তাজমহল সম্পর্কে নানা রকম অজানা তথ্য

উত্তরাপথঃ তাজমহল হল, আগ্রায় অবস্থিত একটি সাদা মার্বেল সমাধি, যা অনন্ত প্রেমের প্রতীক’ হিসাবে আজও আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে।মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মরণে তৈরি করেছিলেন। নিশ্ছিদ্র সৌন্দর্য বিকিরণকারী, সাদা মার্বেল সমাধিটি ভারতের অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন স্থান। প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক পরিদর্শন করেন।

প্রেমের প্রতীক এবং মুঘল স্থাপত্যের মাস্টারপিস ভারতের এই অন্যতম আইকনিক এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট তাজমহলকে, ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়,সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য আচ্ছাদিত করা হয়েছিল।প্রসঙ্গত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়, তাজমহল আক্রমণ বা ক্ষতির লক্ষ্য হতে পারে বলে উদ্বেগ ছিল। এই ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ রক্ষার জন্য, ভারত সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং তাজমহলকে পাটের তন্তু দিয়ে ১৫ দিনের জন্য ঢেকে দেয়। সেইসাথে ডালপালা এবং ঝোপ লাগিয়ে এটিকে বনের মতো চেহারা দেওয়া হয়েছিল যাতে আকাশ থেকে ভবনটি দেখা না যায়। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও তাজমহলকে বাঁশ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। এই সমাধানটি সেই সময় কার্যকর প্রমাণিত হয় এবং তাজমহল ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরও অক্ষত অবস্থায় থাকে।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খেরিয়া রানওয়ের কাছে এবং কীথামে পাকিস্তানি বিমান বোমা বর্ষণ করে এবং রানওয়ের কাছে একটি গভীর গর্ত তৈরি হয় । এরপর তড়িঘড়ি তাজমহলকে ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।এসকে শর্মা (অবসরপ্রাপ্ত), যিনি তাজমহলের তৎকালীন সংরক্ষণ সহকারী ছিলেন, তিনি এক জায়গায় বলেন, যে ৪ ডিসেম্বর থেকে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছিল। বিকেলে আদেশ আসতেই তাজমহল ঢেকে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। অধিদপ্তরের কাছে পাওয়া চটটি সবুজ রঙ করা হয়েছিল এবং একই দিনে গম্বুজে ঝুলানো হয়েছিল। এছাড়াও, তাঁবু মালিকদের কাছ থেকে তেরপল অর্ডার করা হয়েছিল এবং বাজার থেকে পুরানো কাপড় কেনা হয়েছিল। এটিও সবুজ রং করা হয়েছিল এবং স্মৃতিস্তম্ভটি আচ্ছাদিত ছিল। শুধু তাই নয়, স্মৃতিসৌধের চারপাশে বাঁশের লাঠির জাল তৈরি করা হয়। আকবরের সমাধি এবং অন্যান্য স্থান থেকে ঝোপঝাড়, গাছের ডাল এবং ডালপালা সংগ্রহ করে তাজমহলকে একটি বনের চেহারা দেওয়া হয়েছিল। সে সময় এই কাজে প্রায় ২০৫০০ টাকা খরচ হয়েছিল। আমরা তাজমহলে ১০-১২ দিন ছিলাম। শর্মা বলেছেন যে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে, তাজমহল ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছিল।

তাজমহলকে ১৯২১ সালে ASI দ্বারা জাতীয় গুরুত্বের একটি সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। তাজমহল তার ১০০ বছরের ইতিহাসে তিনবার পর্যটকদের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। অনুমোদিত ট্যুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের একজন গাইড জানায় যে ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়,এরপর যমুনায় বন্যার কারণে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাজমহল সাত দিনের জন্য বন্ধ ছিল। সেইসময় তাজমহলে যমুনা তীরে নির্মিত কক্ষগুলো জলে ভরে যায়। সর্বশেষ করোনার সময় তাজমহল সবচেয়ে দীর্ঘ  ১৮৮ দিনের জন্য বন্ধ ছিল।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top