অনুগল্প –পোষ্টমর্টেম

অসীম পাঠকঃ আ্যানাটমির ক্লাশ সেরে মেডিক্যাল এর ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট অরুণ যখন হোষ্টেলে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো তখন ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা ছয় টা বেজে দশ মিনিট । প্রদীপ স্যার রাত ঠিক নয় টায় তাদের কয়েকজনকে ডেকেছেন।

মর্গে একটা বেওয়ারিশ লাশ এসেছে। কাটাছেঁড়া করতে করতেই জানতে হবে প্রাণী দেহের ভেতরের অবস্থান । কেন ভালো নেই বুঝতে না পারলেও অরুণের মন আজ ভালো নেই । তানিয়ার জন্য ব্যাকুল। সামনেই বড়োদিনের ছুটিতে তার বাড়ি যাবার কথা । দীর্ঘ দশ মাস পড়াশোনার চাপে ব্যাঙ্গালোরেথ বাইরে যেতে পারেণি অরুণ।

গত তিন মাস আগেই কোন কারণ ছাড়াই অরুণের ব্রেক আপ হয়ে গেছে তানিয়ার সাথে। কিন্তু মনের ক্যানভাসে এখনও তানিয়া। তানিয়াটা বরাবরই ভীষণরকম খামখেয়ালী। অনেক উপরে ওঠার স্বপ্ন তার। এইসব ভাবতে ভাবতে ওল্ড মগ রাম হাল্কা গরম জলে মিশিয়ে আদা দিয়ে দু পেগ খেতেই মনের জ্বালা আর শরীরের ক্লান্তি দুটোই যেনো মিটে যায় অরুণের। ডিনারটা ফিরে এসেই করবে।
শীতটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছেএবার। শোয়েটারের উপর সাদা এপ্রনটা চাপিয়ে স্টেথো ঝুলিয়ে মর্গের দিকে পা বাড়ালো অরুণ। প্রদীপ স্যার ভীষণ পাংকচুয়াল। রাস্তার দুপাশে ঘন অন্ধকারের বুক চিরে নৈশ রহস্য। হঠাৎ যেনো মেরুদন্ড বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়, কে যেনো পাশ দিয়ে পেরিয়ে যেতে যেতে ফিসফিস করে কিছু বলে ওঠে , অরুন ঠিক বুঝতে পারে না, ভাবে আ্যালকোহলের নেশাটা বোধহয় একটু জোর হয়ে গেছে।
পাইন ইউক্যালিপটাসের জটলা । একটা গা ছমছমে ভাব , আবছা আলোর মায়াবী অন্ধকার ভেদ করে অরুণ মর্গে পৌঁছালো, সব রেডি। বডিটা উপুড় করে শোয়ানো । কাটা ছেঁড়া চলছে। প্রদীপ স্যার সব বুঝিয়ে চলেছেন । বাধ্য ছাত্রের মতো সব নোট করছে অরুণ। মাস্ক পরে আছে অথচ কেমন যেনো একটা আঁশটে গন্ধ । হঠাৎই স্যার বডিটা সোজা করলেন। বেডের উপরে জোরালো আলোয় বডিটা দেখে চমকে উঠলো অরুণ । তার পায়ের নীচে পৃথিবী যেনো কাঁপছে।
একি – – এ যে তানিয়া। চোখ দুটো সাদা হয়ে গেছে। যেনো কতো দুঃখ জমানো স্বপ্ন নিয়ে অরুণের দিকে তাকিয়ে ….
আর পারছে না অরুণ … সব ঝাপসা ….. সব অন্ধকার।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top