Heart Beat: বাংলার ছেলের হাতধরে হৃদস্পন্দনের ছয় দশকের পুরানো রহস্য উন্মোচন

ডঃ দেবব্রত দত্ত এবং প্রফেসর রজার ক্রেগ  [Picture Curtesy: Dr. Debabrata Dutta]

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ  আপনি যখন বিজ্ঞানের এই বিশেষ প্রবন্ধটা পড়ছেন তখন নিশ্চই আপনার মধ্যে আপনার হৃদপিন্ড সম্পর্কে জানার একটা আগ্রহ বাড়ছে। আপনার হৃদপিন্ড, হৃদস্পন্দন এই সমস্ত বিষয়গুলিকে নিয়ে হাজার প্রশ্ন আপনার মাথায় ঘুরছে। আপনি কি জানেন কিভাবে কাজ করে আমাদের হৃদপিন্ড? হৃদরোগে আক্রান্ত হলে এর মধ্যে কী পরিবর্তন হয়? হৃদপিন্ডের কাঠামো ও প্রক্রিয়া বোঝার জন্য গবেষকরা ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে চেষ্টা করছেন। আর এই অজানা রহস্য উন্মোচনের পথ দেখালেন আমাদের এই বাংলার ছেলে ড. দেবব্রত দত্ত। তার হাত ধরে এই নতুন গবেষণা বিখ্যাত Nature পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছে।

ড. দত্তের জন্ম বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ব্লকের রতনপুর গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিলো বিজ্ঞানী হওয়ার, তাই পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন থেকে স্কুল এর পড়াশুনা শেষ করে রসায়ন-এ অনার্স নিয়ে ভর্তি হয় কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে (St. Xavier’s college)। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (Calcutta University) থেকে Biochemistry তে M.Sc-র পর IIT-Kharagpur থেকে বায়োটেকনোলজিতে Ph.D. করেন।

Dr. Debabrata Dutta ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’ (NIH) [Picture Curtesy: Dr. Debabrata Dutta]

করোনা মহামারীর সময় সবাই যখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সেই সময় তিনি প্রথমে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’ (NIH) এ গবেষণা করার পর ‘ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেট্স মেডিকেল স্কুলে’ (University of Massachusetts Chan Medical School) রেডিওলজি বিভাগে ড. রজার ক্রেগ এর ল্যাবরেটরিতে যোগদান করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় ছয় দশকের ও বেশি পুরোনো রহস্য সমাধান এর অভিযান।

এবারে আসা যাক কি এই গবেষণা যা বিজ্ঞানী মহলে সাড়া ফেলেছে । আসলে আমাদের জন্মের আগে থেকেই শুরু হয় আমাদের হৃদস্পন্দন—–আর শেষ হয় যেদিন আমরা শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করি।  এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটি অবিরাম আমাদের শরীরে রক্ত পাম্প করে চলেছে। হৃদবিজ্ঞানীরা হৃদযন্ত্রের সংকোচন ও প্রসারনের  আনবিক কলাকৌশল জানার চেষ্টা করেছেন ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে। সহজ ভাবে বলতে গেলে এক্টিন ও মায়োসিন ফিলামেন্ট নামক প্রোটিনের একে অপরের ওপর দিয়ে হেটে যাওয়াই হল এর অন্যতম কারণ । এক্টিন ফিলামেন্ট এর আণবিক গঠন বিজ্ঞানীদের জানা থাকলেও, মায়োসিন ফিলামেন্ট এর আণবিক গঠন ছিল অজানা।  বিভিন্ন হৃদরোগের কারণ খুঁজে বের করতে এবং ওষুধ আবিষ্কারের প্রেক্ষাপটে এর আণবিক গঠন জানা  বিজ্ঞানীদের জন্য ছিল খুবই জরুরি একটি বিষয়। আমাদের হৃদপিণ্ডের মায়োসিন ফিলামেন্ট যে কিভাবে আণবিক স্তরে কাজ করে এবং হৃদরোগে তার গঠনের কি পরিবর্তন হয় তা হৃদবিজ্ঞানী এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের রহস্যের মধ্যে রেখেছিল,নতুন এই গবেষণার আবিষ্কার আমাদের হৃদরোগের আণবিক কারণ নির্ধারণে এবং জটিল অণু যেমন ওষুধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও কার্যকর হতে পারে।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি cryo-ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সহায়তায় মানুষের হৃদপিন্ড থেকে বের করা এই মায়োসিন ফিলামেন্ট এর গঠন আবিষ্কার করেছেন ড. দেবব্রত দত্ত ও তার সহ গবেষকরা। এটি মায়োসিন, টাইতিন এবং মায়োসিন বাইন্ডিং প্রোটিন সি এর একটি অভূতপূর্ব কমপ্লেক্স আর্কিটেকচার। ড: দেবব্রত দত্তের মতে বিশ্বের হৃদবিজ্ঞানী, পেশি বিজ্ঞানী, হৃদরোগবিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষের কৌতুহলের কারণ হবে তাদের এই গবেষণা।

ড: দেবব্রত দত্তের মতে, এই গবেষণা আমাদের হৃদরোগের আণবিক কারণ নির্ধারণে এবং ওষুধ আবিষ্কারের একটি নতুন দিক উন্মুক্ত করেছে।

Source: Cryo-EM structure of the human cardiac myosin filament. Debabrata Dutta, Vu Nguyen, Kenneth S. Campbell, Raúl Padrón & Roger Craig. Nature, 2023, 623, 853.

খবরটি শেয়ার করুণ

1 thought on “Heart Beat: বাংলার ছেলের হাতধরে হৃদস্পন্দনের ছয় দশকের পুরানো রহস্য উন্মোচন”

  1. সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar

    প্রান্তিক গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এবং এগিয়ে যাওয়ার পথে কত যে প্রতিবন্ধকতা, তা কিছুটা আন্দাজ করা যায়। মেধাবী ছাত্র দেবব্রতর গবেষণায় এই দুর্দান্ত সাফল্যের কথা জেনে খুব ভালো লাগল। দেবব্রতর মতন ছাত্র ছাত্রীদের সাফল্য ও উত্তরণের কথা জানতে পারলে ছাত্র ছাত্রীরা নি:সন্দেহে অনুপ্রেরণা পাবে জীবনে। ড. দেবব্রত দত্ত কে অনেক অভিনন্দন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top