

উত্তরাপথঃ সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, জাঙ্ক ফুড এবং প্যাকেটজাত খাবার খেয়ে আমরা জেনে বা অজান্তে নিজেদেরকে বিভিন্ন রোগের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, জাঙ্ক ফুডে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ, চর্বি, ট্রান্স ফ্যাট থাকে যা স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের জন্য দায়ী। শক্তিশালী প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্প সংস্থা এবং প্রশাসনের যোগসাজশ বা নির্লিপ্ততার কারণে জাঙ্ক ফুডকে ৬ বছর ধরে যাবতীয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আইনের আওতায় আনা যায়নি। জাঙ্ক ফুড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলি ভুল তথ্য দিয়ে ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করছে এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি নীরব দর্শক হয়ে বসে আছে।
পরের বার, নামী –অনামী যে কোনও ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত খাবারের প্যাকেট খোলার আগে বা বার্গার , পিজ্জা খাওয়ার আগে দুবার ভাবুন। মাত্র ৩৫ গ্রাম বাদাম ক্র্যাকার চিবিয়ে আপনি প্রতিদিন নির্ধারিত লবণের ৩৫ শতাংশ এবং চর্বি ২৬ শতাংশ খাচ্ছেন। আর আপনি যদি পনির পিজ্জার সমান চারটি টুকরো খেয়ে থাকেন, তাহলে বুঝবেন আপনি দৈনিক চাহিদার প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ লবণ এবং ৭২.৮ শতাংশ চর্বি খেয়েছেন। উচ্চ লবণ, উচ্চ চর্বি, ট্রান্স ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট এই ধরনের জাঙ্ক ফুডে ব্যবহার খুব মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ , হৃদরোগ এমনকি ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানানোর মতো ঘটনা। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগগুলি যদি জীবনের প্রথম দিকে আসে তবে তার মোকাবেলায় অনেক অসুবিধা হয়।ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) এর একটি ২০১৬ রিপোর্ট এই উদ্বেগজনক প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে বিভিন্ন রোগ যেমন, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্তে শর্করা, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং স্থূলতা ১৯৯০ সাল থেকে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
আমাদের আশেপাশে অনেক অভিভাবক রয়েছেন যারা সময়ের অভাবে তাদের সন্তানদের দেদার প্রতিদিন প্যাকেটজাত এবং ফাস্ট ফুড খেয়ে পেট ভরাতে দেয়। এতে সন্তানরা যেমন খুশি থাকে তেমনি বাবা-মায়েদেরও বাড়তি চাপ নিতে হয় না।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আজ বহু বেসরকারি স্কুল কঠোরভাবে এই প্যাকেটজাত এবং ফাস্ট ফুড’কে স্কুলে আনা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। আবার কিছু কিছু স্কুল এই সমস্যার সমাধানে তাদের নিজেদের ক্যান্টিন ব্যবস্থা শুরু করেছে ।এক্ষেত্রে কলকাতার এক নামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কথায়,এখন ১০-১১ বছরের বাচ্চাদের মাথাব্যথা এবং অস্পষ্ট দৃষ্টির সমস্যা খুব সাধারণ হয়ে যাচ্ছে।সেইসাথে উচ্চ রক্তচাপ,ওজন বৃদ্ধি ,ব্লাড সুগার, সহ হৃদরোগের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।বিশেষজ্ঞদের ধারনা প্রক্রিয়াজাত খাবারের অতিরিক্ত সেবন এর জন্য দায়ী।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্যাকের ভিতরে কী আছে সেই সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা এই ধরনের খাদ্য গ্রহণকে উৎসাহিত করছে। ৫৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক অশোক রায়ের কথায়, আমি যদি এইগুলি পড়া শুরু করি তবে আমার সারা দিন লাগবে। প্রবেশ সিনহা, ২২, যিনি একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাজ করেন, তিনি কখনও স্কুলে যাননি, তাই তিনি কি খাচ্ছেন তা জানা তার পক্ষে অসম্ভব।
দিল্লি ভিত্তিক সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই), একটি অলাভজনক এবং গবেষণা এবং নীতি ভিত্তিক সংস্থা, ২০১২ সালে তাদের একটি গবেষণা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল যখন তারা দেখেছিল যে প্যাকেটজাত খাবারে লবণ, চর্বি, ট্রান্স ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় বেশী থাকে। এর ঠিক সাত বছর পর ২০১৯ সালের জুলাই এবং অক্টোবরের মধ্যেই, CSE-এর পরিবেশগত মনিটরিং ল্যাব আবার ৩৩টি বিখ্যাত ভারতীয় এবং বিশ্বব্যাপী বহুজাতিক কোম্পানির প্যাকেজড এবং ফাস্ট ফুডের উপাদানগুলি পরীক্ষা করে। এই সমস্ত পণ্য সারা দেশে পাওয়া যায়। অ্যাসোসিয়েশন অফ অফিশিয়াল অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট (AOAC) আন্তর্জাতিক মানের উপর ভিত্তি করে আমাদের দেশে বাজার চলতি এই পণ্যগুলির মান পরীক্ষা করেন। ভারতের জনসংখ্যার জন্য বিক্রি হওয়া এই সমস্ত খাদ্যে পুষ্টি কতটা থাকে তা বোঝার জন্য পরীক্ষাগারের ফলাফলগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে।
১০০ গ্রাম প্যাকেটজাত খাবার এবং ফাস্ট ফুড ল্যাবের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং ফলাফলগুলি ৩০ থেকে ৩৫ গ্রামে ভাগ করা হয়েছে।ফলাফল হতবাক ছিল. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন-ইন্ডিয়া, ICMR এবং সায়েন্টিফিক এক্সপার্ট গ্রুপ অন ফুড এ দ্বারা সুপারিশকৃত সমস্ত পরীক্ষিত চিপস, ভুজিয়া, ইন্সট্যান্ট নুডলস এবং স্যুপে বেশি লবণ পাওয়া গেছে। FSSAI-এর সুপারিশের ভিত্তিতেও পর্যালোচনা করা হয়েছিল।
আরডিএ অনুসারে, একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য দৈনিক লবণের পরিমাণ ৫গ্রাম, চর্বি ৬০ গ্রাম, ট্রান্স ফ্যাট ২.২ গ্রাম এবং কার্বোহাইড্রেট ৩০০ গ্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হিসাবটি একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য দৈনিক ২,০০০ ক্যালোরির প্রয়োজন হিসাবে গৃহীত হয়েছে।যদি কোনও ব্যক্তি প্যাকেটজাত এবং ফাস্ট ফুড বেশী পরিমাণে গ্রহণ করে তাহলে তার শরীরে লবণ, চর্বি, ট্রান্স ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় অনেক বেশী প্রবেশ করবে যা আপনাকে স্থূলতা, বিপি, ডায়াবেটিসের শিকার বানাতে পারে।
আরও পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন