

ভোটার আইডি কি আর বিশ্বাসযোগ্য নয়? নাগরিকত্ব প্রমাণে বিতর্ক তুঙ্গে
উত্তরাপথঃভারতীয় গণতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক কাঠামো, যার ভিত তৈরি হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর। আর এই ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্ত কমিশনের নিরপেক্ষতা ও কার্যপ্রণালী নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিতর্কের সূত্রপাতনির্বাচন কমিশন বলেছে, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আধার কার্ড ও ভোটার আইডি যথেষ্ট নয়। অথচ, এই দুটোই এতদিন পরিচয়পত্র হিসেবে সর্বত্র গ্রহণযোগ্য ছিল। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা ছড়িয়েছে, এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে – ১। ভোটার আইডি তো কমিশনের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়, তাহলে তা অবিশ্বস্ত কীভাবে? ২। আধার ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, গ্যাস কানেকশন বা সরকারি পরিষেবা মেলে না, তাহলে নাগরিকত্ব প্রমাণে তা বাদ কেন? ৩। বাসিন্দা শংসাপত্রের অবস্থা এমন, বিহারের মাসৌড়ি থেকে কুকুরের নামে সনদপত্র ইস্যুর খবর এসেছে। তাহলে কোনটা আসল প্রমাণ? বিহারে কিছু মাস পরেই বিধানসভা নির্বাচন। এর আগে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন অভিযান শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিহারে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটার নথিপত্র জমা দেননি — কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে তারা হয়তো মৃত, স্থানান্তরিত, অথবা তালিকায় ভুলভাবে যুক্ত। কিন্তু বিরোধীরা বলছে, নির্বাচনের আগে এমন সংবেদনশীল পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছে। নাগরিকত্ব প্রমাণে নতুন এই নিয়ম নিয়ে মামলা উঠেছে সুপ্রিম কোর্টে। আদালত বলেছে, যদি এই অভিযানে বড় সংখ্যায় ভোটারদের নাম কাটা হয়, তাহলে আদালতের হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী হবে। আদালতের পরামর্শ ছিল — আধার, ভোটার আইডি ও রেশন কার্ডকে প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হোক। .....বিস্তারিত পড়ুন


নীরব নায়ক ইরুলারা, এদের সংগৃহীত বিষেই তৈরি হয় অ্যান্টিভেনম
প্রীতি গুপ্তাঃ যেখানে সাধারণ মানুষ সাপ দেখলেই আতঙ্কে পিছু হটে, সেখানে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের ইরুলা নামে এক আদিবাসী গোষ্ঠী প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সাপের বিষ সংগ্রহ করেই জীবন চালিয়ে আসছে। এই বিষ থেকেই তৈরি হয় অ্যান্টিভেনম, যা প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ সহ বিভিন্ন প্রানীর প্রাণ রক্ষা করে সাপের কামড় থেকে। কারা এই ইরুলা জনগোষ্ঠী? তামিলনাড়ুর উত্তর-পূর্ব উপকূলে বসবাসকারী ইরুলা জাতি ভারতের অন্যতম প্রাচীন আদিবাসী সম্প্রদায়। তাদের প্রায় ৩ লক্ষ জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই সাপ ধরায় পারদর্শী। শুধু পুরুষ নয়, তাদের মহিলারা এবং এমনকি শিশুরাও ছোটবেলা থেকে নগ্ন হাতে সাপ ধরার প্রশিক্ষণ পায়। এ এক অভাবনীয় দক্ষতা, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হস্তান্তরিত হয়ে আসছে।া এই জনগোষ্ঠীর প্রধান দেবী কান্নিয়াম্মা—এক কুমারী দেবী, যার সঙ্গে সাপের গভীর সম্পর্ক আছে। তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে পুরোহিতরা অনেক সময় সাপের মতো ফিসফিস করে মন্ত্র বলে দেবীর আত্মাকে প্রতীকীভাবে প্রকাশ করেন। এই সাপের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সংযোগই তাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। প্রসঙ্গত একসময় ইরুলারা সাপ মেরে তার চামড়া বিক্রি করেই জীবন চালাত। ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দামে এই চামড়া ট্যানারিদের কাছে বিক্রি হতো এবং ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি হতো। কিন্তু ১৯৭২ সালে ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন অ্যাক্ট বলবৎ হলে সাপ মারা নিষিদ্ধ হয়। এতে একরাতে ভেঙে পড়ে ইরুলা জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ভিত। এরপর ১৯৭৮ সালে বিখ্যাত সাপ বিশারদ রমুলাস হুইটেকার গড়ে তোলেন Irula Snake Catchers Industrial Cooperative Society (ISCICS)। এটি ইরুলা জনগোষ্ঠীর মালিকানাধীন, পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রায় ৩৫০ সদস্য প্রতিদিন ধানক্ষেতে গিয়ে সাপ ধরেন এবং তাদের থেকে বিষ সংগ্রহ করেন। এরপর ২১ দিনের মধ্যে .....বিস্তারিত পড়ুন


সালফার দূষণ ছাড়: নীতিতে শিথিলতা, জনস্বাস্থ্যে বিপদ!
উত্তরাপথঃভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হতে পারে। দেশের অধিকাংশ কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂) কমানোর জন্য বাধ্যতামূলকভাবে Flue Gas Desulphurisation (FGD) যন্ত্র বসানোর নিয়ম থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন FGD প্রযুক্তি কি ?Flue Gas Desulphurisation (FGD) হলো একটি প্রযুক্তি, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় নির্গত গ্যাস থেকে সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂) অপসারণ করে। SO₂ একটি ক্ষতিকর গ্যাস, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাসহ ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে। এছাড়াও, এটি বাতাসে সালফেট কণায় রূপান্তর হয়ে PM2.5 (particulate matter) গঠনে সাহায্য করে, যা শহুরে দূষণের অন্যতম মারাত্মক উপাদান। ভারতের প্রায় ১৮০টি বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ৬০০টি ইউনিট রয়েছে। ২০১৫ সালে সরকার নির্দেশ দিয়েছিল যে সব কয়লা-চালিত ইউনিটে FGD বসাতে হবে ২০১৭ সালের মধ্যে। কিন্তু বাস্তবে, আজ পর্যন্ত মাত্র ৮% ইউনিটে FGD স্থাপন হয়েছে, যার বেশিরভাগই সরকারি সংস্থা NTPC করেছে। সম্প্রতি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তের পিছনে কয়েকটি কারণ দেখানো হয়েছে: ১,ভারতীয় কয়লাতুলনামূলকভাবে কম সালফারযুক্ত, তাই SO₂ নির্গমন তুলনামূলকভাবে কম বলে দাবি। ২,CPCB-এর পরিমাপ অনুযায়ী দেশের বেশিরভাগ জায়গায় SO₂-এর মাত্রা অনুমোদিত সীমার নিচেই থাকে। ৩, FGD বসাতে খরচ অনেক, এবং এতে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে। ৪,আবার কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে সালফেট কণাগুলো বাতাসে তাপ কমিয়ে দেয়, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে সাময়িকভাবে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে।SO₂ দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসতন্ত্রে প্রভাব ফেলে, বিশেষত শিশু ও প্রবীণদের ক্ষেত্রে .....বিস্তারিত পড়ুন


জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব এড়াতে সময় খুবই অল্প: রিপোর্ট
উত্তরাপথঃ পৃথিবী এখন এমন এক সময়ের মধ্যে যাচ্ছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন ও চরম আবহাওয়ার প্রভাব দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এই সংকটের মুখোমুখি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা এত দ্রুত বেড়ে চলেছে যে, এখনই বড় কোনও পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। জাতিসংঘের আওতাধীন ১৯৭টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ’ (COP30)। এর আগে, প্রতিটি দেশকে তাদের নতুন জলবায়ু পরিকল্পনা (National Climate Plans) জাতিসংঘে জমা দিতে হবে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিটি দেশ জানাবে, কীভাবে তারা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাবে এবং কীভাবে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করবে। এই পরিকল্পনাগুলোর ভিত্তি হলো প্যারিস চুক্তি, যেখানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে, বিশ্বের তাপমাত্রা যেন প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে।কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫টি দেশ তাদের 'ন্যাশনালি ডিটারমিন্ড কন্ট্রিবিউশনস' (NDCs) জমা দিয়েছে, যা মোট বৈশ্বিক নির্গমনের মাত্র ২০% প্রতিনিধিত্ব করে। আফ্রিকার মধ্যে সোমালিয়া, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে এই তালিকায় আছে। এর মানে, এখনও ১৭২টি দেশ তাদের পরিকল্পনা জমা দেয়নি। এই পরিকল্পনাগুলো শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়, উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে, যদি জলবায়ু পরিকল্পনাগুলোকে উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তবে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন মানুষ এর উপকার পেতে পারে। সম্প্রতি Earth System Science Data জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উষ্ণতা মিলিয়ে এই পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে গড়ে ১.৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটি প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। রিপোর্টটি সতর্ক করে বলেছে, বর্তমানে বিশ্বের কার্বন বাজেট (যতটুকু নির্গমন আর করা যায়) এত দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে যে, এই হারে চলতে থাকলে আগামী তিন বছরের মধ্যেই বাজেট শেষ হয়ে যাবে। .....বিস্তারিত পড়ুন


মালবিকা ও অগ্নিমিত্র: কালিদাসের প্রথম নাটকের সাহিত্যিক বিশ্লেষণ
প্রীতি গুপ্তাঃ ভারতীয় সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকার কালিদাস, যাঁর রচনাগুলি কেবল ভারতেই নয়, আজও বিশ্বসাহিত্যে এক অমর স্থান অধিকার করে রয়েছে। মহাকবি কালিদাস একদিকে যেমন ছিলেন বিখ্যাত কবি, অন্যদিকে নাট্যকার ও দার্শনিক হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। কালিদাস তাঁর কাব্য ও নাটকগুলিতে সৌন্দর্য, আবেগ এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের জীবনের গভীর সম্পর্ক ইত্যাদি বিভিন্ন দিক নিয়ে অত্যন্ত পরিশীলিত শৈলীর মাধ্যমে আলোচনা করেছেন যা পাঠক ও দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। মহাকবি রচিত তিনটি নাটক —মালবিকাগ্নিমিত্রম্, অভিজ্ঞান শকুন্তলম্, এবং বিক্রমোর্বশীয়ম্—এর মধ্যে মালবিকাগ্নিমিত্রম্ হলো তাঁর প্রথম নাটক। এই নাটকটি কালিদাসের প্রাথমিক সাহিত্য সাধনার নিদর্শন হলেও এতে তাঁর ভবিষ্যৎ কাব্যিক গুণাবলি ও রসাশ্রয়ী নাট্যচেতনার শক্ত ভিত রচিত হয়েছে। আজ আমরা আলোচনা করব মালবিকা ও অগ্নিমিত্র নাটকের কাঠামো, চরিত্রচিত্রণ, ভাষা ও শৈলী নিয়ে, সেই সঙ্গে এর ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক প্রেক্ষাপট, যা এই নাটকটিকে কালিদাসের প্রথম নাট্যকর্ম হিসেবে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে। নাটকের পটভূমি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট “মালবিকা ও অগ্নিমিত্র” কালিদাসের প্রথম নাটক হিসেবে বিবেচিত হলেও এর রচনাকাল নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকে মনে করেন এটি গুপ্ত যুগে রচিত, যখন ভারতীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্য তার স্বর্ণযুগে পৌঁছেছিল। নাটকটির কাহিনী শুঙ্গ রাজবংশের রাজা অগ্নিমিত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, যিনি ঐতিহাসিকভাবে শুঙ্গ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা পুষ্যমিত্র শুঙ্গের পুত্র ছিলেন। নাটকটি ঐতিহাসিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে না, বরং এটি কালিদাসের কল্পনাশক্তি এবং নাটকীয় দক্ষতার একটি অপূর্ব সৃষ্টি। নাটকটির পটভূমি হল বিদিশার রাজপ্রাসাদ, যেখানে রাজা অগ্নিমিত্রের রাজকীয় জীবন এবং তাঁর প্রেমকাহিনী নাটকটির মূল বিষয়। এটি একটি প্রণয়কেন্দ্রিক নাটক, যেখানে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, রাজকীয় জীবনের .....বিস্তারিত পড়ুন


চাঁদে কলোনি, ২৯ কোটি ক্ষুধার্ত ৫৩টি দেশ খাদ্য সংকটে: এটাই কি উন্নয়ন?
উত্তরাপথঃ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) সাম্প্রতিক ‘গ্লোবাল ফুড ক্রাইসিস’ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে যে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে, তা মানব সভ্যতার বিবেককে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। ২০২৪ সালে টানা ষষ্ঠ বছর বিশ্ব জুড়ে গভীর খাদ্য সংকট চলছে এবং শিশুদের অপুষ্টি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। অথচ এই সময়েই আমরা গর্বের সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নয়ন, অবকাঠামোর প্রসার এবং মহাকাশে কলোনি গড়ার দাবি করছি। প্রশ্ন উঠছে—এটাই কি সত্যিকারের উন্নয়নের মানদণ্ড? আজ আমরা এমন এক যুগে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে একদিকে স্পেস স্টেশন, রোবোটিক চাঁদযান ও AI-এর বিস্ময়কর উন্নয়নের গল্প শুনি, অন্যদিকে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে রাত কাটান। বিশ্ব যখন ‘উন্নয়ন’ শব্দের মহিমা প্রচারে ব্যস্ত, তখন মানবিক বিপর্যয়গুলোর দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখাও হয় না। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, ২০২৪ সালে বিশ্বের ৫৩টি দেশ বা অঞ্চলে প্রায় ২৯.৫ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছেন। ২০২৩ সালের তুলনায় এই সংখ্যা বেড়েছে ১.৩৭ কোটি। অর্থাৎ, পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, বরং সংকট আরও গভীর হয়েছে। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এই দুরবস্থার মূল কারণ। এসব কারণে ২০টি দেশে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ চরম ক্ষুধার্ত অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন। এসব অঞ্চলে মানবিক সহায়তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, খাদ্য সরবরাহও বাধাপ্রাস্ত হচ্ছে। এটি শুধু একটি ব্যর্থ রাজনৈতিক অবস্থানের দৃষ্টান্ত নয়, এটি মানবিক মূল্যবোধেরও মৃত্যু। খাদ্য সংকটের আরেক বড় কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ধস, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের কারণে ১৫টি দেশে প্রায় ৫.৯৪ কোটি মানুষ প্রায় অভুক্ত থাকতে বাধ্য হচ্ছে। পাশাপাশি, খরা ও বন্যা ১৮টি দেশে ৯.৬ কোটি মানুষকে খাদ্য সংকটে ফেলেছে। এরচেয়েও ভয়াবহ হলো, এই সংকটে আন্তর্জাতিক সাহায্যের হারও নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তার জন্য যেসব তহবিল বরাদ্দ করা হতো, .....বিস্তারিত পড়ুন


নিজের ঘরেই পরবাসী প্রবীণেরা — কেয়ার করবে কে?
গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ ভারতের মতো পরিবারকেন্দ্রিক সমাজেও আজ প্রবীণদের প্রতি অবহেলা ও নিগ্রহের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি হরিয়ানার পঞ্চকুলার এক ঘটনা আরও একবার সমাজের এই নির্মম বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। সেখানে এক বৃদ্ধ দম্পতি তাঁদের পুত্র ও পুত্রবধূর সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করলেও, তাঁদের একঘরে করে রাখা হয়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় এবং এমনকি সম্পত্তি পুত্র ও পুত্রবধূর নামে করে দেওয়ার চাপও দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। ভারতীয় সমাজে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা, সেবা ও কর্তব্যের ঐতিহ্য বহু পুরনো। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই ঐতিহ্য গভীর সংকটে পড়েছে। যেসব সন্তানদের মানুষ করতে পিতা-মাতা তাঁদের জীবনের সমস্ত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই সন্তানরাই আজ অনেক সময় তাঁদের বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি অবহেলা ও নির্যাতনের পথ নিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে হরিয়ানা মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রবীণ দম্পতির পক্ষে রায় দিয়ে স্পষ্ট করেছে যে, ‘Maintenance and Welfare of Parents and Senior Citizens Act, 2007’ অনুযায়ী, সন্তানদের কাছ থেকে প্রবীণ পিতামাতা খরচ দাবি করার অধিকার রয়েছে। এছাড়া, যদি কেউ সম্পত্তি হস্তান্তর করেন এই শর্তে যে, তাঁকে দেখাশোনা করা হবে, এবং সেই শর্ত লঙ্ঘন হয়, তবে ধারা ২৩ অনুযায়ী সেই হস্তান্তর বাতিলযোগ্য। ধারা ২৪ অনুযায়ী, প্রবীণ ব্যক্তিকে ত্যাগ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যত আধুনিক হচ্ছে সমাজ, তত নিঃস্ব হচ্ছে মানবতা?একদিকে প্রযুক্তি ও জীবনযাত্রার মান যত উন্নত হয়েছে, ততই যেন কমেছে মানবিক মূল্যবোধ। আধুনিক জীবনের আরাম-আয়েশ পাওয়া সন্তানেরা তাঁদের বৃদ্ধ পিতামাতার ন্যূনতম যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেন না অনেক সময়। অথচ, এই মা-বাবারাই নিজেদের স্বপ্ন ত্যাগ করে সন্তানদের সুখী ভবিষ্যতের জন্য সব কিছু দিয়েছেন। আমাদের দেশে আজও পর্যাপ্ত সংখ্যক বৃদ্ধাশ্রম নেই। যে গুটিকয়েক আছে, সেগুলোর বেশিরভাগেই পরিকাঠামো ও মানবিক সংবেদনশীলতার অভাব আছে। ফলে পরিবারে উপেক্ষিত ও নিগৃহীত প্রবীণদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিণতির ব্যবস্থা নেই। .....বিস্তারিত পড়ুন