি, বেথলেহেম এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই যিশুর জন্ম হয়েছিল। ছবি- উত্তরাপথ

বলরাম মাহাতোঃ ২৫ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় ক্রিসমাস। এদিনটিকে যিশু খৃষ্টের জন্মদিন (Date of the birth of Jesus) বলে মনে করা হয়। কিন্তু এই বিষয়ে ঐতিহাসিকরা কী বলছেন? সত্যিই কি প্রথম থেকেই ২৫ ডিসেম্বর দিনটিতে যিশু খৃষ্টের জন্মদিন (Date of the birth of Jesus) পালন হয়ে আসছে? না কি এই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে ?

বেথলেহেম, ইসরায়েল যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থান (Star of Bethlehem)। ছবি – উত্তরাপথ

বাইবেলে যিশুর জন্মতারিখের কোনও উল্লেখ না থাকলেও, প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর দিনটি যিশুর জন্মদিন (Date of the birth of Jesus) হিসেবেই পালন করা হয়। ইতিহাস বলে ২৪ ডিসেম্বর রাতে বেথেলহেমের এক গোশালায় কুমারী মা মেরীর কোলে জন্ম হয় যিশুর। বলা হয় বিশ্ব থেকে হিংসা ভেদাভেদ মুছে ফেলতেই জন্ম হয় তাঁর। এমনকী অনেকেই যিশুকে সূর্যের সন্তানও মনে করেন। তবে প্রথম কবে বড়দিন পালন করা হয়েছিল সেই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।যিশুর জন্ম ধরেই খ্রিস্টাব্দের হিসেব করা হয়। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, তার এক বছর আগে জন্মেছিলেন যিশু। তবে অনুমান, ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বড়দিন পালন করা হয়, ক্যাথলিক রাজা কনস্ট্যানটাইনের আমলে। এর কয়েক বছর পর পোপ জুলিয়াস ঘোষণা করেন ২৫ ডিসেম্বর উদযাপন হবে ক্রিসমাস হিসেবে। বড়দিন ঘিরে দ্বিমত রয়েছে জুলিয়ান ও গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জিতেও। অনেক অর্থোডক্স ও কপ্টিক চার্চ এখনো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের বদলে জুলিয়ান দিনপঞ্জি অনুসারে ৭ জানুয়ারি বড়দিন পালন করে।

প্রাচীন রোমানরা ছিলেন প্রকৃতির পূজারী। তাই অনেকেই ভাবেন এই রোমান পেগানরাও যাতে উৎসবে মেতে উঠতে পারেন সেই কথা ভেবেই ২৫ ডিসেম্বর পালন করা হয় বড়দিন। কিন্তু এই তথ্যের স্বীকৃতি দেয় না ইতিহাস। ইতিহাস বলে, খ্রিস্টানরা পেগান ধর্মকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায়নি। বরং সবসময়ই একটু দূরত্বে থাকার চেষ্টা করেছে।
আবার রোমান পঞ্জিকা অনুসারে, ২৫ মার্চ মেরী জানতে পারেন তিনি সন্তানসম্ভবা। সেইদিনই আবার ক্রুশবিদ্ধ করে যিশুকে হত্যা করা হয়। এর থেকে ৯ মাস পরই আসে ২৫ ডিসেম্বর। হিসেব মেলানো খুব একটা কঠিন নয়।
মূলত গ্রিক আর লাতিন শব্দের সমন্বয়ে তৈরি এই ক্রিসমাস শব্দটি। Cristes শব্দটি গ্রীক Christos এবং লাতিন missa থেকে এসেছে। আবার প্রাচীন গ্রীসের Christos বানানের প্রথম অক্ষকটি লাতিন অক্ষর X এর সমরূপ। আর তাই ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে এক্স অক্ষরটি খ্রিস্টের নামের শব্দ সংক্ষেপ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়।
ভারতবর্ষে প্রথম ক্রিসমাস পালন করা হয় ১৬৬৮ সালে। জব চার্নক প্রথম বড়দিন পালন শুরু করেছিলেন বলে শোনা যায়। সূর্যের উত্তরায়ণ শেষ হয়ে শুরু হয় দক্ষিণায়ন। এদিন থেকে বেলা একটু একটু করে বড় হয়। সেই সঙ্গে শীতের প্রকোপও কমতে শুরু করে। এছাড়াও বিশ্বাস এই দিনেই যাবতীয় দুঃখ থেকে মুক্তি পেয়েছিল বিশ্ব। যে কারণে সবাই একে অপরকে উপহার দিয়ে আনন্দের সঙ্গে দিনটি পালন করেন। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করা হলেও ব্যতিক্রম রাশিয়া, জর্জিয়া, মিশর, আর্মেনিয়া। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ৭ জানুয়ারি এখানে বড়দিন পালন করা হয়। প্রায় ২০০০ বছর আগে পৃথিবীর মানুষকে মুক্তি ও কল্যাণের পথ দেখিয়েছিলেন যিশু। বড়দিনে তাই খ্রিসমাস ক্যারল, মোমবাতি, উপহারে তাঁকেই স্মরণ করে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top