২০২৪ সি বি এস সি উচ্চ মাধ্যমিকপরীক্ষারফলাফলে মেয়েদের বড় চমক

উত্তরাপথঃ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিক বোর্ড (সি বি এস সি)পরীক্ষার ফলাফল বলছে এক নতুন কথা। এবার মেয়েরা প্রমাণ করে দিয়েছে, বিজ্ঞান আর কেবল ‘ছেলেদের বিষয়’ নয়। শিক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ২৭.২৪ লক্ষ ছাত্রী বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করেছে। গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটল। এই পরিবর্তন শুধু একখানা সংখ্যাই নয়, এটি এক বিশাল সামাজিক বদলের ইঙ্গিত। ২০১০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করা ছাত্রীর সংখ্যা ছিল মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ৩৮.২ শতাংশ। ২০২৩ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫.৫ শতাংশে। আর ২০২৪ সালে মেয়েরা যেন সেই ধারাকেই ছাপিয়ে গেল—একেবারে চূড়ায় উঠে এল। বিজ্ঞান বিভাগে মেয়েদের অগ্রগতি: রাজ্যভিত্তিক নজর তামিলনাড়ুতে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে মেয়েদের পাশের হার ৯৬.৩৫ শতাংশ—অসাধারণ। ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং ওড়িশার মতো রাজ্যেও ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারী প্রকল্প—যেমন ‘বিজ্ঞান জ্যোতি স্কলারশিপ স্কিম’, যা আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মেয়েদের বিজ্ঞান শিক্ষায় উৎসাহ জোগায়। এছাড়া CBSE-র ‘উদান প্রকল্প’ মেয়েদের ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য মেন্টরিং এবং আর্থিক সহায়তা দেয়। উচ্চশিক্ষাতেও মেয়েরা এগিয়ে ভারত সরকারের "All India Survey on Higher Education 2021-22" অনুসারে, বিজ্ঞান বিভাগে এখন উচ্চশিক্ষার (UG, PG, MPhil, PhD) মোট ৫২.১ শতাংশ ছাত্রছাত্রীই মহিলা। শুধু স্নাতক স্তরে ৫১ শতাংশের বেশি ছাত্রী বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে। মেডিসিনে ছেলেমেয়ে সমান সংখ্যায় আছে, আর ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজিতেও মেয়েদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পরিবর্তনের বাস্তবতা এই সংখ্যাগুলি আশা জাগায়, কিন্তু বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো অস্বীকার করা যায় না।বিশেষ করে গ্রামীণ ও দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া মেয়েরা এখনো নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে— এখনও আমাদের গ্রামের স্কুলগুলিতে ল্যাব বা সরঞ্জামের অভাব, একান্ত পড়াশোনার জায়গার অভাব, এমনকি স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অধিকারও অনিশ্চিত। এই সাফল্য যেন অর্ধেক পথেই থেমে না যায়, তার জন্য চাই— আরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ নিরাপদ আবাসন ও পড়াশোনার পরিবেশ অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দ্বারা মেন্টরিং মেয়েদের জন্য বিশেষ কর্মসংস্থানের সুযোগ বিজ্ঞান নিয়ে মেয়েদের এই এগিয়ে আসা নিঃসন্দেহে একটি বিপ্লবের সূচনা। একটি দেশের অর্ধেক জনগণ যদি বিজ্ঞান শিক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তবে সেই দেশের জ্ঞান-অর্থনীতির ভবিষ্যৎ যে উজ্জ্বল হবে, তা বলাই বাহুল্য। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহানুভূতির পাঠ: বাংলার স্কুলগুলিকে রাস্তার কুকুরদের খাওয়ানো ও টিকা দেওয়ার নির্দেশ

উত্তরাপথঃ বাংলার স্কুলগুলি এখন শুধু ছাত্রছাত্রীদের জন্য পুষ্টিকর খাবারই নয়, স্কুলের আশপাশের রাস্তার কুকুরদের পেটও ভরাবে। রাজ্য সরকার সমস্ত সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলকে নির্দেশ দিয়েছে, একজন কর্মী নিয়োগ করে দুপুরে এই প্রাণীদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে এবং তাদের টিকা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে। এই উদ্যোগ ছাত্রছাত্রীদের মনে সহানুভূতির বীজ বপন করবে এবং প্রাণীদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার শিক্ষা দেবে, এমনটাই বিশ্বাস রাজ্য সরকারের। গত সপ্তাহে সমগ্র শিক্ষা মিশনের জারি করা এই নির্দেশে বলা হয়েছে, কুকুরদের নির্বীজন ও টিকাকরণের জন্য জেলা স্তরে পশু সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় স্থাপন করতে হবে। এই উদ্যোগের পিছনে প্রেরণা এসেছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধীর এপ্রিল মাসে বাংলা সরকারকে লেখা একটি চিঠি থেকে, যেখানে তিনি স্কুলে মানুষ ও রাস্তার কুকুরদের মধ্যে বন্ধন গড়ে তোলার উদ্যোগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্কুল শিক্ষা দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “এই ধরনের অভ্যাস ছাত্রছাত্রীদের রাস্তার প্রাণীদের প্রতি যত্নশীল হতে শেখায়। অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা কুকুরদের উত্ত্যক্ত করে, ফলে শিশু বা প্রাণীদের আঘাত লাগতে পারে। যখন তারা শিক্ষক ও স্কুলের কর্মীদের রাস্তার কুকুরদের যত্ন নিতে দেখবে, তখন তাদের মনে প্রাণীদের প্রতি সংবেদনশীলতা জাগবে। এই অভ্যাস তাদের আরও ভালো মানুষ হতে সাহায্য করবে।” অনেক স্কুল প্রধান এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই এই দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ব্যাপারে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলের বাইরে রাস্তার কুকুর ও বিড়ালদের যত্ন নিতে শুরু করেছেন। তাদের খাওয়ানোর পাশাপাশি, গরমের সময় তাদের জন্য জলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।সেই সাথে স্কুলের দেওয়ালে প্রাণীদের প্রতি সদয় হওয়ার বার্তা লিখে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিভিন্ন স্কুল। তবে, কিছু স্কুল প্রধান সীমিত সম্পদের কারণে প্রতিদিন কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য একজন কর্মী নিয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উত্তর কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “সম্প্রতি কুকুরের কামড় নিয়ে সচেতনতার নির্দেশ জারি হয়েছিল। এখন এই নির্দেশ ছাত্রছাত্রীদের রাস্তার কুকুরের সঙ্গে বন্ধন গড়তে বলছে। সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব হলেও, সীমিত সময়ে এটি বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং। সরকার যদি এই ধরনের উদ্যোগ চালাতে চায়, তবে একাধিক কর্মশালা ও কর্মসূচির আয়োজন করা উচিত।” .....বিস্তারিত পড়ুন

"অ্যাক্সিওম-৪" ও শুভাংশু শুক্লার মহাকাশযাত্রা: ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির এক নতুন অধ্যায়

