West Bengal Panchayet Election 2023: পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ

উত্তরাপথ

এ যেন অনেকটা প্রত্যাশিত ফলাফল । সদ্য সমাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ Panchayet Election 2023 ফলাফল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যথেষ্ট হতাশাবাঞ্জক । এই নির্বাচনের আগে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে যে আশার বাণী শুনিয়েছিল বাস্তবে তা অশ্বডিম্ব প্রসব করল । গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গলমহল,উত্তরবঙ্গ সহ নন্দিগ্রামে যে বিশাল গেরুয়া ঝড়ের আশা করেছিল শুধুমাত্র নন্দিগ্রামে ছাড়া পুরটাই হাতছাড়া হল বিজেপির । পশ্চিমবঙ্গ Panchayet Election 2023 এ বিজেপির পারফরম্যান্সের পিছনের কারণগুলি বোঝার জন্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং গতিপ্রকৃতির একটি বিস্তৃত বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এই নিবন্ধে, আমরা কিছু মূল কারণ অনুসন্ধান করব যা রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির হতাশাজনক পারফরম্যান্সকে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি। টিএমসির শক্তিশালী সংগঠন যা একেবারে গ্রামীন রাজনীতির তৃণমূল স্তর পর্যন্ত রয়েছে  এর সাথে মজবুত ইলেকশন মেশিনারি এবং স্থায়ী জনসমর্থন ভিত্তি যা পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল। তৃণমূলের সুসংঘটিত সংগঠনিক অবস্থান বিজেপির পক্ষে মোকাবিলা করা কঠিন করে তুলেছিল।

পশ্চিমবঙ্গের একটি স্বতন্ত্র আঞ্চলিক পরিচয় এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। টিএমসি সফলভাবে এই অনুভূতিগুলোকে কাজে লাগায়, নিজেকে বাঙালির গর্ব ও সংস্কৃতির রক্ষক হিসেবে নিজেদের বারবার তুলে ধরে।অন্যদিকে বিজেপি, একটি জাতীয় দল হওয়ায়, রাজ্যের আঞ্চলিক আকাঙ্ক্ষার সাথে সংযোগ স্থাপনে অনেক ক্ষেত্রে তাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, যা পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাদের পারফরমেন্সকে প্রভাবিত করেছিল।

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিএমসি এবং বিজেপির মধ্যে উচ্চ মাত্রার মেরুকরণ দেখা গেছে। টিএমসি, তার প্রচারাভিযানের কৌশলের হিসাবে, সফলভাবে রাজ্যের বিজেপিকে বহিরাগত দল হিসাবে চিত্রিত করেছে, তারা বারবার গ্রামের প্রান্তিক মানুষগুলোকে তাদের রাজনৈতিক প্রচারের এজেন্ডা হিসেবে বুঝিয়েছেন রাজ্যের বিজেপি তাদের স্বার্থে কাজ করেনা তারা দিল্লীর কথা শুনে চলে।  

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayet Election 2023, নির্বাচনী আচার সহিংসতা ভয়ভীতি এবং অনিয়মের অভিযোগে বিপর্যস্ত । বিজেপি, প্রধান বিরোধী দল হিসাবে, প্রথম থেকে দাবি করেছে যে তারা মনোনয়ন দাখিল করতে এবং নির্বাচনে অবাধে প্রচার করতে প্রচণ্ড বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে ।অন্যদিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে শুধুমাত্র নির্বাচনের দিন রাজনৈতিক হিংসায় রাজ্যে ৩৫ জন প্রান হারিয়েছে ,এছাড়া আরও বিক্ষিপ্ত হিংসার ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে যা পুরোপুরি নির্বাচনী আচার সংহিতার বিপরীত।

সর্বোপরি TMC এর শক্তিশালী তৃণমূল স্তরের সংগঠন, স্থানীয় নেতা ও কর্মীদের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সহ সক্রিয় উপস্থিতি,পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাদের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অন্যদিকে, বিজেপিকে তৃণমূল স্তরে একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো তৈরিতে অনেকাংশে বার্থ।শক্তিশালী স্থানীয় নেতৃত্বের অভাব এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক গ্রামীণ এলাকায় দলের সীমিত উপস্থিতি যা পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির খারাপ ফলের অন্যতম কারণ ।

সামগ্রিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য দায়ী করা যেতে পারে রাজ্যে বিজেপির দুর্বল সংগঠন, সহ তৃনমূলের আঞ্চলিক মেরুকরণ রাজনীতি , নির্বাচনী অনিয়ম এবং তৃণমূলের শক্তিশালী দলীয় সংগঠন সহ বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণকে। যদিও বিজেপি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে  রাজ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, রাজ্য বিগত বিধানসভা নির্বাচনে যথেষ্ট সংখ্যক আসন জিতেছিল।কিন্তু রাজ্যের আগামী নির্বাচনগুলিতে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল সহ তাদের সংগঠনের দক্ষতার উপর নির্ভর করবে রাজ্যে বিজেপির ২০২৪ এর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


আগামী ৩ বছরে শূন্য বর্জ্য হওয়ার পথে রাজস্থানের প্রথম গ্রাম

উত্তরাপথঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রকল্পের আওতায় আঁধি গ্রামে এই পরিবর্তন করা হচ্ছে।জয়পুর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আন্ধি গ্রাম।আগামী তিন বছরে এই গ্রাম শূন্য বর্জ্য হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ।আন্ধি গ্রামের এই সম্পূর্ণ রূপান্তরটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রকল্পের অধীনে করা হচ্ছে।  এই প্রকল্পটি সবুজ প্রযুক্তির হস্তক্ষেপ ব্যবহার করে আন্ধি গ্রামকে জিরো ওয়েস্ট মডেলে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে ।  এই প্রকল্পটি ২১ মার্চ ২০২২ এ শুরু হয়েছে,  প্রকল্প পরিচালক বলেন, এ গ্রামের অবস্থা আগে খুবই খারাপ ছিল।আগে এই গ্রামের লোকেদের কঠিন বর্জ্য আলাদা করার কোনও ধারনা ছিল না । .....বিস্তারিত পড়ুন

চম্পারন মাটন রাজনীতি কি কোনও নতুন সমীকরণ তৈরি করবে

উত্তরাপথঃ সামনে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন ,আর সেই নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে INDIAজোট। মুম্বাইতে বিরোধী INDIA জোটের (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) তৃতীয় বৈঠকের একদিন পরে, কংগ্রেস শনিবার রাহুল গান্ধীর লালু প্রসাদ যাদব এবং তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দিল্লিতে দেখা করার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে তাদের চম্পারন মাটন দিয়ে রান্না এবং রাজনীতি নিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে।ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাহুল গান্ধী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জন্যও মাটন চাইছেন যা প্রিয়াঙ্কা বাড়িতে উপভোগ করেন এবং সন্দেহ করেছিলেন যে রাহুল সত্যিই মাটন রান্না করেছেন কিনা। "সবাই করেছে। আমি রান্না করেছি, লালুজি রান্না করেছে, মিসা রান্না করেছে," রাহুল বলল। .....বিস্তারিত পড়ুন

মিশন ইম্পসিবল ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান রিভিউ: ৬১ বছর বয়সী টম ক্রুজের আবারও অনবদ্য

উত্তরাপথঃ মিশন ইম্পসিবল দর্শকদের একটি রোমাঞ্চকর যাত্রায় নিয়ে যায়। যেখানে সিনেমাটি  তিন ঘণ্টা দেখা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও দর্শক এটি দেখতে চান। আর এটিই টম ক্রুজ এবং পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যাককোয়ারির আসল সাফল্য।গত বছর হলিউড সুপারস্টার টম ক্রুজ 'টপ গান ম্যাভেরিক' দিয়ে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করার পর, এখন টম ক্রুজ এজেন্ট হান্টের চরিত্রে শক্তিশালী অ্যাকশন নিয়ে দর্শকদের সামনে এসেছেন। টম ক্রুজের 'মিশন ইম্পসিবল' ফিল্ম সিরিজের সপ্তম কিস্তি 'মিশন ইম্পসিবল- ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান' সদ্য ভারতে মুক্তি পেয়েছে । টম ক্রুজ এই ছবিতে তার জনপ্রিয় ইমেজ ধরে রেখেছেন এবং এই ছবিতে দর্শকদের অ্যাকশনের একটি বড় অংশ উপহার দিয়েছেন। মিশন ইম্পসিবল মুভিগুলি শুধুমাত্র টম ক্রুজের জন্য দেখা হয় এবং এই মুভিটি দেখা আবশ্যকও বটে৷ .....বিস্তারিত পড়ুন

ছৌশিল্পী পদ্মশ্রী নেপাল মাহতো ও বিশ্ব মঞ্চে ভারতের লোকনৃত্য

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ আমাদের চারিদিকে বিশ্ব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে,পরিবর্তিত হচ্ছে শিল্প সাধনার প্রকৃতি। এই পরিবর্তিত শিল্প সাধনার যুগে আমাদের সেই সমস্ত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং সম্মান করা অপরিহার্য যারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এমনই একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন ছৌশিল্পী পদ্মশ্রী নেপাল মাহতো। নেপাল মাহাতো, যার ছৌনৃত্যের জগতে  দেশে ও বিদেশে অতুলনীয় অবদান তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী´এনে দিয়েছে। নেপাল মাহতোর জন্ম ১৭ জুন ১৯৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার বরাবাজার থানার আদাবনা নামে একটি ছোট গ্রামে। তার পিতা স্বর্গীয় নগেন্দ্রনাথ মাহাতো ও মাতা তুষ্ট মাহাতো। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top