Snake Robot : এবার মহাকাশে সাপ রোবট পাঠাবে NASA

উত্তরাপথ

ছবি: NASA-NASA Ames Research Center Public Affairs Office

মহাকাশ অনুসন্ধানের সীমানা আরও বিস্তৃত করতে এবং বহির্জাগতিক পরিবেশের দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে NASA ক্রমাগত উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সন্ধান করেছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল Snake robot বা সাপের মতো রোবট তৈরি করা যা মহাকাশে নেমে যাবতীয় অনুসন্ধানের কাজগুলি করবে এবং সেই সাথে মহাকাশে বসবাসের ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করবে। এই যুগান্তকারী সৃষ্টিতে মহাকাশ অভিযানে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা দূরবর্তী এবং প্রতিকূল পরিবেশে গবেষণার কাজ নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে।  

মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য স্নেক (Snake robot) রোবটের ধারণাটি প্রাথমিকভাবে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্তা ক্রুজের সহযোগিতায় নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (জেপিএল) এ তৈরি করা হয়েছিল। রোবটের নকশাটি সাপের নমনীয়তা এবং চালচলন দ্বারা অনুপ্রাণিত, যার ফলে এটি খুব সহজেই জটিল ভূখণ্ড অতিক্রম করতে সক্ষম হবে যা ঐতিহ্যবাহী চাকাযুক্ত বা পায়ের রোবটগুলির অতিক্রম করা কষ্টকর হতে পারে।

সাপের আকৃতির এই রোবটের অনন্য নকশা এটিকে তার জৈবিক প্রতিরূপের গতিবিধির অনুকরণে তৈরী করা হচ্ছে। সাপ রোবটটি একাধিক সংযুক্ত অংশ নিয়ে গঠিত,এবং প্রতিটি অংশ মোটর এবং সেন্সর দিয়ে সজ্জিত। এই বিভাগগুলি রোবটকে স্লাইদার, ক্রল এবং বস্তুর চারপাশে মোড়ানোর ক্ষমতা প্রদান করে, এটি চ্যালেঞ্জিং এবং সীমাবদ্ধ স্থানগুলিতেও রোবটটিকে অসাধারণ অভিযোজনযোগ্যতা প্রদান করবে।

NASA-এর স্নেক রোবট মহাকাশ অন্বেষণ কাজের বিস্তৃত পরিসরের জন্য অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। এর নমনীয়তা এবং নিপুন গঠনশৈলী এটিকে আঁটসাঁট জায়গা, যেমন সরু ফাটল, গুহা বা ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে চলাচল করার জন্য আদর্শ করে তোলে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী রোবটগুলি প্রবেশ করে কাজ করতে অক্ষম হবে। অতিরিক্তভাবে, স্নেক রোবটের কুণ্ডলী করার এবং বস্তুর চারপাশে নিজেকে মোড়ানোর ক্ষমতার জন্য যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে  কাজ পরিচালনার জন্য এটি একটি মূল্যবান সম্পদ হতে পারে ।  

আপাত দৃষ্টিতে স্নেক রোবটকে মহাকাশ গবেষণাতে দুর্দান্ত মনে হলেও ,মহাকাশ মিশনে এটিকে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করার আগে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। জটিল এবং অপ্রত্যাশিত পরিবেশে কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য রোবটের স্বায়ত্তশাসন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বিকাশের অন্যতম প্রধান বাঁধা।যদিও বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করতে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে, পরিবর্তনশীল অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং স্বায়ত্তশাসিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রোবটের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন।

NASA সক্রিয়ভাবে সাপ রোবট প্রযুক্তির আরও বিকাশ ও পরিমার্জন করার জন্য বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার  সহযোগিতা কামনা করেছে। রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের বিশেষজ্ঞদের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, NASA রোবটের সম্ভাবনাকে সর্বাধিক করার জন্য এবং মহাকাশ মিশনের অনন্য চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য সম্মিলিত জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

নাসার(Snake) স্নেক রোবট মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য রোবোটিক প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে। চ্যালেঞ্জিং ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে চালচল করার এবং জটিল কাজগুলি সম্পাদন করার ক্ষমতা ভবিষ্যতের মিশনের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে, যার ফলে বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা  মহাকাশের দুর্গম অঞ্চলগুলি অন্বেষণ করতে সক্ষম করবে৷ গবেষণা এবং বিকাশ অব্যাহত থাকায়, সাপ রোবটের ক্ষমতাগুলি প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে এবং মানবতাকে মহাজাগতিকতায় আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


পোল্ট্রি শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চলেছে নতুন জিন প্রযুক্তি

উত্তরাপথ - পোল্ট্রি শিল্পে পুরুষ ছানা মারার অভ্যাস দীর্ঘকাল ধরে নৈতিক উদ্বেগের বিষয়।পরিসংখ্যানে প্রকাশ প্রতি বছর পোলট্রিগুলিতে ৭ বিলিয়ন পুরুষ ছানাকে হত্যা করা হয়।কারণ পুরুষ ছানারা ডিম দিতে পারে না সেই সাথে তারা  মাংসের জন্যও উপযুক্ত না হওয়ার কারণে,তারা অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক বলে বিবেচিত হয় । সেই কারণে ডিম ফোটার পরপরই তাদের euthanized করা হয়।এবার এই সমস্যা সমাধানে মধ্য ইস্রায়েলের Yuval Cinnamon এর গবেষণাগারে এক নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করা হয় যার দ্বারা সমস্ত ছানাই মহিলা হবে।এক্ষেত্রে পুরুষ ছানাগুলিকে সম্পূর্ণভাবে ডিম থেকে বেরোনোর আগেই তাদের বাঁধা দেওয়া হবে। এই নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার মুর্গীর পুরুষ ছানাগুলিকে প্রায়শই ম্যাসারেশন বা গ্যাসিং পদ্ধতির মাধ্যমে হত্যা করার মত অমানবিক কাজ বন্ধ করতে সাহায্য করবে। .....বিস্তারিত পড়ুন

লোকসংস্কৃতির আলোকে মালদার শতাব্দী প্রাচীন গম্ভীরা  

মৈত্রেয়ী চৌধুরীঃ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের একটি জেলা মালদা। আমের জন্য এই জেলাটি পরিচিতি লাভ করলেও এই জেলা আর ও একটি কারণে বিখ্যাত, তা হল গম্ভীরা । মালদার নিজস্ব লোকসংস্কৃতি।গম্ভীরা শব্দটি প্রকোষ্ট, গৃহ বা মন্দির অর্থের সঙ্গে আভিধানিক মিল থাকলেও এই অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত আকাশের নিচে বা কোথাও চাঁদোয়া বা ত্রিপল  দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেন স্বয়ং দেবাদিদেব। এই উৎসবের তিনি 'নানা' নামে পরিচিত।একজন শিবের সাজে থাকেন, আর দেবাদিদেবের চেলার মতো কিছু সংখ্যক সেই নানার ভক্ত হয়ে খোল, করতাল হাতে উনার সঙ্গী হন। বাস্তব জগতের এবং পারিপার্শ্বিক যা মা সমস্যা থাকে তা  চেলার নানার কাছে অভিযোগ জানান, যেন নানা সেই অভিযোগ শুনে তার সমাধান করেন।শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই ভিড় করে জমায়েত .....বিস্তারিত পড়ুন

এবার চাঁদের পথে জাপান, অবতরণে সময় লাগতে পারে ছয় মাস

উত্তরাপথঃ এ যেন হঠাৎ করে শুরু হওয়া বিভিন্ন দেশগুলির মধ্যে চাঁদে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।ভারতের পর এবার চাঁদের পথে পারি দিল জাপান । চাঁদের জন্য SLIM নামে  তাদের নিজস্ব মুন ল্যান্ডার উৎক্ষেপণ করেছে জাপান।  মহাকাশযানটি ৭ সেপ্টেম্বর জাপানের স্থানীয় সময় সকাল ৮.৪২মিনিটে উৎক্ষেপণ করা হয়।  এটিতে জাপানের নিজস্ব  H2A রকেট ব্যবহার করা হয়েছে। এই মহাকাশ যানটি  তানেগাশিমা স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।প্রসঙ্গত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জাপান এটিকে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ১০ দিন দেরিতে উৎক্ষেপণ করল।মহাকাশযান SLIM ছাড়াও একটি মহাকাশ টেলিস্কোপও পাঠিয়েছে জাপান।উভয় মহাকাশযান এক ঘন্টার মধ্যে তাদের নির্দিষ্ট পথে পৌঁছেছে।  সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে 'স্মার্ট ল্যান্ডার ফর ইনভেস্টিগেটিং মুন' (SLIM) প্রায় চার মাস পর চাঁদে অবতরণ করবে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে বাংলাদেশে ইলিশের দাম, প্রভাব রাজ্যেও

উত্তরাপথঃ বাংলাদেশ ও ইলিশ এই দুটি নাম একে অপরের পরিপূরক মনে হলেও বাস্তব কিন্তু বলছে অন্য কথা। সূত্র মাধ্যমে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে  প্রকৃতির অপার দান হলেও শিকার থেকে শুরু করে বাজারজাত হওয়া পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধির কারণেই বাড়ছে বাংলাদেশে ইলিশের দাম। এর সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভের অঙ্ক যোগ হয়ে তা চলে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।পরিস্থিতি এমন যে গরিব তো দূর থাক মধ্যবিত্তের পাতেও এখন আর জুটছে না ইলিশ। বুধবার বরিশালের পাইকারি বাজারে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয় ৬০ হাজার টাকা মন দরে। ৪২ কেজিতে মন হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে প্রায় সাড়ে ১৪শ টাকা। খুচরা বাজারে গিয়ে যা বিক্রি হয় ১৬ থেকে ১৮শ টাকা। যে কারণে জাতীয় এই মাছ এখন শুধু বিত্তশালীদের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top