উত্তরাপথঃ "এই যাত্রা কেবল আমার নয়, এটি ভারতের মানব মহাকাশ অভিযানের সূচনা"—এই কথাগুলো অ্যাক্সিওম-৪ (Axiom-4) মিশনের লঞ্চের ঠিক ১০ মিনিটের মধ্যেই বলেছিলেন ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। হয়তো তাঁর বক্তব্যটি রাকেশ শর্মার ১৯৮৪ সালের ঐতিহাসিক উক্তির মতো চিরস্মরণীয় নয়—যেখানে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রশ্নে শর্মা বলেছিলেন, “সারে জাহাঁ সে অচ্ছা”—তবুও, এই নতুন ঘোষণার মাধ্যমে এক নতুন ভারতীয় মহাকাশ যুগের বার্তা নিয়ে এসেছে। শুক্লার আইএসএস (International Space Station)-এ যাত্রা নিছক এক ব্যক্তিগত অভিযান নয়, এটি সেই যাত্রার শুরু, যা ভারতকে মানব মহাকাশ অভিযানের শীর্ষে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। এখন পর্যন্ত ISRO (Indian Space Research Organisation) বহু কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের সাফল্য অর্জন করলেও, মানব মহাকাশ অভিযান ছিল এক নতুন চ্যালেঞ্জ। গগনযান প্রকল্পের (Gaganyaan Mission) মাধ্যমে ISRO ২০২২ সালের মধ্যে নিজস্ব ভারতীয় মহাকাশচারীদের পাঠানোর লক্ষ্য স্থির করেছিল। যদিও তা বিলম্বিত হয়েছে, এই প্রকল্প ভারতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অভূতপূর্ব গতি দিয়েছে। আজকের যুগে মহাকাশ অভিযানের গুরুত্ব কেবল বৈজ্ঞানিক কৌতূহলে সীমাবদ্ধ নয়—এটি একটি কৌশলগত দক্ষতা। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে শুরু করে চাঁদ, এমনকি মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত এখন বানিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। যে দেশগুলি নিজস্ব মানব মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করতে পারে, তারা ভবিষ্যতের মহাকাশ দৌড়ে নেতৃত্ব দিতে পারবে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে স্পেস স্টেশন স্থাপন, চাঁদে পা রাখা, ও মহাকাশ প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণ। ভারতের লক্ষ্য ২০৪০ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানো এবং নিজস্ব স্পেস স্টেশন স্থাপন করা।  অ্যাক্সিওম-৪ মিশনে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ যদিও শুভাশ শুক্লা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাক্সিওম স্পেসের সহায়তায় মহাকাশে যাচ্ছেন, ISRO এই মিশনে একটি সমান অংশীদার। পুরো পরিকল্পনা ও কারিগরি পর্যবেক্ষণে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অবদান চোখে পড়ার মতো। ISRO চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন-সহ একটি বিশেষ দল আমেরিকায় থেকেই প্রযুক্তিগত ত্রুটি নিরসন এবং উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

এক বাটি পাস্তা আপনাকে হাসি-খুশি করে তুলতে পারে – বিজ্ঞানও তাই বলছে!

উত্তরাপথঃ ইতালির পিৎজার পরেই যদি কোনো খাবার বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে, তবে সেটা নিশ্চয়ই পাস্তা! এমন কোনো রান্নাঘর পাওয়া মুশকিল, যেখানে পাস্তার ঝাঁঝালো, চিজে ঢাকা সসের গন্ধ ভেসে বেড়ায় না। কিন্তু কেন এত জনপ্রিয় এই পাস্তা? স্বাস্থ্যকর বলে? না, রান্না করা সহজ বলে? আমাদের মতে, এর সুস্বাদু স্বাদ আর সেই আঠালো, চিজি সসের কম্বোই আমাদের বারবার পাস্তার প্রেমে ফেলে। বলতে গেলে, এক বাটি পাস্তা যেন মুখে হাসি আর মনে খুশির ঝড় তোলে! আর এখন তো বিজ্ঞানও এই কথায় সিলমোহর দিয়েছে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! ইতালির ফ্রি ইউনিভার্সিটি অফ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস IULM-এর "বিহেভিয়রাল অ্যান্ড ব্রেন ল্যাব"-এর একদল গবেষক বলছেন, "পাস্তা খেলে মানুষের মেজাজ ফুরফুরে হয় আর হাসিখুশি ভাব বাড়ে।" চলুন, ব্যাপারটা একটু খোলসা করে বলি। পাস্তা আর খুশি: এই দুয়ের মাঝে লুকানো রহস্যটা কী? গবেষকরা পাস্তা খাওয়ার সময় মানুষের মন আর মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কিছু মজার তথ্য বের করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল পাস্তা অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৪০ জন (২০ জন পুরুষ, ২০ জন মহিলা) খাদ্য এলার্জি-মুক্ত মানুষের উপর এই গবেষণা চালানো হয়। তারা পাস্তা খাওয়ার সময় মানুষের মানসিক প্রতিক্রিয়াকে তুলনা করেছেন তাদের প্রিয় কাজের সঙ্গে – যেমন গান শোনা, খেলা দেখা ইত্যাদি। আর ফলাফল? একেবারে চমকপ্রদ! গবেষণায় দেখা গেছে, পাস্তা খাওয়া একটা ইতিবাচক মানসিক অবস্থা তৈরি করে, যা গান শোনা বা খেলা দেখার মতো কাজের সমান, বা কখনো কখনো তার চেয়েও বেশী! এমনকি, আপনার প্রিয় পাস্তার স্বাদ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আপনার সুখের স্মৃতি ফিরিয়ে আনার মতোই। কিভাবে পরীক্ষা হলো? চারটে মজার প্যারামিটার: ১. মেমরি ইনডেক্স : পাস্তা খাওয়ার সময় মানুষের স্মৃতিশক্তি গান বা খেলার তুলনায় বেশি সক্রিয় হয়। মানে, পাস্তা যেন একটা স্মৃতির টাইম মেশিন! ২. এনগেজমেন্ট ইনডেক্স : পাস্তাই সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। গান বা খেলার চেয়েও পাস্তার আকর্ষণ মানুষের কাছে বেশী। ৩. ইমোশনাল ইনডেক্স: পাস্তা গানের মতোই ইতিবাচক আবেগ জাগায় এবং খেলার চেয়েও এগিয়ে। এক কামড় পাস্তা, আর মুখে হাসি! ৪. হ্যাপিনেস ইনডেক্স : এখানেও পাস্তা আপনার প্রিয় গানের সমকক্ষ, আর খেলার চেয়ে অনেক এগিয়ে। .....বিস্তারিত পড়ুন

