

উত্তরাপথঃসাধারণভাবে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়কে ধ্বংসের সমার্থক বলে মনে করা হয়।কিন্তু এমন একটি সামুদ্রিক পাখি রয়েছে যারা এই ঘূর্ণিঝড়কে তাদের খাবার খুঁজে পাওয়ার সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করে।সম্প্রতি current Biology জার্নালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে যেখানে ডেজার্টাস পেট্রেল, নামে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের এই ছোট পাখিটি, দীর্ঘকাল ধরে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখে দীর্ঘ দূরত্ব উড়ে যায় এবং নিজেদের খাবার খোঁজার চেষ্টা করে।
এই আচরণের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল যে ঘূর্ণিঝড় সামুদ্রিক পাখিদের খাদ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য এক আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করে। একটি ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিশালী বাতাস এবং মন্থনকারী জল মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীবনকে পৃষ্ঠের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে, যা সামুদ্রিক পাখিদের তাদের শিকার ধরাকে সহজ করে তোলে। ঘূর্ণিঝড়ের দিকে উড়ে যাওয়ার মাধ্যমে, ডেজার্টাস পেট্রেল ঝড়ের পরবর্তী সময়ে এই অস্থায়ী প্রাচুর্যের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে বলে প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীদের ধারনা।
অতিরিক্তভাবে, ডেজার্টাস পেট্রেল হল একটি দীর্ঘতম দূরত্ব অতিক্রম করা পরিযায়ী পাখি, প্রতি বছর এরা প্রজনন এবং থাকার জায়গার সন্ধানে হাজার হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করে। ঘূর্ণিঝড়ের দিকে উড়ে যাওয়ার সময় এই পাখিটি ঝড়ের কারণে সৃষ্ট শক্তিশালী বাতাসের সাহায্যে সহজেই অনেক দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের সাথে দূরত্ব অতিক্রম করার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, এই আচরণ বেশ কিছু ঝুঁকি নিয়ে আসে এই পাখিদের জীবনে। এই ধরনের চরম আবহাওয়ায় উড়ে যাওয়ার সময়, শক্তিশালী বাতাস এবং উত্তাল বাতাস পাখিদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তবে , ডেজার্টাস পেট্রেলের বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ঝড় থেকে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলি অতিক্রম করার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে, যা তাদের এই চ্যালেঞ্জিং পরিবেশেও নিজেদের খাবার খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
জীববিজ্ঞানী ফ্রান্সেস্কো ভেনচুরা এবং তার সহকর্মীরা একই সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের কার্যকলাপের প্রভাব ডেজার্টাস পেট্রেলের জীবনে কতটা পড়ছে তা ডেটা সহ বিশ্লেষণ করেছেন। তারা চারটি প্রজনন ঋতুতে ৩৩ টি পাখির দেহে জিপিএস লাগিয়ে ,তারপর সেই জিপিএস ইউনিট থেকে ট্র্যাকিং ডেটা একত্রিত করেছেন। এই পাখিদের প্রজনন স্থান ও বসবাস স্থানের মধ্যে ব্যবধান প্রাণীজগতের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম,অর্থাৎ তারা বুজিও দ্বীপে বসবাস করলেও সেখান থেকে প্রায় ১২,০০০ কিলোমিটার দূরে অর্থাৎ ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার উত্তরে, নিউফাউন্ডল্যান্ডের দিকে এর প্রজনন স্থান।বিজ্ঞানীদের মতে শুধুমাত্র জিপিএস ডেটা তাদের সুনির্দিষ্ট আচরণের উপর আলোকপাত করার জন্য যথেষ্ট নয়।
ভেঞ্চুরা বলেছেন যদিও “আমরা এখনও চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া থেকে অনেক দূরে রয়েছি,”,তবে তিনি বিশ্বাস করেন ডেজার্টাস পেট্রেল প্রাথমিকভাবে ঘূর্ণিঝড় সনাক্ত করতে ইনফ্রাসাউন্ড ব্যবহার করে।‘ইনফ্রাসাউন্ড ‘ হল বায়ু এবং তরঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট এই খুব কম কম্পাঙ্কের শব্দ – যাকে “সমুদ্রের ভয়েস” বলা হয় । এটি শব্দের উৎস থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার প্রসারিত হয়। জীববিজ্ঞানী ফ্রান্সেস্কো ভেনচুরার মতে , সমুদ্রের এই শব্দ তরঙ্গ অনুসরণ করে পেট্রেলগুলি ঘূর্ণিঝড়ের দিকে উড়তে থাকে।তবে এক্ষেত্রে ডেজার্টাস পেট্রেল হ্যারিকেনকে (ঘূর্ণিঝড় )সুবিধাজনক ভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একমাত্র প্রজাতি নাও হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা।
সামুদ্রিক পরিবেশবিদ লেসলি থর্নের কথায় এই নতুন গবেষণা কিছু সামুদ্রিক পাখির ঝড় তাড়া করে সে সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক ছিল তা পূরণ করেছে। আরেকটি সামুদ্রিক পাখি, স্ট্রিকড শিয়ারওয়াটার, ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে এবং সাথে উড়ে যায় – সম্ভবত তারাও তাদের বেঁচে থাকার উপায় হিসাবে ঝড়ের আশ্রয় নেয়।নিউইয়র্কের স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির থর্ন বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের সাথে বিপুল পরিমাণ খাবারকে সামুদ্রিক পাখির আচরণের সাথে যুক্ত করা “সত্যিই, সত্যিই দুর্দান্ত ছিল … এটি এমন কিছু যা আজ পর্যন্ত করা হয়নি”। এটি এমন একটি গভীর গবেষণা যা তিনি বিশ্বাস করেন যে সামুদ্রিক পাখিদের সাথে ঝড়ের সম্পর্ক আমাদের আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন