বিজ্ঞানীরা বিশুদ্ধ বলের তৈরি একটি কণা (glueball) খুঁজে পেয়েছেন

উত্তরাপথঃ অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, কণা পদার্থবিদরা গ্লুবল (glueball)  নামে পরিচিত একটি অনন্য কণার অস্তিত্বের তত্ত্ব দিয়েছেন। গ্লুবল হল একটি তাত্ত্বিক কণা যা সম্পূর্ণরূপে গ্লুন দিয়ে তৈরি, শক্তিশালী পারমাণবিক বলের বল বাহক যা পারমাণবিক নিউক্লিয়াসে প্রোটন এবং নিউট্রনকে একত্রে ধারণ করে। ব্যাপক গবেষণা এবং পরীক্ষা সত্ত্বেও, গ্লুবলের অস্তিত্ব অধরা এবং নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিজ্ঞানীরা গ্লুবলের (glueball) অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন। চীনের বেইজিং ইলেক্ট্রন-পজিট্রন কোলাইডার II (BEPC-II) ব্যবহার করে গবেষকরা সাম্প্রতিকতম আবিষ্কারটি উপহার দিয়েছে। যেখানে তারা X(2370) নামে পরিচিত একটি নতুন কণা সনাক্ত করেছে। এই নতুন আবিষ্কৃত কণাটির ভর রয়েছে 2370 MeV/c2, যা একটি গ্লুবলের (glueball) প্রত্যাশিত ভরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সারিবদ্ধ।

একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার যা কণা পদার্থবিদ্যার প্রচলিত ধারনাকে চ্যালেঞ্জ করে, বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ বল(force) দ্বারা গঠিত একটি কণা চিহ্নিত করতে পারেন। এই আবিষ্কার, যদি নিশ্চিত করা হয়, মহাবিশ্বে মৌলিক মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের বোঝার বিপ্লব ঘটাতে পারে। সূক্ষ্ম গবেষণা এবং উন্নত পরীক্ষামূলক কৌশলগুলির মাধ্যমে, গবেষকরা প্রথাগত পদার্থ-ভিত্তিক রচনাকে অস্বীকার করে এমন একটি কণার অস্তিত্বের পরামর্শ দেওয়ার বাধ্যতামূলক প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। এই নিবন্ধটি এই আবিষ্কারের প্রভাব এবং কণা পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রের সম্ভাব্য প্রভাবগুলি নিয়ে আলোচনা করে৷

X(2370) আবিষ্কার গ্লুবলের অস্তিত্বকে সমর্থনকারী প্রমাণের ক্রমবর্ধমান দেহে যোগ করে। যদি বিজ্ঞানীরা একটি গ্লুবলের অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে পারে, X(2370) হোক বা অন্য কণা, এটি মৌলিক মিথস্ক্রিয়াগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে যা সাবঅ্যাটমিক কণার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।কণা পদার্থবিদ্যার স্ট্যান্ডার্ড মডেল, যা মহাবিশ্বের মৌলিক কণা এবং শক্তিগুলিকে বর্ণনা করে, গ্লুবলের অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণী করে। একটি গ্লুবলের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা স্ট্যান্ডার্ড মডেলের একটি উল্লেখযোগ্য বৈধতা হবে এবং কণা পদার্থবিদ্যায় গবেষণার জন্য নতুন পথ খুলে দিতে পারে।

গ্লুবল (glueball)  এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি অধ্যয়ন করা বিজ্ঞানীদের শক্তিশালী পারমাণবিক শক্তিকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে, যা প্রকৃতির চারটি মৌলিক শক্তির মধ্যে একটি। শক্তিশালী শক্তি পারমাণবিক নিউক্লিয়াসে প্রোটন এবং নিউট্রনকে একত্রে আবদ্ধ করার জন্য দায়ী, এবং এর প্রক্রিয়াগুলি বোঝা সাবঅ্যাটমিক জগতের রহস্য উদঘাটনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।X(2370) এবং অন্যান্য সম্ভাব্য গ্লুবল প্রার্থীদের আবিষ্কার কণা পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে। এই অধরা কণাগুলির অনুসন্ধান এবং অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী শক্তির গোপনীয়তা আনলক করতে এবং মহাবিশ্বের মৌলিক বিল্ডিং ব্লকগুলির একটি গভীর উপলব্ধি অর্জনের আশা করেন।

সামগ্রিকভাবে, গ্লুবলের অনুসন্ধান গবেষণার একটি আকর্ষণীয় এবং চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্র যা মহাবিশ্বকে পরিচালনা করে এমন মৌলিক শক্তি এবং কণা সম্পর্কে আমাদের বোঝার বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম। প্রযুক্তি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ক্রমাগত অগ্রগতির সাথে, বিজ্ঞানীরা গ্লুবলের(glueball) দীর্ঘস্থায়ী রহস্য এবং কণা পদার্থবিজ্ঞানের ভবিষ্যতের জন্য এর প্রভাব সমাধানের কাছাকাছি চলে যাচ্ছেন।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top