ড. জীবনকুমার সরকার


ভারতীয় প্রেক্ষাপটে দলিত সাহিত্যের নান্দনিকতা বুঝতে হলে অতি অবশ্যই ‘হিন্দুত্ববাদ’কে আগে বুঝতে হবে। যথাযথ ভাবে হিন্দুত্ববাদ বা ব্রাহ্মণ্যবাদকে না বুঝলে কোনোভাবেই দলিত সাহিত্য আন্দোলনের নন্দনতত্ত্ব স্পর্শ করা যাবে না।
আমরা যে হিন্দু ধর্মের কথা বলে থাকি, তা আসলে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম। আর্য আগমনের পর ভারতের মাটিতে আর্য আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য আর্যদের একটি নিজস্ব ধর্মের প্রয়োজন হয়েছিলো। কারণ, ধর্মকে হাতিয়ার করেই প্রাচীন ভারতের অনার্য মানুষদের দখলে আনতে চেয়েছিলেন। এই কাজকে সফল করার জন্য তারা মাঠে নামলেন। তৈরি করলেন কাল্পনিক ঈশ্বর এবং নানা কাল্পনিক দেব-দেবতা, স্বর্গ-নরক, ভূত-প্রেত-পরী-রাক্ষস-খোক্কস আরও কত কী! গোলমালটা শুরু হলো এখান থেকেই। এইসব কাল্পনিকতাকে এবং আর্যদের জীবনসংস্কৃতিকে মানতে চাইতো না অনার্য তথা আদি ভারতীয়রা। সেক্ষেত্রে আর্যদের দরকার পড়লো আরও চাতুর্যতার। ফলে, তারা একে একে তৈরি করতে লাগলেন নানা গল্পের ছলে ঈশ্বরের নামে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের কথা। সেই কাল্পনিক গল্পগাথাকে মূল ভারতীয় মানুষদের মধ্যে প্রবিষ্ট করতে তৈরি হতে লাগলো একে একে বেদ-উপনিষদ-পুরাণ-রামায়ণ-মহাভারত সহ নানা গ্রন্থ। এইসব গ্রন্থের মূল উপজীব্য হলো যে কোনো প্রকারে ব্রাহ্মণদের জয় জয়কার ঘোষণা করা। আর যাদের পরাজয় ঘোষণা করা হয়েছে, তারা হলেন ওই রাক্ষস-খোক্কস-দৈত্য-দানব তথা হিন্দু ধর্মের মনুসংহিতা অনুসারে শূদ্র। হিন্দু ধর্মে উল্লিখিত শূদ্রদের দমন-পীড়নের জন্য ব্রাহ্মণ্যবাদ তাদের অস্পৃশ্য ঘোষণ করেছিলো।
ভারতের মাটিতে এইসব মূল মানবসন্তানদের এমন করে অস্পৃশ্য করা হলো ——যা পৃথিবীতে একটা বিরল ঘটনা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে খাইবার-বোলান গিরিপথ দিয়ে ভারতের মাটিতে প্রবেশ করা বহিরাগত দস্যুরাই আজকে ভারতের মালিক। প্রকৃত ভারতের মাটির মানুষেরা আজও পরাজয়ের গ্লানি টেনে চলেছে। এই পরাজিত শূদ্ররা পরাজয়ের গ্লানি সাড়ে তিন হাজার বছর ধরে টানতে টানতে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ভুলে গেছে হিন্দু পরিচয়ের আগে তাদের একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি ছিলো, স্বতন্ত্র ধর্ম ছিলো। ছিলো অত্যন্ত উন্নত মানের সভ্যতা। বহিরাগত আর্যসৃষ্ট হিন্দুধর্মের দাসত্ব বরণ করার পর নিম্নবর্গের মানুষেরা ভুলে গেছে তাদের পিতৃমাতৃ ঐতিহ্য। ব্রাহ্মণ্যবাদে পরিপূর্ণ হিন্দুধর্মের চিরদাসত্বের থেকে মুক্তির জন্য ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধর্ম আন্দোলন হয়েছে । যেমন : বৌদ্ধ, জৈন, লিঙ্গায়েত, সারনা, রবিদাসিয়া, মতুয়া, শিখ ইত্যাদি। এরপরেও শূদ্রদের মুক্তি ঘটেনি। কারণ, দেশের সমস্ত ক্ষমতার অলিন্দে বসে আছে ব্রাহ্মণ এবং তার দোসর ক্ষত্রিয় ও বৈশরা। আর কোটি কোটি শূদ্ররা তাদের উপাসক। শূদ্রদের যাতে কোনোদিনই মুক্তি না ঘটে, তার জন্য ব্রাহ্মণ্যবাদীরা দিনরাত হিন্দু হিন্দু করছে। হিন্দুধর্মের নিপীড়িত, অসহায় অস্পৃশ্য শূদ্ররাই আজকের ভাষায় দলিত।
দলিত সাহিত্যের নান্দনিকতা বুঝতে হলে’ হিন্দুত্ববাদ’ বা ‘ব্রাহ্মণ্যবাদ’ শব্দ দুটিকে পাশাপাশি রেখে আর একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। হিন্দুত্ববাদ জোরালো ভাবে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি অবৈজ্ঞানিক ব্যবস্থার ওপর। এক : বর্ণবৈষম্য, দুই : পুরোহিততন্ত্র এবং তিন : নিঃশর্ত ভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস। আসলে আর্যরা নিজেদের ব্রাহ্মণ পরিচয় দিয়ে বর্ণাশ্রম ব্যবস্থাকে স্থায়ী করেছে। বৈদিক যুগ থেকে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা মূল ভারতীয়দের দাস বানিয়ে রাখার জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক কৌশলের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কৌশলও অবলম্বন করেন। যার ফলে পুরো সংস্কৃত সাহিত্যের আকাশ জুড়ে রয়েছে ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যবাদ। আর মূল ভারতীয়দের চিহ্নিত করেছে ‘রাক্ষস’, ‘দৈত্য’, ‘বানার’, ‘কিরাত’, ‘নিষাদ’, ‘দানব’ ইত্যাদি। আর্য বা ব্রাহ্মণের দ্বারা রচিত সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ ‘ঋগ্বেদ’-এর দশম মণ্ডলের ‘পুরুষসুক্ত’-এ উল্লেখ আছে ———ব্রহ্মার মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু থেকে ক্ষত্রিয়, ঊরু থেকে বৈশ্য এবং পা থেকে শূদ্রদের উৎপত্তি। এতে সহজেই অনুমেয় ব্রাহ্মণ্য ধর্মে শূদ্রদের মর্যাদা কতটুকু। ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যবাদী বৈদিক ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মই মুসলিম শাসনামলে হিন্দুধর্ম নামকরণের মাধ্যমে আত্মগোপন করে কৌশলে। সুতরাং, শূদ্রদের নতুন করে ধোঁকা দেবার জন্য হিন্দু ফোল্ডারে ব্রাহ্মণ্যবাদ ঢুকে পড়ে। তাই, লক্ষ করলে দেখা যায়, হিন্দু হিন্দু চারদিক আকাশ বাতাস মুখরিত করলেও কাস্টইজম ভাঙার কথা বলেন না ব্রাহ্মণ্যবাদীরা।
যুগ বদলেছে। সাহিত্যও ভাঙাগড়ার মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে। আধুনিক সাহিত্য বিচিত্র আঙ্গিকে রচিত হলেও ভারতের মাটিতে যে মূল ধারার সাহিত্য লিখিত বা চর্চিত হচ্ছে, তা মূলত ব্রাহ্মণ্যবাদী ধারাই উপাসক। ব্রাহ্মণ্যবাদী সাহিত্য ধারায় দলিতদের কথা থাকলেও সার্বিক ভাবে দলিত মুক্তির কথা নেই। দলিত মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থেকেই দলিত সাহিত্যের জন্ম।
দলিত সাহিত্য আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো ———-(১) হাজার হাজার বছর ধরে লালিত বর্ণ বৈষম্যেকে ভেঙে ফেলা, (২) জাতপাতের নামে বিভাজনকে অগ্রাহ্য করা, (৩) দেব-দেবতার মাহাত্ম্যসূচক সাহিত্যের বদলে সরাসরি নিপীড়িত মানুষের জীবনযন্ত্রণা নিয়ে সাহিত্য সৃজন করা, (৪) ঈশ্বর নয়, মানুষ থাকবে লেখার কেন্দ্রে, (৫) পরকাল নয়, ইহকাল হবে কলমের বিচরণভূমি, (৬) প্রাতিষ্ঠানিক যে কোনো ধর্মচেতনার সঙ্গে আপসহীন হবে দলিত সাহিত্য, (৭) দলিত সাহিত্যের স্রষ্টারা হবেন অকুতোভয়, (৮) ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির বদলে লোকায়ত সংস্কৃতি ধারকবাহক হবে দলিত সাহিত্য, (৯) দলিত সাহিত্যের উপন্যাস-গল্পের নায়ক নায়িকারা হবেন দলিত সমাজের নরনারী, (১০) দলিত মনীষীদের পুজো দেবার পরিবর্তে তাঁদের জীবন, সংগ্রাম ও আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উৎসাহ দেবে দলিত সাহিত্য। কারণ, ব্রাহ্মণ্যবাদী সাহিত্য বিভাজনের সাহিত্য আর দলিত সাহিত্য সব বিভাজনকে ভেঙে সকলকে একাসনে বসানোর সাহিত্য। ইত্যাদি এইসব বৈশিষ্ট্যজনিত কারণেই দলিত সাহিত্যের নান্দনিকতা সর্বজনবিদিত। দেশের গণ্ডী অতিক্রমণ করে বহির্বিশ্বেও দলিত সাহিত্য তার নান্দনিকতার জন্য যথেষ্ট সমাদৃত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দলিত সাহিত্যকে মান্যতা দিতে চাইছেন না অনেকেই। এদের মধ্যে দুটো ভাগ। প্রথম ভাগে অবশ্যই রয়েছেন প্রচলিত ধারার সাহিত্যিকরা। এঁরা বিরোধিতা করবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, শ্রেণিগত অবস্থানে তাঁরা ব্রাহ্মণ্যবাদী। তাঁরা মনে করেন, নিম্নবর্গের মানুষের সাহিত্য সৃজন করার মেধা নেই। তাছাড়া তাঁরা ভীতসন্ত্রস্ত এই ভেবে যে, দলিত সাহিত্য যেহেতু বর্ণবাদ ধ্বংস করতে চায়, সুতরাং, আমাদের একাধিপত্য কমে যাবে। সামাজিক মর্যাদা কমে যাবে। ফলে লক্ষ করা যায়, হিন্দুধর্মের উঁচু বর্ণের লেখকেরা কলমে মানবিক হলেও বাস্তব জীবনাচরণে এঁরা ঘোরতর দলিত বিরোধী। তাই, বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে উচ্চ বর্ণের লেখকদের প্রকাশ্যে কোনো আন্দোলন নেই। আছে কেবল দলিতদের প্রতি করুণা। কিন্তু তাঁরা বুঝতে চান না যে, দলিতরা করুণা চায় না। দলিতরা চায় অধিকার, আত্মসম্মান, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়। এটা তাঁরা লড়াই করেই আদায় করতে চায়। সমতাবিধানকে আটকে রাখতেই মনুবাদীরা দলিত সাহিত্যের বিরোধী। দ্বিতীয় ভাগে আছেন দলিতদের একাংশ। তাঁদের ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। অভিযোগ হচ্ছে ‘ দলিত’ শব্দটি গ্রহণ করায়। অর্থাৎ, তাঁরা বলতে চান——–আমরা দলিত হতে যাবো কেন? বরং,দলিত শব্দের পরিবর্তে অন্য একটি নাম ব্যবহার করলে ভালো হতো। দলিতবন্ধুরা বুঝতে চান না যে, দলিত কোনো জাতিবাচক শব্দ নয়। এটা একটি প্রতীকী শব্দ। এটি একটি আন্দোলনের নাম। তাছাড়া ‘দলিত’ শব্দ ব্যবহার বাতিল করে অন্য শব্দবন্ধে বিষয়টি আবদ্ধ করলেই কি দলিতগন্ধ নির্মূল হবে? দলিত নামে আপত্তি থাকলেও অনেক হীনবাচক শব্দ ও অভিধায় বিশেষ আপত্তি নেই নিম্নবর্গীয়দের। আসল সত্য হচ্ছে, দলিত সাহিত্যকে অগ্রসর হতে না দেবার জন্য মনুবাদীরা দলিতদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে চায়। এবং এই কারণে দলিতদের উসকে দিচ্ছে নামকরণের কোষ্ঠকাঠিন্যতায়। যাতে আন্দোলনটি পথ হারায়।
দলিত সাহিত্য নিয়ে আপত্তি থাকলে, আপত্তি থাকার কথা এইসব সাহিত্য নিয়েও ———–
‘প্রাচীন সাহিত্য’, ‘মধ্যযুগের সাহিত্য’, ‘আধুনিক সাহিত্য’, আনুনিকোত্তর সাহিত্য, মঙ্গল সাহিত্য, বৈষ্ণব সাহিত্য, পদাবলী সাহিত্য, চৈতন্যপূর্ব সাহিত্য, চৈতন্যত্তোর সাহিত্য, রবীন্দ্র সাহিত্য, প্রগতি সাহিত্য, মার্কসবাদী সাহিত্য, কৃষ্ণ সাহিত্য, বিজ্ঞান সাহিত্য, বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্য, পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্য, প্রতিবেশী বাংলা সাহিত্য, দেশভাগের সাহিত্য, রোসাঙ রাজসভার সাহিত্য, উত্তরবঙ্গের সাহিত্য ইত্যাদি। এরপর আছে কবিতা -উপন্যাস-গল্পের কতরকম ভাগ। তাহলে এত ভাগাভাগি করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য পড়াবার দরকার কী? এককথায় সবকিছু বাদ দিয়ে ‘সাহিত্য’ পদবাচ্য বলে পড়ালেই তো চলে। এইসব নিয়ে তো কেউ কোনো কথা বলেন না। আসলে এসব ভাগ বাটোয়ারা বা নামকরণগুলো উচ্চ বর্ণের গবেষকদের দেওয়া, তাই আপত্তি ওঠেনি। পক্ষান্তরে দলিত সাহিত্য নামকরণ দলিতদের দেওয়া এবং দলিতরা নিজেদের কলমে নিজেদের কথা বলছেন বলে যতসব আপত্তির কারণ।
তাহলে দলিত সাহিত্যের নান্দনিকতার গুরুত্ব মেইন স্ট্রীমের সাহিত্য থেকে ঠিক কোথায়? মেইন স্ট্রীমের লেখকেরা প্রায় সবাই যেহেতু উচ্চ বর্ণের, তাই দলিতদের কথা তাদের কলমে থাকলেও এই গোত্রের লেখকদের বর্ণ নির্যাতনের শিকার হতে হয় না বলে গভীর অভিজ্ঞতা কম। অন্যদিকে যেসব লেখকেরা বর্ণ বৈষম্যের গ্লানি নিয়ে জন্মান প্রতি মুহূর্তে তাদের জীবন অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণই আলাদা। ফলে দলিত লেখকেরা যেভাবে তাঁদের কথা তাঁদের কলমে ব্যক্ত করতে পারবেন, তা অন্যেরা কী করে পারবেন? এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা যায় প্রগতি সাহিত্যের কথা। এত উন্নত যার আদর্শ, তবু প্রগতি সাহিত্য তেমন কোনো কাজে এলো না এই ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতে। প্রগতি সাহিত্য তার দায় মেটালে আজ দলিত সাহিত্যের জন্মই হয়তো হতো না হয়তো। অত্যন্ত বেদনার প্রগতি সাহিত্যও ব্যর্থ। কারণ, এই সাহিত্যের উপাসকরা ধর্মান্ধ ছিলেন না ঠিকই, কিন্তু ভেতরে ভেতরে উচ্চ বর্ণের লেখকেরা ছিলেন বর্ণান্ধ। আর দলিত সাহিত্য যে কোনোরকম ধর্মান্ধতা, বর্ণান্ধতা, কুসংস্কার, জাতের নামে বজ্জাতি ইত্যাদি কিছুর ঊর্ধ্বে। দলিত সাহিত্যের নান্দনিকতা এখানেই। এ সাহিত্য দুর্বার ও মানবিক। এ সাহিত্য জাতপাতের সমর্থক নয়, বরং জাতপাতকে সমূলে উৎপাটন করতে বদ্ধপরিকর। আমাদের এখন ভেবে দেখা উচিত নামকরণ নিয়ে নয়, আসলে দলিত সাহিত্য কী বলতে চায়।
আরও পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন