দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ‘আক্রমনাত্মক’ অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে মার্কিন কর্মকর্তা

দক্ষিণ চীন সাগরে আক্রমণাত্মক আচরণ চীনের ছবি- প্রতীকী

উত্তরাপথঃ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের “আক্রমনাত্মক আচরণ”, যার মধ্যে একটি ফিলিপাইনের জাহাজের বিরুদ্ধে তার উপকূলরক্ষীর জল ক্যানন ব্যবহার করার বিষয়টি, অবশ্যই চ্যালেঞ্জ এবং পরীক্ষা করা উচিত, মার্কিন নৌবাহিনীর সপ্তম নৌবহরের কমান্ডার রবিবার বলেছেন।

এদিকে মার্কিন বিদেশসচিব মাইকেল আর পম্পেও চিনকে হুঁশিয়ারি দিলেন বলেন,‘বেজিং যদি ভেবে থাকে যে তারা দক্ষিণ চিন সমুদ্রের একচ্ছত্র সম্রাট, তবে তারা খুব ভুল করছে। আমেরিকা তো এটা মানবেই না, উপরন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব জলপথে ক্ষুন্ন হলেও আমরা চুপ করে থাকব না।“পম্পেও র বক্তব্যকে সমর্থন করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

দক্ষিণ চিন সমুদ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে চিনের ঠান্ডা লড়াই ক্রমশঃ উত্তপ্ত হচ্ছে। সমুদ্রপথ এবং হংকংয়ে ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কিছুদিন ধরেই বাকযুদ্ধ চলছে চিন, আমেরিকার। ১৯৪৭ সালে তৈরি চিনা কার্টোগ্রাফিক ইনস্ক্রিপশনের ‘নাইন ড্যাশড লাইন’ অনুসারেই দক্ষিণ চিন সাগরের ৯০ শতাংশ নিজের দখলে রাখতে চায় চিন।পম্পেও জানাচ্ছেন, ১৯৮২ সালের ল অফ সি কনভেনশনের সংশোধনী অনুসারে ২০১৬ সালেই সমুদ্র নিয়ন্ত্রণের আগের অধিকার খুইয়েছে চিন। তাই গায়ের জোরে সমুদ্র দখলে রাখা চলবে না। ১৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দক্ষিণ চিন সাগর মালবাহী জাহাজ চলাচল এবং পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বছরে এখান দিয়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য যাতায়াত করে। প্রতিবেশী দেশগুলির যথেষ্ট আপত্তি সত্ত্বেও এবং তাদের সামরিক দুর্বলতাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে চিন এই সাগরের প্রায় ৯০ শতাংশ নিজেদের কব্জায় রেখেছে বলে অভিযোগ। আর তাই নিয়েই দিনকয়েক আগে ইউএসএস নিমিৎস এবং ইউএসএস রোনাল্ড রেগন যুদ্ধবিমান পরিবাহী জাহাজদুটি আমেরিকা জলে ভাসানোর পর পরই সামরিক মহড়া শুরু করে চিন বার্তা দেয় যে, এই জলপথের তারাই মালিক।

আবার করোনা মহামারী চিনে শুরু হলেও আমেরিকা তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ট্রাম্প বারবার চিনকেই দায়ী করেছেন। সমুদ্র ঘেঁষা দেশগুলির সঙ্গে চিনের সম্পর্ক ভালো নয়। যেমন চিন সম্প্রতি পারাসিল দ্বীপ সংলগ্ন এলাকায়ও মহড়া দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। অথচ এই দ্বীপ নিজেদের বলে দাবি করে আসছে ভিয়েতনামও। ভিয়েতনাম তো বটেই, বেজিংয়ের ‘আগ্রাসী’ মানসিকতার সমালোচনা করেছে মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপিন্সের মতো দেশগুলিও। এই দেশগুলিকে নিজের পক্ষে টানতে চাইছে আমেরিকা। ভাইস অ্যাডমিরাল কার্ল থমাস ফিলিপিন্সকে এই অঞ্চলে ‘ চ্যালেঞ্জ’ মোকাবেলায় মার্কিন সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, “আমার বাহিনী একটি কারণে এখানে আছে।” মার্কিন নৌবাহিনী যার সদর দফতর জাপানে রয়েছে তার অধীনে প্রায় ৭0টি জাহাজ ,১৫০ টি বিমান এবং ২৭,০০০-এর বেশি নাবিক রয়েছে।এই বাহিনী জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের ঘাঁটি থেকে ১২৪ মিলিয়ন বর্গ কিমি (৪৮ মিলিয়ন বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে কাজ করে।

দক্ষিণ চীন সাগরে অশান্তির প্রেক্ষিতে গালোয়ানে চিনের কার্যকলাপেরও তীব্র সমালোচনা করেছে আমেরিকা। আবার দিনকয়েক আগে নিউ ইয়র্কে টাইমস স্কোয়্যারে বয়কট-চিন শীর্ষক যে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয় তাতে প্রবাসী ভায়তীয়রা তো বটেই তাইওয়ানি, তিব্বতীরাও যোগ দেন। তাঁরাও তিব্বতের সার্বভৌমত্ব দাবি করেন, উইঘুর প্রদেশে মুসলিমদের দাবিয়ে রাখার প্রতিবাদ জানান এবং হংকংয়ের ব্যাপারে চিনের আগ্রাসী মনোভাবের সমালোচনা করেন।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


রেলওয়ে ইউনিয়নের নতুন সূচনা, গান গেয়ে মানসিক চাপ দূর করছেন রেলের কর্মচারীরা

উত্তরাপথঃ আপনি যদি সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করেন, তাহলে এই খবর আপনাকে স্বস্তি দেবে।কারণ ভারতীয় রেলওয়ের বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠন অল ইন্ডিয়া রেলওয়েম্যানস ফেডারেশন (এআইআরএফ) এবং নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে এক অনন্য উদ্যোগ শুরু করেছে।তারা তাদের কর্মীদের গান গেয়ে তাদের মানসিক চাপ দূর করতে পরামর্শ দিচ্ছে।    এআইআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক শিব গোপাল মিশ্র এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুকেশ মাথুরের নির্দেশে, জয়পুর এবং অন্যান্য শহরের কর্মচারীরা একটি মাঠে জড়ো হয় এবং সেখানে তারা গান গায় এবং আন্তাক্ষিরি খেলে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ভোরের শুকতারা

অনসূয়া পাঠকঃ বাস ছাড়তে তখনো কিছুটা সময় বাকি ছিলো, আমি মা বাবার সাথে বাসের ভেতরে জানালার দিকের সিটটায় বসে আছি। এমন সময় দেখি আমাদের পাশের সিটে বসে একজন রবীন্দ্রনাথের সঞ্জয়িতা পড়ছেন, বইটাকে দেখে আমার চোখের সামনে একটা সোনালী ফ্রেমের চশমা পরা মুখ ভেসে উঠলো, চন্দন স্যারের মুখ। বছর পাঁচেক আগের কথা, আমার বাবা তখন জঙ্গলমহল মেদিনীপুরের আমলাশুলির পোষ্টমাষ্টার। দু কিমি দূরেই আমার পিসীমার বাড়ি। ওখানেই আমার হাইস্কুলে পড়াশোনা শুরু। আর যে স্যার আমার মননে সদা জাগরুক , বাংলা সাহিত্যের বটবৃক্ষ বলা যায় যাকে , আমার গল্প যাঁকে নিয়ে সেই চন্দন স্যারকে ওখানেই পাওয়া। ফর্সা গায়ের রঙ, মাথায় ক়াঁচা পাকা চুল , সরু গোঁফ চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা, .....বিস্তারিত পড়ুন

রাজা মহম্মদ ও সি সেল মিউজিয়াম

প্রিয়াঙ্কা দত্তঃ রাজা মহম্মদ, এমন একজন মানুষের নাম, যার ব্যাক্তিগত ইচ্ছার কাছে হেরে যায় সব বাধা। ইচ্ছার চেয়ে বলা ভালো নেশা। সামুদ্রিক প্রাণীদের খোল সংগ্রহের নেশা। যা তাঁকে ছোটবেলা থেকেই ছুটিয়ে নিয়ে বেরিয়েছে প্রায় তিরিশ বছর ধরে। আর সেই দীর্ঘ পথের শেষে , তিনি সম্পূর্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এশিয়ার বৃহত্তম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাক্তিগত সংগ্রহশালা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সি সেল মিউজিয়ামটি বর্তমানে চেন্নাইয়ের মহাবলিপূরম মন্দিরের সন্নিকটে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। রাজা মহম্মদ ছোট্ট বেলা থেকেই  সমুদ্র তট থেকে সংগ্রহ করতেন বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর দেহাংশ। কুড্ডালোর থেকে রামেশ্বরম এর সমুদ্রতট, সেখান থেকে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশে গিয়েছেন ব্যাক্তিগত উদ্যোগে। সংগ্রহ করেছেন অসাধারণ সব সামুদ্রিক .....বিস্তারিত পড়ুন

বিক্রম সারাভাই: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার একজন দূরদর্শী পথিকৃৎ

উত্তরাপথঃ ডঃ বিক্রম সারাভাই ছিলেন ভারতের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী। তিনি একজন বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, শিল্পপতি এবং স্বপ্নদর্শীর ভূমিকা সমন্বিত, ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জনক হিসাবে বিখ্যাত।তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় ভারত মহাকাশ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) এর প্রতিষ্ঠা ছিল তার অন্যতম সেরা সাফল্য। তিনি রাশিয়ান স্পুটনিক উৎক্ষেপণের পর ভারতের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য মহাকাশ কর্মসূচির গুরুত্ব সম্পর্কে সরকারকে সফলভাবে বোঝান।এরপর ডঃ হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা, যিনি ভারতের পারমাণবিক বিজ্ঞান কর্মসূচির জনক হিসাবে পরিচিত, ভারতে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনে ডঃ সারাভাইকে সমর্থন করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top