

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন শাখার বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে “প্রকৃতির মৃত্যু” বা (death of nature) হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা তুলে ধরেছেন। বিজ্ঞানীরা “death of nature” এই শব্দটির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আবাসস্থল ধ্বংসের মত ভবিষ্যতে আমরা যে গভীর পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছি তা তুলে ধরেছেন।
এককথায় “প্রকৃতির মৃত্যু” বলতে বিশ্বজুড়ে বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং স্থিতিশীলতার উল্লেখযোগ্য অবনতিকে বোঝায়। এই মর্মান্তিক অবস্থার পেছনে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, বন উজাড় সহ বিভিন্ন শিল্প ও কৃষির মতো মানুষের বেশ কিছু কার্যকলাপ । প্রকৃতির উপর মানুষের এই অবৈজ্ঞানিক কাজকর্মের ফল ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরণ সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক চরম ঘটনা – যেমন আকস্মিক ঘূর্ণি ঝড় , খরা – সবই একটি অস্থিতিশীল জলবায়ুর লক্ষণ যা প্রজাতি এবং বাস্তুতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আমরা বর্তমানে পৃথিবীর ইতিহাসে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির ঘটনার দিকে এগিয়ে চলেছি । মানবিক কার্যকলাপ অসংখ্য প্রজাতিকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হচ্ছে এবং গ্রহের জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষতি কেবল বন্যপ্রাণীকেই প্রভাবিত করছেনা বরং খাদ্য নিরাপত্তা এবং মানব স্বাস্থ্যকেও বিভিন্ন সমস্যার মুখে ফেলছে।
দূষণ, সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্যের আকারে হোক বা জলপথে রাসায়নিক পদার্থের প্রবাহের আকারে হোক, এটি প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের উপর বিপর্যয় ডেকে আনছে। বিষাক্ত পদার্থ জলজ জীবনকে ধ্বংস করে চলেছে ,সেইসাথে এটি অনেকাংশে পানীয় জলকে দূষিত করে চলেছে। দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে এটি সমগ্র খাদ্য শৃঙ্খলকে ব্যাহত করতে পারে।
সেইসাথে কৃষি, নগর উন্নয়নের ফলে বনভূমি পরিষ্কার করার কারণে বন-যা প্রায়শই আমাদের গ্রহের ফুসফুস হিসাবে পরিচিত তা উদ্বেগজনক হারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই ধ্বংসের ফলে অসংখ্য প্রজাতির আবাসস্থল হ্রাস পাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পৃথিবীতে CO2 নির্গমনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
## বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং সতর্কীকরণ
বেশ কিছু বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদ এই সতর্ক বার্তাটি তুলে ধরেছেন । তাদের বক্তব্য আমাদের গ্রহকে রক্ষা করার জন্য তাৎক্ষণিক এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা না করা হলে, পরিণতি ভয়াবহ হবে।এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি এখানে দেওয়া হল:
বিখ্যাত প্রাইমাটোলজিস্ট এবং সংরক্ষণবাদী ডঃ জেন গুডঅলের মতে, “জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কেবল প্রজাতির বিলুপ্তির দিকেই আমাদের নিয়ে যায় না, বরং বিশুদ্ধ বাতাস, পানীয় জল এবং খাদ্যের জন্য মানুষ যে বাস্তুতন্ত্র পরিষেবাগুলির উপর নির্ভর করে তারও পতন ঘটায়।”এটি প্রজাতির আন্তঃনির্ভরশীলতা দিকটি তুলে ধরে ,যার অর্থ হল একটি প্রজাতির পতন অন্যদের উপর তীব্র প্রভাব ফেলতে পারে।
জলবায়ু বিজ্ঞানী ডঃ ক্যাথারিন হেহো সতর্ক করে দিয়েছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যর্থতা সমস্যাগুলিকে ত্বরান্বিত করতে পারে যা বিশ্ব উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করবে। উদাহরণস্বরূপ, জলাভূমিতে অ্যানেরোবিক পচনের মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া এবং জীবাশ্ম জ্বালানি , কৃষি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো মানুষের কার্যকলাপ উভয়ই মিথেন এর মত একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে, যা জলবায়ু সংকটকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
গ্রিনপিসের নীতি পরিচালক ডঃ ডগ পার জোর দিয়ে বলেছেন যে প্রকৃতির অবনতি স্বাস্থ্য সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে। “বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়ার সাথে সাথে, রোগের প্রাদুর্ভাব এবং পরিষ্কার জলের উৎস হ্রাসের ফলে আমরা ভবিষ্যতে নিজেদেরকে আরও বড় ঝুঁকির মধ্যে দেখতে পেতে পারি।”
কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
প্রকৃতির মৃত্যু এটি খুব দূর ভবিষ্যতের সমস্যা নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যা প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজন। এই সংকট মোকাবেলায় ব্যক্তি, সম্প্রদায় এবং সরকার সকলকে একসাথে দ্রুত যে পদক্ষেপ নিতে হবে।প্রথমেই জীববৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে সেগুলিকে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে ।
সেইসাথে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসে রূপান্তর, গণপরিবহন ব্যবহার এবং বর্জ্য হ্রাস জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব হ্রাস করতে পারে।এক্ষেত্রে স্থানীয়, জাতীয় এবং বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী পরিবেশগত নীতির পক্ষে সমর্থনে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে বিপন্ন প্রজাতিগুলিকে রক্ষা করা, দূষণ হ্রাস করা এবং সেইসাথে পরিবেশ বান্ধব আইনগুলিকে সমর্থন করা।এছাড়াও জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব এবং পরিবেশ ধ্বংসের বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
আরও পড়ুন
Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে
উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন