Nuclear battery রিচার্জ ছাড়াই ৫০ বছরের জন্য আপনার স্মার্টফোনকে চার্জে সক্ষম

উত্তরাপথঃ শক্তির চাহিদা সারা বিশ্বে ক্রমাগত বাড়ছে,আর এর একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসাবে একটি চীনা স্টার্টআপ ঘোষণা করেছে যে তারা এমন একটি বৈপ্লবিক ব্যাটারি তৈরি করেছে যা রিচার্জ করার প্রয়োজন ছাড়াই ৫০ বছরের জন্য শক্তি উৎপাদন করে স্মার্টফোনকে চার্জে করতে সক্ষম। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটাকে অবাস্তব মনে হলেও এটি এখন সত্য। বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক ব্যাটারি (Nuclear battery) নামে পরিচিত একটি বৈপ্লবিক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন, যা দীর্ঘ সময় ধরে সীমাহীন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখে।

প্রথাগত ব্যাটারির যা রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য, বিপরীতে পারমাণবিক ব্যাটারি(Nuclear battery) তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের নীতিতে কাজ করে। এই ধারণাটি কারও কারও কাছে উদ্বেগজনক মনে হতে পারে, তবে এই পারমাণবিক ব্যাটারিগুলি কম শক্তির তেজস্ক্রিয় আইসোটোপগুলিতে কাজ করে, যা নিরাপদ । এটি তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার সময় নিঃসৃত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে।চীনা স্টার্টআপ কোম্পানির মতে,তাদের তৈরি পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাটারি (next-generation battery) ইতিমধ্যে পাইলট পরীক্ষার পর্যায়ে প্রবেশ করেছে এবং অবশেষে ফোন এবং ড্রোনের মতো বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের জন্য ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হবে।

পারমাণবিক ব্যাটারি Radioisotope thermoelectric generators বা (RTGs) একটি অপরিহার্য উপাদান। একটি RTG একটি তাপ উৎস নিয়ে গঠিত, সাধারণত তেজস্ক্রিয় পদার্থের একটি ছোট টুকরো, কোন ফুটো বা দূষণ প্রতিরোধ করার জন্য একটি উত্তাপযুক্ত ক্যাপসুলে আবদ্ধ থাকে। তেজস্ক্রিয় ক্ষয় দ্বারা উৎপন্ন তাপ তারপর একটি থার্মোইলেকট্রিক রূপান্তর সিস্টেম ব্যবহার করে বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দক্ষ এবং রক্ষণাবেক্ষণ বা জ্বালানী প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দূর করে ।

পারমাণবিক ব্যাটারির (Nuclear battery) প্রধান সুবিধা হল তাদের অত্যন্ত দীর্ঘ জীবনকাল। যেখানে প্রচলিত ব্যাটারিগুলি সর্বাধিক কয়েক বছর স্থায়ী হতে জেখানেসেখানে একটি পারমাণবিক ব্যাটারি কয়েক দশক ধরে নির্ভরযোগ্যভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। এই দীর্ঘায়ু উল্লেখযোগ্যভাবে ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমাতে পারে, যা ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত উদ্বেগের কারণ। সেই সাথে এর চার্জিং প্রয়োজনীয়তার অনুপস্থিতি এটিকে সর্বত্র ব্যবহারের বিশেষ করে দুর্গম স্থানে ব্যবহারের জন্য আদর্শ করে ।

এই ব্যাটারি যেহেতু পারমাণবিক শক্তির সাহায্যে চলে তাই তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের উচ্চ শক্তির ঘনত্বের কারণে, এমনকি অল্প পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থও বর্ধিত সময়ের জন্য যথেষ্ট শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। পারমাণবিক ব্যাটারির এই বৈশিষ্ট্যটি বিশেষত মহাকাশ অ্যাপ্লিকেশনগুলির ক্ষেত্রে মূল্যবান হিসাবে বিবেচিত হতে পারে কারণ সেখানে শক্তির প্রাপ্যতা সীমিত , যেমন স্যাটেলাইট বা ডিপ-স্পেস প্রোব। পারমাণবিক ব্যাটারি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা বা অন্বেষণকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হতে পারে।  

সম্ভবত পারমাণবিক ব্যাটারির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটি দীর্ঘ সময় ধরে চলে। জীবাশ্ম জ্বালানি বা  পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসগুলি যেখানে  সূর্যের আলো বা বায়ুর মত বাহ্যিক কারণের উপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য,সেখানে পারমাণবিক ব্যাটারিগুলি স্বয়ংসম্পূর্ণ শক্তি জেনারেটর। তারা কোন ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে না, যা তাদের একটি পরিবেশ বান্ধব বিকল্প হিসাবে তৈরি করে।এছাড়াও, পারমাণবিক ব্যাটারিতে ব্যবহৃত রেডিওআইসোটোপগুলি আগামী কয়েক দশক ধরে একটি স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে। চীনা স্টার্টআপটির পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবী করা হয়েছে দীর্ঘ জীবনের কারণে তাদের তৈরি ব্যাটারিগুলি মহাকাশ, এআই সরঞ্জাম, চিকিৎসা সরঞ্জাম, মাইক্রোপ্রসেসর, উন্নত সেন্সর, ছোট ড্রোন এবং মাইক্রো-রোবটের মতো একাধিক ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের চাহিদা মেটাতে পারবে।

 পারমাণবিক ব্যাটারির শক্তি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে ,তবে সতর্কতার সাথে এর বাস্তবায়নের প্রয়োজন আছে।তবে এই শক্তিশালী প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকি অপরিহার্য।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


টাইফুন ইউন-ইউং এর আজ জাপানের টোকাই অঞ্চলে প্রত্যাশিত ল্যান্ডফল

উত্তরাপথঃ জাপানের জনগণ টাইফুন নং ১৩ যা ইউন-ইউং নামে পরিচিত যা শুক্রবার বিকেলের দিকে টোকাই অঞ্চলে ল্যান্ডফল করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে নাগোয়া অবস্থিত। জাপান ইতিমধ্যে এর আগমনের জন্য নিজেদের আগাম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রসঙ্গত গত কয়েকদিন ধরে ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছিল টাইফুন ১৩। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার টোকাই এবং কান্টো অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করছে, যা পরিবহন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।আবহাওয়া দপ্তরের মতে শুক্রবার সকাল ৬ টা নাগাদ ২৪ঘন্টা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ইজু দ্বীপপুঞ্জে ২৫০ মিলিমিটার, টোকাই অঞ্চলে ১৫০ মিলিমিটার এবং কান্টো-কোশিন অঞ্চলে ১০০ মিলিমিটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) .....বিস্তারিত পড়ুন

জলবায়ু পরিবর্তন আমাজনের রেইনফরেস্টের কিছু অংশকে সাভানাতে রূপান্তরিত করতে পারে

উত্তরাপথঃ আমাজন রেইনফরেস্ট, যাকে "পৃথিবীর ফুসফুস" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুত্তন্ত্র যা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।সম্প্রতি প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেসের বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একটি নতুন তত্তের বর্ণনা করা হয়েছে ,সেখানে বলা হয়েছে কীভাবে বর্ষার মৌসুমে বিকল্প বন্যা এবং শুষ্ক মৌসুমে খরা, যাকে ডবল-স্ট্রেস বলা হয়, বন প্রতিষ্ঠাকে সীমিত করছে।উদ্বেগজনক গবেষণাতে আরও বলা হচ্ছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন-প্ররোচিত খরা আমাজন রেইনফরেস্টের কিছু অংশকে সাভানাতে রূপান্তরিত করতে পারে, যা জীববৈচিত্র্য এবং সামগ্রিকভাবে গ্রহের জন্য সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি আনতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) স্পেন সফরে

উত্তরাপথঃ  একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পেনে রয়েছেন। জানা যাচ্ছে, স্পেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বৈঠক হবে ফুটবল নিয়ে। ১৪ সেপ্টেম্বর, মাদ্রিদে লা লিগার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদলের বৈঠক। বাংলা ফুটবলের উন্নতির স্বার্থে সরকারের সঙ্গে কোনও বিশেষ চুক্তি হতে পারে লা লিগার । এই বৈঠকে তাঁর সঙ্গে থাকবেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান স্পোর্টিংয়ের ক্লাবকর্তারাও। এছাড়াও থাকার কথা  সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরও।যদিও তিনি এই মুহূর্তে লন্ডনে রয়েছেন লন্ডনে,সেখান থেকেই ১৪ তারিখ সরাসরি মাদ্রিদ পৌঁছবেন বলে খবর।এরপর স্পেনে মমতার লক্ষ্য রাজ্যের জন্য বিনিয়োগ টানা। রাজ্যে বিদেশি লগ্নি বাড়াতে তিনি সঙ্গে বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে স্পেনে গিয়েছেন।প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ময়দানের তিন ফুটবল ক্লাবের কর্তা, বই প্রকাশকদের একটি দল। .....বিস্তারিত পড়ুন

ধানের সাধ ভক্ষণ : জিহুড়

ড.  নিমাইকৃষ্ণ মাহাত: আশ্বিন সংক্রান্তিতে কৃষক সমাজের মধ্যে জিহুড় পার্বণ পালিত হয়। কৃষক সাধারণের মধ্যে জিহুড় পার্বণের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। জিহুড় অর্থাৎ আশ্বিন সংক্রান্তির সময় বহাল জমিতে লাগানো ধান বা বড়ান ধানে থোড় আসতে শুরু করে। সুতরাং ধান গাছ গর্ভাবস্থায় থাকে। মানুষের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের আচার-সংস্কার পালন করা হয়। এই সংস্কারগুলির অন্যতম হলো " ন' মাসি " অর্থাৎ গর্ভাবস্থার নবম মাসে যে আচার -অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এর কিছুদিন পরেই সন্তানজন্মগ্রহণ করে। মানব- সমাজের গর্ভাবস্থাজনিত এই ধরনের আচার সংস্কারের সঙ্গে ধান গাছের গর্ভাবস্থার কারণে পালনীয় অনুষ্ঠান জিহুড়ের সাদৃশ্য থাকে দেখা যায়। সেই জন্য অনেকে জিহুড় অনুষ্ঠানকে ধান গাছের 'সাধভক্ষণ'  বলে থাকেন। জিহুড়-এ ধান গাছ .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top