দুর্ঘটনার পর হাহাকার নয়, সময় এসেছে জবাবদিহিতার

ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে একের পর এক দুর্ঘটনার খবর যেন আর নতুন কিছু নয়। তবে গত কয়েকদিনে যেভাবে বিমান, হেলিকপ্টার এবং সেতু বিপর্যয়ের ঘটনা সামনে এসেছে, তা শুধু "দুর্ভাগ্যজনক" বলেই পার পাওয়ার সুযোগ নেই। বরং এটি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে—দুর্নীতি, অবহেলা ও জবাবদিহিতার অভাব আমাদের পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কতটা দুর্বল করে ফেলেছে। মাত্র কিছু দিন আগে আহমেদাবাদে উড্ডয়নের পরপরই একটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হয়। একই সপ্তাহে কেদারনাথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সাতজন তীর্থযাত্রীর, যার মধ্যে ছিল এক শিশু। একই দিনে লখনউগামী হজযাত্রী বহনকারী একটি বিমানের চাকা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। পরের দিন হংকং থেকে দিল্লিগামী একটি বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এবং এসব ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই পুনের ইন্দ্রায়নী নদীর ওপর একটি পুরনো লোহার সেতু ভেঙে পড়ে। প্রশ্ন উঠছেই—এই ধারাবাহিক দুর্ঘটনার দায় কার? কেন নিয়মকানুন থাকা সত্ত্বেও তা মানা হয় না? কেন হেলিকপ্টার ভোর ৫:৩০-এ উড়ল, যখন তার স্লট ছিল সকাল ৬টা থেকে? কেন আবহাওয়ার সতর্কতা অগ্রাহ্য করা হলো, যখন গোটা হিমালয় এলাকা তখন ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল? একদিকে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার তদন্তের ঘোষণা করা হয়, আরেকদিকে সেই একই রুটে বারবার হেলিকপ্টার ক্র্যাশ হচ্ছে। শুধুমাত্র চারধাম যাত্রার পথেই এই বছর পঞ্চম দুর্ঘটনা! কেন দুর্ঘটনার পরে তৎপরতা, কিন্তু আগে না? পুনে সেতু দুর্ঘটনার কথাই ধরা যাক। সেতু বিপজ্জনক, জেলা প্রশাসন জানতো, বোর্ডও লাগানো হয়েছিল। তবু পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়নি। এটা কি শুধু দায়সারা গোছের ‘প্রশাসনিক সতর্কতা’? না কি জনগনের জীবনের ব্যাপারে প্রশাসন সত্যিই অনেকটা উদাসীন মনভাব দেখাচ্ছে ? এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন: ১। প্রতিটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র এবং দ্রুত তদন্ত। ২। দুর্ঘটনার আগেই ঝুঁকি চিহ্নিত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। ৩। যান্ত্রিক ত্রুটি বা সময়সীমা লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি। ৪। বিমান ও হেলিকপ্টার চালক এবং টেকনিক্যাল টিমের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স যাচাই। ৫। ‘সতর্কতা বোর্ড’ নয়, কার্যকর নিষেধাজ্ঞা। বিমান ভ্রমণ ও যাত্রীসুরক্ষা কেবল আধুনিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়—এটি প্রশাসনের সদিচ্ছা, দায়িত্ববোধ ও স্বচ্ছতা দ্বারাও পরিচালিত হয়। .....বিস্তারিত পড়ুন

১০০ বছরের বেশি বাঁচার রহস্য: এক ছোট্ট ইতালিয়ান শহরের জীবনযাত্রায় লুকিয়ে

প্রীতি গুপ্তাঃ ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের সিলেন্টো উপকূলবর্তী এক শান্ত শহর Acciaroli। এই শহরে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে—এখানে শতবর্ষী মানুষদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি! কেন এই শহরের মানুষ এতটা দীর্ঘজীবী? গত দশ বছর ধরে একদল বিজ্ঞানী খুঁজে চলেছেন এই প্রশ্নের উত্তর। এবং তারা বলছেন, উত্তরটা লুকিয়ে আছে এখানকার মানুষদের রক্ত, মস্তিষ্ক ও অলিভ অয়েলে। কী বলছে গবেষণা? ২০১৫ সালে শুরু হয়েছিল Cilento Initiative on Aging Outcomes (CIAO) নামের দশ বছর ধরে চলা একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা, যেখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কীভাবে ইতালির এক বিশেষ অঞ্চলের এত মানুষ দীর্ঘ জীবন কাটায় । এক্ষেত্রে গবেষকরা Acciaroli-তে মিলিত হয়ে  শতবর্ষী বাসিন্দাদের জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস এবং জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। গবেষণার প্রধান ইতালীয় বিশেষজ্ঞ ডা. সালভাতোরে ডি সোমা বলছেন, “এই এলাকার শতবর্ষীরা শুধু দীর্ঘজীবী নন, তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে চমৎকারভাবে সুস্থ।”তাদের মধ্যে অ্যান্টি-অ্যাজিকিং—অর্থাৎ বহু ধরনের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা—দেখা যায়। এমনকি, তাদের জেনেটিক উপাদান, জৈবপ্রযুক্তি ও জীবনধারার মধ্যে রয়েছে এমন কিছু গভীর সমীকরণ, যা অন্যত্র পাওয়া যায় না।” রহস্যের মূল চাবিকাঠি – খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা ১. ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য (Mediterranean Diet) এই অঞ্চলের ৯০% মানুষই মেনে চলেন ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস—যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, লেগুম, সম্পূর্ণ শস্য, এবং অলিভ অয়েল। লাল মাংস খুবই কম পরিমাণে খাওয়া হয় এই অঞ্চলে। ডা. ডি সোমা বলেন, “ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েট কোনো ডায়েট প্ল্যান নয়, এটা এক জীবনের ধারা।” মাত্র ৬ দিনের জন্যও এই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করলে শরীরে উপকারী মেটাবোলাইট বাড়ে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ২. অলিভ অয়েলের গুণাগুণ সিলেন্টোর নিজস্ব অলিভ অয়েলে থাকে কম পরিমাণ ক্ষতিকর ফ্যাটি অ্যাসিড এবং এমন যৌগ, যা হৃদরোগ ও মস্তিষ্কের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক। ৩. সক্রিয় সামাজিক ও শারীরিক জীবন এখানকার শতবর্ষীরা প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করেন, বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। তাদের মস্তিষ্ক স্থির, আবেগ নিয়ন্ত্রিত, এবং তারা জীবনের প্রতি .....বিস্তারিত পড়ুন

# বাংলার রথযাত্রা

প্রীতি গুপ্তাঃ বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, শ্যামপুর। সবুজ ধানখেত আর নদীর কোল ঘেঁষে এই গ্রাম যেন এক টুকরো স্বর্গ। বছরের বেশিরভাগ সময় এখানে শান্তি আর সরলতার রাজত্ব। কিন্তু আষাঢ় মাস এলেই শ্যামপুরের মানুষের মনে এক অন্যরকম উৎসাহ জাগে। কারণ, এ সময় এখানে পালিত হয় জগন্নাথের রথযাত্রা। এই উৎসব শুধু একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এ যেন গ্রামের প্রাণের মেলা, একতার উৎসব। গ্রামের মাঝখানে রয়েছে এক প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির। মন্দিরের চারপাশে বিশাল আমবাগান আর একটা পুকুর, যার জলে সারা বছর পদ্মফুল ফোটে। মন্দিরের পুরোহিত, গোপাল দাস, বয়সে প্রৌঢ় হলেও তাঁর উৎসাহে যেন কোনও কমতি নেই। তিনি বলেন, “জগন্নাথ আমাদের সকলের। তিনি গ্রামের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বাস করেন। রথযাত্রার এই সময় আমাদের একসঙ্গে আনন্দ করার এক সুযোগ।” এবারের রথযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল এক মাস আগে। গ্রামের যুবকরা মিলে রথ তৈরির কাজে লেগে পড়েছিল। কাঠের গাড়ি, রঙিন কাপড় আর ফুলের মালায় সাজানো রথ যেন এক স্বপ্নের ছোঁয়া। রথের চাকা তৈরি করেছিলেন গ্রামের বুড়ো কাঠমিস্ত্রি রামধন। তিনি বলেন, “আমার বাবা, তার বাবা—সবাই এই রথের চাকা বানিয়েছেন। এই কাজে আমার প্রাণ আটকে আছে।” গ্রামের মেয়েরা রথের জন্য ফুলের মালা গাঁথছিল। তারা গান গাইছিল, হাসছিল, আর একে অপরের সঙ্গে গল্প করছিল। মাঝে মাঝে তাদের হাসির শব্দে পাখিরা উড়ে যাচ্ছিল। ছোট্ট মেয়ে রাধা, যার বয়স মাত্র দশ, তার হাতে তৈরি একটা ছোট্ট মালা দেখে সবাই মুগ্ধ। রাধা লাজুক হেসে বলল, “আমার মালাটা জগন্নাথের গলায় পরাব। তিনি আমার দিদির অসুখ সারিয়ে দেবেন।” রথযাত্রার দিন ভোর থেকেই গ্রামের মানুষ ব্যস্ত। মন্দিরে ভক্তদের ভিড়, ধূপের গন্ধ, শঙ্খধ্বনি আর মন্ত্রোচ্চারণে চারদিক মুখরিত। গ্রামের প্রতিটি ঘর থেকে মানুষ এসে জড়ো হয়েছিল। কেউ পুজোর থালা হাতে, কেউ ফুলের ঝুড়ি নিয়ে, আর কেউ শুধু হৃদয় ভরা ভক্তি নিয়ে। দুপুরের দিকে রথযাত্রা শুরু হল। জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রার মূর্তি রথে বসানো হল। গ্রামের যুবকরা দড়ি টানতে শুরু করল। তাদের মুখে হাসি, কপালে ঘাম। বুড়ো রামধন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, তার চোখে গর্বের চমক। গ্রামের মেয়েরা রথের পাশে পাশে হাঁটছিল, হাতে ফুল ছড়াচ্ছিল। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দৌড়ে রথের পিছু পিছু যাচ্ছিল, তাদের হাসির শব্দ যেন সব দুঃখ ভুলিয়ে দিচ্ছিল। রথ যখন গ্রামের মাঝখানে এসে পৌঁছল, তখন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। গ্রামের কুখ্যাত মানুষ, যদু, যে কখনও কারও সঙ্গে ভালো করে কথা বলত না, সে হঠাৎ রথের দড়ি ধরে টানতে শুরু করল। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। যদুর চোখে জল, মুখে এক অদ্ভুত শান্তি। পরে সে বলল, “জগন্নাথ আমাকে ডাকছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

12 3 4 5 6 7 8
Scroll to Top