বলরাম মাহাতো
ছবি সৌজন্য: বলরাম মাহাতো
গরম পড়তে না পড়তেই রাঙ্গা পলাশের দেশে দেখা দেয় জলের জন্য হাহাকার । শুকিয়ে যায় পুকুর, ডোবা, কুয়ো এমনকি ড্যামও । চারিদিকে জলের জন্য তীব্র কষ্ট, পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম তো বটেই এমনকি শহরেও জলের অভাবে মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হয়। গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে এপ্রিল মে মাসে এখানে জল সংকটের যে চিত্র দেখা যায় তা উদ্বেগ জনক ।আমরা সবাই ভাবি পুরুলিয়ায় হইত বৃষ্টির পরিমাণ কম তাই জল সংকট দেখা দেয় কিন্তু তা নয় । আমরা জানি পুরুলিয়ার আবহাওয়া খুব শুষ্ক। শীতের সময় শৈত্য প্রবাহ ও গ্রীষ্মের সময় লু । উষ্ণতার তারতম্য খুব বেশি শীতের সময় তাপমাত্রা ৫-৬ ডিগ্রিতে নেমে যায় আবার গ্রীষ্মের সময় পারদ ৫০ ডিগ্রি পৌঁছে যায় ফলে মাটির আর্দ্রতা অনেক কমে যায় বাতাসে শুস্কতা বেড়ে যায়। জলাশই গুলি খুব সহজেই শুকিয়ে যায়। পুরুলিয়ায় বাষ্পীভবন-এর হারও খুব বেশি এর ফলে জলের সমস্যা বাড়ে।
পুরুলিয়ার একটা বড় অংশ পাহাড়ি অঞ্চল যা ছোটনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত এখানে অযোধ্যা পাহাড় (৬৭৭ মিটার) পঞ্চকোট পাহাড় ও জয়চন্ডী পাহাড় রয়েছে। পুরুলিয়া জেলার বেশিরভাগ স্থান ঢালু এই পশ্চিমের পাহাড়ি অঞ্চল ঢালু হতে হতে ক্রমেই তা দক্ষিণ-পূর্ব সমতলের দিকে গেছে। কোথাও শ্লোপ ১০ থেকে ২০ মিটার/কিমি আবার কোথাও ২০ থেকে ৮০ মিটার/কিমি ,ফলে জল সহজে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়।এই স্লোপ জলাভাবের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
দক্ষিণবঙ্গের মানুষেরা সাধারণত মাটির নিচের জল বেশি ব্যবহার করে জল অপচয় করছে ফলে জলস্তর দ্রুত হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। আর উল্টোদিকে পুরুলিয়ায় নেটগ্রাউন্ড ওয়াটারের মাত্র ১৪% জল ব্যবহৃত হয়। এর কারণ পুরুলিয়া এ রাজ্যের তথা ভারতের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম একটি জেলা। এখানে নিম্নবিত্ত দিন এনে দিন খায় এরকম পরিবারের বসবাস বেশি, আদিবাসী জনজাতির পরিমাণও বেশি তাদের পক্ষে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত বা পাড়াস্তরে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না কারণ এই পদ্ধতি প্রচুর ব্যয় বহুল তাই এখানকার বেশিরভাগ মানুষ জলশয় ও ড্যামের উপর নির্ভরশীল। পুরুলিয়া,আড়শা,মানবাজার,রঘুনাথপুর,বাগমুন্ডি ও বলরামপুরের মত জায়গায় ground water র ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। পুরুলিয়ার মানুষের মূল পেশা কৃষিকাজ কিন্তু এখানে সেই অর্থে বড় কোন নদীও নেই বৃষ্টির সময় জলাধার নদী ভরে থাকে ঠিকই কিন্তু বর্ষা পেরোলেই চাষের জন্য পুরোপুরি ভাবে জলাধারের উপর নির্ভর করতে হয়। এছাড়াও আগে বেশিরভাগ জায়গায় একবারই চাষ হতো কিন্তু বর্তমানে বহু ফসলী, জমির পরিমান বাড়ছে ফলে জলের ব্যবহারের পরিমাণও বাড়ছে উপরের আলোচনা থেকে দেখতেই পেলাম জনসংকটের বেশিরভাগ কারণ প্রাকৃতিক হলেও মানুষেরও কিছু করনীয় আছে সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে ভারতের অন্যান্য যেসব জায়গায় জল সংকট বেশি তার বেশিরভাগ অঞ্চলেই বৃষ্টিপাত কম হয় কিন্তু এক্ষেত্রে পুরুলিয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথেষ্ট। Rain water harvesting বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এর কথা আমরা অনেকেই শু্নেছি ।পুরুলিয়াতে এটাকেই জীবনের অংশ করে নিতে হবে, এক্ষেত্রে পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই জাতীয় জল সংরক্ষণ প্রক্লপ আরও বাড়াতে হবে।সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন একটি প্রকল্প চালু করেছে তাতে আগামী দু বছরের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু এই বিভিন্ন রকম প্রকল্প গ্রহণের পরেও কবে পুরুলিয়া এই জল সংকটের হাত থেকে হয় রক্ষা রেহাই পাবে তা আজ প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে?
আরও পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে
উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন