

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ আজ আমরা কাঞ্জর উপজাতি নিয়ে আলোচনা করব।কাঞ্জর হল সেই উপজাতি যাদের আমরা অনেকেই যাযাবর বা বেদুঈন নামে জানি।রাজস্থানের বেশ কিছু কাঞ্জর উপজাতিদের সাথে আমরা কথা বলি ,তাদের গলায় এক আক্ষেপের সুর তাদের কথায় আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে অপরাধী হওয়ার কলঙ্ক বহন করে আসছি। গ্রামে আমাদের জীবিকার উপায় নেই, জমিও নেই, ব্যবসাও নেই। অপরাধ প্রবণ জনজাতি হওয়ার কারণে আমাদের কেউ কোনো কাজ দেয় না বা কোনও গ্রামে আমাদের নতুন করে বসতি করতে দেয় না।আমাদের সমাজের সমাজের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে ।


‘কঞ্জর’ শব্দটি সংস্কৃত ‘কানন-চর’ থেকে উদ্ভূত বলে জানা যায়। এদের ভাষা, নাম, সংস্কৃতি ইত্যাদিতে উত্তর ভারতীয় প্রবণতা এতটাই বেশী যে তারা যে দ্রাবিড় বংশোদ্ভূত তা অনেকেই মনে করেন না,বরং কঞ্জরদের অন্যান্য যাযাবর উপজাতি যেমন সানসিয়া, হাবুরা, বেরিয়া, ভাট, নাট এবং বাহেলিয়ার সাথে সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে। নিজেদের কোনও স্থায়ী বাসস্থান না থাকার কারণে এটা মূলত একটি যাযাবর উপজাতি, বিভিন্ন জায়গায় জীবিকার সন্ধানে বেশ কিছুকাল আগে পর্যন্ত এরা ঘুরে বেড়াত।বর্তমানে এরা সমগ্র উত্তর ভারতের গ্রামীণ ও শহুরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।একটি কিংবদন্তি অনুসারে কঞ্জররা ঐশ্বরিক পূর্বপুরুষ ‘মন’ গুরুর বংশধর। ১৮৯১ সালের আদমশুমারিতে কাঞ্জরদের বিভিন্ন পেশার উল্লেখ রয়েছে যেমন জল্লাদ, কুঞ্চবন্দ, পাথরকাট, দাচবন্দ ইত্যাদি।


কঞ্জরদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহ প্রচলিত। যদিও বিয়ের আগে নারীরা যথেষ্ট পরিমাণে যৌন স্বাধীনতা ভোগ করে, তবুও বিয়ের পর তাদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ সতীত্ব আশা করা হয়। নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক অবমাননাকর বলে বিবেচিত হয় । কনের মূল্য পরিশোধ করে বিয়ে হয়। অর্থ দুটি কিস্তিতে দিতে হয়, একটি বিয়ের সময় এবং অন্যটি সন্তান জন্মের পর। প্রথাগত বিয়ে ছাড়াওীদের মধ্যে পালিয়ে বিয়ে করার প্রচলন রয়েছে। নির্বাসন থেকে ফিরে, দম্পতি পুরো গ্রামকে একটি ভোজে আমন্ত্রণ জানাতে পারে এবং আইনি স্বামী ও স্ত্রীর মর্যাদা অর্জন করতে পারে। বিধবা বিবাহের প্রচলন রয়েছে এবং বিধবারা বেশিরভাগই তাদের অবিবাহিত ফুফুকে বিয়ে করে।
পেশাগত ক্ষেত্রে কঞ্জররা কোনো বিশেষ পেশা গ্রহণ করেনি। কিছুকাল আগে পর্যন্ত তারা মেজবানী করত এবং গ্রামবাসীদের মনোরঞ্জনের বিনিময়ে তারা অর্থ ও গবাদি পশু আকারে বাৎসরিক অনুদান পেত।আজও বহু কঞ্জর পরিবার বিভিন্ন মীনা বা ভীল আদিবাসী গ্রামে উৎসব এবং বিশেষ অনুষ্ঠানে গান গেয়ে নাচের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের বিনোদন দেয়। এর সাথে কিছু কঞ্জর মহিলা ভিক্ষার পাশাপাশি পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত। কিন্তু বর্তমানে কাঞ্জর যুবকদের অনেকেই তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক পেশার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।আজ শহরের রাস্তার ধারে কাঞ্জররা অস্থায়ী ভাবে বাসস্থান তৈরি করে পরিবার নিয়ে বাস করার সাথে সাথে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন হাতে তৈরি জিনিষ বিক্রি করছে।এক কাঞ্জর যুবক রাকেশ সিং এর মতে ,আগে অর্থাৎ তার বাবা – কাকাদের সময় ছড়িয়ে –ছিটিয়ে থাকা কাঞ্জরদের জীবিকার কোনও উপায় না থাকায় তারা তাদের ক্যাম্পে কাঁচা মদ তৈরির অবৈধ ব্যবসা করত, এবং আশেপাশের গ্রামে বিক্রি করত। এখন পুলিশ মদ তৈরির ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ায় বিভিন্ন ক্যাম্পের যুবকরা ট্রাক কাটা, বাইক চুরির মতো অপরাধ করতে শুরু করেছে।


আমরা রাজস্থানের উদয়পুর থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে কানুয়ারা গ্রামে যায় । সেখানে প্রায় ২০০০ মত কাঞ্জর বাস করে। তাদের মধ্যে প্রায় ৪২% ছেলে-মেয়ে অষ্টম ও দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও তাদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার প্রতি তেমন কোনও আগ্রহ নেই। বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা কাঞ্জরা যুবকেরা আজও লেখাপড়ার চেয়ে অপরাধ করতে বেশি আগ্রহী ।সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা আজও এই সম্প্রদায়ের যুবকদের বিয়ের সময় তাদের আপ্রাধপ্রবনতা দেখা হয় । যে যুবক যত বড় অপরাধ করেছে ,সে তত ভালো পাত্রী পায়।
আরও পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন