

উত্তরাপথঃ কেন্দ্রীয় সরকার বুধবার বিভিন্ন স্তরে কোচিং ইনস্টিটিউটগুলির দ্বারা বিভ্রান্তিকর প্রচার বন্ধ করার জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে, যার অধীনে এটি এখন ‘১০০ শতাংশ নির্বাচন’ বা ১০০ শতাংশ চাকরির গ্যারান্টি’ এর মতো দাবি, করা নিষিদ্ধ করেছে।বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কোচিং ইনস্টিটিউটে পড়ার আকর্ষণ সারাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।এ যেন বিদ্যালয়ের পাশাপাশি এক সমান্তরাল শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হওয়া। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে ?এর প্রধান কারণ হল এই সমস্ত কোচিং সেন্টারের দ্বারা দেশের সর্বত্র প্রচারিত বিজ্ঞাপন।যেখানে তাদের প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার পর ১০০% চাকুরীর পরীক্ষায় সাফল্যের দাবী করা হচ্ছে ।কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশের একটা বড় অংশের অবিভাবকও এটি মনে প্রানে বিশ্বাস করেন – যে তাদের সন্তান সেই নির্দিষ্ট কোচিং সেন্টারে গেলে সফলতা পাবে। কিন্তু সত্যি কি তাই?
আমরা সবাই জানি আমাদের সারা দেশে কতগুলো কোচিং সেন্টারের শাখা রয়েছে এবং সেখান থেকে কতজন ছাত্র-ছাত্রী প্রতিবছর পাশ করে বের হচ্ছে। খুব ভুল যদি না করি তাহলেও সংখ্যাটা কম করেও বেশ কয়েক লাখ হবে।কিন্তু সীমিত সরকারি চাকরি এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগের সীমিত আসনের যুগে সবাইকে উচ্চ শিক্ষার বা চাকরির সুযোগ দেওয়ার দাবি করাটা একটা ভ্রম ছড়ানোর চেয়ে কম কিছু নয়।দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গত বুধবার সেন্ট্রাল কনজিউমার প্রোটেকশন অথারিটি বা ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের তরফে নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের সেক্রেটারি নিধি খারে বলেন, “আমরা দেখেছি যে কোচিং সেন্টারগুলি বিভিন্ন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে অনেক তথ্য লুকোয়। ছাত্রদের ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তাই আমরা গাইডলাইন এনেছি যাতে গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসে।“ প্রসঙ্গত সম্প্রতি ক্রেতা সুরক্ষা হেল্পলাইনে এই সমস্ত কোচিং সেন্টার ও ইন্সটিটিউটগুলির বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ আসে। এরপরই কেন্দ্রের তরফে এই পদক্ষেপ। কোচিং ইনস্টিটিউট দ্বারা বিভ্রান্তিকর প্রচারণা দমনের জন্য নতুন নির্দেশিকা অনুসারে , এখন থেকে ‘১০০ শতাংশ উচ্চ শিক্ষায় নির্বাচন’ বা ‘১০০ শতাংশ ‘চাকরির নিশ্চয়তা’-এর মতো দাবি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে , একইসঙ্গে কোচিং সেন্টারগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র তাদের লিখিত সম্মতি থাকলে তবেই সফল পরীক্ষার্থীদের নাম ও ছবি ব্যবহার করা যাবে । লিখিত সম্মতি ছাড়া কোনও পরীক্ষার্থীর ছবি ব্যবহার করা যাবে না, সেইসঙ্গে বিজ্ঞাপনে সতর্কতার বার্তাও দিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে।
প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে কোচিং ইনস্টিটিউটগুলি তাদের প্রচারের সময় তাদের দাবির বিষয়ে কোন ধরনের স্বচ্ছতা অনুসরণ করে না। সীমিত সুযোগের যুগে তারা কিসের ভিত্তিতে ১০০% গ্যারান্টি দাবি করে এবং কীভাবে তারা তা প্রদান করবে তা স্পষ্ট করার প্রয়োজন বোধ করে না। সেই সাথে তারা পাঠদানের বিন্যাস, শিক্ষকদের বিবরণ এবং তাদের যোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন না। কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করতে জারি করা বিজ্ঞাপনে অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা দাবি করার কমতি থাকে না।
এবার নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে তাদের পরিসেবা ফি ,তাদের গুণমান, শিক্ষকদের যোগ্যতা এবং তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে হবে। নতুন নির্দেশিকা লঙ্ঘনকারী কোচিং ইনস্টিটিউটগুলিকে ১০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে এবং তাদের লাইসেন্সও বাতিল করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত আজ আমাদের দেশে যে কোনও ছোট শহর থেকে বড় শহর সর্বত্র এই কোচিং সেন্টারগুলির উপস্থিতি নজরে আসছে। আজ অনেক শিক্ষার্থী ছোট ছোট গ্রাম থেকে এই কোচিং ইনস্টিটিউটে পড়তে আসে এই সব প্রতিষ্ঠানের বড় বড় বিজ্ঞাপন দেখে। রাজস্থানের ‘কোটা’ এর এক জীবন্ত উদাহরণ। এখানকার কোচিং সেন্টারগুলিতে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা আসে কোচিং নিতে।বহু ক্ষেত্রে অবিভাবকরা তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে তাদের সন্তানদের পাঠায় এই কোচিং সেন্টারগুলিতে। সেখানকার মাত্রাতিরিক্ত চাপ বহু ছাত্রছাত্রীর জীবনে নির্মম পরিণতি নিয়ে আসছে। পুলিশের তথ্য অনুসারে, কোটায় (Kota) ২০২২ সালে ১৫ জন, ২০১৯ সালে ১৮ জন, ২০১৮ সালে ২০ জন, ২০১৭ সালে ৭ জন, ২০১৬ সালে ১৭ জন এবং ২০১৫ সালে ১৮ জন ছাত্র মারা গিয়েছিল।করোনা কালে অর্থাৎ ২০২০ এবং ২০২১ সালে কোচিং সেন্টারগুলি বন্ধ থাকায় কোন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন
Renewable Energy: জাপানি প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির প্রস্তাব করেছেন
উত্তরাপথ: সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সাথে নবায়নযোগ্য শক্তিতে (Renewable Energy) দেশের উন্নত প্রযুক্তি ভাগ করার প্রস্তাব করেছেন। মূলত জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার এবং জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরতা হ্রাস করার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে । সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত দীর্ঘদিন ধরে তাদের তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুদের জন্য পরিচিত, যা তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে উভয় দেশ তাদের কার্বন পদচিহ্ন (Carbon Emission) কমাতে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের শক্তির উৎসগুলির পরিবর্তনে আগ্রহী .....বিস্তারিত পড়ুন
Camel Cloning: দুবাই ‘উট' ক্লোনিং‘এর জন্য খবরের শিরোনামে
উত্তরাপথ: দুবাই, তার ঐশ্বর্য এবং জাঁকজমকের জন্য পরিচিত হলেও এবার দুবাই তার ‘উট ক্লোনিং ‘এর জন্য খবরের শিরোনামে।এবার আশা যাক ক্লোনিং কি তা নিয়ে আলোচনায়। ক্লোনিং হল প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে অভিন্ন জিনোম সহ পৃথক জীব উৎপাদনের প্রক্রিয়া অর্থাৎ জীবের অভিন্ন অনুলিপি তৈরি করার প্রক্রিয়া।২০০৯সালে বিশ্বের প্রথম উটের ক্লোনিংয়ের নেতৃত্ব দেওয়া, নিসার ওয়ানি এখন দুবাইয়ের একটি ল্যাবে বছরে কয়েক ডজন উটের প্রতিলিপি তৈরি করছেন যা উপসাগরীয় অঞ্চলের এখন একটি বড় ব্যবসা যেখানে উট লালন-পালন করা হয় সৌন্দর্য ও রেসিং .....বিস্তারিত পড়ুন
Life in Saturn: শনিতে কি প্রাণের "ছোঁয়া"?
ড. সায়ন বসু: গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী গায়া (Gaia) এবং উরেনাস (Urenus)-এর সন্তান এঙ্কেলাডাস (Enceladus) ছিলেন একজন দৈত্য | দেবতা এবং দৈত্যদের যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন যুদ্ধ এবং জ্ঞানের দেবী এথেনার (Athena) বিপক্ষে | এমনও মনে করা হয় যে এঙ্কেলাডাসকে ইতালির সিসিলিতে অবস্থিত এতেনা (Etena) পর্বতের নীচে সমাধি দেওয়া হয় | বলা হয়ে থাকে ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাতের জন্যে নাকি তার নিঃশ্বাস দায়ী | ঠিক তেমনই শনির একটি ছোট উপগ্রহ যার নামও এঙ্কেলাডাস তা থেকেও প্রচুর পরিমানে ফসফরাসের হদিশ পাওয়া গেছে যা কিনা বৈজ্ঞানিকদের .....বিস্তারিত পড়ুন
UCC: Uniform Civil Code এবারও অভিন্ন হবে না
উত্তরাপথ: Uniform Civil Code (ইউসিসি) এ বারও ইউনিফর্ম হবে না। গত ৩রা জুলাই সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ ইঙ্গিত দেওয়া হয়। কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রবীণ বিজেপি নেতা সুশীল কুমার মোদি পরামর্শ দিয়েছেন যে উপজাতি সমাজ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বিজেপির এক দিল্লীর নেতার বক্তব্য , তফসিলি উপজাতিরা তাদের নিজস্ব নিয়ম-কানুন তৈরি করে এবং সেগুলি অনুসরণ করে। এই ধরনের লোকেরা সাধারণত বন এবং পাহাড়ে বাস করে।তাদের আদিমতা, ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা, সামাজিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা .....বিস্তারিত পড়ুন