

নাচনি নাচের উৎস সন্ধানে
ড. নিমাইকৃষ্ণ মাহাতঃ নাচনি নাচের উৎস সন্ধান খুবই দুরূহ কাজ । মানভূমের লোকসংস্কৃতির অন্যান্য অঙ্গের মতো নাচনি নাচের শুরু হয়েছিল কোন এক সুদূর অতীতে - একথা বলা যায় । লোকসংস্কৃতির অন্যান্য আঙ্গিক যেমন বিভিন্ন যুগ-পরিবেশে লোকসমাজে উদ্ভূত হয়ে সাধারণের মধ্যে লালিত , চর্চিত , অনুশীলিত হয়ে কালের কষ্টিপাথরে যাচিত হয়ে বংশপরম্পরায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাহিত হয়ে চলেছে , নাচনি নাচও অনেকটা তাই। দ্বিতীয় অর্থে - নাচনি কারও নয় । জীবন সংগ্রামের জ্বালায় জর্জরিত হয়ে এই রূঢ় পৃথিবীতে সে নিজের প্রাণ ধারণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রত । সেখানে সে প্রয়োজনে স্বামীকে ছেড়ে রসিকের কাছে বা এক রসিককে ছেড়ে অন্য রসিকের সাহচর্য বেছে নিতে বাধ্য হয় । এই পরিস্থিতিতে সে কারও নয় । আবার , মানভূমে একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে , তা হল - নাচ, নাচনি আর নাগর - এই তিন নিয়ে নাচনি। লোকগবেষকরা মনে করেন ' নাচনি ' শব্দটি ' নাচ ' শব্দ থেকেই উদ্ভূত হয়েছে । অনেকে ' নাই চিনি ' শব্দগুচ্ছথেকে ' নাচনি ' শব্দের উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করেন । অর্থাৎ নাচনিকে কেউ চেনে না বা নাচনি কাউকে চেনে না - এই ধারণা থেকেই ' নাচনি 'শব্দটির লোক সমাজে প্রচলিত হয়েছে । প্রথম অর্থে নাচনি লোকসমাজে অচেনা , অবজ্ঞাত , অবহেলিত , প্রান্তিক শ্রেণির। মানভূমের লোক সাধারনের মধ্যে নাচ ও গান স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসে যায় । অর্থাৎ এখানকার মানুষের নাচ-গান স্বভাবজ বলা যায় , রক্তের মধ্যেই রয়েছে । তাই কেউ ভালোবেসে নাচ- গানকে আশ্রয় করেন , কেউ জীবন- জীবিকার টানে একে আঁকড়ে ধরেন । নাচনি নাচের ইতিহাস অনেকটা এরকমই। নাচনি নাচের উৎস সন্ধানকে আমরা বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনা করতে পারি । যেমন - ১ ) ইতিহাসগত দিক , ২ )সামাজিকদিক , ৩ ) সাহিত্যিক দিক ইত্যাদি। ইতিহাসগত দিক মানভূম , ধলভূম , গোপভূম , ভঞ্জভূম , শিখরভূম প্রভৃতি অঞ্চলের সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রনৈতিক ইতিহাস - কিছুটা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন । তাই , এই অঞ্চলে বিস্তারলাভ করা নাচনি নাচের উদ্ভব ও বিকাশের রূপরেখাও কুয়াশাচ্ছন্ন। নাচনি নাচকে অশ্লীল , নিম্নরুচি ও নিম্ন শ্রেণির নাচ বলে দেগে দেওয়ার একটা প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে সমাজের বৃহত্তর অংশের মধ্যে রয়েছে ।তাই , অনালোকিত ও অনালোচিত বা স্বল্প আলোচিত .....বিস্তারিত পড়ুন


টুভালু (#Tuvalu) — কীভাবে এক দ্বীপ রাষ্ট্র বিলীন হচ্ছে সমুদ্রে
প্রীতি গুপ্তাঃ টুভালু( Tuvalu), প্যাসিফিক মহাসাগরের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র, যা নয়টি প্রবালদ্বীপ ও অ্যাটল নিয়ে তৈরি। এর মোট ভূমি এলাকা মাত্র ২৬ বর্গকিলোমিটার, এবং জনসংখ্যা প্রায় ১১,০০০। এই দেশটি হাওয়াই এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত।দেশটির গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২ মিটার এবং এর সর্বোচ্চ স্থান মাত্র ৪.৬ মিটার উচ্চতায়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলস্তর বাড়তেই দেশটির অস্তিত্ব এখন গভীর সংকটে। নাসার পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ৩০ বছরে টুভালুর সমুদ্রস্তর প্রায় ১৫ সেমি বেড়েছে, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়েও দ্রুত। ফল: ঘন ঘন জলোচ্ছ্বাস, উপকূল ভাঙন, নোনা জল ভূগর্ভে ঢুকে পড়া। টুভালুর রাজধানী ফুনাফুটি—একটি সরু অ্যাটল, দু’দিকে নীল সমুদ্র আর মাঝে ছোট্ট বসতি, এয়ারস্ট্রিপ, নারকেল-গাছের সারি। এই ভৌগোলিক বাস্তবতাই টুভালুকে জলবায়ু সংকটের প্রথম সারির শিকার বানিয়েছে। টুভালুতে ইতিমধ্যে লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশের কারণে ভূগর্ভস্থ জল অযোগ্য হয়ে পড়েছে, যা কৃষি এবং পানীয় জলের সরবরাহকে প্রভাবিত করছে। নারকেল এবং পুলাকার মতো ফসল উৎপাদন কমছে। ঝড় এবং কিং টাইডস (অস্বাভাবিক উচ্চ জোয়ার) প্রায়ই সমুদ্র উপকূলের ভূ-ভাগকে প্লাবিত করে, ২০১৫ সালের সাইক্লোন প্যাম ৪৫% জনগণকে বাস্তুচ্যুত করেছিল। এখানকার অর্থনীতি মূলত মৎস্য শিকার।আয়ের অন্য কোনও উপায় না থাকায় এরা প্রতিবেশী দেশগুলির অর্থ সাহায্যের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।জলবায়ু পরিবর্তন এই সবকিছুকে হুমকির মুখে ফেলেছে।বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলস্তর প্রতি বছর বাড়ছে।মূলত হিমবাহ ও বরফচাঁই গললে সেই জল সাগরে মিশছে এবং সমুদ্রের জলস্তর বাড়িয়ে দিচ্ছে। টুভালুতে সাগরপৃষ্ঠ প্রতি বছর গড়ে ~৫ মিমি হারে বাড়ছে—এটা বিশ্বের গড় বৃদ্ধির চেয়ে বেশী। টুভালুবাসীর উদ্যোগ- সমুদ্রভাঙন ঠেকাতে অবকাঠামো: ‘Tuvalu Coastal Adaptation Project (TCAP)’ ফুনাফুটির উপকূলে বালু ফেলে নতুন ভূমি-প্ল্যাটফর্ম তুলছে, যাতে ২১০০ সালের পরের সাগরস্তর ও ঝড়ের ঢেউও টপকাতে না পারে। (Wikipedia) আইন ও কূটনীতি: দেশটি চায়—সমুদ্র এগোলেও যেন তাদের সমুদ্রসীমা ও মৎস্যসম্পদ আইনি ভাবে অটুট থাকে। .....বিস্তারিত পড়ুন


পিঁপড়ে বিভ্রান্ত, মানুষ উপকৃত - কেন্নোর (millipede) বিষে আশার আলো মস্তিষ্ক ও স্নায়ুরোগের ওষুধ
উত্তরাপথঃ জঙ্গলের মাটির নিচে, শুকনো পাতার স্তূপের আড়ালে ঘুরে বেড়ানো ছোট্ট জীব কেন্নোকে অনেকেই ভয়ঙ্কর “কীটপতঙ্গ” বলে ভাবেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বহু পা-ওয়ালা প্রাণীর দেহে লুকিয়ে আছে এমন কিছু রাসায়নিক যা শুধু পিঁপড়েকে বিভ্রান্তই করে না, মানুষের মস্তিষ্কেও কার্যকর হতে পারে! বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অদ্ভুত যৌগ ভবিষ্যতে স্নায়বিক ব্যাধি ও ব্যথা উপশমে নতুন ধরনের ওষুধ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। আমেরিকার ভার্জিনিয়া টেকের বিজ্ঞানী এমিলি মেভার্স এবং তার দল এক নতুন শ্রেণির জটিল যৌগ আবিষ্কার করেছেন, যা কেন্নোর দেহ থেকে নিঃসৃত হয়। এরা আলকালয়েডস নামক প্রাকৃতিক রাসায়নিক পরিবারের অন্তর্গত। গবেষকরা এর নাম দিয়েছেন অ্যান্ড্রোগনাথানলস এবং অ্যান্ড্রোগনাথিনস, মিলিপিড Andrognathus corticarius–এর নাম অনুসারে। এই যৌগগুলো এতটাই শক্তিশালী যে পিঁপড়েরা এদের সংস্পর্শে এসে দিকভ্রান্ত হয়ে যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এরা মানুষের মস্তিষ্কের কিছু বিশেষ রিসেপ্টরের সঙ্গেও প্রতিক্রিয়া করতে পারে, যা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষক মেভার্স মূলত অজানা বা উপেক্ষিত প্রাণী থেকে ওষুধ আবিষ্কারের নতুন রাস্তা খুঁজে বের করেন। তিনি দেখেছেন, কেন্নোরা যখন শিকারির আক্রমণে পড়ে, তখন দেহ থেকে বিশেষ রাসায়নিক নিঃসরণ করে। এভাবে তারা নিজেদের রক্ষা করে, আবার একই সঙ্গে কাছের সঙ্গীদেরও সংকেত দিতে পারে। এখনও পর্যন্ত কেন্নোদের নিয়ে অনেক রহস্য অমীমাংসিত — এদের খাদ্যাভ্যাস, সঠিক সংখ্যা, আচরণ, এমনকি রাসায়নিক গঠন নিয়েও অজানা অনেক কিছু আছে। তাই এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পল ম্যারেক গবেষণা করছেন, যাতে এই তথ্যগুলো মানুষের উপকারে ব্যবহার করা যায়। এর আগেও গবেষকরা একটি ভিন্ন প্রজাতির কেন্নো (Ishchnocybe plicata) থেকে এমন রাসায়নিক পেয়েছিলেন, যা Sigma-1 নামের একটি বিশেষ নিউরোরিসেপ্টরের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে। এই রিসেপ্টর ব্যথা ও অন্যান্য স্নায়বিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত। সর্বশেষ আবিষ্কৃত যৌগগুলিও একই রিসেপ্টরের সঙ্গে কাজ করে। .....বিস্তারিত পড়ুন