Ganga erosion: গঙ্গা ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলার এক বিস্তীর্ণ অংশ

Ganga erosion মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান অঞ্চলে গঙ্গা ভাঙ্গন এই মুহূর্তে ছবি- উত্তরাপথ

উত্তরাপথ ও সুশান্ত সাহা, মুর্শিদাবাদ – গঙ্গা ভাঙ্গন এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান অঞ্চলের এক প্রধান সমস্যা। ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের সাথে সাথে গঙ্গা ভাঙন ব‍্যাপক আকার ধারণ করে। দীর্ঘ গঙ্গা ভাঙ্গনে (Ganga erosion) মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জ ও ফারাক্কার বিস্তির্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামসেরগঞ্জ ব্লকের এক তৃতীয়াংশ জমি এখন গঙ্গাগর্ভে। সামসেরগঞ্জ ব্লকের তিনপাকুরিয়া, বোগদাদোগর, প্রতাপগঞ্জ ও নিমতিতা অঞ্চল ভয়াবহ ভাঙনের কবলে। গঙ্গা এই অঞ্চলে বেশ কিছু বছর শান্ত থাকার পর ২০২০ থেকে এই অঞ্চলে আবার ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ধানঘড়া ভাঙনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোগদাদনগর অঞ্চলের মহেশটোলা ও প্রতাপগঞ্জ গ্রাম।এছাড়াও নিমতিতা অঞ্চলের ধানঘড়া, শিবপুর গ্রাম ভাঙনের কবলে। গঙ্গাগর্ভে আস্ত দোতলা,তিনতলা বাড়ি মিনিটের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের কবলে বাদ যায়নি মন্দির, মসজিদ ও গীর্জা। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভয়াবহ ভাঙনে ১৯৭৭ সালের মধ্যে ২৬৭৬৯ হেক্টর জমি এবং ২০০৪ সালের মধ্যে ৪২৪৭ হেক্টর জমি গঙ্গায় তলিয়ে গেছে। ২০২১ -২২ সালের রিপোর্ট অনুসারে সামসেরগঞ্জ ব্লকের ৬৫,০০০ এরও বেশী পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত।

Ganga erosion মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান অঞ্চলে গঙ্গা ভাঙ্গন এই মুহূর্তে ছবি- উত্তরাপথ

 নদীর তীরের অবিরাম ক্ষয় একটি মারাত্মক পরিবেশগত সংকট সৃষ্টি করেছে, যা শুধুমাত্র মানুষের বসতিই নয় বরং গঙ্গার জলের উপর নির্ভরশীল সূক্ষ্ম বাস্তুতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায়, গঙ্গা ভাঙনের (Ganga erosion)এই সমস্যাটি বিশেষকরে স্থানীয় জনগণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাগুলির ঝুঁকিপূর্ণ ব্লকগুলিতে ভাঙন বন্ধ করার জন্য দশ বছরের পরিকল্পনার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করেছিলেন এবং নদী তীরের কাছাকাছি বসবাসকারী লোকদের নদীর তীর থেকে দূরে তাদের বাড়ি তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।তার ঘোষিত তহবিলটি তিনি নদীতীর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সহ লোকেদের স্থানান্তরিত করা এবং তাদের জমির দলিল দেওয়ার কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন।

কিন্তু সামসেরগঞ্জ অঞ্চলের বাসীন্দাদের বক্তব্য ,তাদের বাড়িঘর গঙ্গা গর্ভে চলে যাওয়া কয়েক বছর হয়ে গেলেও তারা এখন পর্যন্ত রাজ্য বা কেন্দ্র কোনও সরকারের থেকে কোনও আর্থিক সাহায্য এখনও পর্যন্ত পাননি । সেই সাথে তাদের অভিযোগ সরকার ভাঙন রোধ করার নামে নদীর তীরে বালির বস্তা দেওয়া ছাড়া কোনও কাজই করেনি। তাই যখন ভাঙন শুরু হচ্ছে তখন পুরো বালি ভর্তি বস্তা জলে চলে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।এইভাবে চলতে থাকলে সামসেরগঞ্জ এলাকাটা একদিন পুরোটাই গঙ্গায় চলে যাবে।

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায়, গঙ্গা ভাঙনের (Ganga erosion)এই সমস্যাটি নিয়ে আমরা স্থানীয় পরিবেশবিদ সমরেশ চক্রবর্তীর সাথে কথা বলি, তার কথায় গঙ্গা একটি জটিল প্রবাহ প্যাটার্ন সহ একটি গতিশীল নদী এবং এর গতিপথের পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা।এই প্রক্রিয়াটি বন উজাড়, বালি খনন এবং উজানে বাঁধ নির্মাণ সহ বিভিন্ন কারণের দ্বারা ত্বরান্বিত হয়েছে। এই মানবিক ক্রিয়াকলাপগুলি নদীর ভারসাম্যকে ব্যাহত করেছে, যার ফলে তীর ভাঙন ত্বরান্বিত হয়েছে।

Ganga erosion মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান অঞ্চলে গঙ্গা ভাঙ্গন এই মুহূর্তে ছবি- উত্তরাপথ

এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি, ক্ষয়জনিত সমস্যাও এর সাথে রয়েছে। ঘন ঘন তীব্র বর্ষার কারণে নদীর জলের  উচ্চতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নদীর তীরকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে।নদীর তলদেশ থেকে ইচ্ছেমত বালি উত্তোলন গঙ্গা ভাঙনের আরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এই অভ্যাসটি তীরগুলিকে দুর্বল করে এবং নদীর সহ্য করার ক্ষমতাকে হ্রাস করছে।

 মুর্শিদাবাদ জেলার, অধিকাংশ জনসংখ্যার জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি। গঙ্গা ভাঙনের (Ganga erosion)ফলে মূল্যবান কৃষি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের জন্য তাদের জীবিকা নির্বাহ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে।এছাড়া নদী ভাঙনে যাদের বড়িঘড় তলিয়ে গেছে তাদের অনেকে যারা বিকল্প আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন তারা অন্যত্র চলে গেছে ,আর যারা তা পারেনি তারা খোলা আকাশের নীচে অস্থায়ী ভাবে বসবাস করছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


পোল্ট্রি শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চলেছে নতুন জিন প্রযুক্তি

উত্তরাপথ - পোল্ট্রি শিল্পে পুরুষ ছানা মারার অভ্যাস দীর্ঘকাল ধরে নৈতিক উদ্বেগের বিষয়।পরিসংখ্যানে প্রকাশ প্রতি বছর পোলট্রিগুলিতে ৭ বিলিয়ন পুরুষ ছানাকে হত্যা করা হয়।কারণ পুরুষ ছানারা ডিম দিতে পারে না সেই সাথে তারা  মাংসের জন্যও উপযুক্ত না হওয়ার কারণে,তারা অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক বলে বিবেচিত হয় । সেই কারণে ডিম ফোটার পরপরই তাদের euthanized করা হয়।এবার এই সমস্যা সমাধানে মধ্য ইস্রায়েলের Yuval Cinnamon এর গবেষণাগারে এক নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করা হয় যার দ্বারা সমস্ত ছানাই মহিলা হবে।এক্ষেত্রে পুরুষ ছানাগুলিকে সম্পূর্ণভাবে ডিম থেকে বেরোনোর আগেই তাদের বাঁধা দেওয়া হবে। এই নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার মুর্গীর পুরুষ ছানাগুলিকে প্রায়শই ম্যাসারেশন বা গ্যাসিং পদ্ধতির মাধ্যমে হত্যা করার মত অমানবিক কাজ বন্ধ করতে সাহায্য করবে। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাজা মহম্মদ ও সি সেল মিউজিয়াম

প্রিয়াঙ্কা দত্তঃ রাজা মহম্মদ, এমন একজন মানুষের নাম, যার ব্যাক্তিগত ইচ্ছার কাছে হেরে যায় সব বাধা। ইচ্ছার চেয়ে বলা ভালো নেশা। সামুদ্রিক প্রাণীদের খোল সংগ্রহের নেশা। যা তাঁকে ছোটবেলা থেকেই ছুটিয়ে নিয়ে বেরিয়েছে প্রায় তিরিশ বছর ধরে। আর সেই দীর্ঘ পথের শেষে , তিনি সম্পূর্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এশিয়ার বৃহত্তম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাক্তিগত সংগ্রহশালা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সি সেল মিউজিয়ামটি বর্তমানে চেন্নাইয়ের মহাবলিপূরম মন্দিরের সন্নিকটে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। রাজা মহম্মদ ছোট্ট বেলা থেকেই  সমুদ্র তট থেকে সংগ্রহ করতেন বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর দেহাংশ। কুড্ডালোর থেকে রামেশ্বরম এর সমুদ্রতট, সেখান থেকে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশে গিয়েছেন ব্যাক্তিগত উদ্যোগে। সংগ্রহ করেছেন অসাধারণ সব সামুদ্রিক .....বিস্তারিত পড়ুন

লোকসংস্কৃতির আলোকে মালদার শতাব্দী প্রাচীন গম্ভীরা  

মৈত্রেয়ী চৌধুরীঃ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের একটি জেলা মালদা। আমের জন্য এই জেলাটি পরিচিতি লাভ করলেও এই জেলা আর ও একটি কারণে বিখ্যাত, তা হল গম্ভীরা । মালদার নিজস্ব লোকসংস্কৃতি।গম্ভীরা শব্দটি প্রকোষ্ট, গৃহ বা মন্দির অর্থের সঙ্গে আভিধানিক মিল থাকলেও এই অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত আকাশের নিচে বা কোথাও চাঁদোয়া বা ত্রিপল  দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেন স্বয়ং দেবাদিদেব। এই উৎসবের তিনি 'নানা' নামে পরিচিত।একজন শিবের সাজে থাকেন, আর দেবাদিদেবের চেলার মতো কিছু সংখ্যক সেই নানার ভক্ত হয়ে খোল, করতাল হাতে উনার সঙ্গী হন। বাস্তব জগতের এবং পারিপার্শ্বিক যা মা সমস্যা থাকে তা  চেলার নানার কাছে অভিযোগ জানান, যেন নানা সেই অভিযোগ শুনে তার সমাধান করেন।শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই ভিড় করে জমায়েত .....বিস্তারিত পড়ুন

রেলওয়ে ইউনিয়নের নতুন সূচনা, গান গেয়ে মানসিক চাপ দূর করছেন রেলের কর্মচারীরা

উত্তরাপথঃ আপনি যদি সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করেন, তাহলে এই খবর আপনাকে স্বস্তি দেবে।কারণ ভারতীয় রেলওয়ের বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠন অল ইন্ডিয়া রেলওয়েম্যানস ফেডারেশন (এআইআরএফ) এবং নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে এক অনন্য উদ্যোগ শুরু করেছে।তারা তাদের কর্মীদের গান গেয়ে তাদের মানসিক চাপ দূর করতে পরামর্শ দিচ্ছে।    এআইআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক শিব গোপাল মিশ্র এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুকেশ মাথুরের নির্দেশে, জয়পুর এবং অন্যান্য শহরের কর্মচারীরা একটি মাঠে জড়ো হয় এবং সেখানে তারা গান গায় এবং আন্তাক্ষিরি খেলে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top