প্রিয়াঙ্কা দত্ত


কি গরম বলুন তো? একেবারে হাঁস ফাঁস অবস্থা। কালৈশাখীর তো নাম গন্ধও নেই। গোটা পশ্চিমবঙ্গে এতো দীর্ঘ দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলার ইতিহাস বোধহয় এবারই সৃষ্টি হলো। দার্জিলিং কিংবা কালিম্পং ও বাদ যায়নি। অবস্থা এতো সাঙ্ঘাতিক যে দার্জিলিংয়ের হোটেলে ফ্যানের ব্যাবস্থা করতে হচ্ছে। আবার মরু শহর গুলোতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৫-৬°কম । এ তো একেবারে উলোট পুরান। মাথা ছাতা কিছুই বুঝছি না।
কী বললেন? —বোঝার দরকার নেই!
এসি বাড়ি, এসি গাড়ি, এসি অফিস-কাছারি থাকতে কুছ পরোয়া নেই। ছাদে ঘড়া ঘড়া জল ঢেলে দেব। দুবারের জায়গায় চার বার স্নান করব। এখন তো দুয়ারে জল। যত খুশি নষ্ট করাই যায়।
ঠিকই বলেছেন। কিন্তু যখন এসবের ফল বুঝব তখন অনেক দেরী হয়ে যাবে। আসলে জলবায়ুর পরিবর্তন এভাবেই ধীরে ধীরে আমাদের জীবনযাত্রার চিত্রটাকে আমাদের অজান্তেই পাল্টে দিচ্ছে।
Climate change? সেটা ভূগোল বা বিজ্ঞানের কোন সংজ্ঞা নয় আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। নষ্ট করেছে জীবনযাত্রার ভারসাম্য।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বা আমরাই হয়ত সন্ধ্যে বেলা অক্সিজেন পার্লার এ গিয়ে বসে একটু দম নিতে পারব। বাইরে হয়ত তখন পঞ্চাশ ডিগ্রির কাছাকাছি টেম্পারেচার। হাতে ধরা ঠান্ডা জলের বোতলটা কখন যেন হট কফির মত হয়ে গেছে খেয়ালই হবে না।
যে থালায় খায় সেই থালায় ফুটো করার অভ্যাস মানুষের যাবে না যতদিন না সে পাতে খাবার পড়া বন্ধ হয়। বড় বড় দেশের রাষ্ট্র নেতারা কোটি টাকা খরচ করে IPCC এবং আরো অনেক অনেক গালভরা আয়োজন করে চলেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে কী? কারণ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার আর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার তো একসূত্রে গাঁথা। আর গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ যত বাড়বে আবহাওয়ায় খামখেয়ালীপনাও ততই বাড়বে। ভোগান্তি কিন্তু কারোরই কম হবেনা। সে আমেরিকাই হোক বা ভারত, চীন। আর আমরা আম আদমী সবজানতা হরিদাস পাল নিশ্চিন্তে দিন কাটিয়ে দিচ্ছি।
আমাদের শখের বোঝা বইতে বইতে বেচারা প্রকৃতির নাভিশ্বাস উঠছে। আমরা এখন বিজ্ঞানের হাত ধরে বড্ড আরামপ্রিয় হয়ে উঠেছি। আমাদের নিত্য নতুন পোশাক আশাক চাই, কারণে অকারণে আমরা খাবার কিনে খাই, যতনা খাই নষ্ট করি আরও বেশি। এ সবই কিন্তু গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কীভাবে? সেটা একটু বুদ্ধি খাটালেই বের করতে পারবে। আমরা এখন প্রচন্ড টেক স্যাভি । তাই মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব,পাওয়ার ব্যাংক এরকম হাজারো ইলেক্ট্রনিক গেজেট নিয়ে সর্বক্ষণ পৃথিবীতে একটা সেফটিপিন পতনের ঘটনাকেও নজরে রাখছি। কিন্তু তার ফলে যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাহিদা অত্যধিক মাত্রায় বাড়িয়ে দিচ্ছে সে খেয়াল কে রাখে? বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এই বিদুৎ উৎপাদন ও কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানী দহন ছাড়া সম্ভব নয়। আর তাও প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে।প্রকৃতি কিন্তু হিসাবে খুব পাকা। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা মাত্র ১.৫° বেড়েছে বলে যারা নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাচ্ছে তাদের ধারণা ও নেই যে বর্তমানে আমরা কী প্রকৃতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি বা যেতে চলেছি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথেও কিন্তু হু হু করে বেড়ে চলেছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা। এখন তো আবার জগৎসভায় ভারত জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে শ্রেষ্ট আসনটি দখল করে বসেছে। এতো সব কিছুর সঙ্গে আবার গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতন এঁটে বসেছে মাত্রা ছাড়া প্লাস্টিক দূষণ। জল স্থল অন্তরীক্ষে যার এখন অবাধ বিচরণ। মানুষের অজান্তেই মাইক্রো প্লাস্টিক বাসা বাঁধছে তার শরীরে। নদী সমুদ্রের জলচর প্রাণীরা বেচারা বিনা দোষে প্লাস্টিক দূষণের মারাত্মক ফল ভোগ করছে। এর সঙ্গেও কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়ন জড়িয়ে। কারণ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে মানুষ কোনোদিন আরামে থাকতে পারবে না। সুতরাং এর পরবর্তী প্রাকৃতিক প্রহার কী হয় তার জন্য প্রহর গোনা ছাড়া উপায় নেই।
চিন্তা নেই। আর বছর তিরিশের মধ্যেই চরম ফল ভোগ করার জন্য প্রস্তুত থাকাই ভালো। এরই মধ্যে যদি নেতা নেত্রীরা দয়া পরবশ হয়ে হানাহানির থেকে বনসৃজনে, পরিবেশ রক্ষায় মন দেন, আমরাও একটু কম আরামপ্রিয় হয়ে আরও অনেক অনেক গাছ লাগাই… কী জানি হয়ত আমাদের ছেলে মেয়েরা অতি কৃত্রিমতার মাঝে একটু প্রকৃতি নামক বস্তুটির ছোঁয়া পাবে। আসলে আমাদের জেনারেশন ওয়াই যতদিন না গ্রেটা থুনবর্গ বা লিসিপ্রিয়ার মতো জোড় করে ঘুমন্ত মানুষের মাথা ঝাঁকিয়ে না দেবে ততদিন লড়াইটা খুব কঠিন। তবু আশা করছি প্রকৃতি তার চরম প্রতিশোধ নেওয়ার আগে অন্তত একটি বার মানব সভ্যতার কথা ভাববে।
আরও পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন