উত্তরাপথঃআমাদের শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিন প্রয়োজন। শরীরে যখন ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তখন ডায়াবেটিস হয়। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হল যখন আমাদের পেশী, চর্বি এবং লিভারের কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতি ভালোভাবে সাড়া দেয় না, তাঁর ফলে আমাদের শরীর সহজেই দেহের রক্ত থেকে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে না। ফলস্বরূপ, অগ্ন্যাশয় আমাদের কোষে গ্লুকোজ প্রবেশ করতে সাহায্য করার জন্য আরও ইনসুলিন তৈরি করে।ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সাধারণত ডায়াবেটিসের সাথে জড়িত, তবে এটি অন্যান্য অনেক রোগের কারণও হতে পারে। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার ফলে বিশেষত মহিলাদের মধ্যে ৩১টি বিভিন্ন ধরণের রোগ হতে পারে। গবেষকরা আরও বলেছেন যে ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে মহিলাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে।তাই এই ব্যাপারে মহিলাদের আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের কয়েক হাজার মানুষের উপর তথ্যের একটি সমীক্ষা ইউরোপীয় অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডির বার্ষিক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে (Annual Meeting of the European Association for the Study of Diabetes (EASD)। স্পেনের মাদ্রিদে ৯ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই সভায় ডায়াবেটিস (EASD) সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া গেছে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে পারকিনসন্স রোগ, গেঁটেবাত এবং সায়াটিকার মতো বিভিন্ন রোগের মধ্যে সংযোগের জোরালো সম্পর্ক প্রমাণিত হয়েছে।
চীনের শানডং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ইউকে বায়োব্যাঙ্কের ৫০০,০০০ এরও বেশি লোকের ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন যেটি জেনেটিক, চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার তথ্য সম্পর্কিত।গবেষণায় ৪২৯,১৫৯ জন অংশগ্রহণকারী (২৩১,০৩৩ মহিলা এবং ১৯৮,১২৬ পুরুষ) অংশ গ্রহন করে যাদের বয়স ৪০ থেকে ৬৯ বছরের মধ্যে।গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে বিশেষত মহিলাদের অনেক রোগ এমনকি তাড়াতাড়ি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই গবেষণায় ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণগুলি সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করা হয়নি, তবে অতিরিক্ত ওজন এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাকে এর সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।এই ইউকে বায়ো ব্যাংকের ৪০ লাখ মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন।গবেষকরা ১৩ বছর ধরে অধ্যয়ন করার পর, আবিষ্কার করেছেন যে আমাদের দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হওয়ার সাথে ৩১ টি রোগের সম্পর্ক রয়েছে।
ডায়াবেটোলজিয়া জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে গবেষণায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের ইনসুলিন প্রতিরোধের উচ্চ মাত্রা ছিল তারা সাধারণত পুরুষ, বয়স্ক, কম সক্রিয়, ধূমপায়ী এবং স্থূল। ইনসুলিন প্রতিরোধে রেজিস্ট্যান্সের কারণে, তাদের মধ্যে ২৬টি রোগের উচ্চ ঝুঁকির সম্ভাবনা দেখা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে ঘুমের ব্যাধি, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এবং প্যানক্রিয়াটাইটিস অন্যতম। মহিলাদের মধ্যে, ইনসুলিন প্রতিরোধের ক্ষমতা প্রতি এক ইউনিট বৃদ্ধির জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি ১১ শতাংশ বেশি ছিল। এটি দেখিয়েছে যে মহিলাদের মধ্যে ইনসুলিন প্রতিরোধের সমস্ত কারণ মৃত্যুর সাথে যুক্ত।
এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত হল যে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন তৈরি হয়। এটি অগ্ন্যাশয়ে উৎপাদিত হয় এবং যখনই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, তখনই এটি নির্গত হতে শুরু করে।তারফলে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়। আমাদের শরীরের কোষগুলো যখন সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না, তখন এই অবস্থাকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বলে। এমন অবস্থায় মানুষের সুগার লেভেল অনিয়ন্ত্রিত হয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিস দেখা দেয়।
Source: Database Annual Meeting of the European Association for the Study of Diabetes (EASD)
আরও পড়ুন
বঞ্চনার আর এক নাম শবর
বলরাম মাহাতো: শবর কথাটির উৎপত্তি হয়েছে ‘সগর’ থেকে। ‘সগর’ শব্দের অর্থ হলো কুঠার। বোঝাই যাচ্ছে, শবররা কুঠার হাতে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। সেখান থেকেই শবর নামটির প্রচলন হয়। শবররা বাস করেন পশ্চিম বাংলা, চেন্নাই, মধ্যপ্রদেশ, ছোটনাগপুর আর উড়িষ্যায়। আমাদের দেশে বর্তমানে শবরদের সংখ্যা ২,০০০ এর কিছু বেশি। শবর কোনো একজনের নাম নয়, এটি একটি জনগোষ্ঠীর নাম। বর্তমানে ভারতে এই শবর জনগোষ্ঠী একটি .....বিস্তারিত পড়ুন
রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে ২২ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন মোদী
উত্তরাপথ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী মাসের ২২ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগ দিতে।এই নৈশভোজে মোদীকে রাষ্ট্রপতি জো বিডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বিডেন আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।এই সফরে মূলত দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হবে এবং একটি মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। MEA বলেছে যে মোদী এবং বিডেন G20 সহ প্লুরি-পার্শ্বিক এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা জোরদার করার উপায়গুলিও .....বিস্তারিত পড়ুন
কৃষ্ণগহ্বরের "ছায়া" ও "ছবি"
ড. সায়ন বসু: ১৭৮৩ সালে ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell) ‘ডার্ক স্টার’ (dark stars) শিরোনামে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তার গবেষণা পত্রের বিষয়বস্তু ছিল "বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না"। এখান থেকেই মূলত কৃষ্ণগহ্বরের (Black Hole) ধারণা আসে এবং এটি নিয়ে গবেষনা ও অনুসন্ধান শুরু হয়। পরবর্তিতে অবশ্য এটি বিজ্ঞান মহলে একটি অযৌক্তিক তত্ত্ব হিসেবে বেশ অবহেলার স্বীকার হয়। আলোর মত কোন কিছু বেরিয়ে আসতে পারবে না এমন একটি তত্ত্ব বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ অযৌক্তিক মনে হয়েছিল। তাই ধীরে ধীরে থেমে যায় কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষনা। .....বিস্তারিত পড়ুন
ইউক্রেনে পিছু হটছে রাশিয়ান বাহিনী, দাবী অস্বীকার রাশিয়ার
উত্তরাপথ: সম্প্রতি রাশিয়ার কয়েকটি সামরিক দল দাবি করে, পূর্ব ইউক্রেন অঞ্চলে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ইউক্রেন সেনারা এবং এর বিপরীতে পিছু হটছে রাশিয়ান বাহিনী। তবে এমন দাবি অস্বীকার করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রাশিয়ান সামরিক ব্লগাররা জানায়, ইউক্রেন সেনাবাহিনীর দল পূর্ব ইউক্রেনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পাশাপাশি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বেসরকারি সেনা দল ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান জানিয়েছেন, রাশিয়ান সৈন্যরা বাখমুতের আশেপাশে তাদের অবস্থান ত্যাগ করছে। .....বিস্তারিত পড়ুন