অসীম পাঠকঃ প্রথম পর্ব- লাল মাটির রাস্তা পেরিয়ে , এবড়ো খেবড়ো কালো পিচ ঢাকা রাস্তার পাশেই শিরীষ সেগুন আর পাইন গাছে ঢাকা বাঁকুড়া জেলার ঐতিহ্য মন্ডিত শালডিহা কলেজ । পাশাপাশি বেশ কয়কটা গ্রাম । ছায়া সুশীতল কলেজ বিল্ডিং পেরিয়ে তিনটে বয়েজ হোষ্টেলে। দিনরাত হৈ হুল্লোড় লেগেই থাকে সেখানে। টিনের চালের কলেজ ক্যান্টিনকে বাঁদিকে রেখে তিনটি হোষ্টেলকে সারিবদ্ধভাবে দুপাশে রেখে বিরাট এক খেলার মাঠ। এক পাশে পুকুর , অন্য পাশে অড়র কলাই চাষের জমি , তারি মাঝে সরু মেঠো রাস্তা চলে গেছে একটি গ্রামের দিকে।
নয় এর শেষ দশকের এক আলোকোজ্জ্বল সকাল। কলেজ ময়দানে সকাল থেকেই মাইকে বাজছে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত “কুছকুছ হোতা হ্যায় ” মুভির হিট গান ….. সবুজ মাঠের বুক চিরে সাদা লাইনের পাশে রঙ বেরঙের পতাকা । চারপাশে কৌতুহলী জনতা । ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি , হাল্কা শীত থেকে গেছে, এলাকার গর্বের প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা । মাইকে ঘোষণা হলো , পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সাদা পায়রা উড়িয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন। টেন্টের পাশে বেশ কিছু চেয়ার পাতা । উঠে দাঁড়ালেন সাদা ধুতি পাঞ্জাবী পরিহিত কালো ফ্রেমের চশমায় সৌম্যকান্তি অধ্যক্ষ মহাশয় । পাশে সাদা টিশার্টের উপর উলেন শার্ট কালো প্যান্ট স্কাই কালারের কেডস পরা কালো সানগ্লাস চোখে পাতলা ছিপছিপে কোঁকড়া চুলের শ্যামবর্ণ তরুণ তুর্কী ছাত্র নেতা , কলেজের জি এস সুব্রত ….
অধ্যক্ষ আর জি এস এমনিতে আদায় কাঁচকলায়, সুব্রত বোঝে আন্দোলন আর বিপ্লব। বাংলায় তখন বাম জমানা । বাম বিরোধী আন্দোলনের এক দৃপ্ত প্রতিবাদ সুব্রতর চোখে মুখে। তার আগুন ঝরা বক্তৃতায় শাসক দলের ঘুম উড়ে যাওয়া অবস্থা। কলেজের সবার কাছে প্রিয়পাত্র এবং রাজ্যের সাংস্কৃতি অঙ্গনে পরিচিত মুখ। অভিজাত জমিদার বাড়ির ছেলে।
যদিও দুদিন আগে গোটা কলেজ জুড়ে কোলাহল গুঞ্জন .. শহর থেকে আসা এক মেয়ে গোটা কলেজের কেন্দ্রবিন্দুতে। তন্বী সুনয়না সুন্দরী স্মার্ট সেই মেয়ে প্রথম দিনেই এক ছাত্রের বেয়াদবীর বিরুদ্ধে এক থাপ্পড় কষিয়ে এখন আলোচনার হেডলিস্টে। সৌমিলি … ঠিক যেনো জীবনানন্দের বনলতা সেন।
জি এস সুব্রত শুনেছে সেই সাহসিনী ও সুহাসিনী মেয়ের কথা । দূর থেকে দেখেওছে , কিন্তু ছাত্র নেতা ব্যাক্তিত্বের পর্দা সরিয়ে আলাপচারিতায় মেতে উঠতে পারেনি। তবে তার বেয়াদপিতে ছাত্র নেতা খুব একটা স্বস্তিতে ছিলো না। সে চায়না তার সাম্রাজ্যের কিছু অঘটন হোক।
খেলা উদ্বোধনের পর সবাই যখন বিভিন্ন ইভেন্ট নিয়ে ব্যাস্ত তখন জি এস সুব্রত মাইক্রোফোনের সামনে বক্তবরত। আর ঠিক তখনই ছাত্রীদের হোষ্টেল টীম সংঘবদ্ধ ভাবে কলেজ মাঠে এন্ট্রি নেয় , তাদের সাথে কলেজের আলোচনার টপ ফর্মে থাকা শান্ত সৌমিলি । সুব্রত কাছ থেকে দেখে, স্থির হয়ে যায় তার চোখের দৃষ্টি। ব্যান্ডের বাজনায় সে যেনো চঞ্চল হয়ে ওঠে । তিনদিনের খেলার সব দায়িত্ব যেনো তার মাথা থেকে সরে যেতে থাকে । ফেব্রুয়ারির সকালেও সে যেনো রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে ।
ভালোলাগার বৃষ্টি । সৌমিলির দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারে না সে, তার সহযোগী সহযোদ্ধা সহপাঠীদের দৃষ্টি এড়ায় না ব্যাপারটা । সুরত যেনো অস্থির, ভালোবাসার প্রথম অনুভব। আগে তো একটার পর একটা অফার সে এড়িয়ে গেছে, তার লক্ষ্য রাজনীতি ….. কিন্তু ছটফট করতে করতে কখনো ক্যান্টিনের কাঠের বেঞ্চে বসে উইলস সিগারেট টানছে কখনো কলেজ ক্যাম্পাসে ইউনিয়ন রুমে চায়ের গ্লাসে আড্ডা কখনো ব্যাডমিন্টন কোডে কখনো খেলার মাঠে ,,,, তার উৎসুক চোখ শুধু সৌমিলিকে অনুসরণ করে । আর সৌমিলি একটার পর একটা ইভেন্টে পুরষ্কার জিতে নিচ্ছে , অবসর সময়ে কলেজের নীচু হয়ে থাকা কদম গাছের ডালে বসে বান্ধবী পরিবেষ্টিত আড্ডায় আচ্ছন্ন। সে যেনো আরো মোহময়ী বুদ্ধিমতী , তার প্রতি পদক্ষেপে আভিজাত্যের ছবি। সাদা চুড়িদারে কালো প্রিন্ট, ফর্সা মুখে লাল আভা …. জি এস সুব্রতর কাছে যা সামথিং ডিফারেন্ট , ভেরি স্পেশাল।
সূর্য যখন মধ্য গগনে তখন সৌমিলি হোষ্টেলের পথ ধরে, দুপাশে বাজার, কলেজ কম্পাউন্ড পেরিয়ে স্কুলের গেটের পরেই সুব্রত দূর থেকে ওয়াচ করে হাঁটতে থাকে । তীব্র ইচ্ছা নিয়েও সামনে গিয়ে বলতে পারেনা হ্যালো ম্যাডাম …….
স্মার্ট ছাত্রনেতা বোকা বনে যায়, মোহাচ্ছন্ন । বেশ কয়েকবার নিজে নিজে রিহার্সাল দিয়েও প্রখর ব্যাক্তিত্ব ময়ী নবাগতার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পারেনা সে । হোষ্টেলের অপোজিটে লাল কৃষ্ণচূড়ার নীচে একটা দোকানে সিগারেট ধরিয়ে সে তাকিয়ে থাকে সৌমিলির চলে যাওয়ার দিকে, যেনো একরাশ শূণ্যতা। মনের গভীরে অব্যক্ত কথার সমুদ্র যেনো উঁকি দেয়। আচ্ছা সৌমিলি কি দেখেছে সুব্রতকে নাকি সৌমিলি বুঝতেও পারেনা এই অবাধ্য প্রেমের প্রতিফলন । সৌমিলি যেনো ধ্রুবতারার মতো স্থির উজ্জ্বল। অলক্ষ্যে যেনো মহাকালের লেখনীতে সময়ের শাসনে বন্দী ইতিহাস কাঁদে। সুব্রত আপনমনে বলে ওঠে
স্তব্ধ হল দশ দিক নত করি আঁখি–
বন্ধ করি দিল গান যত ছিল পাখি।
শান্ত হয়ে গেল বায়ু, জলকলস্বর
মুহূর্তে থামিয়া গেল, বনের মর্মর
বনের মর্মের মাঝে মিলাইল ধীরে।
২য় পর্ব
ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিন সুব্রতর কৌতুহলী চোখ যেনো খুঁজে বেড়ায় কাওকে । না সৌমিলি সেদিন বাড়ির পথে । দীর্ঘ বিরহে সুব্রত যেনো যন্ত্রনাকাতর । যার সাথে প্রেম করার জন্য কলেজের মেয়েরা অস্থির , যার সাথে কথা বলার জন্য মেয়েরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় …. আজ তার হলো কি …. এটাই কি পূর্বরাগ ? জুনিয়র একজনকে মন দিয়ে ফেললো তার অজান্তেই ? আচ্ছা সে যদি সুব্রতকে পছন্দ না করে ? নিজের উপরেই রাগ অভিমান কাজ করতে শুরু করে তার। আত্মসম্মান বড়ো জিনিস। কিন্তু মন যে অবাধ্য হয়ে ওঠে ,গোটা দিনে কোনো কাজে তার মন বসে না । গোটা বিকেল সে দূরে নির্জনে হসপিটাল কম্পাউন্ডে চলে যায় । বেশ কিছু সময় শুধু একা থাকে। অনুচর বন্ধু বান্ধব পরিবেষ্টিত তরুণ ছাত্র নেতা যে ভালোবাসার চোরাবালিতে ডুবে গেছে … রাতে হোষ্টেলে পার্টিতে উস্কোখুস্কো চুল, আপাদমস্তক অবিন্যস্ত সুব্রত হুইস্কির গ্লাসে একটা ছোট্ট চুমুক দিয়ে বলে , আই থিংক , আই ফল ইন লাভ …. গোটা রুমে উল্লাসের ঢেউ । প্রিয় বন্ধু অরুনাভ বলে কে সে সৌভাগ্যবতী , তুই চাইলে আজ ই হাজির করতে পারি । সুব্রত পাশেই বন্ধু ভাই এক বছরের জুনিয়র সুরেশ কে বলে , হোষ্টেলে র কে এখন প্রেম করছে রে , তার কাছে লেটার প্যাড নিয়ে আয় , আমি চিঠি লিখবো । গোটা হোষ্টেলে নৈশ পার্টিতে আনন্দের সুর লহরী খেলে যায় । অরুনাভ বলে , আমরা জানি তুই নতুন পাখী সৌমিলির প্রেমে । গনেশ বলে চুপ চুপ ,,,, বৌদি বল , নাম ধরতে নেই।
ইতিমধ্যে লেটার প্যাড চলে আসে সুব্রত বলে , আমার রুমে যাচ্ছি ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। প্রনবানন্দ বিমর্ষ , কেননা সৌমিলি কে প্রোপোজ করতে গিয়ে থাপ্পড় টা তো সেই খেয়েছিলো । বন্ধু হরেকৃষ্ণ প্রোজ্জ্বল সবাই সমস্বরে সোল্লাসে বলে ওঠে সাধু সাধু। জি এস এর সুমতি হয়েছে । রাজপাল তো হন্তদন্ত হয়ে ছুটে বেড়ায় , কাল সূর্য উঠলেই মাঠে ফাইনাল খেলার প্রস্তুতি ।
একসময় সুব্রতর লেখা শেষ হয় । ডাইনিং রুমে গিয়ে বসতে হয় বলে বসে । কিছুই খায়না । রুমে ফিরে হুইস্কির বাকিটা এক ঢোকে শেষ করে বলে কালই আমি মেয়েদের হোষ্টেলে যাবো। সৌমিলি কে ডেকে ডিরেক্ট বলবো ভালোবাসি । জি এস হিসেবে তার তো অবাধ যাতায়াত। বন্ধুরা বাধা দেয় , বলে আমরা কি জন্য আছি । এতো এতো মেয়ে তপস্যা করলো আর শেষে কিনা সদ্য কলেজ আসা এক জুনিয়র মেয়ে তোর মাথা খেলো। বন্ধু অরুনাভ একধাপ এগিয়ে বলে , কি আছে সৌমিলির মধ্যে । সুব্রত বলে , জানিনা রে …. শুধুই ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে । কি আছে কি নেই তা নয় …. অনেক কিছুই আছে, আবার হয়তো কিছুই নেই তবে ওর চোখের ভাষা আমি পড়তে চাই। আর তো কথা চলে না ।
ঠিক হলো অরুনাভর বন্ধু মধুমিতার হাতে চিঠিখানা দিয়ে বলবে , সৌমিলিকে জি এস এর চিঠি । সৌমিলি রাজি থাকলে বিকেলে যখন সবাই ইভিনিং ওয়াকে যায় তখন ছাদ থেকে জোড়া আঙ্গুলের সিম্বল দেখাবি ।
যতো সব সাংকেতিক চিহ্ন ।
হরপ্পা মহেঞ্জোদাড়োর চেয়ে কম নয় ……
পরদিন কথা মাফিক কাজ ।
ফাইনাল খেলা এবং ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে সুব্রত বিজি । যদিও তার পছন্দের খেলা ক্রিকেট সে নিজেও ক্রিকেট ভালো খেলে। শ্লগ ওভারে দাপটের ব্যাটিং তার। রাজনীতির মতোই আক্রমনাত্মক।
সময় গড়িয়ে চলে সন্ধ্যার পথে।গভীর উৎকণ্ঠা।
সুব্রত বন্ধুদের হাসি ঠাট্টায় নিরুত্তর । সে হারতে শেখেনি। তার মনের আকাশ জুড়ে শুধু সৌমিলি ।
প্রফেসর কোয়ার্টার এর সামনে একটা হোটেলে বসে সে চায়ের আড্ডা জমায় তার শাগরেদদের সাথে । ছাত্র নেতাকে শালডিহা বাজারের সবাই ডাকতো তৎকালীন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের নামে স্টিভ ওয়া । আর তার দুই সহকারী সুরেশ আর প্রনবানন্দকে বলতো শেন ওয়ার্ণ আর ম্যাকগ্রা। উদ্ধত বেপরোয়া ছাত্র নেতার শার্টের কলার তোলা থাকতো । তার ছিলো জেতার আগ্রাসন ….. জীবনে ভালোবাসার প্রথম অগ্নিপরীক্ষার রিপোর্ট আনতে বন্ধু অরুনাভ উত্তরের আশায় সদলবলে হোষ্টেলের সামনে তখন অপেক্ষারত।
৩য় পর্ব
যখন সন্ধ্যা আসছে মন্দ মন্থরে। কোলাহলময় শালডিহার বুক চিরে একফালি আলোর রেখা। অরুনাভ এবং সারথি তাদের দলবল নিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে খবর দেয় সিগন্যাল গ্রিন। সৌমিলি রাজী, এবং রীতি মতো এক্সসাইটেড। অরুনাভ সুব্রতর পিঠ চাপড়ে বলে , তোর বৌ যে গভীর জলের মাছ রে … ওর সাথে কাল কথা বল , আমরা সব ব্যাবস্থা করি।
মরা গাঙে জোয়ারের মতো সুব্রতর জীবন বাগিচায় যেনো ভালোবাসার গোলাপ প্রস্ফুটিত । যদিও তার কোন প্রয়োজন সে অনুভব করেনি, অনেকটা ঝোঁকের মাথায় সে এটা করেছে ।
গোটা কলেজ হোষ্টেল জুড়ে যেনো প্রেমের মরশুম।
সুব্রত চুপ হয়ে গেছে । তার মনের পাগলা ঘন্টা থেমে গেছে যেনো। যে দুধ সাদা আ্যামবেসেডার গাড়িতে চড়ে সে ঘুরে বেড়াতো মাঝে মাঝে , সেটা নিয়ে সে বাঁকুড়া পুরুলিয়া দুই জেলার বোর্ডার পেরিয়ে এক রাজনৈতিক কাজে চলে যায় । গভীর রাতে ফিরে পরদিনের প্রস্তুতি। কিভাবে সৌমিলির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলবে … কি কি বলবে এইসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে সুব্রত ।
পরদিন লাইব্রেরী রিডিং রুমে সিটিং আ্যারেঞ্জমেন্ট। গোটা কলেজ যেনো উৎসুক নয়নে তাকিয়েই ছটফট করছে …. নানা রকম গুঞ্জনে মুখরিত কলেজ চত্বর ।
আদৌ কি তারা নিমগ্ন ?
কালো স্ট্রাইপ দেওয়া শার্ট আর ব্লু প্যান্টের ক্যাজুয়াল ড্রেসে ছাত্র নেতার যেনো কোন বাড়তি কৌতূহল নেই । শুধু একরাশ ভয় , আর চাপা উত্তেজনা । ইউনিয়ন রুমে বসে দৈনন্দিন রুটিন সারে সুব্রত। রিডিং রুমে যেতে গেলে ইউনিয়ন রুমের পাশ দিয়ে যেতে হয়। স্বাভাবিক সুব্রত র চোখ দরজা র ওপারে । হঠাৎই দেখে স্থির দৃষ্টিতে সৌমিলি বান্ধবী নন্দিতাকে নিয়ে রিডিং রুমের পথে চলেছে । দৃঢ় স্বাধীনচেতা সৌমিলির লক্ষ্য প্রসারিত সামনে । অসাধারণ ব্যাক্তিত্বের আলোকচ্ছটায় স্বমহিমায় মহিমান্বিত সৌমিলি।
গোটা কলেজ জুড়ে হয়তো অনেক মুখরোচক গল্প … অর্ধসত্য বা মিথ্যা অপপ্রচার।
প্রতিহিংসার নোংরা রাজনীতি , সস্তা জনপ্রিয়তা অনেক কিছুই চলেছে কানাকানি । কিন্তু যাদের নিয়ে এতো অনন্ত কৌতূহল , তারা কি করেছিলো সেদিন । আলোছায়ার রিডিং রুমে দুজন দুপ্রান্তে বসে সাধারন আলাপচারিতায় ছিলো। প্রেমালাপ তো দূরের কথা …. মনের সংকোচ দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে কেও পারেনি নিজেকে উজাড় করে কাছে আসার কথা। এ যেনো কথা কম নিস্তবব্ধতা বেশি ।নীরবতার ও বোধহয় নিজস্ব ভাষা আছে …. সেই ভাষাই পড়ছিলো সুব্রত । আর সৌমিলিকে যতটুকু জিজ্ঞেস করেছে শুধু সেটুকুর ই উত্তর দিয়েছে। না লাভ ইউ শব্দের কোন ব্যাবহার হয়নি …. এক স্বর্গীয় প্রেমে যেনো অপরাজিতার পরাগ পরশে দুজনের আমন্ত্রণই থমকে ছিলো কোনো অনির্দেশ্য চেতনার প্রত্যন্ত প্রদেশ থেকে। সৌমিলি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সুব্রতর দিকে।
আলাপচারিতা যেমন থেমে যায়না তেমনি এই লাভ স্টোরি নিয়ে অনেক গল্প রটে যায় নিছকই বিনোদনের স্বার্থে। কলেজের জি এস বলে কথা। জনপ্রিয় ছাত্র নেতা । অপোজিশনের তো আক্রমনের ব্যাপার থাকবেই , তার উপর অনেক মেয়ে যারা মনে মনে সুব্রতকে চেয়েছিলো তাদের চোখে সৌমিলি টারগেট হয়ে পড়ে ।
সুব্রত সব জানতো । সৌমিলিকে সেফ রাখার জন্য তার নেটওয়ার্ক ও ছিলো দারুণ ।
এভাবে পরদিন সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় মুখোমুখি দুজনেই । খোলা চুলে সৌমিলি যেনো আরও দুরন্ত। প্রথম বৃষ্টির মতো প্রাণবন্ত …. সাদা টিশার্টে স্মার্ট সুব্রত সৌমিলির সামনে এসে শুধু বলে , কেমন ক্লাশ হচ্ছে ? সব ঠিক আছে তো ….. ইতিমধ্যে সৌমিলির ব্যাচমেট অস্মিতা এসে দাঁড়ায় , সৌমিলিকে ডেকে ওঠে বৌদি বলে … গোটা কলেজের ব্যালকনিতে সবার উৎসুক চোখ। সুব্রতর মাথা নীচু । এরপর কলেজের লাল মোরাম রাস্তা পেরিয়ে কালো পিচ ধরে হেঁটে চলে । একসাথে সাত পাকে ঘোরা না হোক , তারা হেঁটেছে জীবনের ভালোবাসার অনুভূতিকে জাগিয়ে অনেক স্বর্ণালী মুহূর্তকে সঙ্গী করে …. বিঘোষিত হয়েছে জীবনের জয়মন্ত্র ।
“অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।।” অর্থাৎ, আত্মার কখনও জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না, অথবা তাঁর উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না। তিনি জন্মরহিত, শাশ্বত, নিত্য এবং পুরাতন হলেও চিরনবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনও বিনষ্ট হয় না।
দুজনে ভিড় বাসে পাড়ি দিয়েছে শহর বাঁকুড়ার পথে … কিন্তু কেও কখনও শালীনতার সীমা অতিক্রম করেনি । দুঃস্বপ্ন শাসিত ব্যাবধান নয় …. একজন আর একজনের প্রতি ছিলো গভীর শ্রদ্ধাশীল । অন্তরের নিগূঢ় ভালোবাসার তত্ত্বকথায় তাই আন্দোলিত হয়েছে একজনের প্রতি আর একজনের গভীর বিশ্বাস । পরম মমতায় ভালোবাসার চারাগাছকে তারা বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিলো সমালোচনার সুনামিকে পদদলিত করে ।
কলেজের সার্বিক ছাত্র নেতা সুব্রতর বক্তব্যের সময় সৌমিলি মাথা নীচু করে শোনায় , একসাথে পথ হাঁটায় , নির্জন দুপুরে ভিড় বাসের সফরে … তারা কখনোই উদ্দাম বাঁধনহারা হয়নি ।
যখন কনফারেন্স রুমে সুব্রত বক্তব্য রাখতো তখন সৌমিলি মাথা নিচু করে মুচকি হাসতো। সুব্রত র চোখে চোখ পড়লে ইশারা করত বাইরে যাবার। দুজনেরই একটা পছন্দের জায়গা ছিল, সেটআ হল হাসপাতাল কম্পাউন্ড। আত্মসংযম আর ভালোবাসার সংযোগকে তারা রক্ষা করে গেছে । কখনও হোষ্টেলে গেটে সুব্রতর ক্যামেরা ক্লিক করেছে , সবুজ ছাতায় একটু হেসে মুখ লুকিয়েছে সৌমিলি ।
এই রোমান্টিক ফ্যান্টাসি গুলোই জীবনের সম্পদ ।
তারা ভরা আকাশের ঔজ্জ্বল্য।
বসন্তের শুরুতে যে প্রেমের আবাহন তা যেনো গ্রীষ্মের ছুটিতে বিরতির পথে এবার ।
কয়েকটা মাস যেনো স্বপ্নের মতো …. অনেক না বলা কথার ঝংকার । সুব্রত ভাবতো অনেক কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি । সৌমিলি সব বুঝে চুপ করে থাকতো । রাজনৈতিক বাধা , জি এসের প্রেম নিয়ে সমালোচনা এসবের কারনেই সুব্রত ইচ্ছে থাকলেও বলতে পারেনি , চলো না কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় বসি। ওটা তো কলেজের লাভ পয়েন্ট ….. হয়ে ওঠেনি, নেতৃত্বের দায়বদ্ধতায় অনেক কিছুই হয় নি। তবুও নবোদিত সূর্যের দিকে সুব্রতর মনের গভীরে বাজতো সৌমিলির প্রতি ভালোবাসার ভৈরবী মূর্ছনা।
৪র্থ পর্ব
গ্রীষ্মের ছুটির দীর্ঘ বিরতির পর সবুজ শ্যামলিমায় যখন প্রকৃতি সজ্জিত নবরূপে , একমাস ছুটিতে সুব্রত যেনো ভালোবাসার প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে আন্দোলিত হয়েছে । তার মনের মর্মমূলে আগামীর উজ্জ্বল স্বপ্ন । এরি মাঝে সৌমিলির প্রিয় বান্ধবী নন্দিতার এক দূর সম্পর্কের দাদার সাথে একদিন মহকুমা শহরে দেখা হওয়ায় সেও মজা করে বলে , আরে তোমাকে তো এবার থেকে জামাই বাবু বলতে হয়, সুব্রতর ভালোবাসার আকাশ জুড়ে যেনো রামধনুর খেলে যায়। অথচ এখনো তো তাদের হাতে হাত রেখে জীবনের উষ্ণতা অনুভূত হয়নি। এখনো দুজন দুজনের চোখে চোখ মিলিয়ে বলেনি , ভালোবাসি ভালোবাসি । মাঝখানে একদিন সুব্রত শহরে গিয়ে কয়েকদিন থেকে চেষ্টা করে সৌমিলির সাথে যোগাযোগ করার , হয়ে ওঠেনা । বাড়ির অনতিদূরে আইসক্রিম ফ্যাক্টরি অবধি গিয়েও পারেনা বাড়ির সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজাতে । অনেকবার সৌমিলিকে দেখার তাগিদে সুব্রত মন্ত্রমুগ্ধের মতো হেঁটে যায় সৌমিলির বাড়ির রাস্তা দিয়ে , কিন্তু বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে আসে । দেখা হয় না। বেশ কয়েকবার রিসিভার কানে নিয়েও সৌমিলির নাম্বার ডায়াল করতে চেষ্টা করেও পারেনা। এ যেনো বিরহের অগ্নিস্নানে পরিশুদ্ধ দুজনেই।
দুজনের মনেই অলীক কষ্ট কল্পনা। রূপকথার গল্পের মায়া, ভালোলাগার মোহ। এই সময় নবাগত ছাত্র ছাত্রী দের ভর্তির সময় … আন্দোলনে নামে অকুতোভয় লড়াকু ছাত্র নেতা। প্রেমের অভিকর্ষ থেকে মন সরে বিপ্লবের বহ্নিশিখায় … আন্দোলন আর মিছিলে অপ্রতিরোধ্য সুব্রতর দুর্বার গতি …. এরি মাঝে দু একদিন দেখা হয় সুব্রত সৌমিলির, টুকরো কিছু কথা । কিন্তু ছাত্র নেতার দুচোখে তখন গনতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের দাবী, সে যেনো পথের দাবীর সব্যসাচী।
প্রেমের চেয়েও বড় তার দায়িত্ব । তার প্রেম নেই বিরহ নেই সে এক জ্বলন্ত মশাল ছাত্র আন্দোলনের । আন্দোলনের চাপে কলেজ সাময়িক বন্ধ হয়ে যায় …. কলেজ কতৃপক্ষ ছাত্র আন্দোলন কে দমানোর চেষ্টা করে । নড়ে চড়ে বসে কলেজ পরিচালক মন্ডলী সহ জেলা প্রশাসন। রোমান্টিক ভাবনার অবকাশ জোটে না । এই এরকমই এক বর্ষাস্নাত সোনাঝরা সকালে ছাত্রীদের নেত্রী সোনালী খবর দেয় … হঠাৎই সৌমিলির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । কল্পনার বালুচরে স্বপ্নের প্রাসাদ ভেঙে পড়ে সুব্রতর । সে যেনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে । সে যেন হেরে যায় জীবনের যুদ্ধে , অদৃশ্য কোনো এক জাদু শক্তির কাছে সে যেনো পরাজিত। বিধ্বস্ত , ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত । তার ক্লান্ত মনের কোনে ভালোবাসা শব্দটা বিদ্যুৎ ঝিলিকের মতো মিলিয়ে যায় । সুব্রত যেনো অভিমান হতাশার চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে । কোনো কথা না বলে কালো রাজদূত বাইকে স্টার্ট দিয়ে জেলা শহরের পথে বেড়িয়ে পড়ে , সন্ধ্যায় ছাত্র আন্দোলন নিয়ে জেলা শাসক মহাশয়ের সাথে জরুরী বৈঠক ।
অবশেষে ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ গোটা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । রাজ্যের নেতা নেত্রীরাও সুব্রতর নাম তার সাহসের সাথে পরিচিত হয় । জেলা জুড়ে একটাই কথা , আন্দোলনের এক নাম সুব্রত। প্রেমের সময় আর নেই, সুব্রতর মর্মে চেতনায় এক নতুন দিনের আলোক প্লাবন।
কলেজ কতৃপক্ষ পিছু হঠতে বাধ্য হয়। ছাত্র সংসদের সব দাবী মেনে আবার কলেজ খোলা হয়। সব স্বাভাবিক শুধু সুব্রত কেমন যেনো নিস্পৃহ নিরাসক্ত । শ্রাবনের এক ঘন ঘোর বর্ষামুখর মুহূর্তে সানাইয়ের সুরে সুব্রত যেনো উতলা হয়ে ওঠে । অথচ নিরুপায় ।
ছাত্র নেতা সৌমিলির বাড়ির এক কিমির মধ্যেই থাকতো আন্দোলনের এক মাস। সুরেশ বিয়ের দিন খবর দেয় , বলে যাবে নাকি ?
সুব্রতর অসহায় দৃষ্টিতে প্রতিবাদ প্রতিরোধ কিছুই থাকেনা ।
একদিকে আলো ঝলমলে স্বর্ণালী সন্ধ্যা … কনের সাজে অপরূপা সৌমিলি, আর একদিকে কাফেটেরিয়ার সামনে সুব্রতর হাতে হুইস্কির গ্লাস।তন্দ্রাজড়ানো স্বপ্নালু চেতনায় সুব্রতর মনের মানসী হারিয়ে যাচ্ছে । এক বুক শূণ্যতা ….. তার চেয়েও বড় কখনো না হারা অপরাজেয় গ্ল্যামারাস ছাত্র নেতা যেন হেরে গেলো বিশেষ একজনের কাছে। সুব্রতকে অনেকে চাইলেও এই প্রেম তাকে মনে করায় রাজনীতিবিদের প্রেম করতে নেই। আকাশের গাঢ় অন্ধকারে একটা বোবা যন্ত্রণা যেনো সুব্রতকে কুরে কুরে খায়।
এক বিয়োগাত্মক প্রেমের নিদারুণ পরিণতি …. অথচ কি আশ্চর্য এটাই তো স্বাভাবিক। ভবিতব্য ….
এটাই বাস্তব ….
চরম দুঃসময়েও কবিতা ছেড়ে যায়না সুব্রতকে । সে রাজ্য সেরা আবৃত্তিকার । আকন্ঠ হুইস্কি গিলেও সে বলে ওঠে
… “হেরি অহরহ তোমারি বিরহ ভুবনে ভুবনে রাজে হে।
কত রূপ ধ’রে কাননে ভূধরে
আকাশে সাগরে সাজে হে।
সারা নিশি ধরি তারায় তারায়
অনিমেষ চোখে নীরবে দাঁড়ায়, পল্লবদলে শ্রাবণধারায় তোমারি বিরহ বাজে হে”।।
৫ম পর্ব
কেটে গেছে দীর্ঘ দিবস রজনী , সব কিছু ই এখন শান্ত … ঠিক প্রচন্ড বর্ষায় নদীর বন্যায় যেমন দুকুল ভাঙে ,,,, বর্ষা থামলে নদীর পাড়ে সবুজ শ্যামলিমায় আবার প্রাণের স্পন্দন , জেগে ওঠার লক্ষণ প্রকাশ পায় মানবমনে … যাবতীয় প্রতিকূলতাকে পদদলিত করে এক নূতন লড়াই , তেমনি সুব্রত সৌমিলির নিস্তরঙ্গ জীবনে বৈপরীত্য।
যেনো পরিচিত ছন্দের মধ্যেও জীবন বীনার সুরে কোথাও একটা আক্ষেপ। তবুও পথ চলাই জীবন । সুব্রতর লক্ষ্য সামনের ছাত্রসংসদ নির্বাচন এবং কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।
এরি মধ্যে সৌমিলি কলেজ আসে। প্রথম দিন সুব্রতর সাথে দেখা হয়ে যায় হঠাৎই। গেটের মুখে লাল মোরামের রাস্তার পাশে শিরিষের ছায়ায় দুজনে দাঁড়ায়। খুব একটা কথা নয় , তবুও দুজনের সেই আত্মপ্রত্যয়ী দৃষ্টিতে যন্ত্রণা নয় , ভালো লাগার অনাবিল উচ্ছ্বাস । যেনো গভীর মমতায় আকাশের কানে বাতাসের ভালোবাসার কথা, “তোমার হলো শুরু আমার হলো সারা”…..
সুব্রতর বন্ধুর দল একে একে মুচকি হেসে পথ পার হয়, সুব্রতর যেনো ভ্রুক্ষেপের ভ্রুকুটি নেই ।
সৌমি্লি শুধু বলে, নিজের খেয়াল রেখো । তারপর বলে চলো রেস্টুরেন্ট যাবে …. সুব্রত বলে আজ থাক , সৌমিলি বাড়ি চলে যায় । তারও এক নতুন জগতের হাতছানি , এক নূতন জীবন। স্বপ্ন ভরা দুচোখে আগামী র প্রতীক্ষা। সৌমিলির ধৈর্য্য বুদ্ধিমত্তা , ধীর স্থির শান্ত ভাব যেনো তাকে লড়ার প্রেরণা দেয় নিরন্তর।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে রাজ্য সেরা আবৃত্তিকার ছাত্র নেতা সুব্রতর কন্ঠে ধ্বনিত হয় “কেও কথা রাখেনি” কবিতা । পুরো মঞ্চ নিশ্চুপ । মঞ্চ থেকেও সে যেনো খুঁজে ফেরে কাওকে। না দৃষ্টি সীমার মধ্যে নেই সেই পরিচিত নীহারিকা সৌমিলি।
এবার তার লক্ষ্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এরি মাঝে সবিতা নামের এক মেয়ে একদিন কলেজ ক্যাম্পাসেই সুব্রতর সাথে ব্যাডমিন্টন খেলতে খেলতে তাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয় । এর আগেও সুব্রতর একই ডিপার্টমেন্টের মেয়ে লীনা দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও পারেনি তার মন জয় করতে। স্বাভাবিক সবিতার প্রস্তাবে চমকে ওঠে সুব্রত , তার চোখে মরুদ্যানের মতো শুধুই সৌমিলি। সেখানে না কেও ছিলো তবে আর কেও থাকবে না এমন নয়। ভালোবাসার সীমারেখায় জীবন যেনো দিগন্ত রেখার গোধূলি । যে আলোয় মায়া আছে , ছায়া আছে , স্বপ্ন মদির আশা আকাংখা আছে। সবিতাকে বোঝায় সুব্রত , সে পারবেনা । অভিমানী সবিতার অশ্রুবিন্দুও টলাতে পারেনা দুর্দমনীয় ছাত্র নেতা সুব্রতকে। সুব্রত প্রথম প্রেম কবিতা আর দ্বিতীয় রাজনীতি ।
সোনাঝরা শীতের সকাল রাজনৈতিক বক্তব্য রাখতে চলেছে তরুন তুর্কী নেতা , সেদিনই কলেজে সৌমিলি তার পরীক্ষার সেশন নিয়ে কথা বলে । জেলা রবীন্দ্র ভবনে তখন বই মেলা চলছে। সৌমিলি চলে যাবার পর রাজনৈতিক বক্তব্য সেরে সুব্রত বাঁকুড়ার বাস ধরে , ভাবলো সৌমিলিকে ফোনে ডেকে নেবে বই মেলায়। শীতের সন্ধ্যা নীল জ্যাকেটের কলার তুলে এস টি ডি বুথ থেকে ডায়াল করে সৌমিলির বাড়ির নাম্বার …. ওপ্রান্তে সৌমিলি কথা বললেও সংযত , ভাবলেশহীন কন্ঠস্বর। সুব্রত বলতেই পারে না যে এসো বই মেলাতে এককটু পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটি। এটাও যেনো জীবনে অনেক না পাওয়ার মধ্যে শূণ্যতার বোঝা বাড়ানো এরকম ই একটা চাওয়া। সৌমিলি চাইছিল একবার অন্তত সুব্রত তাকে ভাকুক, সেও যে অভিমানে জর্জরিত ।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্য আসে । বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় সবকটি আসন , অবশ্যই সুব্রতর ব্যাক্তিগত ক্যারিশমা এবং স্ট্র্যাটেজি এই সাফল্যের কারিগর ।
সৌমিলির দৈনন্দিন রুটিনে কোন ব্রেক আসে না । তবে অনেক ঘাত প্রতিঘাত প্রতিকূলতাকে সে অবলীলায় জয় করেছে । সৌমিলির ইস্পাত কঠিন মানসিকতা, অদম্য ইচ্ছাশক্তি বারবার জেতার বার্তা দেয় ।
এরপর আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট কাউন্সিল নির্বাচন । রাজ্য নেতৃত্ব প্রার্থী করে সুব্রতক। নমিনেশনের জন্য কোলকাতা যেতে হবে । দুদিন পরেই দোল উৎসব … সদলবলে কোলকাতার পথে সুব্রত । মাঝখানে ট্রেন বদল … খড়্গপুরে এসে দেখে ভোরের আগে ট্রেন নেই । গোটা রাত কোলাহলময় প্লাটফর্মে কাটাতে হবে । আবার খড়্গপর সৌমিলির শ্বশুরবাড়ির শহর । সুরেশ মজা করে বলে , দাদা বৌদির সাথে একবার দেখা করতে যাবে ? সুব্রত সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করে বলে সৌমিলিকে এখনো আমি ভালোবাসি, যে কজন মেয়ের সান্নিধ্যে এসেছি সে অবশ্যই আলাদা। যদি জীবন প্রদীপ নিভে যাবার আগে অবধি ভালোবেসে যাই আর কাওকে তবুও তাকে ভুলবোনা। কেও কথা বাড়ায় না আর , সুব্রতর কথা শুনে সবার চোখের কোনে জল চিকচিক করে।
স্টেশনের সেই কাঠের বেঞ্চে বসে গোটা রাতের আলোচনা জুড়ে শুধু সৌমিলি।ব্যাস্ততম রেল স্টেশনের এক কিমি র মধ্যে সৌমিলি ও কি এভাবেই নিঝুম রাতে একবারের জন্যও ভেবেছিলো সুব্রতর কথা ? এ প্রশ্নের উত্তর হয় না।সুব্রতর ভালোবাসার এই পাগলামি সৌমিলি টেরও পায়নি কোনোদিন । তবে একদিন শনিবার হাফডের দুপুরে কলেজের ছাদে যেদিন প্রথমবার নিজের অজান্তেই কিস করেছিল সৌমিলিকে, সুব্রত তাকে ডাকতো পেত্নী বলে। সৌমিলির বন্ধু রা যদি বলতো তোকে পেত্নী বলে আর তুই চুপ থাকিস , তখন সৌমিলি বলতো আমি মা তাই বলে। তার সেই প্রথম চুমুর অনুভূতি এতো তীব্র ছিলো মে দুদিন স্মার্ট নেতা সুব্রত সৌমিলির দিকে তাকাতে পারে নি। সৌমিলি সেটাবুঝতো আর মজা করে বলতো কি হয়েছে ? সুব্রত সানগ্লাস টা পরে মিষ্টি করে তাকিয়ে বলতো চলো হাসপাতাল কম্পাউন্ডে বসি।
কোর্ট কাউন্সিল নির্বাচনে সুব্রত জিতে যায় । সে তো কখনও হারেনি , শুধু সৌমিলি র কাছে , তার ভালোবাসার জলসাঘরে সে যেনো একা হয়ে গেছে। অবশেষে ফাইনাল পরীক্ষার দিন এগিয়ে আসে । শেষ পরীক্ষার শেষদিন সুব্রতকে কে যেনো ডাকে , অন্যমনস্ক থাকায় খেয়াল হয়না । পাশে একজন দূরে আঙুল দেখিয়ে সুব্রতকে বলে তোমাকে ডাকছে । সুব্রত তাকিয়ে দেখে সৌমিলি।
টুকরো টুকরো কথা । খোঁজ খবর , আলাপচারিতায় কয়েকটা মুহূর্ত শুধু ।
হোষ্টেলে ফেরার পথে সুব্রত যেনো আবেগবিহ্বল । সৌমিলি কে যেনো নতুন করে অনুভব করে । সৌমিলি র উজ্জ্বল ফর্সা মুখে সে যেনো শতাব্দীর ক্লান্তি মুছে নিতে চায় । এভাবেই মহাকালের অমোঘ নির্দেশে সব কিছুই বয়ে চলে সময়ের দুরন্ত স্রোতে। এখানে দিন রাতের মালায় শিলবতী আর কাঁসাই কুমারীর সংগমে বয়ে চলা অনেক জলে সব কিছুই পরিণত হয়ে ওঠে । পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে চলে জীবন তরী ।
শেষ পর্ব
জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে অনুভব আর উপলব্ধির খেলা। এরপর অতিক্রান্ত কুড়িটি বসন্ত । কালো চুলে রূপালী প্রলেপ। সুব্রত এখন জননেতা। জেলার পরিচিত মুখ, রাজনীতি তার ধ্যান জ্ঞান। একমাত্র মেয়েই তার বড়ো বন্ধু। ব্যাক্তিগত জীবনে প্রাচুর্য আর বিলাসিতার মধ্যেই সুব্রতর বড়ো হয়ে ওঠা।
২০২০ র শুরু থেকেই কোভিড পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত জনজীবন । দিনযাপন প্রাণ ধারণের গ্লানি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাতিক্রমের কালো মেঘ। ব্যাস্ততার চাদর সরিয়ে গৃহবন্দী সবাই । স্মার্টফোনই যেনো সবচেয়ে বড়ো সঙ্গী । শুরু হয় একের পর এক বন্ধুদের গ্রুপ । কাজের চাপে সবাই ছুটছিলো সমুখ পানে। এখন এক নস্টালজিক অনুভূতি, পেছন ফিরে দেখার তাগাদা।
শালডিহার প্রাক্তনীদের সংযোগ ঘটে একের পর এক ভিড় করে মনের আকাশে। এপ্রিল থেকেই যখন গৃহবন্দী সবাই , তখন বন্ধুদের এসব আড্ডাই হয়ে ওঠে অবসর বিনোদনের মাধ্যম। আগষ্টের মাঝামাঝি , সুব্রতর কলেজের বন্ধু এবং জুনিয়ররা আড্ডায় মাতে। দূর্গা মেসেঞ্জার গ্রুপ ক্রিয়েট করে, বন্দনা সুব্রতকে বলে সৌমিলির কথা। সুব্রত যেনো আবেগ বিহ্বল, জীবনে চলতে চলতে সে ভুলেই গিয়েছিলো এই এক টুকরো ফেলে আসা অতীতকে। এতো বছরে সে একবারও খোঁজে নি তাকে। না কোন অভিমান ক্ষুব্ধতা নয় … সৌমিলির প্রতি তার কোন অনুযোগ অভিযোগ কখনো নেই । যা আছে তা প্রাণঢালা ভালোবাসা , ভরসা বিশ্বাস শ্রদ্ধা।
হঠাৎ ই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সেন্ড করে সৌমিলি সুব্রতকে । তার কয়েকদিন আগেই সুব্রতর জন্মদিন ছিলো , কলেজের গ্রুপে সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছে , সৌমিলি পার্সোনাল মেসেঞ্জারে লিখেছিলো , বিলেটেড হ্যাপি বার্থ ডে , তারপর একটা লাভ ইমোজি বেগুনী রঙের। সুব্রত ঠিক সময় করে উঠতে পারেনি সোস্যাল মিডিয়াতে আসার কয়েকদিন ব্যাক্তিগত কিছু কাজে।
রিকোয়েস্ট আ্যাকসেপ্ট করেই এক সন্ধ্যায় সুব্রত মেসেজ করে , হ্যালো ম্যাডাম। একটু পরেই সৌমিলির জবাব , কেমন আছো ?
এ যেনো শব্দহীন মন্থরতা । আঙ্গুল গুলো টাইপে মেতে ওঠে, আকাশে ঘনঘোর বর্ষা তখন। সুব্রতর মনের আকাশে বাঁকা তৃতীয়ার একফালি চাঁদের মতো সৌমিলি জ্বলজ্বল করে । এখনো সেই একই আবেগ একই অনুভূতি। এক দুরন্ত জলপ্রপাতের মতো সৌমিলি দখল করে নেয় সুব্রতর ভাঙাচোরা মনের পাটাতন। রাত জাগার ক্লান্তি নেই , থাকে শুধু ব্যাকুলতা, সৌমিলি কখন আসবে … তার নামের পাশে জ্বলবে সবুজ লাইট ।
মেতে উঠবে মনের কাটাছেঁড়ায়, কতো না বলা কথা …. সময়ের দুর্বার স্রোতে যা অমলিন । সৌমিলি যেনো এতোটুকু ও বদলায়নি। দুজনের দুটি পথ আলাদা , জীবন বৃত্ত আলাদা …. কিন্তু অনুভব যেনো এক । সুব্রত বলে তুমি তো আমাকে ভুলে গিয়েছিলে । শান্ত সৌমিলি ধীর স্থির ভাবে বলে , সব কি ভোলা যায় ? এ কথায় ঝংকৃত হয় ভালোবাসার জয়গান । সত্যিই সব বদলালেও ভালোবাসার সংজ্ঞা বদলায় না । তার অনুভূতি শুকতারা র মতো স্থির । সুব্রতর ক্লান্ত মন যেনো সৌমিলি র ছায়ায় বিশ্রাম নিতে চায় । একের পর এক মিটিং জনসভা জন সংযোগ প্রশাসনিক কাজ ভিজিট , তাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিলো ।
গ্রীস্মের প্রবল দাবদাহে পর প্রথম বর্ষায় যেমন।প্রকৃতি সজীব হয়ে ওঠে …. বর্ণময় জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ভালোবাসার জলসাঘরে যেনো রঙিন হয়ে উঠতে চায় … পেখম মেলে উড়তে চায় অজানার পথে । ঋতুবৈচিত্রে মন যেনো রাঙিয়ে দিয়ে যায় জীবনের জটিল অধ্যায়গুলো । সুব্রতর স্বপ্নের গভীরে মঞ্জরিত সৌমিলি । মাঝে মাঝে সৌমিলি র আবেগ ভরা শাসন ভালো লাগে সুব্রতর। খোঁজ রাখে সে সবকিছু।
না কোন অপরাধ বোধ নয়, এক পবিত্রতার বন্ধন। দূর থেকেই যেনো অপার অবগাহন সৌমিলির ভালোবাসার সমুদ্রে। কথার সমুদ্র মন্থনে মেতে ওঠে দুজনেই, একজন বলে যায় , শোনে অন্যজন।
পূজোর সময় রাত অবধি আড্ডা চলে অন লাইনে। সৌমিলি সব সময় খবর রাখে সুব্রতর। একটু শরীর খারাপ হলে অস্থির হয়ে ওঠে। দীর্ঘসময় ধরে ফোনে কথা হয়। আবার বর্ষবিদায়ের রাতেও সেই অঙ্গীকার পাশে থাকার। সৌমিলিকে স্পর্শে নয় স্পন্দনে অনুভব করে সুব্রত। বিয়োগাত্মক প্রেমের মিলনাত্মক অধ্যায় নয়, বিরহের মধ্যেই যেনো প্রেমের সার্থকতা। ভালোবাসা বন্ধুত্বের রসায়নে এক নিবিড় সংযোগ। এভাবেই পেরিয়ে যায় বাকী সময় … নিরলস গতিতে ঘুরে চলে সময়ের কাঁটা । সৌমিলি সবসযয় সময় করে উঠতে পারেনা । সুব্রতর রাজনৈতিক চাপ …. দুজনের ই কর্মব্যাস্ততার মাঝে বেশ কিছু সময় ধরে কথা চলে ভালোবাসার। মাঝে মাঝে ভিডিওকলে সৌমিলি দেখতে চায় সুব্রতকে। সৌমিলি কোথাও বেড়াতে গেলে সুব্রতর দুষ্টুমি করে বলে ছবির পাঠাও। এটুকুই যেনো জীবনের রসদ, প্রাপ্তির ভান্ডারে অমৃত । সুব্রতর কবিতায় গল্পে মনের অবচেতনে শুধুই সৌমিলি ।
সৌমিলিই যেনো তার অবসন্ন মনে নতুন ভালোলাগার প্রকাশ। সে প্রেরণা হয়ে ওঠে। এভাবেই একদিন সৌমিলি জেলা শহরে এলে সুব্রত দেখা করতে চায় ।
দেখা হয় সেখানেই , যেখানে সুব্রত সৌমিলির জন্য অপেক্ষা করতো বাইশ বছর আগে। যেখানে তার স্বপ্ন কন্যার প্রতিচ্ছবি সযত্নে সাজানো । এক সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যা। মায়াবী আলোয় ভাসছে শহর বাঁকুড়া । মুখোমুখি দুজন ….. কথা কম , অনুভূতি বেশী, এও কি সম্ভব ….. এক সরলরেখায় একই অভিকর্ষে জীবন মেরুর দুটি বিন্দু। কতো দিন পর দেখা …. অপলক নির্নিমেষ সুব্রত দেখে তার মনের মানসী কে, তার প্রথম প্রেম … তার সর্বৈব সত্তায় যার অবাধ যাতায়াত । যার অনুভূতি তে তার মিশে যাওয়া, যেনো তিস্তার বুকে ব্রহ্মপুত্রর মিশে যাওয়া, আলো ছায়ার অপরূপ খেলা।
পাশাপাশি হেঁটে চলে তারা … আগামীর স্বপ্ন নেই , মিলনের আকাংখা নেই … আছে শুধু সুদূর বর্নহীন ধূসর দিগন্তের কোনে মিলিয়ে যাওয়া। শুধু ভালোবাসার পদচিহ্ন থেকে যাবে । নির্মল প্রেমের আলোয় জীবনের সীমারেখায় এও এক মিলন । অপার্থিব চেতনার সংমিশ্রণে ঐশ্বরিক প্রেম । সুব্রত তার মনের সাম্রাজ্ঞীকে হারাতে চায়না । সময় হয়ে আসে সুব্রতর ফেরার । হাত নাড়তে নাড়তে গাড়ির দিকে এগোয়। যে যার গন্তব্যের পথে …. শুধু জেগে থাকবে মনের বাগিচায় এই সুন্দর সন্ধ্যার ছবি, নীরবে নিভৃতেই তার বিস্তার।
জীবন মৃত্যুর সীমারেখায় বোধহয় সবচেয়ে জটিল অগ্নিপরীক্ষা জীবন্মৃত হয়ে অস্তিত্বের নিরাপত্তা বলয়ে ভালোবাসা কে প্রস্ফুটিত করা। প্রেমহীন পৃথিবী থেকে নিঃশব্দ বিদায়ের নিরুচ্চারিত মুহূর্তে নিছকই মান অভিমানের চোরাস্রোতে বিলীন হয়ে যাওয়া, ভালোবাসার অতিবেগুনি রশ্মি তে জীবনবোধের থাবা বিমর্ষ বিবর্ণ বিকৃত করে তোলে রাগ অনুরাগে জলছবি। ভালোবাসা আমাদের জীবনের শাসক ও নিয়ন্ত্রক। পবিত্র সমাধির প্রাচীন গন্তব্যে ভালোবাসা বিদ্রোহ নয় , তাই আঘাত প্রত্যাঘাত সরিয়ে শুধু ভালোবাসার সুর মূর্ছনায় সব শান্ত, সব শান্তির প্রবাহ জীবন সমুদ্রের মোহানায়। জীবন বীনায় ভালোবাসার রাগিনী থেমে গেলে আমরা সবাই জীবন্মৃত।।
…… সমাপ্ত …..
আরও পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন