Freedom of speech and expression: পুলিশ যদি এমনটা মনে করে, তাহলে আর গণতন্ত্র টিকবে না- সর্বোচ্চ আদালত

উত্তরাপথঃ সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা একটি কার্যকরী গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি একটি নাগরিক অধিকার যা সরকারী ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে। বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের এক অধ্যাপকের মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজ করে দেন।পুলিশকে শিক্ষিত করতে হবে। বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা (Freedom of speech and expression) কাকে বলে, তা শেখাতে হবে পুলিশকে। সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা মানেই অপরাধ নয়, এটা যে নাগরিক অধিকার পুলিশকে তা বোঝাতে হবে। পুলিশ যদি এমনটা মনে করে, তাহলে আর গণতন্ত্র টিকবে না। সংবিধান দেশের নাগরিকদের যে বাকস্বাধীনতা দিয়েছে, সেই সম্পর্কে পুলিশকে সংবেদনশীল হতে হবে।

রায়ে বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জল ভূঁইয়ার বেঞ্চ বলেন, ‘ভারতের সংবিধানের ১৯(১)(ক) অনুচ্ছেদে, বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা (Freedom of speech and expression) দেওয়া হয়েছে। কাজেই প্রত্যেক নাগরিকের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের বা সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে। তার বলার অধিকার রয়েছে যে, তিনি সরকারের কোনো সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট। সংবিধানের ১৯(১)(ক) অনুচ্ছেদে যে বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে এবং সেই অধিকারের যে যুক্তিসঙ্গত সীমা টানা হয়েছে, সেই সম্পর্কে আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে শিক্ষিত করার সময় এসেছে। আমাদের সংবিধানে যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা বলা হয়েছে, সেই সম্পর্কে তাদের সংবেদনশীল হওয়া উচিত।

 অধ্যাপক জাভেদ আহমেদ হাজাম মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের এক কলেজ শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২২ সালের ১৩ ও ১৫ আগস্ট তিনি কলেজের শিক্ষক ও অভিভাবকদের এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দুটি বার্তা পাঠান। একটিতে লেখা ছিল- ‘৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের কালোদিন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হয়েছে। আমরা খুশি নই।’ অন্য বার্তায় লেখা ছিল- ‘১৪ আগস্ট পাকিস্তানের শুভ স্বাধীনতা দিবস।’ এই দুই বার্তা পাঠানোর কারণে কোলাপুর পুলিশ অধ্যাপক হাজামের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩(ক) ধারায় এফআইআর দাখিল করে। ওই ধারা অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, জাতি, জন্মস্থান, বাসস্থান নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতার জন্ম দেওয়া এবং সম্প্রীতি নষ্ট করা অপরাধ বলে গণ্য হয়। সেই মামলার শুনানিতেই এদিন পুলিশ তথা সরকারকে তুলোধোনা করলেন দেশের শীর্ষ আদালত। বোম্বে হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল তার এফআইআর খারিজের আবেদন বাতিল করে ‘অপরাধ’ বহাল রাখায় সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন অধ্যাপক হাজাম।

আদালত জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট দিনটিকে ‘কালো দিবস’ বলা ‘বিক্ষোভ ও বেদনার বহিঃপ্রকাশ’। পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানানো একটা ভালো কাজ। এতে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা অসন্তুষ্টির অনুভূতি তৈরি হবে, তা বলা যায় না। বিচারকরা আরও বলেছেন, এই ধরনের ক্ষেত্রে দেখতে হবে, যুক্তিসঙ্গত ব্যক্তিদের ওপর এই ধরনের বিবৃতির কী প্রভাব পড়ছে। তারাই সংখ্যায় বেশি। কিছু দুর্বল মনের ব্যক্তি আছে, যারা প্রতিটি প্রতিকূল পরিস্থিতিকে বিপদ বলে মনে করেন। তাদের ওপর বিবৃতির কী প্রভাব, সেটা বিচার্য হওয়া উচিত নয়। শুধু কিছু ব্যক্তির মনে ঘৃণা বা অসৎ ইচ্ছার বিকাশ ঘটাতে পারে বলে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তা বলা যাবে না। এর জন্য শাস্তি দেওয়া যাবে না। পুলিশ ও সরকারের সমালোচনা করার পাশাপাশি এই ধরনের মন্তব্যকারীদের প্রতি একটা সতর্কতাও জারি করেছেন শীর্ষ আদালত। আদালত বলেছেন, ‘বিরোধী বা ভিন্নমতাবলম্বীদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনুমোদিত পদ্ধতির চার দেওয়ালের মধ্যে থাকতে হবে, তার বাইরে গিয়ে কিছু করা চলবে না।’ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নাগরিক অধিকারের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা ক্রমবর্ধমান সাধারণ হয়ে উঠেছে, কারণ বিশ্বজুড়ে সরকারগুলি অনেক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছে যা অনেকের বিশ্বাস এটি সরকার দ্বারা তাদের নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘন করে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top